[মির্যা
হায়রাত দেহলভী (১৮৫০-১৯২৮খৃঃ) একজন প্রখ্যাত ভারতীয় আহলেহাদীছ বিদ্বান।
যিনি শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ)-এর বিখ্যাত জীবনী গ্রন্থ ‘হায়াতে তাইয়েবা’-এর
প্রণেতা ছিলেন। এটি শাহ ছাহেবের জীবনীর উপর কৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
এতে তিনি শাহ ছাহেবের জীবনের নানা দিক-বিভাগ ও ঘটনাবলী উল্লেখ করেছেন।
সেখানে তিনি একটি চিত্তাকর্ষক বিতর্কের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। যেটি শাহ
ইসমাঈল শহীদ এবং মাওলানা ফযলে হক্ব খয়রাবাদী (১৭৯৭-১৮৬১খৃঃ)-এর শিষ্যদের
মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। বিতর্কটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় মাননীয়
সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি মহোদয়ের দিক-নির্দেশনা মোতাবেক উর্দূ থেকে অনুবাদ
করে পাঠকদের উদ্দেশ্যে পত্রস্থ করা হ’ল।- অনুবাদক]
ফযলে হক খয়রাবাদীর পরিচয় :
মৌলভী ফযলে হক ছাহেবের পিতা মৌলভী ফযলে ইমাম ছাহেব একজন দরিদ্র মুসলমান ছিলেন। দরিদ্রতায় জর্জরিত থাকলেও তিনি ইসলামের হুকুম-আহকাম পালনে মোটামুটি অভ্যস্ত ছিলেন। সম্ভবতঃ তিনি শিক্ষিতও ছিলেন। মৌলভী ফযলে হক ছাহেব একজন উচ্চ পর্যায়ের যুক্তিবাদী ছিলেন। এটা প্রসিদ্ধ ছিল যে, তিনি যেভাবে মানতেকের কিতাব ‘ছাদরা’ পড়াতেন, শহরে তাঁর মত কেউই তা পড়াতে পারত না। এতে সন্দেহ নেই যে, তিনি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ও সুযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছাত্রদের পড়ানোর ক্ষেত্রে এতটাই নিয়মতান্ত্রিক ছিলেন যে, অপরিহার্য নয় এমন সময়েও পড়াতে ভুল করতেন না। অর্থাৎ যখন তিনি লোকজনের মধ্যে অবস্থান করতেন তখনও সবক পড়াতে কার্পণ্য করতেন না। তিনি বড় মাপের সাহিত্যিক ও উঁচু দরের কবিও ছিলেন। এমনকি তাঁর নুকতাবিহীন অসংখ্য আরবী কাছীদাও রয়েছে। সেসব কাছীদার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে এটা অনুমান করা যায় যে, লেখক বা কবি একজন অনন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। আল্লাহ প্রদত্ত মেধা ও প্রতিভার একটা বড় অংশ তাঁর ভাগ্যে জুটেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হ’ল, অধিকাংশ কবিতা আরবদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত শব্দমুক্ত। আর কিছু নাহুবী বা ব্যাকরণগত ভুলও রয়েছে। অবশ্য কবিতার বিষয়বস্ত্তর চমৎকারিত্বের ব্যাপারে কোন সমালোচনা নেই। আমরা এখানে সেই কবিতাগুলি লিখে দেখাতাম। কিন্তু যখন ‘তেরাহ ছদী’ (تيره صدى) বা ‘১৩শত শতাব্দী’[1] বইয়ে সকল হাশিয়া (যেগুলি মৌলভী ফযলে হক ছাহেব মানতেকের কিতাব সমূহের উপর আরোপ করেছিলেন) এবং কবিতাগুলির সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ সন্নিবেশিত হয়েছে এবং মাওলানা সাইয়েদ আহমাদ রামপুরী যেগুলি বিন্যস্ত করেছেন, সেগুলি নিয়ে এখানে আলোচনার প্রয়োজন নেই।
