নাগর্নো কারাবাখ ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যবর্তী দক্ষিণ ককেশাসের একটি দেশ। কারাবাখ অঞ্চলটা আজারী ও আর্মেনীয় উভয়েই নিজেদের পূর্বপুরুষদের ভূমি হিসাবে দাবী করে। কারাবাখ নামটির ভেতরেও তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই এলাকার দখল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়ে নভেম্বরে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হওয়া নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের দ্বন্দ্বের বিষয়টি আধুনিক বিশে^র অন্যতম আলোচিত বিষয়। এ নিবন্ধে কারাবাখ বিজয় নিয়েই আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
কারাবাখ শব্দের অর্থ :
কারাবাখ মূলত তুর্কী ও ফার্সী ভাষার সংমিশ্রণে সাধিত শব্দ। ‘কারা’ (‘Kara’) অর্থ কালো (তুর্কী ভাষায়), ‘বা’ (baõ) অর্থ ফার্সীতে বাগান আর তুর্কীতে আঙ্গুর গাছ, ‘খ’ (bakh) হ’ল ফার্সী ‘বাগ’ শব্দটির রুশীকরণ (রুশ ভাষায় রূপান্তর)। নাগর্নো (Nagorno) শব্দের অর্থ ‘পার্বত্য’ (রুশ ভাষায়)। সম্মিলিত অর্থ হ’ল- পার্বত্য কালো বাগান। এই নামের মাধ্যমেই এই অঞ্চলে তিনটি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনটি শক্তি যে এখানে ক্ষমতাসীন ছিল তার প্রমাণ মেলে। তারা হ’ল তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়া। এলাকাটি আর্মেনীয়দের দ্বারা ‘আর্টসাখ’ আর আজারীদের দ্বারা ‘ইউক্বারী’ বা ‘দাগলিক্ব ক্বারাবাগ’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে।[1] ১৯৯১ সালের পর হ’তে নাগর্নো কারাবাখে কার্যত ‘আর্টসাখ প্রজাতন্ত্র’ হিসাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনীয়দের শাসন পরিচালিত হয়ে আসছে।
[চিত্র: নাগর্নো-কারাবাখ এলাকার ভৌগলিক মানচিত্র।[2]
Black Garden: Armenia and Azerbijen Through Peace and War বইয়ের লেখক Thomas De Waal-এর মতে, কারাবাখ অঞ্চলটি মধ্যযুগের আর্মেনীয় চার্চ দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ায় অনুমিত হয় যে, এখানে যথেষ্ট পরিমাণে আর্মেনীয়রা ছিল। আবার কারাবাখের মধ্যভাগে ১৮ শতাব্দীতে গুরুত্বপূর্ণ শহর শুশা (Shusha)-এর ভূখন্ডের পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়।[3] এটি আজারীদের শক্ত উপস্থিতির প্রমাণ। ফলে এ এলাকাটি আর্মেনীয় ও আজারী উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এই নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে যে দু’টি দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব তাদের কিছুটা পরিচয় দেয়া প্রয়োজন।
আজারবাইজান মূলত ককেশীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রজাতন্ত্র (Republic of Azerbaijan)। ধর্মনিরপেক্ষ হ’লেও এখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। রাজধানী বাকু, মুদ্রার নাম ‘মানাত’। এখানকার জনসংখ্যা আনুমানিক ১ কোটি ৩১ হাযার (২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী)। আয়তন ৮৬,৬০০ বর্গকিলোমিটার। এটি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ (Ilham Aliyev)।[4] এখানে জাতিগতভাবে আজারীরা বাস করে। তেল ও বিদ্যুৎশক্তি রপ্তানিকারক হিসাবে দেশটির প্রসিদ্ধি আছে ।
আর্মেনিয়াও একটি প্রজাতন্ত্র (Republic of Armenia)। রাজধানী ইয়েরেভান, মুদ্রার নাম ‘ড্রাম’। এখানকার জনসংখ্যা আনুমানিক ২৮ লক্ষ ২০ হাযার (২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী)। আয়তন ২৯,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার। এটি প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনয়ান (Nikol Pashinyan)।[5] জাতিগতভাবে আর্মেনীয়রা এখানে বাস করে। রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে কোন স্বীকৃতি না থাকলেও আর্মেনীয়রা সাধারণত খ্রিষ্টধর্ম মেনে চলে।
