প্রাণকেন্দ্র ও সর্ববৃহৎ তিলোত্তমা মহানগরী ঢাকার যানজট পরিস্থিতি এমন ভয়াবহতার ঘুর্ণাবর্তে আবর্তিত হচ্ছে যে, একান্ত বাধ্য না হ’লে কোন সুস্থ বিবেকমান মানুষ এখন আর ঢাকায় যেতে চাচ্ছে না। সেদিনের সবুজে ঘেরা গাছ-গাছালী আর পাখ-পাখালির সুমধুর কলকাকলিতে মুখর, মসজিদের শহর ও প্রাচীন বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক, মোগল-বৃটিশদের রেখে যাওয়া স্মৃতিবিজড়িত মন জুড়ানো নযরকাড়া সব ইমারত, কীর্তির স্মারক, অধুনা নির্মিত সুরম্য অট্টালিকা সব মিলে স্বপ্নের নগরী ঢাকা আজ আর সুস্থ-সুন্দর পরিবেশে ঘুরে-ফিরে দেখার জন্য নয়; মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় হেসে খেলে বেড়ানোর জন্য নয়। সারা ঢাকা ছেয়ে আছে শুধু মানুষ আর গাড়ীতে! আর বেড়ানোর জন্য দু’একটি জায়গা বা পার্ক অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনীয় স্থান থাকলেও সেগুলো আজ তরুণ-তরুণীদের কুৎসিত অভিসারের এক নির্লজ্জ বাজারে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্যে এসব পার্ক অথবা শিক্ষাঙ্গনে ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলা-মেশা আর বেলেল্লাপনার দৃশ্য চোখে পড়লে সেখানে পরিবার-পরিজনকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়াটা নিতান্ত গর্হিত বলে মনে হবে। বেড়ানো বা কাজে-কর্মের জন্য যেটাই হোক না কেন সব কিছুকেই ম্লান করে দিয়েছে রাজধানীর অস্বস্তিকর যানজট। এই যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তপ্ত রাস্তার ওপর গাড়ীর মধ্যে যাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। একদিকে ভিড়ের চাপ অন্যদিকে গরমে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের কারণে বৃদ্ধ নারী-শিশুর আর্তনাদ বিলাসী ঢাকার বাতাসকে করে তুলছে ভারী; অসুস্থ হয়ে পড়ছে হাযার হাযার মানুষ; এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে মারা যাচ্ছে কত শত মানুষ তার হিসাব নেই। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী যথাসময়ে এগুতে পারছে না দুর্ঘটনাস্থলে। আগুনে পুড়ছে কত শত ঘরবাড়ি তার ইয়ত্তা নেই। কত খাদ্যজাত দ্রব্য পঁচে যাচ্ছে তার দিকে কারও লক্ষ্য নেই। মানুষের কর্মশক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয় এখন পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া সহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে সমুচ্চারিত হতাশারবাণী। শুধু তাই নয়, সুবিবেচক ও বিজ্ঞমন্ডলীসহ গোটা দেশবাসীর প্রশ্নঃ যানজটের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির পরিণতি কি? এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণইবা কি? এটা কি একদিনে সৃষ্টি হয়েছে? শত চেষ্টা করেও এর প্রতিকারে আজ কেন কর্তৃপক্ষ হিমসিম খাচ্ছে? কেন আজ এ বেসামাল অবস্থা? যানজটের কারণে নগরবাসীর কষ্ট-দুর্ভোগের পাশাপাশি পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব এ দেশটির বিভিন্ন ক্ষতিসহ যে অর্থনৈতিক অপচয় হচ্ছে তার হিসাব কে দিবে? এমনি তো দেশে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি-অনিয়ম, গ্যাস-বিদ্যুতের চুরি-অপচয় প্রভৃতির কারণে বছরে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাযার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে কেবল বৈদেশিক (ঋণ অনুদান) সহযোগিতার মধ্যে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি-অপচয় হয়েছে (২০০৫ সালের তথ্যমতে)। এখন নতুন মাত্রায় যুক্ত হয়েছে ‘টাইম এন্ড ফুয়েলিং’-এর কৃত্রিম সিস্টেমলস। এ লস বা ক্ষতি কেবল ঢাকার নব্যসৃষ্ট যানজটের কালো থাবার কারণে। এর জন্য দিনে কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। ভুক্তভোগী জনগণ ও সরকার বাহাদুর সকলে নির্বিকার চিত্তে তা প্রত্যক্ষ করছে।