যাহোক এ কথা মানতেই হবে যে, মৌলভী ফযলে হক ছাহেব বিদ্যাবত্তা, তীক্ষ্ণ ধীশক্তি এবং উলূমে আরাবিয়াতে (মা‘কূলাত) পূর্ণ দক্ষতার অধিকারী ছিলেন। আর এটাও প্রশংসনীয় ছিল যে, দরসী কিতাবসমূহ, গণিত, মানতেক (যুক্তিবিদ্যা) ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে তিনি এতটাই দক্ষ ছিলেন যে, স্বীয় মাযহাবের প্রতি ঝোঁক সত্ত্বেও তিনি তার সূক্ষ্মদর্শী ও উৎসাহী ছাত্রদের মন ভরিয়ে দিতেন। এটি প্রশংসার যোগ্য যে, মৌলভী ছাহেবের আধুনিক মন-মানসিকতা এবং তীক্ষ্ণ মেধা তাঁকে দ্বীনী আলেম হিসাবে সীমাবদ্ধ করেনি। বরং তার অনন্য যুক্তি দক্ষতা ও যুক্তিবাদী প্রজ্ঞা তাকে ইংরেজদের অধীনে চাকুরীতে নিয়োজিত করেছিল। হয়ত পূর্বে তিনি কোন পদে নিয়োজিত ছিলেন, তবে শেষাবধি তিনি সেরেস্তাদার (দফতরী) হয়েছিলেন। আর এই পদে থেকে তিনি এমন প্রভাব-প্রতিপত্তি, দাপট ও ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন যা এ যুগে ডেপুটি কমিশনারের রয়েছে। তার বাড়ীতে দেন-দরবারের জন্য মানুষের ভীড় লেগে থাকত এবং সম্মান ও আয়েশের সাথে জীবন অতিবাহিত হ’ত। যদিও এটা প্রশংসনীয় যে, মৌলভী ছাহেব সরকারী কাজের ব্যস্ততা সত্ত্বেও ছাত্রদেরকে পড়াতেন এবং মৌলভী মুফতী ছদরুদ্দীনের মত নিজের অবসর সময়ের কিছু না কিছু অংশ ছাত্রদের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন।
শাহ ছাহেবের সাথে ফযলে হক খয়রাবাদীর দ্বৈরথ :
ফযলে হক খয়রাবাদীর জীবন-জীবিকা নিয়ে আমাদের সমালোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। কেননা তিনি মৌলভী হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। কিন্তু (সমালোচনা এজন্য করতে হয় যে) ইংরেজ সরকারের চাকুরীজীবী হয়ে তিনি নিজেকে আলেমদের গন্ডি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন। লোকেরা যখন মাওলানা ইসমাঈল শহীদের বক্তব্য সমূহের উপর নতুন নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন এবং শহরে খামাখা সমালোচনার ঢেউ উঠল; তখন মৌলভী ছাহেবও সেদিকে মনোনিবেশ করলেন এবং তিনিও তার সেরেস্তাদারীর মঞ্চ থেকে আল্লামা ইসমাঈল শহীদের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হওয়া পসন্দ করলেন। আমাদের বলার সুযোগ নেই যে, লোকজনের ছড়ানো গুজবের ব্যাপারে মৌলভী ছাহেবের কি ধারণা ছিল বা তিনি সাধারণ জনতার আজেবাজে কথাকে কতটুকু সঠিক মনে করতেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যায় যে, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারী ক্ষমতা প্রয়োগের প্রথম পরীক্ষাটি আপতিত হয়েছিল শাহ ইসমাঈল শহীদের উপর। যিনি নিশ্চিতরূপে তাঁর উপর আরোপিত ঐ সকল অপবাদ হ’তে পুরোপুরি মুক্ত ছিলেন। নতুন নতুন ষড়যন্ত্র হ’তে লাগল। আর প্রতিদিন এ ব্যাপারে শলাপরামর্শ হ’তে লাগল যে, যেভাবেই হোক মওকামত ইসমাঈল শহীদকে অপমানিত করতে হবে। রেজিডেন্টের (ভারতে ব্রিটেনের রাণীর প্রতিনিধি) কর্ণকুহরেও এ কথা প্রবেশ করানো হ’ল যে, মাওলানা শহীদের ওয়াযের ফলে শান্তি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতদসত্তেবও পরিবেশ ভালই ছিল। কেননা ফযলে হক খয়রাবাদী ছাহেবের ক্রোধ তখন ততটা উচ্চমাত্রার ছিল না। তিনি স্রেফ এটিকে একটি সাধারণ বিষয় মনে করে খুব একটা জোরও দিচ্ছিলেন না।
