হাদীছ ও কুরআন পরস্পরের পরিপূরক। উভয়টিই ইসলামী শরী‘আতের অপরিহার্য দু’টি অঙ্গ। তবে হাদীছ বা সুন্নাহর মূল পরিচয় হ’ল তা কুরআনুল কারীমের ব্যাখ্যা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে তাঁর নবুঅত ও রিসালাতের জন্য মনোনীত করতঃ তাঁর উপর কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ করেছিলেন এবং তাঁকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে মানুষের কাছে কুরআন ব্যাখ্যা করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ. ‘আর আমরা তোমার নিকটে কুরআন নাযিল করেছি, যাতে তুমি লোকদের নিকট বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দাও, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে’ (নাহল ১৬/৪৪)

শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) উপরোক্ত আয়াতে উল্লিখিত البيان বা বর্ণনা শব্দটির দু’ধরনের অর্থ করেছেন[1] :

ক. কুরআনের শব্দ ও বিন্যাস উপস্থাপন করা(بيان اللفظ ونظمه) আর তার অর্থ হচ্ছে- কুরআন মাজীদ প্রচার করা, তা গোপন না করা এবং রাসূল (ছাঃ)-এর হৃদয়ে আল্লাহ যেভাবে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তা ঠিক সেভাবেই উম্মতের কাছে পেঁŠছে দেয়া। আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য-يَا أَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ، ‘হে রাসূল! তোমার প্রতি তোমার প্রভুর পক্ষ হ’তে যা নাযিল হয়েছে (অর্থাৎ কুরআন), তা মানুষের কাছে পৌঁছে দাও’ (মায়েদাহ ৫/৬৭)। আয়েশা (রাঃ) বলেছেন,وَمَنْ زَعَمَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَمَ شَيْئًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللهِ الْفِرْيَةَ، وَاللهُ يَقُوْلُ : يَا أَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ- ‘রাসূল (ছাঃ) কুরআনের কিছু অংশ গোপন করেছেন- কেউ যদি এমন ধারণা পোষণ করে, তাহ’লে সে আল্লাহর উপর মস্তবড় অপবাদ আরোপ করল। অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘হে রাসূল! তোমার প্রতি তোমার প্রভুর পক্ষ হ’তে যা নাযিল হয়েছে (অর্থাৎ কুরআন), তা মানুষের কাছে পৌঁছে দাও। যদি না দাও, তাহ’লে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছে দিলে না’ (মায়েদাহ ৫/৬৭)।

মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন,وَلَوْ كَانَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَاتِمًا شَيْئًا مِمَّا أُنْزِلَ عَلَيْهِ لَكَتَمَ هَذِهِ الْآيَةَ : وَإِذْ تَقُوْلُ لِلَّذِيْ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ أَمْسِكْ عَلَيْكَ زَوْجَكَ وَاتَّقِ اللهَ وَتُخْفِيْ فِيْ نَفْسِكَ مَا اللهُ مُبْدِيْهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَاهُ ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার কোন কিছু যদি তিনি গোপন করতেন তাহ’লে এ আয়াতটি গোপন করতেন- ‘স্মরণ কর, আল্লাহ যাকে (যায়েদ ইবনুল হারেছা) অনুগ্রহ করেছেন এবং তুমিও যার প্রতি অনুগ্রহ করেছ, তুমি তাকে বলেছিলে, ‘তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ এবং আল্লাহকে ভয় কর’। তুমি তোমার অন্তরে যা গোপন করেছ আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিয়েছেন; তুমি মানুষকে ভয় করছিলে, অথচ আল্লাহকেই ভয় করা তোমার পক্ষে অধিকতর সংগত’ (আহযাব ৩৩/৩৭)।

খ. মুসলিম উম্মাহর জন্য কুরআন মাজীদের যে সকল শব্দ, বাক্য বা আয়াত ব্যাখ্যার প্রয়োজন অনুভূত হয়েছে, তা বর্ণনা করা। মুজমাল (সংক্ষিপ্ত), আম (ব্যাপক) ও মুতলাক (শর্তহীন) আয়াতসমূহের ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটা বেশী প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে হাদীছ মুজমালকে মুবাইয়ান (বিষদভাবে ব্যাখ্যা) করে, আমকে খাছ (নির্দিষ্ট) করে এবং মুতলাককে মুকাইয়াদ (শর্তযুক্ত) করে। এটা যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কথা দ্বারা হয়ে থাকে, তেমনি তাঁর কাজ ও অনুমোদন দ্বারাও হয়ে থাকে।[2]

ইমাম শাফেঈ (২০৪হি.) বলেন, وسنة رسول الله مبينة عن الله معنى ما أراد دليلا على خاصة وعامة...ولم يجعل هذا لاحد من خلقه غير رسوله، ‘রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ হ’ল আল্লাহর উদ্দেশ্য বর্ণনা করা, যা বিশেষ ও সাধারণ সকল বিষয়ে শরী‘আতের দলীল। আল্লাহ এ অধিকার তাঁর সৃষ্টিরাজির মাঝে রাসূল (ছাঃ)-কে ব্যতীত আর কাউকে প্রদান করেননি’।[3] তিনি আরো বলেন, جميع ما تقوله الأمة شرح للسنة وجميع السنة شرح للقرآن ‘উম্মতের সকলের বক্তব্য হ’ল সুন্নাহর ব্যাখ্যা এবং সমগ্র সুন্নাহ হ’ল কুরআনের ব্যাখ্যা।[4] অন্যত্র তিনি বলেন,كل ما حكم به رسول الله صلى الله عليه وسلم فهو مما فهمه من القرآن، ‘রাসূল (ছাঃ) যা কিছু হুকুম করেছেন, তা কুরআন থেকে প্রাপ্ত মর্মার্থ অনুযায়ী করেছেন’।[5]