কারাবাখ অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া উভয়ের নিজস্ব মতামত আছে। তবে এখানে আর্মেনীয় ও আজারীরা প্রাচীনকাল থেকে পাশাপাশি অবস্থান করছে। নাগর্নো কারাবাখ মূলত বৃহত্তর কারাবাখ-এর অন্তর্গত। কারাবাখ অঞ্চলটি ইতিহাসে ককেশীয়, আলবেনীয়, সাসানীয় পারসিক সাম্রাজ্য, আরব খুলাফায়ে রাশেদীন ও উমাইয়া খেলাফত, আববাসীয় খেলাফত, মোঙ্গল ইলখানাত ও জালায়িরি রাজবংশ এবং ইরানের সাফাভি সাম্রাজ্যের দ্বারা শাসিত হয়েছে।
১১শ শতাব্দীর মধ্যে সেলজুক সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ায় তুর্কী জনগণ এসে এখানকার জনগণের সাথে জাতিগত মিশ্রণ ঘটায়। যদিও তাদের আসার সময়কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে আজারবাইজানে ইরানের সাফাভী রাজবংশ ক্ষমতাসীন ছিল। এ সময়ে সাফাভী ও অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থা বিরাজ করছিল। যা ককেশাস অঞ্চলে সরাসরি প্রভাব ফেলে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রাশিয়া এই যুদ্ধে (সাফাভী-অটোমান) যোগ দেয়। ১৮৪০ সালে ককেশাসে সাফাভী শাসন ভেঙ্গে পড়ে এবং আজকের আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া ‘খানাত’ হিসাবে বিচ্ছিন্ন হয় বা গড়ে ওঠে। খানাতগুলো ছিল অর্ধ-স্বাধীন নীতিসম্বলিত। উচ্চ কারাবাখে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত আরব, মোঙ্গল, তুর্কী ও পারস্যের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হাতবদল হয়েছে।[6] উচ্চ কারাবাখে জনসংখ্যা তখনও অধিকাংশ আর্মেনীয় ছিল। চতুর্দশ শতাব্দীতে স্থানীয় এক আর্মেনীয় নেতৃত্বের উন্মেষ ঘটলে সাফাভী শাসন কারাবাখে স্বায়ত্তশাসন অনুমোদন দেয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কারাবাখের স্বায়ত্তশাসক পরিবারের আন্তঃকোন্দল আর্মেনীয় অভিজাতদের ধ্বংস করে। এতে কারাবাখে আর্মেনীয়দের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে আজারী শাসন প্রতিষ্ঠা পায় ‘খানাত’ হিসাবে। যা শুশা কেন্দ্রিকভাবে অর্ধ-স্বাধীন রাজতন্ত্রের অধীন ‘কারাবাখ খানাত’ হিসাবে গড়ে ওঠে।
একই রকম খানাত ছিল বাকু, কুবা, শেকি, শ্রিভান, নাখচিভান ও ইয়েরেভান এ। সবগুলো খানাত তুর্কী মুসলিম পরিবার দ্বারা শাসিত হ’ত। সবগুলো খানাত-এ বিভিন্ন জাতির জনগণ সংমিশ্রিত ছিল। একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল, ‘ইয়েরেভান খানাত’ ১৮২৬ সাল পর্যন্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকলেও ১৮৩২ সালে এসে তা পুরো উল্টে যায়। অর্থাৎ মুসলমানরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।[7] এর পেছনে স্থানান্তর অন্যতম কারণ ছিল।
১৮১২-১৩ সালে রুশ-পারসিয়ান যুদ্ধে পরাজয়ের পর {গুলিস্তান চুক্তি হ’লে} কারাবাখ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অন্য খানাতগুলো ১০ বছরের মাথায় বিদ্রোহ করে এবং তাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়। এতে ইরান সহায়তা করে। ফলে ২য় ইরান-রাশিয়া যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৮২৮ সালে ইরানের পরাজয়ের পর রাশিয়া জনগণ হস্তান্তরে আগ্রহী হয়। এতে আর্মেনীয় এক বিশাল জনগোষ্ঠী পারস্য ও অটোমান সাম্রাজ্য ছেড়ে রাশিয়ান ককেশাসে স্থায়ী হয়। একইভাবে ককেশাস থেকে মুসলমানরা পাড়ি দেয় ইরান ও অটোমান সাম্রাজ্যে।[8]