মুনাযারার সূচনা :
একদিন মাওলানা শহীদ যখন নিজ বাড়ীতে ছাত্রদের পড়াচ্ছিলেন তখন খয়রাবাদী ছাহেব কতিপয় ছাত্রকে বাহাছ করার জন্য পাঠান। তিনি তাদেরকে পাঠ্যপুস্তক সমূহের পৃষ্ঠাও দেখিয়ে দিলেন এবং তাদেরকে এটাও শিখিয়ে দিলেন যে, যদি গন্ডগোল বেঁধে যায় তবুও তোমরা থামবে না। আমি সব বন্দোবস্ত করব। বাহাছের জন্য আসা এই ছাত্রদের প্রধান ছিল আব্দুছ ছামাদ নামের একজন বাঙ্গালী। সম্ভবত ফযলে হক ছাহেবের ছাত্রদের মধ্যে সে অসাধারণ মেধাবী হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল। সে কখনো কখনো সম্মানিত ব্যক্তিদেরও কিছু মনে করত না। আল্লাহ প্রদত্ত তার মেধা ও বুঝানোর ক্ষমতা তাকে এতটা আলোড়িত করেছিল যে, সে বড় বড় ব্যক্তিদের ভুল ধরতেও সামান্যতম চিন্তা-ভাবনা করত না। সংখ্যায় তারা আট-দশজন ছিল যারা মাওলানা শহীদের সাথে বাহাছ করতে এসেছিল।
আমরা বলতে পারি না যে, শাহ ইসমাঈল শহীদ তাঁর তর্কবাগীশ বন্ধু খয়রাবাদী সম্পর্কে কতটুকু ওয়াকিফহাল ছিলেন। তবে বিভিন্নভাবে এটা প্রমাণিত হয় যে, তিনি খুব ভাল করেই জানতেন যে, শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে খয়রাবাদী ছাহেবই হ’লেন তার এক নম্বর বিরোধী।
যখন বাহাছকারী দলটি পৌঁছল তখন ইসমাঈল শহীদ (রহঃ) বুখারী পড়াচ্ছিলেন। এই ছাত্ররা চুপচাপ বসে দরস শোনা এবং পড়ানো শেষ হওয়ার পর আলোচনা করার পরিবর্তে একটি ফিৎনামূলক কথা ছুঁড়ে দিল যে, ‘আপনি আমাদের সাথে বাহাছ না করা পর্যন্ত কোন ছাত্রকে পড়াবেন না। আপনার কথায় জাহেলরা প্রভাবিত হয় এবং আপনাকে আলেম মনে করে আপনার কথা মেনে নেয়’।
এটা এমনই বেআদবীপূর্ণ ও অভদ্রচিত আক্রমণ ছিল যে, দুর্বল থেকে দুর্বলতম ব্যক্তিও ক্রোধে জ্বলে উঠবে। আর প্রিয় শহীদ তো তখনো যুবকই ছিলেন। অযাচিত এই হস্তক্ষেপে স্বভাবতই প্রিয় শহীদ ছাহেব মনে মনে ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু কুরআনে বর্ণিত ‘যে রাগ দমন করে ও ক্ষমা করে দেয়’-আয়াতটি তার রাগকে প্রশমিত করে দেয়। তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীলতা ও নম্রতার সাথে এই জবাব দিলেন যে, ‘আমি যে কাজ করছি তা সঠিকভাবে হোক বা না হোক, তোমাদের উচিত হ’ল চুপ থাকা। যখন আমার উপর অর্পিত দায়িতব শেষ করব তখন তোমরা আমাকে যেকোন প্রশ্ন করতে পার’।
এই জবাব ধারণাতীতভাবে সংযত ছিল। এরপরও কিভাবে এটা সম্ভব ছিল যে, এই সংযত উত্তর তাদের প্রবল হিংসার আগুনকে হিমশীতল করে দিতে পারে? না পারেনি। তারা আরো কঠোরতার সাথে জবাব দিল যে, ‘আমরা আপনাকে এই কাজ থেকে এজন্য বাধা দিচ্ছি যাতে মানুষ অন্ধকার ও গোমরাহীর মধ্যে পতিত না হয়। আর হানাফী হওয়ার কারণে আমাদের অবশ্য কর্তব্য হ’ল, আমরা কখনো ঐ কাজ করতে দিব না। বিশেষ করে আমাদের চোখের সামনে, যাতে আল্লাহর দ্বীনে ফাটল সৃষ্টি না হয়’।