ঢাকা নগরীর ২ কোটি লোকের মধ্যে প্রায় ১ কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বসতবাড়ীর হিসাবে দেখা যাবে, ঘর নেই এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। এরা রাস্তা, স্টেশন অথবা সরকারী কোন জায়গার ওপর বসবাস করছে। এরা দখল করে আছে নগরীর বহু জায়গা। এতে নষ্ট হচ্ছে সুস্থ পরিবেশ, বেড়ে যাচ্ছে অপরাধের মাত্রা। পুরানো ঢাকাসহ অধিকাংশ ঢাকার বসতবাড়ী নির্মিত হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে ঠাসা-ঠাসি করে, যেখানে সুস্থ-সুন্দর পরিবেশে নিরাপদে বসবাসের পরিবেশ বলতে কিছু নেই। এর সাথে যোগ হয়েছে বৈধ/অবৈধ বহুতল ভবন নির্মাণ প্রতিযোগিতা। পুরাতন, অযোগ্য ভবন তো আছে। যার কারণে ভূ-বিশেষজ্ঞগণ বলছেন ৭.৫০ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প হ’লে ঢাকাতে কেবল এক রাতে ৯০ হাযার লোক প্রাণ হারাবে। দিনে হ’লে মারা যাবে ৭০ হাযার লোক, ধ্বংস হবে অর্ধেকের বেশী ঘরবাড়ী। তাহ’লে দেখা যাচ্ছে ঢাকা শহরের ওপর শুধু যানবাহনের চাপ নয়। জনগণের অবস্থান ও তাদের বসতবাড়ী ও অফিস-আদালতের চাপও রয়েছে, যা পরবর্তীতে যানজট সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, ঢাকা মহানগরীর যানজটের কারণ নানাবিধ। নিম্নে যানজটের বিভিন্ন দিক, অর্থনৈতিক প্রভাব, কারণ ও প্রতিকারের প্রস্তাবনা আলোচনা করা হ’ল :
যানজটের সাথে সংশ্লিষ্ট গাড়ীর বহর :
বিআরটিএ-এর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী রাজধানীতে সব ধরনের গাড়ীর মোট রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাযারেরও বেশী। এর মধ্যে প্রাইভেট কার জাতীয় গাড়ীর সংখ্যা ২ লাখ ৫ হাযার। কিন্তু বাস-মিনিবাসের সংখ্যা মাত্র ১৬ হাযার (অননুমোদিত)। রেজিষ্ট্রেশন বহির্ভূত যানবাহন চলছে ১ লাখের বেশী। বৈধ রিক্সার সংখ্যা ৮৫ হাযার, অথচ চলছে ৫ লাখের বেশী। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাযার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন বিনা বাধায় ঢাকায় প্রবেশ করছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি)-এর তথ্য মতে প্রতিদিন ঢাকায় যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাস্তার পরিমাণ দুই হাযার ২শ’ ৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে এক লেনের রাস্তা রয়েছে ৩শ’ ৮৬ কি.মি., দুই লেনের রাস্তা ১ হাযার ৪শ’ ৮ কি.মি., চার লেনের রাস্তা ৪৩৪ কি.মি.। এসব রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ যানবাহন চলাচল করে। যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৯ গুণ বেশী বলে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেশী বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিন একটি বাসে গড়ে চলাচল করে ৪শ’ যাত্রী। বাকী যাত্রী প্রাইভেটকার ও এই জাতীয় যানবাহনে চলাচল করে। স্বাভাবিকভাবে একটি গাড়ীর সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কি.মি.। সেখানে যানজটের কারণে সর্বোচ্চ ১৪ কি.মি. যেতে পারে। সবকিছু ঘটছে অধিক যানবাহনের কারণে, যা কিনা রাস্তার ধারণ ক্ষমতার বাইরে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে: রাজধানীতে প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রাইভেটকারে চড়বে, না বাস-মিনিবাসে উঠবে। সহজ উত্তর বড় গাড়ীতে উঠবে। অথচ প্রাইভেট গাড়ীর সংখ্যা অনুপাতে সাধারণ যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। সে অনুপাতে রাস্তাও বৃদ্ধি করা হয়নি। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নগরীতে এখনও হাযার হাযার ধনী পরিবার রয়েছে যাদের প্রত্যেক সদস্যদের জন্য কমপক্ষে ১টি করে প্রাইভেটকার বা কার জাতীয় গাড়ী রয়েছে। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করবে কে?