ইমাম শাত্বিববী (৭৯০হি.) বলেন,فلا تجد في السنة أمرًا إلا والقرآن قد دل على معناه دلالة إجمالية أو تفصيلية، ‘তুমি সুন্নাহে এমন কোন বিষয় খুঁজে পাবে না, যার উপর কুরআন মর্মগতভাবে সংক্ষেপে বা বিস্তারিত আকারে আলোকপাত করেনি’।[6] তিনি আরো বলেন,المعبر في السنة هو المراد في الكتاب؛ فكأن السنة بمنزلة التفسير والشرح لمعاني أحكام الكتاب، ‘সুন্নাহে বর্ণিত বিষয়টি মূলতঃ কুরআনেরই মর্মার্থ। ফলে সুন্নাহ যেন কুরআনের তাফসীরের স্থলাভিষিক্ত এবং কুরআনে বর্ণিত হুকুম-আহকামের মর্মার্থ ব্যাখ্যাকারী’।[7]

ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,عَلَيْكَ بالسُّنَّة؛ فإنها شَارِحةٌ للقُرْآنِ وَمُوَضِّحةٌ له ‘তোমার উপর সুন্নাহকে অনুসরণ করা অপরিহার্য। কেননা সুন্নাহ হ’ল কুরআনের ব্যাখ্যাকারী এবং অস্পষ্ট বিষয়কে সুস্পষ্টকারী’।[8]

সুতরাং বিদ্বানদের ঐক্যমতে হাদীছ হ’ল কুরআনের বিশ্বস্ততম ব্যাখ্যা। হাদীছ কুরআনের অস্পষ্টতা দূর করে, দুর্বোধ্য বিষয়কে বোধগম্য করে, সংক্ষিপ্ত বিষয়কে বিস্তারিত করে, শর্তহীন বিষয়ে শর্তাধীন করে, সাধারণ বিষয়কে বিশেষায়িত করে, কুরআনের হুকুম-আহকাম ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে। এছাড়া কুরআনে বর্ণিত হয়নি এমন আহকামও হাদীছে বর্ণিত হয়ে থাকে, যা মূলতঃ কুরআনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই প্রকৃতপক্ষে হাদীছ ব্যতীত কুরআনকে অনুধাবন করা অসম্ভব। সম্ভবত হাদীছের এই ভূমিকার প্রতি লক্ষ্য রেখে ইমাম আল-আওযাঈ (৮৮-১৫৭হি.) বলেন,الكتاب أحوج الي السنة من السنة إلي الكتاب، ‘হাদীছ কুরআনের উপর যতটা নির্ভরশীল, কুরআন হাদীছের উপর ততোধিক নির্ভরশীল’।[9] অনুরূপভাবে বছরী তাবেঈ মুতাররিফ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আশ-শিখখীর (৯৫হি.)-কে যখন বলা হ’ল, ‘আপনি কেবল কুরআন দিয়েই আলোচনা করুন’। তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি কুরআনের বিকল্প কিছুর প্রত্যাশী নয়, আমি কেবল এ ব্যাপারে তাঁর (রাসূল ছা.) ব্যাখ্যাই কামনা করি যিনি কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী’।[10] সুতরাং কুরআন ও তার ব্যাখ্যাকারী হিসাবে হাদীছ ইসলামী শরী‘আতের সম মর্যাদাসম্পন্ন দু’টি মৌলিক উৎস। এজন্যই রাসূল (ছাঃ) বর্ণনা করেছেন,تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ، ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে গেলাম, তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না যতক্ষণ তোমরা তা অাঁকড়ে ধরে থাক- আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ’।[11]

মোটকথা হাদীছ বা সুন্নাহ তথা রাসূল (ছাঃ) যা কিছু প্রবর্তন করেছেন, তা অনুসরণ করা মূলতঃ আল্লাহরই আনুগত্য এবং তা থেকে বিরত থাকা মূলতঃ আল্লাহর অবাধ্যতারই শামিল। যে ব্যাপারে মানুষের ওযর পেশ করার যেমন কোন সুযোগ নেই, তেমনি তাঁর রাসূলের অনুসরণ ব্যতীত কোন গত্যন্তও নেই।[12]

ইমাম শাফেঈ (২০৪ হি.) কুরআনের সাথে হাদীছের সম্পর্ককে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন।[13]

ক. কুরআনে কোন বিষয়ে যে আয়াত নাযিল হয়েছে, সে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) একইরূপ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

খ. কুরআনে কোন বিষয়ে একটি বাণী নাযিল হয়েছে, সে বাণী সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন এবং কিভাবে তা খাছভাবে বা আমভাবে ফরয করা হয়েছে, আর বান্দাকে কিভাবে তা আদায় করা উচিৎ তার বিবরণ দিয়েছেন।

গ. হাদীছে এমন কিছু বিধান রয়েছে, যে সম্পর্কে মূলতঃ কুরআনে কোন আয়াত নাযিল হয়নি। এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন কারো বক্তব্য হ’ল, যেহেতু আল্লাহ তাঁর রাসূলের আনুগত্য করাকে ফরয করে দিয়েছেন, তিনি যা করেন সে সম্পর্কে পূর্বেই অবহিত রয়েছেন এবং কুরআনে অনুল্লেখিত কোন নীতি প্রবর্তনের ব্যাপারে তাঁকে সম্মতি দান করেছেন, এজন্য তা স্বাভাবিক। কারো মত হ’ল, রাসূল (ছাঃ) এমন কোন একটি সুন্নাহ প্রবর্তন করেননি যার ভিত্তি কুরআনে নেই এবং ক্রয়-বিক্রয় বা অন্য কোন বিষয়েও নতুন কোন শরী‘আত আনয়ন করেননি। বরং যা আল্লাহ নাযিল করেছেন কেবল তা-ই বিবৃত করেছেন, যেভাবে ছালাত আদায়ের নিয়মাবলী বিবৃত করেছেন। কেউ কেউ বলেন, তাঁর নিকট উক্ত বিষয় সম্পর্কে আল্লাহর অহী নাযিল হ’ত, তাই আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেকই তিনি সুন্নাহটি প্রবর্তন করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, তিনি যে সকল বিষয় নিজ থেকে প্রবর্তন করেছেন তা মূলতঃ হিকমাহ যা আল্লাহ তাঁর অন্তরে ঢেলে দিয়েছিলেন।