তাদের এই সীমাহীন উত্তপ্ত বাক্যবাণ ইসমাঈল শহীদের ছাত্রদেরকে উত্তেজিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। যদি উস্তাদের প্রভাববিস্তারী গলার স্বর তাদেরকে বাধা না দিত, তাহ’লে অবশ্যই মাথা ফাটাফাটি হয়ে যেত। আর সেই চড়া ও প্রভাব বিস্তারকারী আওয়াযটি ছিল এরূপ যে- তোমরা মোটেই ক্রুদ্ধ হবে না। তারা তো আমাকে কিছুই বলেনি। যতটা আমাদের রাসূল (ছাঃ)-এর বিরোধীরা অভদ্র ভাষায় তাকে সম্বোধন করত। অথচ তিনি উফ শব্দটিও উচ্চারণ করতেন না। বরং তিনি এই দো‘আ করতেন যে, ‘আল্লাহ তোমাদের উপর রহম করুন’। তোমরা কি সেই ঘটনাটি ভুলে গেছ যে, এক ঋণদাতা ইহূদী এসে রাসূল (ছাঃ)-এর চাদর ধরে টানাটানি শুরু করেছিল এবং এমন অভদ্র ভাষায় নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট ঋণের টাকা চেয়েছিল যে, ওমর (রাঃ) এতে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাকে বাধা দিয়ে বলেছিলেন, ‘সে তো আমার চাদর টানল। তুমি কেন রেগে যাচ্ছ?’। ছাত্ররা এ কথা শ্রবণ করার সাথে সাথে ঢেউ-তরঙ্গহীন সমুদ্রের ন্যায় শান্ত হয়ে গেল। তারা মূর্তির মত স্বীয় উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষকের দিকে তাকাতে লাগল।
মুনাযারা[2] :
এরপর আল্লামা শহীদ (বাহাছ করতে আসা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে) বললেন, ‘ভাইয়েরা! তোমাদের যা মন চায় প্রশ্ন কর’। তারা সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাইল, আমরা শুধু আপনার কাছে এটাই জানতে চাই যে, আপনি ইমাম আবূ হানীফাকে কেমন মনে করেন? তিনি বললেন, ‘তাকে একজন যবরদস্ত ফক্বীহ এবং মুসলমানদের গর্ব মনে করি’।
ছাত্ররা : তাঁর ফিক্বহী মাসায়েল কি আপনি গ্রহণ করেন বা মানেন?
ইসমাঈল শহীদ : অধিকাংশই তো গ্রহণ করি। কিন্তু কিছু মাসআলা যেগুলি হাদীছে আছে...। তিনি কথা শেষ না করতেই তারা বলে উঠল যে, ‘আপনি এতটাই বুঝেন যে, আপনি আবূ হানীফার কিছু ফিক্বহী মাসআলাকে অপসন্দ এবং অধিকাংশকে পসন্দ করার ইখতিয়ার রাখেন’?
ইসমাঈল শহীদ : না, কখনই না। আমি এটা দাবী করিনি। বরং এটা বলছি যে, ইমামে আযম (রহঃ)-এর কাছে যে হাদীছ পৌঁছেনি এবং যেখানে তিনি স্বীয় রায় বর্ণনা করেছেন আর তার বিপক্ষে হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদের অবশ্য কর্তব্য হ’ল, আমরা নবীর হাদীছের উপর অগ্রণী হয়ে ইমামে আযম (রহঃ)-এর রায়কে গ্রহণ করব না।
ছাত্ররা : যারা এর বিপরীত কাজ করে তাদেরকে আপনি কি বলবেন?
ইসমাঈল শহীদ :
এ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত আমি কোন কিছু চিন্তা করিনি। আমার ধারণা সঠিক হোক
বা না হোক, এরপরও আমি এতটুকু বলতে চাই যে, তারা ঠিক কাজ করে না। কেননা ইমাম
ছাহেব নিজেই বলেছেন, ‘যদি আমার মতের বিপক্ষে কোন হাদীছ পাওয়া যায়, তাহ’লে
তুমি আমার সেই মতকে মানবে না’।[3]
ছাত্ররা : ইমামে ছাহেব কি হাদীছ জানতেন না?
ইসমাঈল শহীদ : জানবেন না কেন? কিন্তু সেসময় হাদীছ জালকরণের এমন গযবপূর্ণ সময় ছিল যে, লোকেরা তাৎক্ষণিকভাবে হাদীছ গ্রহণ করতে ভয় করত। সেকারণ তিনি অধিকাংশ মাসআলা রায়ের দ্বারা সমাধান করতেন।
ছাত্ররা : এর ফলে কি তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন?