অর্থনৈতিক ক্ষতি : যানজটের কারণে মানুষের শারীরিক দুর্ভোগের যেমন অন্ত নেই, তেমনি এর কারণে যে অর্থনৈতিক অপচয়ের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে তা দেশের সচেতন নাগরিককে ভাবিয়ে তুলেছে। যেমন সিএনজি গাড়ীতে উত্তরা থেকে গুলিস্তান পৌঁছতে যেখানে এক ঘণ্টাও লাগার কথা না, সেখানে বর্তমানে ২ ঘণ্টার বেশী সময় লাগে যানজটের কারণে। এতে জ্বালানী প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়। এতে করে ১২ ঘণ্টা গাড়ী (সকাল ৮- রাত ৮টা) চালালে অর্ধেক সময় অর্থাৎ ৬ ঘণ্টা রাস্তায় যানজটে আটকে থাকতে হয়। উপার্জন অর্ধেক হয়ে যায়। অর্থাৎ খরচ বাদ দিয়ে চালকের যেখানে ১ হাযার টাকা পাওয়ার কথা, সেখানে তার গড়ে প্রতিদিনে ৫০০ টাকা  আয় হয়। ২শ’ টাকার গ্যাসে যেখানে স্বাভাবিকভাবে হয়ে যায়, সেখানে অতিরিক্ত প্রায় ২শ’ টাকার গ্যাস পোড়াতে হয়। অর্থাৎ একটা সিএনজিতে অতিরিক্ত ব্যয়ে নষ্ট হচ্ছে ৬শ’-৭শ’ টাকা। মাস হিসাবে নষ্ট হচ্ছে ২০ হাযার টাকা। এক বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৭৩ হাযার টাকা। এভাবে একটা বড় বাসেরও একই সময় নষ্ট হচ্ছে এবং ব্যয়ও দ্বিগুণ হচ্ছে। ঐ হিসাবে একটা বাসের দিনে কমপক্ষে ১৩শ’-১৫শ’ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
২০০৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সব ধরনের গাড়ীর রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হয়েছে ৫ লাখ ২৭ হাযার এবং জুন’১০ পর্যন্ত ধরা হ’লে রেজিঃভুক্ত মোট গাড়ীর সংখ্যা হবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। এই সাড়ে পাঁচ লাখের মধ্যে যদি ২০ হাযার গাড়ী অব্যবহৃত  ধরি তাহ’লেও হয় ৫ লাখ ৩০ হাযার। আমরা ছোট-বড় সব গাড়ীর সময়ের হিসাবে এবং অতিরিক্ত জ্বালানী খরচের হিসাব গড়ে কম করেও ৮শ টাকা ধরলে দিনে ৫ লাখ ৩০ হাযার গাড়ীর অতিরিক্ত খরচ বা অপচয় হচ্ছে (৫ লাখ ৩০ হাযার ´৮শ’ টাকা) ৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এক বছরে এই অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় (৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ´ ৩৬৫) ১৫ হাযার ৪শ’ ৭৬ লাখ কোটি টাকা।
সময়ের অপচয় : বিদেশীরা সময়কে টাকা মনে করে। কিন্তু আমরা ভাবি এর উল্টাটা। বাঙ্গালীরা কিভাবে তার সময় বাজে কাজে নষ্ট করবে তার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে। গান-বাজনা, গল্প-আড্ডা, সিনেমা, দেশী-বিদেশীদের খেলা ধূলায় কত সময় নষ্ট করছে তার হিসাব না হয় বাদই দিলাম। শুধু আলোচ্য যানজটের কারণে ঢাকাবাসীর দেড় কোটির মধ্যে যদি ১ কোটি লোকের কর্মঘণ্টার হিসাব করি, তাতে দেখা যাচ্ছে দৈনিক ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এখানে ন্যূনতম মাথাপিছু আয় ২শ’ টাকা ধরা হ’লে ১ কোটি লোকের বার্ষিক আয় নষ্ট হচ্ছে ১৮শ’ ২৫ কোটি টাকা। খাদ্যপণ্য আনা-নেয়া, পরিবেশ দূষণ, চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১০ হাযার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। সর্বমোট বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ২০ হাযার ৪ শ’ ৭৬ লাখ কোটি টাকা। একটি গরীব দেশের ক্ষতি যদি এই পরিমাণ হয় তাহ’লে সে জাতি কিভাবে, কখন অর্থনৈতিকভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবে কেউ কি তা বলতে পারবেন?