সুতরাং কুরআনের ব্যাখ্যা হিসাবে হাদীছের মধ্যে নিম্নোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্যের যে কোন একটি অপরিহার্যভাবে বিদ্যমান।[14] যেমন-

ক. কখনও হাদীছটি কুরআনের কোন হুকুমকে দৃঢ়তা প্রদানকারী বা স্বীকৃতি প্রদানকারী হয়ে থাকে। ফলে উক্ত হুকুমটির পক্ষে দু’টি উৎস থেকে দু’টি দলীল সাব্যস্ত হয়। একটি কুরআন থেকে, অপরটি রাসূলের সুন্নাহ থেকে। যেমন- ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি হুকুম পালনের নির্দেশ এবং শিরক, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং অনৈতিকভাবে মানবহত্যা করা ইত্যাদি নিষিদ্ধকরণ, যা একদিকে কুরআনের দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে, অপরদিকে হাদীছের দলীল দ্বারা সুদৃঢ় হয়েছে।

খ. কখনও হাদীছ নতুন একটি হুকুম প্রবর্তনকারী হবে, যে সম্পর্কে কুরআনে কোন দলীল পাওয়া যায় না। যেমন- কোন মহিলাকে তার চাচী/ফুফু/খালার সাথে একত্রে বিবাহ[15], নখরযুক্ত হিংস্র প্রাণী খাওয়া[16], রেশমের কাপড় পরিধান[17], পুরুষদের স্বর্ণের আংটি ব্যবহার[18], রক্তসম্পর্কের মত দুধ সম্পর্কের কারণে বিশেষ নারীদেরকে বিবাহ[19] প্রভৃতি নিষিদ্ধকরণ।

গ. কখনও হাদীছ কুরআনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাকে বিস্তারিত আকারে ব্যাখ্যা করে অথবা শর্তহীন বর্ণনাকে শর্তযুক্ত করে অথবা আম বর্ণনাকে খাছ বা বিশেষায়িত করে। ফলে হাদীছ পরিণত হয় কুরআনের উদ্দেশ্য বর্ণনাকারী স্বতন্ত্র দলীলে।

ইসলামী শরী‘আতের সর্বত্র কুরআনের ব্যাখ্যাতা হিসাবে হাদীছের উপরোক্ত তিনটি ভূমিকাই বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে কুরআনের ব্যাখ্যায় হাদীছের ভূমিকাসমূহ উদাহরণসহ পর্যালোচনা করা হ’ল-

(১) কুরআনের বিষয়বস্ত্তকে সুদৃঢ় করা :

হাদীছের অন্যতম বিষয়বস্ত্ত হ’ল কুরআনে বর্ণিত বিষয়াদির সপক্ষে দলীল পেশ করা। যেমন : 

ক. আল্লাহ বলেন,وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوْهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ، ‘আর এটিই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না। তাহ’লে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুৎ করে দিবে’ (আন‘আম ৬/১৫৩)

অত্র আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর প্রদর্শিত পথ একটিই। এতদ্ভিন্ন যত পথ ও মত রয়েছে সবই আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর সপক্ষে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم خَطًّا، فَقَالَ : هَذَا سَبِيلُ اللهِ، ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ، وَعَنْ شِمَالِهِ، فَقَالَ : هَذِهِ سُبُلٌ عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ، ثُمَّ تَلاَ : (وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا ...) ‘একদিন রাসূল (ছাঃ) আমাদের সামনে একটি দাগ কাটলেন। অতঃপর বললেন, এটা আল্লাহর পথ। অতঃপর উক্ত দাগের ডান ও বাম দিকে আরো কিছু দাগ কাটলেন এবং বললেন, এগুলো হ’ল নানা পথ ও মত। প্রত্যেক পথের মাথায় একজন করে শয়তান বসে আছে, যে তার দিকে ডাকছে। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন’।[20] 

খ. আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা ছালাতে দন্ডায়মান হবে, তখন (ওযূর জন্য) তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর’ (মায়েদাহ ৫/৬)

অত্র আয়াত থেকে বুঝা যায়, কেউ যদি ছোট অপবিত্রতার শিকার হয়, অতঃপর ছালাত আদায় করতে চায় তবে পুনরায় ওযূ ব্যতীত ছালাত আদায় করতে পারবে না। অনুরূপভাবে হাদীছেও বর্ণিত হয়েছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ، ‘বায়ু নিঃসরণকারী ব্যক্তির ছালাত হয় না, যতক্ষণ না সে ওযূ করে’।[21]

গ. আল্লাহ বলেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ ‘রামাযান হ’ল সেই মাস, যাতে কুরআন নাযিল হয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)