ইসমাঈল শহীদ : না। আদৌ নয়। তিনি প্রত্যেকটি মিথ্যা অপবাদ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। হ্যাঁ, যদি তিনি এটা বলতেন যে, ছহীহ হাদীছ পাওয়ার পরও তোমরা আমার কথার উপরই আমল করে যাবে তাহ’লে অভিযোগ করা যেত। কিন্তু যেহেতু তিনি এটা বলেননি সেহেতু কোনভাবে তার উপর যে অপবাদ আরোপ করবে, সে মিথ্যুক হিসাবে পরিগণিত হবে।
এই প্রশ্ন-উত্তরের মধ্যে এমন কোন কথা ছিল না যাতে বাহাছকারীদের বা প্রশ্নকারীদের চাহিদা পূরণ হয়নি। এতদসত্তেবও যেহেতু তখনও তাদের চক্ষু রাগে লাল হয়েছিল এবং তারা ক্রোধে থরথর করে কাঁপছিল, সেহেতু তারা অসংলগ্ন প্রশ্ন করতে লাগল।
ছাত্ররা : এমন মাসায়েলও কি আছে যেগুলিতে ইমাম ছাহেব অন্য তিনজন ইমামের উপর অগ্রাধিকার লাভ করতে পারেন?
ইসমাঈল শহীদ : এর জবাব প্রদানের জন্য আমি এখনও প্রস্ত্তত নই।
ছাত্ররা : তাহ’লে আপনার কিইবা জানা আছে? আপনি তো একেবারেই কিছু জানেন না।
ইসমাঈল শহীদ : আমি এখন পর্যন্ত নিজের বিদ্যাবত্তার দাবী করিনি। তোমরা আমাকে যেটা বলছ, সেটা পরিষ্কার তোমাদের বাড়াবাড়ি।
ছাত্ররা : বাড়াবাড়ি নয়। আমাদের মাযহাব এই যে, ইমামে আ‘যম অন্য তিনজন ইমামের চেয়ে অধিকতর শ্রেষ্ঠ। আর আমরা একে প্রমাণ করতে সক্ষম।
ইসমাঈল শহীদ : এমনটা হ’তে পারে। আর তোমরা তা প্রমাণও করতে পার। কিন্তু আমার কাছে যেহেতু চার জন সম্মানিত ইমামের যোগ্যতা পরিমাপক কোন মানদন্ড নেই, সেহেতু কিভাবে আমি আমার মতামত দিতে পারি? আমি চারজনকেই সম্মান করা আবশ্যক মনে করি। আর এটাই আমার মাযহাব যে, তারা ইসলাম এবং মুসলমানের জন্য যা কিছু খিদমত করেছেন মহান আল্লাহ সেগুলির বড় পুরস্কার তো তাদেরকে দিয়েই থাকবেন। কিন্তু এর বিপরীতে আমাদের স্কন্ধে তাদের এতটাই ইহসান রয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের উপর থাকবে যে, তারা এ থেকে বিমুক্ত হ’তে পারবেন না। তথা তাদের ইহসান সর্বদাই অব্যাহত থাকবে।
এটা শুনে ছাত্ররা চুপ হয়ে গেল। এখন তাদের বেশী কঠোরতা করারও সুযোগ থাকল না। আব্দুছ ছামাদ বাঙ্গালী সবার পক্ষ থেকে স্রেফ শিশুসুলভ অসংলগ্ন প্রশ্ন করছিল এবং দাঁতভাঙ্গা অথচ মনজয়কারী জবাব পাওয়ার পরও তার মন শান্ত হচ্ছিল না। সে ভাবতে ভাবতে ঐতিহাসিক প্রশ্নসমূহ করতে লাগল। সে বলল, ‘আপনি বড় আলেম। আপনার বংশও বড়ই মর্যাদাপূর্ণ। আপনি সর্ববিষয়ে জ্ঞানার্জন করেছেন। আপনি এটা তো বলুন যে, ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-কে ছিলেন? তিনি কোথায় থাকতেন? তিনি কোন্ কোন উস্তাদ-এর নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন? আর কারা কারা তাঁর ছাত্র ছিলেন? কিছুটা তো জানা হোক যে, আপনি ইমামদের সম্পর্কে কতটুকু অবগত।
আল্লামা শহীদ : (মুচকি হাসির ভঙ্গিতে) এই দীর্ঘ আলোচনা করার জন্য তুমি আমাকে অযথা কষ্ট দিচ্ছ। বইপত্রে এর বিশদ বিবরণ পড়ে রয়েছে। সেগুলি দেখলে এসবের বিবরণ সব খুব সুন্দরভাবে জানা যাবে।
ছাত্ররা : ক্রুর হাসি হেসে তারা বলল, আমরা তো জানিই যে, বইপত্রে সবকিছু লেখা আছে। আমরা তো এটা দেখতে চাই যে, আপনিও কিছু জানেন কি-না। নাকি এমনিতেই আমরা আপনার মিথ্যা ইলমের প্রশংসা শুনি।