এমসিসিআই সেমিনারের তথ্য : গত ২১ জুলাই’১০ তারিখে ‘মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’ (এমসিসিআই) ভবনে ‘ঢাকা শহরে যানজট ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এর প্রভাব : প্রতিকারের উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বলা হয়, ১৯০৯ সালের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ৩ প্রকৌশলীর গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটের কারণে বছরে ক্ষতি হয় ১৯ হাযার কোটি টাকা। যানজটের কারণে দেড় কোটি নগরবাসীর দৈনিক ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
সকাল ৮-টা থেকে রাত ৮-টা পর্যন্ত চলাচলকারী যানবাহনগুলো যানজটের কারণে সাড়ে ৭ ঘণ্টা থেমে থাকে। রাজধানীর প্রধান চারটি রাস্তায় যে যানজট হয় তার কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতি হয় ৯ হাযার  ৬শ’ কোটি টাকা। ১৯৭৪ সালে ঢাকাতে লোক সংখ্যা ছিল মাত্র ২ লাখ। বর্তমানে প্রায় দুই কোটি। এদিকে প্রতিদিন ২০৩টি করে প্রাইভেটকারের অনুমোদন দিচ্ছে বিআরটিএ। এই লোক সংখ্যা ও গাড়ী বৃদ্ধির তুলনায় ঢাকা শহরের রাস্তা বাড়েনি। ঢাকার ৬ থেকে ৭ শতাংশ রাস্তা আছে। অথচ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী যে কোন বড় শহরের মোট আয়তনের ২৫ থকে ৩০ শতাংশ রাস্তা থাকা দরকার। প্রতিদিন সকালে শুধু ধানমন্ডি থেকে ২০-৩০ হাযার প্রাইভেটকার আসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। এক্ষেত্রে স্কুল বাস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা দরকার।
সেমিনারে আরো বলা হয়, যানজটের কারণে ৪০ শতাংশ জ্বালানি নষ্ট হয়। গাড়ীর লুব্রিকেন্ট ও স্পেয়ার্স পার্টস খরচ বাড়ে ১০ শতাংশ। বাস, ট্যাক্সি, সিএনজি, অটোটেম্পু, প্রাইভেটকার, রিক্সা সহ অন্যান্য গাড়ীর কর্মঘণ্টা নষ্ট বাবদ ক্ষতি হয় প্রায় ১২ হাযার কোটি টাকা। শিল্প পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতি হয় ৪ হাযার কোটি টাকা, অতিরিক্ত সিএনজি গ্যাস খরচ হচ্ছে ৫৭৫ কোটি টাকার। দুর্ঘটনা বাবদ ব্যয় হয় ৫০ কোটি, পরিবেশগত ক্ষতি হয় ২ হাযার ২শ’ কোটি এবং চিকিৎসা ব্যয় হয় ৭৩০ কোটি টাকা। এগুলো হ’ল প্রত্যক্ষ ক্ষতি। পরোক্ষ ক্ষতি রয়েছে বহুবিদ যার হিসাব করা কঠিন।
যানজটের কারণ : সবকিছু বিশ্লেষণ করে যেসব কারণে আজ ঢাকায় যানজটের এই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা হ’ল-
(১) পরিকল্পিত নগরায়নের অভাব। স্বাধীনতাত্তোর আজকের ঢাকার জনসংখ্যা ও স্থাপনার পরিসংখ্যান করে কমপক্ষে ২শ’ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার ছিল। কিন্তু তা নেয়া হয়নি। যেখানে আমেরিকা, বৃটেন, জাপানের মত উন্নত দেশগুলো বড় শহর বা নগরায়নের ক্ষেত্রে ২/৩শ’ বছরের মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। সেখানে এদেশে সেই পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।
(২) মহানগরের ক্ষুদ্রমেয়াদী পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া। এর কারণ রাজউকের প্রভাবশালী কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এদেরকে মদদ দেয় কিছু দলীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ফলে যত্রতত্র ঘর-বাড়ী, শিল্প-কারখানা, গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন স্থাপনার অনুমোদন এরা সহজে পেয়ে যায়। সম্প্রতি ভাঙ্গা ‘র‌্যাংগস ভবন’ ঘটনা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