আর হাদীছে চাঁদ দেখাকে এই রামাযান মাস আগমনের আলামত হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) রামাযানের কথা উল্লেখ করে বললেন,لَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْا الْهِلَالَ وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا لَهُ، ‘তোমরা ছিয়াম পালন করো না যতক্ষণ না চাঁদ দেখতে পাও এবং ছিয়াম পরিত্যাগ করে আহার শুরু করো না যতক্ষণ না চাঁদ দেখ। আর যদি তা আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় তবে আনুমানিকভাবে তার অবস্থান নির্ধারণ কর। অপর বর্ণনায় তিনি বলেন,الشَّهْرُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ لَيْلَةً فَلَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ، ‘মাস হয় ২৯ দিনে। অতএব তোমরা ছিয়াম রেখ না যতক্ষণ না চাঁদ দেখ। আর যদি চাঁদ মেঘে আচ্ছাদিত থাকে তবে ৩০ দিন পূর্ণ কর’।[22]

ঘ. ছাহাবায়ে কেরাম যখনই কুরআনের কোন অংশ বুঝতে অসমর্থ হ’তেন তখনই রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট চলে যেতেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে কুরআনের ব্যাখ্যা বলে দিতেন। দুর্বোধ্য বিষয়গুলো স্পষ্ট করে দিতেন। যেমন- ছিয়ামের আয়াত নাযিল হ’ল, কিন্তু তাতে ছিয়াম পালনের সময় ভুলক্রমে খাওয়া ও পান করার হুকুম উল্লেখ করা হয়নি। এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তার ছিয়াম হয়ে গেছে, কেননা ভুল এবং বিস্মৃতি ক্ষমার যোগ্য। প্রমাণস্বরূপ তিনি কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন,وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ، ‘আর পিতৃ পরিচয়ের ব্যাপারে তোমরা কোন ভুল করলে তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে দৃঢ় সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে’ (আহযাব ৩৩/৫)

উপরোক্ত উদাহরণগুলোতে দেখা যায় হাদীছের মাধ্যমে কুরআনের আয়াত ও বিষয়বস্ত্তকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং তা শক্তিশালী করা হয়েছে।

(২) সংক্ষিপ্ত বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া :

হাদীছ কুরআনের বহু বিষয়কে প্রায়োগিক আকারে উপস্থাপন করেছে এবং অনেক সংক্ষিপ্ত আলোচনাকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছে। ইমাম মারওয়াযী বলেন, আমি সকল ফরয বিষয়সমূহের উৎস বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, কোনটিরই ব্যাখ্যা জানা সম্ভব নয় বা কোনটিই ঠিকভাবে আদায় করা বা আমলে পরিণত করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না সে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নিজস্ব বর্ণনা ও ব্যাখ্যা এসেছে। যেমন- ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, জিহাদ।[23] নীচের উদাহরণগুলোতে তা সুস্পষ্ট।

ক. আল্লাহ বলেন,إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا، ‘নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত’ (নিসা ৪/১০৩)

অত্র আয়াতে কেবল নির্ধারিত সময়ে ছালাত ফরয হওয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তার কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। ছালাতের সংখ্যা বা নির্ধারিত সময়ও উল্লেখ করা হয়নি। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং নির্ধারিত সময়ের বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন। ছালাতের নির্ধারিত সময়, ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা, কিভাবে এবং কোন অবস্থায় তা আদায় করতে হবে তাঁর বিস্তারিত বিবরণ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।

খ. আল্লাহ বলেন,وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ، ‘তোমরা ছালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং (আল্লাহর) রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হ’তে পার’ (নূর ২৪/৫৬)

অত্র আয়াতসহ পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে যাকাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, কিন্তু যাকাত আদায়ের নিয়মাবলী বিস্তারিত আকারে বর্ণিত হয়নি। রাসূল (ছাঃ) কুরআনে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত এই নির্দেশনার ব্যাখ্যা দিয়ে যাকাত আদায়ের নিয়মাবলী সবিস্তার বর্ণনা করেছেন।

গ. আল্লাহ বলেন,كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ ‘তোমাদের উপর ছিয়ামকে ফরয করা হয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৩)

কুরআনে ছিয়ামকে সাধারণভাবে ফরয করা হয়েছে। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) ছিয়ামকে সকল বয়ঃপ্রাপ্ত নর-নারীর উপর ফরয করেছেন। আর নির্ধারণ করে দিয়েছেন কখন থেকে কখন পর্যন্ত কী কী বিষয় থেকে বিরত থাকতে হবে। আদী ইবনু হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন এই আয়াতটি নাযিল হ’ল, وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ، ‘আর তোমরা খানাপিনা কর যতক্ষণ না রাতের কাল রেখা থেকে ফজরের শুভ্র রেখা তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়’ (বাক্বারাহ ২/১৮৭), তখন আমি সাদা ও কালো রঙের দু’টি সুতা নিয়ে আমার বালিশের নিচে রাখলাম। অতঃপর তা দেখার জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু সাদা থেকে কালোকে পৃথক করা গেল না। পরে সকাল হ’লে আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং যা করেছি তা বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেন, ‘এর অর্থ দিনের আলো ও রাতের অাঁধার’।[24]

ঘ. আল্লাহ বলেন,وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا، ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা ঐ ব্যক্তির উপরে ফরয করা হ’ল, যার এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)

অত্র আয়াতে আল্লাহ সাধারণভাবে মানুষের জন্য হজ্জ ফরয করেছেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হজ্জ জীবনে একবারই ফরয। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) একদা খুৎবা দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ‘হে লোকেরা! আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন’। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, প্রতি বছর কি? একাধারে তিনবার সে একই প্রশ্ন করল। রাসূল (ছাঃ) তাকে এড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, যদি আমি বলি হ্যাঁ, তবে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর যদি একবার ওয়াজিব হয়ে যায় তবে তার উপর তোমরা কায়েম থাকতে পারবে না। অতঃপর তিনি বললেন,ذَرُونِى مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلاَفِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَىْءٍ فَدَعُوهُ ‘যা আমি ছেড়ে দিয়েছি, তা নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত থাক। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছে তাদের নবীদের সাথে বেশী বেশী তর্ক আর মতভেদ করার কারণে। সুতরাং আমি তোমাদেরকে যা কিছু নির্দেশ দিয়েছি তা তোমরা সাধ্যমত পালন কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেছি তা থেকে বিরত থাক’।[25]

