
সুদান এখন কেবল একটি দেশের নাম নয়। এটি প্রচারহীন এক গণহত্যার উপাখ্যান। সুদানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ-এর মধ্যে শুরু হওয়া নৃশংস গৃহযুদ্ধ এখন দুই বছর অতিক্রম করেছে। এই সংঘর্ষ এখন শুধু সামরিক পর্যায়েই থাকেনি। বরং রূপ নিয়েছে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে। বিশ্বের যেসব বিপর্যয় গণমাধ্যমে কম প্রচার পেয়েছে, সুদানের সঙ্কটটি এর মধ্যে অন্যতম। অথচ এই সঙ্কটে ইতিমধ্যে লাখ লাখ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। বহু অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে গোটা জাতি।
সুদানের ৫১ মিলিয়ন মানুষের জন্য এর পরিণতি ভয়াবহ। হাযার হাযার মানুষ নিহত হয়েছে। ৫ কোটি মানুষের প্রায় অর্ধেক ২ কোটি ৪৬ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্ত্তচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে ৪০ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়েছে। অসংখ্য মানুষ যুদ্ধ, রোগ এবং দুর্ভিক্ষের কারণে প্রাণ হারিয়েছে। দেশজুড়ে চরম অপুষ্টি এবং জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে। যুদ্ধের ফলে পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চল অধিকাংশই আরএসএফ-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। বিশেষ করে খাদ্যকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা, নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং বিচারবহির্ভূত নির্যাতন এর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু আরএসএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরো গুরুতর। তারা পশ্চিম দারফুরে চালাচ্ছে গণহত্যা। সংঘবদ্ধভাবে করছে নারী ও কিশোরী ধর্ষণ, পুরো সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে করছে পরিকল্পিত হামলা।
উল্লেখ্য, এই যুদ্ধের সূত্রপাত ২০১৮ সালের শেষের দিকে, যখন সুদানের স্বৈরশাসক বশীরের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০১৯ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আব্দুল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও আরএসএফ প্রধান জেনারেল হামদান দাগালো একত্রে বশীরকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। তবে দাগালো দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করে এবং দুই নেতার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ফলে দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সেখানে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়।