(৩) কোর্ট-কাচারি, সচিবালয়, টার্মিনাল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মিল-কল-কারখানা সহ সকল অফিস-আদালত ঢাকার মূল পয়েন্টগুলোতে স্থাপন করা এবং পাশাপাশি আবাসিক ঘরবাড়ী স্থাপন করা। যার কারণে লাখ-লাখ কর্মজীবী, ছাত্র-শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং এর সাথে সারাদেশ থেকে অফিসের কাজে আগত মানুষের ভীড়ের চাপ সৃষ্টি হয়। এদের চলাচলের জন্য অবশ্যই পরিবহন ও থাকার জন্য বাসস্থান দরকার। এজন্য গাড়ীও বৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো রাখার জায়গা নেই। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
(৪) দেশের গার্মেন্টস শিল্প, মিল-কল-কারখানা সহ সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা। এজন্য গ্রাম ও শহরের মানুষকে এখানেই তাদের কর্মসংস্থানের সন্ধান করতে হচ্ছে।
(৫) দেশের সকল প্রান্ত থেকে বছরে প্রায় ৫ লাখ লোক রাজধানীতে আসে এবং এর সাথে যোগ হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়া শেষ করা ছাত্রদের সংখ্যা। এই ছাত্র-ছাত্রী ও স্থায়ী অধিবাসীদের থেকে প্রতি বছর ৫ লাখ লোক বৃদ্ধি সহ সর্বমোট কমপক্ষে ১০ লাখ লোক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের জন্য যেমন বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র, পানি, বিদ্যুৎ প্রভৃতির দরকার, তেমনি প্রয়োজন এদের চলাচলের মাধ্যম এবং প্রয়োজনীয় জায়গা। অথচ শুধু বাহনই বাড়ছে কিন্তু জায়গা তেমন বাড়ছে না।
(৬) উন্নত দেশগুলোতে লোকসংখ্যা কম, আবার বড় বড় জনবহুল শহরে প্রশস্ত রাস্তাও রয়েছে এবং রয়েছে বিকল্প রাস্তা। মাটিতে, পানিতে বা ওপরে। কিন্তু ঢাকার রাস্তা সংকীর্ণ। পৃথক লেনের জন্য রাস্তা অথবা বৃদ্ধির জন্য কোন জায়গা নেই। আছে রাস্তার ধারে বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে বড় বড় ইমারত ও ঘর-বাড়ী।
(৭) রাজধানীর বিরাট একটা অংশ ফুটপাত মার্কেট এবং বস্তিবাসীদের দ্বারা দখলকৃত। অথচ বস্তিবাসীদের ঢাকা নগরীর মত বিলাসবহুল জায়গাতে থাকার তেমন প্রয়োজন নেই। হকার্সদেরও রাস্তার ওপর অবস্থান করা এবং পসরা সাজিয়ে বসা একেবারে অনৈতিক। এদের অবস্থান যানজট সৃষ্টির জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়ী। কেয়ারটেকার সরকার এদের সরানোর ব্যাপারে বেশ তৎপর ছিল। কিন্তু দলীয় কোন সরকার তা করেন না।
(৮) রাজধানীতে যেভাবে গাড়ী বৃদ্ধি করা হচ্ছে সেভাবে রাস্তা বৃদ্ধি হচ্ছে না এবং যা আছে তার অধিকাংশ সংকীর্ণ। গাড়ী পার্কিং এর জায়গাও নেই। ফলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
(৯) প্রাইভেটকার জাতীয় গাড়ীর চেয়ে পাবলিক সার্ভিসের বড় গাড়ীগুলো তুলনামূলক কম রেজিষ্ট্রেশন দেয়া। এর সাথে যোগ হচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ীর সংখ্যা। ঢাকাতে বর্তমানে এই সংখ্যা ৮০ হাযার ৬৮৫টি। এর মধ্যে ১৪ হাযার বাস-ট্রাক ২০/২৫ বছরের পুরনো। ঢাকা সহ সারা দেশে বাস-ট্রাকের সংখ্যা ১৩ লাখ। এর জন্য লাইসেন্সধারী চালক রয়েছে ৯ লাখ। বাকী ৪ লাখের লাইসেন্স ভুয়া। টাকা দিলে এ ভুয়া লাইসেন্স পাওয়া যায়। তাছাড়া ঢাকাতে প্রতিদিন ২শ’র অধিক ভুয়া লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে।
(১০) ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন তা আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে। ট্রাফিকদের অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়।
(১১) সবচেয়ে বড় কারণ হ’ল- দলীয় সরকারগুলোর রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ও আন্তরিকতার অভাব। অতঃপর রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়হীনতা ও সদিচ্ছার অভাব।
প্রতিকারের উপায় :