অনুরূপভাবে আল্লাহ নাযিল করেছেন, فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ

‘অতএব যে ব্যক্তি ঐ মাস সমূহে হজ্জ-এর সংকল্প করবে (অর্থাৎ ইহরাম বাঁধবে)’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)। রাসূল (ছাঃ) এর ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেছেন যে, হজ্জের ফরয বা আবশ্যকীয় কাজ হ’ল তালবিয়া পাঠ। অতঃপর শিক্ষা দিয়েছেন ইহরামের কাপড় পরিধানের নিয়ম, হজ্জ আদায়ের মীকাত নির্ধারণ ও কার্যাবলী, মুহরিম কী পরিধান করবে বা না করবে ইত্যাদি বিষয়, যার বিবরণ কুরআনে প্রদত্ত হয়নি।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) হজ্জের পথে রওয়ানা হ’লেন এবং আমরাও সাথে সাথে বের হ’লাম। অতঃপর যুলহুলায়ফায় পৌঁছে রাসূল (ছাঃ) মসজিদে ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর স্বীয় উটে আরোহণ করে মরুভূমিতে অবতরণ করলেন। আমি দৃষ্টির প্রান্তসীমায় দেখলাম তাঁর সম্মুখে-পশ্চাতে, ডানে-বামে সর্বত্র আরোহী অবস্থায় এবং পায়দলে কেবলই মানুষের ভীড়। তিনি আমাদের মাঝে বিদ্যমান। তাঁর উপর কুরআন নাযিল হয়। কুরআনের ব্যাখ্যাও তাঁর জানা আছে। তিনি যা কিছু করছিলেন, আমরাও তা-ই করছিলাম। অতঃপর তিনি তাওহীদের ঘোষণা দিয়ে বলছিলেন, ‘লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক....’।[26] অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ (জন্ম : ১৯৩৪খ্রি.) বলেন, ‘কুরআনের সর্বোত্তম তাফসীর হ’ল কুরআন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ। সুন্নাহ কুরআনের বিষয়াদি বর্ণনা করে, ব্যাখ্যা করে, অস্পষ্ট বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করে এবং তার হুকুম-আহকাম সাব্যস্ত করে। জাবির (রাঃ)-এর মন্তব্য থেকেও এটাই প্রমাণিত হয় (রাসূলের উপর কুরআন নাযিল হয় এবং তিনি তার ব্যাখ্যা অবগত আছেন)। অর্থাৎ তিনি কুরআনের বিধি-বিধান ব্যাখ্যা করেন।[27]

ঙ. আল্লাহ বলেন,انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِيْ سَبِيلِ اللهِ، ‘তোমরা বেরিয়ে পড় অল্প সংখ্যায় হও বা অধিক সংখ্যায় হও এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে তোমাদের মাল দ্বারা ও জান দ্বারা’ (তাওবা ৯/ ৪১)

অত্র আয়াত এবং এ ছাড়াও কুরআনের আরো বহু আয়াতে জিহাদকে ফরয করা হয়েছে। আয়াতের বাহ্যিকতা থেকে মনে হয় যে, প্রত্যেক মুসলিমের উপর জিহাদ ফরযে আইন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ থেকে বোঝা যায় যে, জিহাদ সাধারণভাবে ফরযে আইন নয়, বরং ফরযে কিফায়াহ। কেবল বিশেষ অবস্থায় তা ফরযে আইন।[28]

(৩) অতিরিক্ত ও সম্পূরক হুকুম-আহকাম প্রবর্তন :

হাদীছে এমন অগণিত বিষয় বর্ণিত হয়েছে, যা কুরআনে আলোচিত হয়নি। যদিও ইমাম শাফিঈ এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে, হাদীছে বর্ণিত সকল বিধানের মূল উৎস কুরআনেই রয়েছে। অর্থাৎ কুরআনে কখনও সরাসরি আলোচিত না হ’লেও তাতে মর্মগতভাবে শামিল রয়েছে।[29]

ইমাম শাত্বিবী (৭৯০হি.)ও একই মন্তব্য করে বলেন, ‘সুন্নাহর মাঝে এমন একটি বিষয় পাওয়া যাবে না, যে বিষয়ে কুরআনে মর্মগতভাবে কিংবা বিস্তারিতভাবে আলোচনা নেই। এসব কিছুই প্রমাণ বহন করে যে, কুরআনই হ’ল শরী‘আতের সামগ্রিক রূপ ও মূল সঞ্জীবনী ধারা। রাসূল (ছাঃ) নিজেই তার প্রমাণ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি সর্বোত্তম চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত’ (কলম ৬৮/৪)। আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (ছাঃ)-এর চরিত্র ছিল আল-কুরআন।[30] তিনি রাসূল (ছাঃ) চরিত্রকে কুরআনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছেন যা প্রমাণ করে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর কথা, কর্ম এবং স্বীকৃতি সবই কুরআনের দিকে প্রত্যাবর্তনশীল। ... আর কুরআনের প্রমাণাদি এটাই সাব্যস্ত করে যে, রাসূল (ছাঃ) যা কিছু নিয়ে এসেছেন এবং যা কিছু আদেশ ও নিষেধ করেছেন, তা কুরআনের বর্ণিত হুকুমেরই অনুগামী। অতএব সুন্নাহ মূলতঃ কুরআনেরই বর্ধিতাংশ’।[31]