ইসমাঈল শহীদ : (জোরালো হাসি দিয়ে বললেন) তোমরা যদি আমার পরীক্ষা নিতে এসে থাক তাহ’লে তোমাদেরকে প্রথমেই পুরস্কারের ব্যাপারে চিন্তা করা উচিৎ। কেননা আমি যদি তোমাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই তাহ’লে তোমাদেরকে অবশ্যই পুরস্কার দিতে হবে। আর যদি তোমরা স্রেফ উপকৃত হওয়ার জন্য জানতে চাও, তাহ’লে তোমাদের এত কঠোর হওয়া উচিৎ হচ্ছে না। এভাবে কঠোরতার সাথে বাতচিৎ করা ছাত্রদের আচরণ নয়।
মাওলানা শহীদের এই বক্তব্য আব্দুছ ছামাদ বাঙ্গালীকে ঘাবড়িয়ে দিল। এবার সে কিছুটা লজ্জিত হ’ল। কিন্তু তার মনের মধ্যে অনুসন্ধিৎসা সৃষ্টি হচ্ছিল। এজন্য সে নিজের যিদ ও প্রশ্ন করা হ’তে বিরত হচ্ছিল না। তবে সে অনেক নরম হয়ে গেল এবং মাওলানা শহীদের নম্র আচরণ তার মনে ধরল। অতঃপর তার এই সাহস হ’ল না যে, সে (মাওলানা শহীদকে) বলবে, আমি আপনার পরীক্ষা নিতে এসেছি। বরং তখন সে কিছুটা নম্রস্বরে বলল, আচ্ছা ইস্তেফাদার জন্যই আপনি আমার প্রশ্নগুলির জবাব দিন।
ইসমাঈল শহীদ : এতে কোন সমস্যা নেই। অত্যন্ত আনন্দচিত্তে আমি তোমাদের আদেশ পালন করার জন্য প্রস্ত্তত আছি। এ কথা বলে তিনি সেসব ঐতিহাসিক প্রশ্নগুলির জবাব দিতে লাগলেন।
তিনি বললেন, ইমাম আবূ হানীফার আসল নাম নু‘মান। উপনাম আবূ হানীফা। উপাধি ‘ইমামে আ‘যম’। তার বংশপরিক্রমা এরূপ- ‘নু‘মান বিন ছাবেত যূতী বিন মাহ বিন আসকার বিন খুফইয়ান ইবনু শাহ। তিনি ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছাবেত প্রথমে হযরত আলী (রাঃ)-এর খেদমতে কূফায় হাযির হন। অনারবী উপঢৌকন ছাড়া তিনি ডিমের অমলেট নিজের বাবুর্চি দ্বারা রান্না করিয়ে আলী (রাঃ)-এর খেদমতে পেশ করেন। হযরত আলী (রাঃ) ডিমের অমলেট এবং অনারবী উপঢৌকন পেয়ে খুব খুশী হন এবং ছাবেতের কল্যাণের জন্য দো‘আ করেন। যখন ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বড় হ’লেন তখন তিনি ইমাম শা‘বী (রহঃ)-এর উৎসাহে ইলম অর্জনের প্রতি মনযোগী হন। এটি খুব জটিল আলোচনা যে, তিনি নিজ চোখে কোন ছাহাবীকে দেখেছিলেন এবং তাবেঈ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন কি-না। যেহেতু আমি এ বিষয়ে সমালোচনা করতে চাই না সেহেতু ইতিহাসের গ্রন্থ সমূহের উপর নির্ভর করে এটা বলতে পারি যে, তিনি শৈশবকালে ছাহাবী আনাস (রাঃ)-কে দেখেছিলেন। যিনি রাসূল (ছাঃ)-এর খাদেম ছিলেন। ইমাম ছাহেবের শৈশব ও তারুণ্যের সময়টা একটি দুর্যোগপূর্ণ সময় ছিল। এমন সময় বিভিন্ন কারণে তিনি ইলমে কালামের দিকে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু সঙ্গী-সাথীর উৎসাহে হাম্মাদ (রহঃ)-এর দরসের হালাকায় শামিল হয়েছিলেন। হাম্মাদ ১২০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। বস্ত্তত তখনও আবূ হানীফা হাদীছ শাস্ত্রে পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেননি। এরপরও তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল এবং সমকালীন প্রয়োজনীয় ফিক্বহী মাসআলা-মাসায়েল যাচাই-বাছাই করতেন।
