২১ নভেম্বর ২০১০ রাশিয়ায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় শুরু হ’ল ‘গ্লোবাল বাঘ সামিট’। বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসাবে খোদ প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়েছেন, আমাদের অহংবোধের একমাত্র আন্তর্জাতিক প্রাণী ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ বিষয়ে সারগর্ভ কথাবার্তা বলার জন্য। মূলতঃ বিলুপ্তপ্রায় বাঘকে কিভাবে বাঁচানো যায় এবং ২০২২ সালের মধ্যে এর সংখ্যা দ্বিগুণ তথা ভালভাবে বাঁচানোর কৌশলপত্র তৈরী করাই এ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য। মাসখানেক আগে বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকের রিপোর্টে সুন্দরবনের আশপাশে বাঘের আক্রমণে মানুষ হত্যার চিত্র ছিল নিম্নরূপ :

‘...২০০০ সালে বাঘের আক্রমণে মানুষ মারা যায় ৩০ জন, ২০০১ সালে ১৯, ২০০২ সালে ২৮, ২০০৪ সালে ১৫, ২০০৫ সালে ১৩, ২০০৬ সালে ৬, ২০০৭ সালে ১০, ২০০৮ সালে ২১, ২০০৯ সালে ৩০, ২০১০ সালে (আগষ্ট পর্যন্ত) ৩০ জন। ভারতীয় প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে, বন নিরাপদ বান্ধব না হওয়ার কারণে এবং মানুষের গোশত মিষ্টি হওয়ায় বাঘ লোকালয়ে আসছে এবং বাঘের হাতে মানুষের মৃত্যুর খবর প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ ও ভারতের এ অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসে হাযার হাযার মানুষ মারা যায়। আর স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া এসব গলিত মৃতদেহ বাঘ খায়। ফলে তারা মানুষখেকো বাঘে পরিণত হচ্ছে।

এখন টিভি চ্যানেলের ‘ব্রেকিং নিউজে’ কিংবা পত্রিকার পাতায় প্রায়ই চোখে পড়ে, ‘সুন্দরবনে মধু বা গোলপাতা কিংবা শুকনো কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে ‘অমুক-অমুক’ বাঘের আক্রমণে নিহত’। অনেকটা রাস্তার ‘রোড-এক্সিডেন্টে’র মত। আসলে প্রতি বছর ‘আমাদের তথাকথিত অহংকার’ সুন্দরবনের বাঘ-এর আক্রমণে আমাদের কত মাওয়ালী, বাওয়ালী, জেলে ও নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান আমরা না রাখলেও, সুন্দরবনে কতটি বাঘ আছে, তার মধ্যে পুরুষ, মহিলা ও শিশু বাঘ ক’টি ইত্যাদির সব তথ্য সংগ্রহে আমরা অত্যন্ত ব্যাকুল। সর্বশেষ জরিপ মতে, এদেশে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ৪১৯টি, যার মধ্যে পুরুষ বাঘ ১২১ ও মহিলা ২৯৮টি। বাংলাদেশের মানুষেরও এত সঠিক হিসাব আছে কিনা আমার সন্দেহ! ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ’ সম্মেলনের আগে এদেশে মহা উৎসাহে চমৎকার ব্যানার-পোষ্টারে পালন করা হ’ল ‘বাঘ-দিবস’।

বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশে বাঘ বাস করে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। অন্য দেশগুলো হচ্ছে- ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, ভুটান, নেপাল ও রাশিয়া।