তবে বিদ্বানগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, হাদীছ এমন অনেক হুকুম আরোপ করেছে যা কুরআনে সরাসরি পরিদৃষ্ট হয় না। ফলে সে সকল ক্ষেত্রে সুন্নাহ শরী‘আতের একক উৎসে পরিণত হয়েছে এবং কুরআন ইঙ্গিতে কিংবা স্পষ্টভাবে সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত এরূপ হুকুমকে স্বীকৃতি দিয়েছে।[32] যেমন আল্লাহ বলেন,فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا، ‘অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো (পূর্ণ) মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে বিচারক হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালার বিষয়ে তাদের অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে’ (নিসা ৪/৬৫)

এ আয়াতের শানে নুযূল হ’ল, একদিন এক আনছার ব্যক্তি একটি নালা নিয়ে যুবায়ের (রাঃ)-এর সাথে ঝগড়া করছিল, যা থেকে খেজুর গাছে পানি সেচ দেয়া হ’ত। আনছার বলল, তুমি পানির নালা ছেড়ে রাখ যাতে তা চলমান থাকে। কিন্তু যুবায়ের (রাঃ) তা অস্বীকার করলেন। তখন তারা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট বিচার নিয়ে গেলেন। রাসূল (ছাঃ) যুবায়ের (রাঃ)-কে বললেন, ‘তুমি আগে সেচ দিয়ে নাও তারপর তা তোমার প্রতিবেশীর দিকে ছেড়ে দাও’। এতে আনছার লোকটি ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, ওহ! সে আপনার চাচাতো ভাই তো! তখন রাসূল (ছাঃ)-এর চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি বললেন, যুবায়ের! তুমি নিজের জমি সেচ দেয়ার পর পানি আটকে রাখ যেন তা পুনরায় দেয়ালের দিকে ফিরে যায়’। যুবায়ের (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমার নিশ্চিত ধারণা যে, এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই আয়াতটি (নিসা ৪/৬৫) নাযিল হয়েছে।[33] উক্ত হাদীছে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ)-এর এই সমাধানটি কুরআনে পাওয়া যায় না।

আল্লাহ আরো বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক’ (নিসা ৪/৫৯)

অত্র আয়াতের নির্দেশ মোতাবেক আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার অর্থ হ’ল আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনের দিকে ফিরে যাওয়া এবং রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে ফিরে যাওয়ার অর্থ হ’ল তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়া।

অনুরূপভাবে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ، ‘অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে’ (নূর ২৪/৬৩)। অত্র আয়াতে অনুসরণের জন্য রাসূল (ছাঃ)-কে বিশেষভাবে খাছ করা হয়েছে। এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে মূলতঃ সেসব সুন্নাহর দিকে, যে ব্যাপারে কুরআনে কিছু বর্ণিত হয়নি।

উপরোক্ত দলীলসমূহ থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে, রাসূল (ছাঃ) থেকে আগত সকল প্রকার আদেশ ও নিষেধ কুরআনের হুকুম-আহকামের সাথে সংযুক্ত। সুতরাং অবশ্যই তা বর্ধিত আহকাম স্বরূপ শরী‘আতের দলীল হিসাবে পরিগণিত হবে।

এজন্য ইমাম কুরতুবী (৬৭১হি.) باب تبيين الكتاب بالسنة (সুন্নাহ দ্বারা কিতাবের ব্যাখ্যা) শীর্ষক অনুচ্ছেদ রচনা করে বলেন,إن السنة تفسر الكتاب وتبينه. وبيان آخر وهو زيادة على حكم الكتاب كتحريم نكاح المرأة على عمتها وخالتها، وتحريم الحمر الأهلية وكل ذي ناب من السباع، والقضاء باليمين مع الشاهد وغير ذلك ‘সুন্নাহ কুরআনের ব্যাখ্যা করে এবং অর্থ সুস্পষ্ট করে। আরেকটি বিষয় হ’ল, তা কুরআনের হুকুমের উপর বর্ধিত হুকুম আরোপ করে। যেমন একজন নারীকে তার চাচী বা খালার সাথে একত্রে বিবাহ করা, গৃহপালিত গাধা এবং প্রতিটি নখর বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণীকে হারাম করা, সাক্ষীর জন্য শপথ করার হুকুম জারী করা ইত্যাদি’।[34]

ড. লোকমান আস-সালাফী এই আলোচনার উপসংহারে তাই বলেছেন, ‘সমীক্ষায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, হাদীছের মধ্যে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা কুরআনে নেই। আর হাদীছের সকল বিধানই সূক্ষ্ম বিচারে পবিত্র কুরআন থেকে উৎসারিত। এজন্য বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের কেউই দ্বিমত পোষণ করেননি যে, হাদীছের উপর আমল করার অর্থ মূলতঃ কুরআনের উপরই আমল করা। কেননা কুরআন থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করা অপরিহার্য। একইভাবে কুরআন ও হাদীছে যৌথভাবে বর্ণিত নীতিমালা এবং হাদীছে এককভাবে বর্ণিত নীতিমালা বা কোন ব্যাখ্যার মাঝে কোনই তফাৎ নেই। যেহেতু আল্লাহ রাসূল (ছাঃ)-কে পথ-প্রদর্শক হিসাবে এবং তাঁর সুন্নাহকে আদর্শ হিসাবে মানবজাতির নিকট উপস্থাপন করেছেন। আর রাসূল (ছাঃ)-এর হেদায়াতই হ’ল আল্লাহর দীদার প্রত্যাশী, শেষ দিবসের কল্যাণপ্রত্যাশী এবং আল্লাহ্কে অধিক স্মরণকারী ব্যক্তির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।[35] 