ভয়াবহ এ যানজট নিরসনে কতিপয় প্রস্তাবনা ও পরামর্শ নিম্নে পেশ করা হল।-
১. যানজট একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বছরের পর বছর হতে মানবসৃষ্ট এই ভয়াবহ সংকটের কথা দলীয় কোন সরকার বাস্তবে আন্তরিকতার সাথে আমলে নেয়নি। যে কারণে ৪০ বছরের ব্যবধানে আজকের এই করুণ পরিণতি। আজ সংশ্লিষ্টরা চেষ্টা করেও যেন হালে পানি পাচ্ছেন না। এজন্য প্রয়োজন অবিলম্বে ২শ’ বছরের এক মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া। যাকে দু’ভাগ করে প্রথম ১শ’ বছরের জন্য গৃহীত পরিকল্পনাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা করা, যাতে উপস্থিত সংকট কাটানোর জন্য যরূরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া যায়। এক্ষেত্রে ১০ বছরের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা পরবর্তী যে কোন দলীয় সরকার আসুক না কেন সেখান থেকে যেন আবার শুরু করতে পারে। একে বার্ষিক বাজেটে একনেকের আওতায় এনে এর জন্য পৃথক বরাদ্দ রাখা দরকার। এই মহাপরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে হ’তে হবে এবং বিরোধী দলকে নিয়েই জাতীয় সংসদে তা পাশ করিয়ে আইনে পরিণত করতে হবে।
২. এই মহাপরিকল্পনার আওতায় প্রথমেই যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করা দরকার, সেটা হ’ল ঢাকা নগরীর সীমানা নির্ধারণ। গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলের আংশিক ভূমি রাজউকের নিয়ন্ত্রণে ড্যাপের (Detail Area Plan-বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) আওতায় আনতে হবে। ড্যাপের বর্তমান পরিকল্পনায় ৫৯০ বর্গমাইলের পরিবর্তে আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করা। এটা ২শ’ বছরের মহাপরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে। সরকারী স্থাপনার জন্য এখনি ভূমি অধিগ্রহণের কাজ হাতে নিতে হবে। প্রয়োজনে ড্যাপের সংশোধনী আনতে হবে।
৩. অন্তত ৬ মাসের জন্য হ’লেও নগরীর ব্যস্ততম এলাকাতে সরকারী অফিস-আদালত, শিল্প কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র, বেসরকারী ছোট-বড় সকল স্থাপনা বন্ধ রেখে সবগুলোকে মহাপরিকল্পনার অধীনে এনে নতুন অধিভুক্ত পরিকল্পিত এলাকা স্থাপন করা। এক্ষেত্রে ড্যাপের নীতি বাস্তবায়ন করা যায়। শুধু তাই নয়, রাজধানীর মূল পয়েন্টগুলোর অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, বাণিজ্য কেন্দ্র, সচিবালয়, মন্ত্রণালয় সহ পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যস্ততম প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন এলাকায় স্থানান্তর করা। এতে যেমন লোকের ভিড় কমবে, তেমনি গাড়ীর জটও কমবে। স্থানান্তর পদক্ষেপটি যেহেতু খুব ব্যয়বহুল সেহেতু তা পর্যায়ক্রমে করতে হবে। মনে রাখতে হবে বর্তমানে কেবল ঢাকার যানজটে বছরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাযার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, যা জাতীয় বার্ষিক বাজেটের প্রায় ১/৪ অংশ। পুরানো অফিস, আদালত, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানান্তরের জন্য যে অতিরিক্ত টাকার দরকার হবে তা কয়েক বছরের মধ্যে পুষিয়ে যাবে। দেশের উন্নতির স্বার্থে এ কাজটি হাতে নেয়া এখন সময়ের অনিবার্য দাবীতে পরিণত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে সব পুরানো বিল্ডিং আর ভাঙ্গার দরকার হবে না।
৪. রাজউককে সম্পূর্ণ দলীয় প্রভাবমুক্ত ঘোষণা করে দেশের অভিজ্ঞ, সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজউকে নিয়োগ দেয়া এবং স্বাধীনভাবে নির্দিষ্ট ছক বা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে দেয়া।