আকজাল টিভি চ্যানেলগুলো খুললেই আফ্রিকার হিংস্র সিংহ-বাঘ কর্তৃক জেব্রা, ওয়াইলবিস্ট, মহিষ ইত্যাদিকে ঝাপটে ধরে কিভাবে মহা উল্লাসে হত্যা করা হয়, তা দেখে আমাদের হৃদয় অনেকেরই কেঁদে ওঠে। কিন্তু এদেশের হাযারো ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ টাইপের ‘ছলিমদ্দি-কলিমদ্দি’দের কিভাবে বাঘে টেনে নিয়ে হত্যার পর, তাদের অসহায় পরিবারবর্গ কিভাবে আবার নতুন জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তা অদ্যাবধি এদেশের কিংবা ঐ দেশীয় বহুজাতিক চ্যানেলগুলো সম্ভবত এ জন্যে দেখায় না যে, এদেশের মানুষ তখন তার স্বজনদের যে কোন ভাবে রক্ষায় এগিয়ে আসবে এবং স্বজনখেকো বন্য বাঘকে এভাবে তথাকথিত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের’ মাধ্যমে রক্ষার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আমাদের অহংবোধের প্রাণী বাঘ আমাদের কি কি উপকার করছে ও ক্ষতির পরিমাণই বা কি? আমরা যদি আবেগের বশবর্তী না হয়ে ঠান্ডা মাথায় অত্যন্ত গভীরভাবে চিন্তা করি তাহ’লে দেখতে পাবো, বাঘ প্রতিবছর আমাদের কত মানুষকে হত্যা করছে। তা ছাড়াও বাঘ তার নিজ সন্তান হত্যা ছাড়াও প্রতিবছর আমাদের কত হরিণ, বন মোরগ, অন্য বন্য ও গৃহপালিত প্রাণী খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে, তার পরিসংখ্যান কিন্তু কেউ করছে না। বাঘে সুন্দরবনের হরিণ না খেলে, আমাদের হরিণের সংখ্যা অনেক বেশী হ’ত নাকি? তাতে আমাদের কি ক্ষতি হ’ত? কয়েক বছর আগে ‘বাঘমুক্ত’ নিঝুম দ্বীপে মাত্র কয়েক জোড়া হরিণ ছাড়া হ’লেও, বর্তমানে ঈর্ষণীয়ভাবে ঐ দ্বীপে হরিণের সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং সরকার ঐ দ্বীপের হরিণ রফতানী বা জনসাধরণের কাছে বিক্রির চিন্তা করছে বলে পত্রিকার রিপোর্টে বেরিয়েছে। নিঝুম দ্বীপে কেবল হরিণ আছে বাঘ নেই, তাতে নিঝুম দ্বীপবাসী ও সেখানে বসবাসকারী হরিণ কারোই কোন সমস্যা হচ্ছে না। হরিণের সংখ্যা ঈর্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। আর এই বাঘ রক্ষার জন্যে কত সরকারী অফিস, প্রকল্প, প্রচার-প্রচারণা, পোষ্টার-ব্যানার, সভা-সেমিনার তার হিসাব আমার মত সাধারণ মানুষের পক্ষে দেয়াও অত্যন্ত কষ্টকর। কিন্তু দুঃখজনক হ’লেও সত্য, এদেশের অসহায় ‘রাম-রহিম’দের বর্ণিত বাঘ থেকে রক্ষার কোন প্রকল্প বা বরাদ্দ কিংবা মরণোত্তর পরিবারবর্গের ভরণ পোষণের কোন ব্যবস্থা আমরা করেছি কি?

তাহ’লে পুরো ব্যাপারটিই হচ্ছে আমাদের তথাকথিত আবেগঘন ‘আভিজাত্য’ তথা খামোখা অসহায় মানুষের জীবনের সাথে এক ধরনের ‘প্রতারণার নামে প্রচারণা’, যা ত্যাগ করাই আমাদের জন্য সবদিক দিয়ে শ্রেয়। আমাদের পরিবেশবাদী ও এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিগণকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাব, আমাদের দেশের মাটি ও মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য, অন্য দেশের তথাকথিত ‘আমাদের মানুষের জন্য কল্যাণহীন’ আইনের পক্ষে নয়। এ ক্ষেত্রে আবেগের চেয়ে মানবিকতা ও যুক্তির প্রাধান্য অত্যাবশ্যক।

জাহাঙ্গীর হোসেন






ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান : স্বাধীনতার নতুন সূর্যোদয় - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
ফিলিস্তীনীদের কান্না কবে থামবে? - শামসুল আলমশিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
মিয়ানমার এখন বাংলাদেশকে দূষছে - এ কে এম যাকারিয়া
নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ : বিচার হয় না আর্থিক প্রতারণার - সাঈদ আহমাদ
বিশ্বময় ভাইরাস আতঙ্ক : প্রয়োজন সতর্কতা - মুহাম্মাদ আব্দুছ ছবূর মিয়া, ঝিনাইদহ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক : একটি প্রাসঙ্গিক আলোচনা - লিলবর আল-বারাদী - যশপুর, তানোর, রাজশাহী
ইতিহাসের ভয়াবহ সব মহামারীগুলো - -আত-তাহরীক ডেস্ক
ঢাকার যানজটে জাতি দিশেহারা : কারণ ও প্রতিকারের উপায় - শামসুল আলম
করোনার চিকিৎসা ও টিকা বিনামূল্যে সবার জন্য চাই
ফ্রান্স ও স্পেনে হিজাব নিষিদ্ধ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক - অজয় কান্তি মন্ডল
আত্মহত্যা ও সামাজিক দায় - মুহাম্মাদ ফেরদাঊস
আরও
আরও
.