(৪) কুরআনের হুকুমকে রহিত করা :

হাদীছ দ্বারা কুরআনের হুকুম রহিত হয় কি না-এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফিঈ এবং ইমাম আহমাদের একটি মতে, সুন্নাহ দ্বারা কুরআনের হুকুমকে রহিতকরণ জায়েয নয়।[36] ইবনু হাযমের মতে, মুতাওয়াতির বা আহাদ যে কোন প্রকার হাদীছ দ্বারা কুরআনের হুকুম রহিত হতে পারে।[37] এটাই জুমহুর বিদ্বানদের মত। কেননা অহী দ্বারা অহীকে রহিত করা যায়। যেহেতু সুন্নাহ অহী, অতএব সুন্নাহ দ্বারা কুরআন রহিত হওয়ার ব্যাপারে কোন সংশয় থাকতে পারে না।[38]

এর উদাহরণ হ’ল-

ক. আল্লাহ বলেন,كُتِبَ عَلَيْكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ إِنْ تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ بِالْمَعْرُوفِ ‘তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোন সম্পদ রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়ভিত্তিক অছিয়ত করবে’ (বাক্বারাহ ২/১৮০)

অত্র আয়াতটির হুকুম বিদ্বানদের ঐক্যমতে মানসূখ হয়ে গেছে রাসূল (ছাঃ)-এর এই হাদীছ দ্বারা, لاَ وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ ‘ওয়ারিছের জন্য কোন অছিয়ত নেই’।[39] অনুরূপভাবে যদি রাসূল (ছাঃ) হুকুম না দিতেন যে, এক-তৃতীয়াংশের অধিক দান করা যাবে না, তবে কুরআনের সাধারণ হুকুম অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশের অধিক অছিয়ত করা জায়েয হত। কিন্তু সুন্নাহ সে সুযোগ রহিত করে অছিয়তের জন্য এক-তৃতীয়াংশই নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।[40]

খ. আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা ছালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)’ (মায়েদাহ ৫/৬)

অত্র আয়াতে ‘وأرجلكم’ শব্দটি আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী ‘হরফ আত্বফ’ বা সংযোজক অব্যয়ের কারণে ‘জের’-এর অবস্থায় পড়া আবশ্যক। তাহ’লে এর অর্থ হবে- ওযূর সময় তোমরা তোমাদের মাথা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত মাসাহ কর।[41] কিন্তু হাদীছে পা মাসাহের পরিবর্তে পা ধৌত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ পা মাসাহ মানসূখ হয়ে গেছে। পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি অনুসারে ছাহাবীরা ইতিপূর্বে পা মাসাহ করতেন। পরবর্তীতে কোন এক সফরে রাসূল (ছাঃ) তাঁদের লক্ষ্য করে দুই বার বা তিন বার উচ্চৈঃস্বরে বললেন, وَيْلٌ لِلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ ‘ধ্বংস তাদের জন্য যারা পায়ের গোড়ালী শুকনো রাখার কারণে আগুনে প্রবেশ করবে’।[42]

সুতরাং এটা প্রমাণিত যে, আয়াতের হুকুমটি হাদীছ দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। ইমাম শা‘বী বলেন, نزل القرآن بالمسح والسنة الغسل ‘কুরআনে পা মাসাহ করার ব্যাপারে নাযিল হয়েছে আর সুন্নাহ হ’ল ধৌত করা’।[43] ইবনু আববাস (রাঃ)ও অনুরূপ বলেছেন।[44] অনুরূপভাবে ইমাম মারওয়াযী তাঁর গ্রন্থে نسخ القرآن بالسنة শিরোনামে আরো অনেক উদাহরণ এনেছেন।[45] ইবনু হাযমও তাঁর গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

[ক্রমশঃ]


[1]. মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, মানযিলাতুস সুন্নাহ ফিল ইসলাম, (কুয়েত : আদ-দারুস সালাফিয়াহ, ১৯৮৪খ্রি.), পৃ. ৬-৭।

[2]. আলবানী, মানযিলাতুছ সুন্নাহ ফিল ইসলাম, পৃ. ৬-৭; ড. নূরুল ইসলাম, ইসলামে হাদীছের গুরুত্ব ও মর্যাদা (রাজশাহী : শ্যামলবাংলা একাডেমী, ২০১২ খ্রি.), পৃ. ১১-১২।

[3]. ইমাম শাফেঈ, আর-রিসালাহ, পৃ. ৭৯।

[4]. জালালুদ্দীন আস-সুয়ূত্বী, আল-ইতকান ফী উলূমিল কুরআন, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ আবুল ফযল ইবরাহীম (কায়রো : আল-হায়আতুল মিছরিয়াহ আল-আম্মাহ, ১৯৭৪খ্রি.), ২/১২৬ পৃ.।

[5]. ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ১/৭ পৃ.।

[6]. আশ-শাত্বিবী, আল-মুওয়াফাক্বাত ৪/৩৯৬।

[7]. তদেব ৪/৩৯৪ পৃ.।

[8]. ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ১/৭ পৃ.।

[9]. তদেব, ৪/৪০৮ পৃ.।

[10]. তদেব।

[11]. মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/৩৩৩৮।

[12]. ইমাম শাফেঈ, আর-রিসালাহ, পৃ. ৮৯।

[13]. তদেব, পৃ. ৯২-৯৩।

[14]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন, ২য় খন্ড (বৈরূত : দারুল জীল, ১৯৭৩ খ্রি.), পৃ. ৩০২; ড. মুহাম্মাদ লোকমান সালাফী, মাকানাতুস সুন্নাহ, পৃ. ১১১।