এরপর তিনি কাতাদা (রহঃ)-এর ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি সালমান ও সালেম বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ)-এর কাছে হাদীছ পড়েন। সুলায়মান ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পবিত্র স্ত্রীগণের অন্যতম হযরত মায়মূনা (রাঃ)-এর গোলাম এবং মদীনার সাতজন ফকীহর মধ্যে তিনি স্বীয় জ্ঞান-গরিমায় দ্বিতীয় স্থানে। এরপর বৈরূত শহরে (যেটি দামেশকের বন্দরে অবস্থিত) তিনি আওযাঈর নিকট হাদীছের দরস গ্রহণ করেন। এরপর হযরত ইমাম বাকের (রহঃ)-এর দরসের মজলিসে অংশগ্রহণ করার বড় সৌভাগ্য অর্জন করেন। যখন তিনি ব্যাপক প্রসিদ্ধি অর্জন করলেন এবং তার হাযার হাযার ছাত্র তৈরী হয়ে গেল তখন কূফার গভর্ণর ইয়াযীদ বিন হুবায়রা তাকে সেরেস্তাদার এবং অফিসার নিয়োগ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। ইয়াযীদ তাকে অনেক বুঝান এবং মৌখিকভাবে ধমক দেন। কিন্তু তিনি তার অস্বীকৃতির উপরই অটল থাকেন। নিরাশ হয়ে গভর্ণর তাকে বেত্রাঘাত করেন। অনন্তর তিনি বেত্রাঘাত খেয়েও অস্বীকৃতি জ্ঞাপনের উপরই অবিচল ছিলেন। প্রতিদিন ইয়াযীদ ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-কে তার সামনে ডেকে পাঠাতেন এবং সেরেস্তাদারের পদ গ্রহণের কথা বলতেন এবং অন্য পাশে বেত রেখে দিয়ে বলতেন, ‘এই দায়িত্ব গ্রহণ কর। নতুবা বেত মওজূদ রয়েছে’। তিনি (ইমাম আবূ হানীফা) বলতেন, ‘আমি যখন অস্বীকার করেছি তখন আমাকে মেরে ফেললেও আমি (এই দায়িত্ব) গ্রহণ করব না। আমার দ্বারা এটা কখনোই হবে না যে, তুমি একজন মুসলিমকে হত্যা করার হুকুম দিবে এবং আমি তাতে সীলমোহর মেরে দিব’। যখন তিনি খুবই দুর্বল হয়ে পড়লেন তখন তিনি (গভর্ণর) ইমাম ছাহেবকে ছেড়ে দিলেন। তিনি মুক্তি পাওয়া মাত্রই মক্কা মু‘আয্যামায় চলে যান এবং ১৩৭ হিজরী পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। বরং এ মর্মে একটি বর্ণনাও এসেছে যে, তিনি ৩৮ বছর সেখানেই অতিবাহিত করেন।
যখন ১৩২ হিজরীতে বনূ উমাইয়া বংশের শাসন শেষ হয়ে যায় এবং শাসনক্ষমতা রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা হযরত আববাস (রাঃ)-এর বংশধরদের হাতে আসে তখন আবুল আববাস সাফ্ফাহ প্রথম শাসক হন। তিনি খুবই কম সময় শাসনকার্য পরিচালনার পর মৃত্যুবরণ করেন।
তারপর তার ভাই মানছূর খেলাফতের আসনে আসীন হন। কিন্তু তিনি কূফার পরিবেশ খেলাফতের প্রতিকূল দেখে বাগদাদে নতুন রাজধানীর ভিত্তি স্থাপন করেন। মানছূরের সাথে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর কঠিন শত্রুতা ছিল। তিনি তাকে হত্যা করতে চাইতেন। শত্রুতার কারণ স্রেফ এটা ছিল যে, তিনি ইবরাহীমের পরিচালিত বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইমাম ছাহেব মানছূরের এই খুনী মনোভাব সম্পর্কে অনবগত ছিলেন না। যখন তিনি এটা দেখলেন যে, মানছূর বাগদাদে চলে গিয়েছেন তখন তিনি মক্কা হ’তে কূফায় চলে আসেন। কিন্তু মানছূর তার রাজধানী বাগদাদে স্থানান্তর করলেও কূফায় তার হুকূমত চলছিল। তিনি দ্রুত আবূ হানীফাকে বাগদাদে ডেকে পাঠান এবং শহরে প্রবেশের পরের দিনই দরবারে হাযির হওয়ার হুকুম দেন। দরবারে রবী‘ নামক একজন ব্যক্তি ইমাম আবূ হানীফাকে নিয়ে আসলেন। তিনি দারোয়ান ছিলেন। ইমাম আবূ হানীফা সম্পর্কে দরবারে পেশ করার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘ইনি বর্তমানে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আলেম’। মানছূর তাঁকে হত্যা করার ছুতো খুঁজছিলেন। কিন্তু এরপরও জ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতাসূলভ মানসিকতা তাকে ইমাম আবূ হানীফার ইলমের কদর করতে বাধ্য করে। এজন্যই তিনি তাকে বিচারক পদ গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করেন’।