৫. কর্মসংস্থানের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকায় দেশের অন্যান্য শহর ও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আগত ও স্থানীয়ভাবে বছরে কমপক্ষে প্রায় ১০ লাখ নতুন লোক বিভিন্ন কর্মস্থানে যোগ দিচ্ছে। এজন্য যেমন আবাসনের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন পরিবহনের। সঙ্গত  কারণে  গাড়ী-ঘোড়ার  এই  অস্বাভাবিক  বৃদ্ধি  নগরীর রাস্তাগুলো ঢেকে ফেলছে। তাই প্রয়োজন যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিকভাবে দেশের ৭টি মহানগরীতে উচ্চ আদালত স্থাপন, ছোট-বড় অফিস, গার্মেন্টস, শিল্প-কলকারখানা স্থাপন করা। এক্ষেত্রে বেসরকারী সৎ উদ্যোক্তাদেরকে বিনা সূদে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতঃ নানাভাবে উৎসাহিত করা। এর ফলে বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর মানুষের ঢাকায় যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া সহ  আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ বছরে যে হাযার হাযার কোটি টাকার ক্ষতি হয় সেটা হবে না। একজন নিম্ন পেশা শ্রেণীর মানুষও সহজে অল্প বেতনে গ্রামে থেকে অথবা কাছাকাছি থেকে তার সংসার ভালভাবে পরিচালনা করতে পারবে। ঢাকার ওপরেও চাপ কমবে।
৬. গুলিস্তান থেকে নগরীর মূল ব্যস্ততম পয়েন্টের উপর দিয়ে ফ্লাইওভার স্থাপন করতে হবে। সম্প্রতি  প্রধানমন্ত্রী গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের কাজ উদ্বোধন করেছেন। জায়গা বিশেষে পাতাল রেল যোগাযোগ ও বহু লেন বিশিষ্ট রাস্তা বৃদ্ধি করা। পুরানো সংকীর্ণ রাস্তা প্রশস্ত করা। নতুন এরিয়াতে ২০-২৫ শতাংশ রাস্তার বরাদ্দ রাখতে হবে।
৭. নগরী থেকে সকল ফিটনেসবিহীন গাড়ী এবং পুরানো গাড়ী তুলে দিতে হবে। প্রাইভেট গাড়ী, বিশেষ করে কারের নতুন লাইসেন্স একেবারেই সীমিত করতে হবে। বিলাসবহুল বাস, দ্বিতল বাস, সাধারণ বাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ একটি কার যেখানে ১/২ জনের জন্য ব্যবহৃত হয় সেখানে ১টি বাস ৪০-৫০ জন লোকের আনা-নেয়া করতে পারে। বিলাসবহুল বাস তথা এসি বাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে এলিট শ্রেণীর যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারে। ফলে কারের মালিকদের খরচও সাশ্রয় হবে, যানজটও কমে যাবে।
৮. পুরাতন ও জীর্ণশীর্ণ বাড়ী-ঘর ও স্থাপনা সংস্কার এবং যত্রতত্র স্থাপনা তৈরী বন্ধ করতে হবে।  নতুন ঘরবাড়ী, রাস্তা, স্থাপনা তৈরীতে রাজউকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করতে হবে। ঘনবসতিমুক্ত পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তুলতে হবে এবং পার্ক, বিশুদ্ধ পানির জন্য দীঘি, গভীর জলাশয়  তৈরী  করা  যেতে  পারে। সরকারী ব্যবস্থাপনায় বস্তিবাসীদের নগরীর দূরবর্তী এলাকায় আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে। এর সাথে নগরীর যত পার্ক বা ফাঁকা স্থান আছে তা অশ্লীলতা মুক্ত ও দুর্বৃত্তদের দখল থেকে উদ্ধার ও রক্ষা করতে হবে।
৯. নগরীর ফুটপাত ও সরকারী জায়গা থেকে সকল দোকান-পাট ও অবৈধ স্থাপনা বস্তি সরায়ে রাজউকের বাইরে এদের থাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করলে কাজের মাধ্যমে তারা স্বনির্ভরশীল হবে। এ অবস্থায় এদের কেউ কেউ গ্রামে ফিরে গিয়ে রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে খেটে খাবে।