[15]. বুখারী হা/৫১০৮-৫১১০; মুসলিম হা/১৪০৮।

[16]. বুখারী হা/৫৫৩০; মুসলিম হা/১৫৩২-৩৪।

[17]. আবূদাউদ হা/২৬১৪; নাসাঈ হা/৫২১৬-১৮।

[18]. আবূদাউদ হা/২৬১৪; নাসাঈ হা/৫২১৬-১৮।

[19]. ছহীহুল বুখারী হা/২৬৪৫; তিরমিযী হা/১১৪৬; ইবনু মাজাহ হা/১৯৩৭; নাসাঈ হা/৩৩৭৩-৮৩।

[20]. আহমাদ হা/৪১৪২, ইবনু হিববান হা/৬, সনদ হাসান।

[21]. বুখারী হা/১৩৫; মুসলিম হা/২২৫।

[22]. বুখারী হা/১৯০৭; মুসলিম হা/১০৮০।

[23]. আবূ আব্দুল্লাহ আল-মারওয়াযী, আস-সুন্নাহ (বৈরূত : দারুল কুতুব আছ-ছাকাফিয়াহ, ১৪০৮হি.), পৃ. ৩৬।

[24]. বুখারী হা/১৯১৬।

[25]. বুখারী হা/৭২৮৮; মুসলিম হা/১৩৩৭।

[26]. মুসলিম হা/১২১৮।

[27]. আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ, শারহু আবী দাউদ, ১০/৮৬ পৃ.।

[28]. আস-সিবাঈ, আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা, পৃ. ৪৪।

[29]. শাফেঈ, আর-রিসালাহ, ৯১ পৃ.।

[30]. আহমাদ হা/২৪৬৪৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৮১১।

[31]. শাত্বিবী, আল-মুওয়াফাক্বাত, ৪/৩৯৭ পৃ.।

[32]. ড. মুহাম্মাদ লোকমান সালাফী, মাকানাতুস সুন্নাহ ফিল ইসলাম, পৃ. ১২৭।

[33]. বুখারী হা/২৩৫৯, ২৩৬১, ২৩৬২ প্রভৃতি; মুসলিম হা/২৩৫৭।

[34]. শামসুদ্দীন কুরতুবী, আল-জামে‘ লি আহকামিল কুরআন (কায়রো : দারুল কুতুবিল মিছরিয়াহ, ২য় প্রকাশ : ১৯৬৪খ্রি.), ১/৩৯ পৃ.।

[35]. ড. মুহাম্মাদ লোকমান সালাফী, মাকানাতুস সুন্নাহ ফিল ইসলাম, পৃ. ১২৯।

[36]. তাঁর মতে, কুরআন কেবল কুরআন দ্বারাই কুরআন মানসূখ হতে পারে, সুন্নাহ দ্বারা নয়। কেননা উভয়টি অহী হলেও সমজাতীয় অহী নয়। দ্র.আল-আমিদী, আল ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ৩য় খন্ড (বৈরূত : দারুল কুতুব আল-আরাবী, ১৪০৪হি.), পৃ. ১৬২।

[37]. ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, (কায়রো : দারুল হাদীছ, ১৪০৪হি.), ৪/৫০৫।

[38]. আল-আমিদী, আল ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ৩/১৬২ পৃ.।

[39]. তিরমিযী, হা/২১২১; আবুদাউদ, হা/২৮৭০; ইবনু মাজাহ, হা/২৭১৪, নাসাঈ, হা/৩৬৪১-৪৩।

[40]. (وعن سعد بن أبي وقاص قال : مرضت عام الفتح مرضا أشفيت على الموت فأتاني رسول الله صلى الله عليه وسلم يعودني فقلت : يا رسول الله : إن لي مالا كثيرا وليس يرثني إلا ابنتي أفأوصي بمالي كله ؟ قال : " لا " قلت : فثلثي مالي ؟ قال : " لا " قلت : فالشطر ؟ قال : " لا " قلت : فالثلث ؟ قال : " الثلث والثلث كثير)ছহীহুল বুখারী, হা/২৭৪৩, ২৭৪৪ প্রভৃতি; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬২৮।

[41]. শী‘আরা আয়াতের এই বাহ্যিক অর্থ নিয়ে অযুতে পা ধোয়ার পরিবর্তে মাসাহ করে (দ্র. আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী (বৈরূত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, তাবি), ১/১২৬ পৃ.।

[42]. বুখারী, হা/১৬৩।

[43]. ইবনু বাত্তাল, শারহুল বুখারী (রিয়াদ : মাকতাবাতুর রুশদ, ২০০৩ খ্রি.), ১/২৫৬ পৃ.।

[44]. ইবনু হাযম, আল ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ৪/৫১০ পৃ.।

[45]. আবূ আব্দুল্লাহ আল-মারওয়াযী, আস-সুন্নাহ (বৈরূত : মু‘আস্সাসাতুল কুতুব আছ-ছাক্বাফিয়াহ, ১৪০৮হি.), পৃ. ৯১।






আল্লাহর প্রতি ঈমানের স্বরূপ - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
করোনার নববী চিকিৎসা - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
বিতর্কের ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় ও অপব্যয় - মুহাম্মাদ আকবার হোসাইন
রামাযানের প্রভাব কিভাবে ধরে রাখব? - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আরবী ভাষা কুরআন বুঝার চাবিকাঠি - ফাতেমা বিনতে আযাদ
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমান (শেষ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
মিথ্যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
আতিথেয়তার আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মীরাছ বণ্টন : শারঈ দৃষ্টিকোণ - ড. শিহাবুদ্দীন আহমাদ, শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, রাজশাহী
ঈদে মীলাদুন্নবী - আত-তাহরীক ডেস্ক
নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (৩য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আরও
আরও
.