ইমাম ছাহেব দ্ব্যার্থহীনভাবে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বললেন যে, ‘আমি এই পদে আসীন হওয়ার যোগ্যতা রাখি না’। মানছূর ক্রোধে ফেটে পড়লেন এবং বললেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ’। ইমাম ছাহেব বললেন, ‘যদি আমি মিথ্যাবাদী হই তাহ’লে আমার কাযী হওয়ার যোগ্যতা না থাকার দাবী সত্য। কেননা মিথ্যুক ব্যক্তি কাযী হিসাবে নিয়োগ পেতে পারেন না’। অতঃপর ইমাম ছাহেব অনেকগুলি কারণ বর্ণনা করলেন যে, ‘এই কারণগুলির জন্য আমি কাযীর পদ গ্রহণ করতে পারি না’। মানছূর কসম খেয়ে বললেন, ‘অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে’। এর জবাবে ইমাম ছাহেবও অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে কসম খেয়ে বললেন, ‘আমি কস্মিনকালেও এই দায়িত্ব গ্রহণ করব না’। রবী‘ রেগে গিয়ে কাঁপতে লাগলেন এবং উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন যে, আবূ হানীফা! তুমি আমীরুল মুমিনীনের বিপরীতে কসম খাচ্ছ! ইমাম ছাহেব জবাব দিলেন, হ্যাঁ। কেননা আমীরুল মুমিনীনের আমার চেয়ে কসমের কাফফারা আদায় করা অনেক সহজ।
যখন এই প্রত্যুত্তর আসল তখন মানছূর তাকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন। চার বছর তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন। ১৫০ হিজরীর ১৯শে রজব তিনি কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন।
ইমাম আবূ হানীফার যদিও অসংখ্য ছাত্র ছিল। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবূ ইউসুফ ছিলেন সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত।
মাওলানা ইসমাঈল শহীদ এ পর্যন্ত পৌঁছতেই আব্দুছ ছামাদ তার পায়ে পড়ল। সে কঠোরতার সাথে যা কিছু বলেছিল, সেজন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইল। সে তাঁর কঠিন ভক্ত হয়ে গেল। আর তার সাথে যারা এসেছিল সবাই তাঁর (শহীদ) আনুগত্য কবুল করল। মৌলভী ফযলে হক খয়রাবাদী ছাহেব যখন এ ঘটনা জানলেন তখন তিনি ক্রুদ্ধ হ’লেন এবং তিনি মাওলানা ইসমাঈল শহীদকে কষ্ট দেয়ার জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা অাঁটা শুরু করলেন।[4]
[1]. মৌলভী মরহূম আমীর আহমাদ ছাহেব মৌলভী ফযলে হক ছাহেবের গ্রন্থ সমূহ (হাশিয়া সমূহ), কবিতা ও অন্যান্য বিষয়ের উপর ১৩শ অভিযোগ উত্থাপন করেছেন এবং এই পুস্তিকার নামকরণ করেছেন ‘তেরাহ ছাদী’ (১৩শত ভুল)। মাওলানা শিবলী নু‘মানী এই বিশাল সংখ্যক অভিযোগের জবাব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুযোগ হয়নি।
[2]. ‘সার দিলী’-গ্রন্থের ৩৫৫ হ’তে ৪০১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এই দীর্ঘ মুনাযারা বা সুওয়াল-জওয়াবের আলোচনাটি লিপিবদ্ধ রয়েছে।
[3]. ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মূল বক্তব্যটি হ’ল,إِذَا صَحَّ الْحَدِيْثُ فَهُوَ مَذْهَبِيْ ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো সেটাই আমার মাযহাব’। দ্রঃ ইবনু আবেদীন, শামী হাশিয়া রাদ্দুল মুহতার ১/৬৭; আব্দুল ওয়াহহাব শা‘রানী, মীযানুল কুবরা ১/৩০।-অনুবাদক।
[4]. হায়াতে তাইয়েবাহ (লাহোর : ১৯৫৮, ৩য় সংস্করণ), পৃঃ ৯৮-১১১।