১০. ট্রাফিক পুলিশদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন পরিবহণ থেকে তারা দিনে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যত্রতত্র গাড়ী থামানোর অনুমতি দেয়। এজন্য সৃষ্টি হয় যানজটের। এটা শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
১১. ঢাকা নগরীতে যানজটের অন্যতম আরেকটি কারণ ‘রোড ক্রসিং’ ও ‘রেল ক্রসিং’। কয়েকশ গজ যেতে না যেতেই সিগন্যাল। লালবাতি জ্বলে উঠলে আর যাওয়ার উপায় নেই।  শুধু দিনে নগরীতে ৭০ বার ‘রেল ক্রসিং’-এর কারণে গেট বন্ধ রাখতে হয়। এক্ষেত্রে বিকল্প হ’ল প্রত্যেক বহুমুখী রোডের ওপর দিয়ে গাড়ী চলাচলের জন্য ফ্লাই ওভার তৈরী করা। তাহ’লে যানজট অনেকখানি কমে যাবে।
১২. ঢাকা নগরীর চার পাশ দিয়ে খাল খনন করে নদীগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন করা, যাতে মালামাল সহ জনগণ নৌপথে চলাচল করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন নদীগুলোর পরিবেশ দূষণ রোধ করা।
১৩. যানজট নিরসনের এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও পরিচালনা বাস্তবায়নে সেনাবানিহীর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।

বলা বাহুল্য যে, ঢাকার যানজট কেবল ঢাকাবাসীর জন্য কষ্টদায়ক নয়; বরং এটা গোটা জাতির জন্য ক্ষতিকর। বিশ্লেষকদের ধারণা এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা মহানগরীকে অদূর ভবিষ্যতে ‘পরিত্যক্ত নগরী’ হিসাবে ঘোষণা দিতে হবে। তাই এই সমস্যাকে দ্রুত আমলে নিয়ে তড়িৎ পদক্ষেপ ও কর্মসূচী হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ঢাকার যানজটের প্রতিকারের জন্য পৃথক একটা ফান্ড গঠন করলে ব্যাংক, বীমা, শিল্পপতি, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষের অকুণ্ঠ সহযোগিতা ও সমর্থন পাওয়া যাবে বলে আশা করি। মনে রাখতে হবে যে, ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ- স্বল্প পরিসরে অধিক পরিবহন ও মানুষের অপরিকল্পিত বিচরণ ও নগরায়ণ। আর এর জন্য প্রয়োজন যেমন জায়গা, তেমনি পরিবহণ ও পরিকল্পিত আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা। তাই বাস্তবায়নকারী ও পরিকল্পনাবিদদের উচিত হবে ঢাকাতে কি পরিমাণ জায়গায় কত বাড়ী-ঘর রাখা যাবে এবং তাতে কত লোক বসবাস করবে, কি কি প্রকৃতির স্থাপনা থাকবে এবং এর জন্য কত রাস্তা, কত পরিবহনের প্রয়োজন পড়বে তার পরিসংখ্যান তৈরী করা। দেশের আর্থ-সামাজিক পেক্ষাপটে বৃহৎ স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে সরকারের গুরু দায়িত্ব হ’ল এখনই এর লাগাম ধরা; নইলে আত্মঘাতী এই ধ্বংসাত্মক দূরাবস্থা থেকে কেউ রক্ষা পাবে না; আর সেদিন খুব বেশী দূরে নয়।






বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
ভাস্কর্যে নয়, হৃদয়ে ধারণ করুন! - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আজারবাইজানের নাগর্নো-কারাবাখ বিজয় - মুহাম্মাদ ফেরদাউস
আবহাওয়া দূষণ রোধে সবুজ উদ্ভিদ
নতুন শিক্ষা কারিকুলাম : মুসলিম জাতিসত্তা ধ্বংসের নীল নকশা - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
গ্লোবাল টাইগার সামিট
পার্বত্য শান্তিচুক্তির হাল-অবস্থা - মেহেদী হাসান পলাশ
হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ - জামালুদ্দীন বারী
রোহিঙ্গা ফেরৎ চুক্তি : তবে... - শামসুল আলম শিক্ষকআল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
বাবরী মসজিদ কলঙ্কের অবসান হোক - ড. নূরুল ইসলাম
ফিলিস্তীনীদের কান্না কবে থামবে? - শামসুল আলমশিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
শরণার্থীরা এখন সবার মনোযোগের বাইরে - মুহাম্মাদ তৌহিদ হোসাইন
ট্রান্সজেন্ডারবাদ : এক জঘন্য মতবাদ - আব্দুল্লাহ আল-মুছাদ্দিক
আরও
আরও
.