রাশিয়ার পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী ১৮২৩ সালে কারাবাখে আর্মেনীয় ছিল ৯% আর বাকী ৯১% ছিল মুসলিম জাতিভুক্ত। ১৮৩২ সালে আর্মেনীয় ছিল ৩৫% এবং ১৮৮০ সালে এসে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে ৫৩% গড়ে ওঠে। এটা হয়েছে ১৮৫৫-৫৬ ও ১৮৭৭-৭৮ এর রুশ-তুর্কী যুদ্ধের ফলে।[9] রাশিয়া দেখেছে যে, আজারীরা তুর্কীর মিত্র হওয়ায় নির্ভরযোগ্য নয়। ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিগতভাবে তুর্কীদের সাথে মিল রয়েছে আজারীদের। সেজন্য আর্মেনীয়দের বিশ^স্তহিসাবে নেয় রুশরা। রুশদের কৃপাধন্য হয়ে আর্মেনীয়রা ক্ষমতায় আসতে থাকে। অনেকটা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন আসার পর প্রথমদিকে যেমন হিন্দু অভিজাতরা শাসনে সুবিধা পায়। এভাবে রুশ শাসনের পর থেকেই মূলত শত্রুতার সূত্রপাত। ১৯০৫ সালে প্রথম রুশ বিপ্লব সংঘটিত হ’লে পুরো ককেশাসে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। গোটা আজারবাইজান অঞ্চলে সংঘর্ষ হয়। বাকু, গ্যাঞ্জা, নাখজিভান ও ইয়েরেভানেও সংঘর্ষ হয়। ফেইল (Feigl)-এর মতে, প্রথম রুশ বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ১০,০০০-এরও বেশি আজারীকে হত্যা করা হয়।[10]
১৯১৭ সালে রাশিয়ার বিপ্লবকে কেন্দ্র করে ক্ষণস্থায়ী ট্রান্সককেশীয় ফেডারেশনের জন্ম হয়। যারা রাশিয়া থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হিসাবে ১৯১৮ সালের ২২শে এপ্রিল ঘোষণা দেয়।[11] এসময় দক্ষিণ ককেশীয় তিনটি দেশের (জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান) মধ্যে মিল না হওয়ায় তাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র Democratic Republics (AzDR, GDRand ArDR) হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়।[12] জাতিগতভাবে আর্মেনীয় ও আজারীরা নতুন রাষ্ট্র গঠন করে। যার নাম দেয় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান উভয়েই প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ও তাৎক্ষণিকভাবে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের শাসনক্ষমতা কে নিবে তা নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ে। তারা কোন সুরাহা করতে ব্যর্থ হয়। এর ৩ বছরের মাথায় রাশিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হ’লে দু’টি দেশসহ পুরো ককেশাস হস্তগত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯২১ সালে নাগর্নো কারাবাখ অঞ্চলটি ‘স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল’ হিসাবে ঘোষিত হয়। সোভিয়েত তাদের নিজস্ব ইউনিয়নভুক্ত করে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানকে আলাদা সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র করে দেয় এসএসআর (SSR= Soviet Socialist Republic) হিসাবে। নাগর্নো কারাবাখ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (NKAO) হিসাবে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের আভ্যন্তরীণ হিসাবে গৃহীত হয়। যদিও এর অধিকাংশ জাতিগতভাবে আর্মেনীয়। এজন্য তৎকালীন সোভিয়েত ককেশাস কমিটির প্রধান নেতা জোসেফ স্ট্যালিনকে দোষী করে অনেকে। তিনি NKAO কে ASSR (Azerbijen Soviet Socialist Republic)-এর কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।[13] এতে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া কোন পক্ষই মূলতঃ সন্তুষ্ট হয়নি।[14] জাতিগতভাবে আর্মেনীয়রা আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্রের সাথে একীভূত হ’তে চাচ্ছিল বারবার। কিন্তু তা অস্বীকার করা হ’তে থাকে। সোভিয়েতের অধীনে সমস্যাটা সমাধান না করে তা ধরে রাখা হয়। এর মধ্যে সোভিয়েতের দৃঢ় শাসনকালে তেমন কোন বড় পরিবর্তন আসেনি। ১৯৮০ সালের পরে সোভিয়েত ‘গ্লাসনস্ত’ নীতিমালা ঘোষণা করে, যা জনগণকে আরো বেশি রাজনৈতিক স্বাধীনতা দেয়। কিন্তু এর পরিণাম খারাপ ছিল।
১৯৮৮ সালে দু’দেশের মধ্যে আবারও এ অঞ্চল নিয়ে দ্বন্দ দেখা দেয়। এবছর আর্মেনীয়রা একটি সংশোধনী পাস করে, যাতে আজারবাইজানকে এ অঞ্চল ছেড়ে দিতে বলা হয়। কারাবাখের আর্মেনীয়দের এটি মূলতঃ অনধিকার চর্চা হিসাবে গৃহীত হয়। তবে এর ফলে সংঘর্ষ আবার চাঙ্গা হয়। এ আহবানে সাড়া দিয়ে আর্মেনিয়া একীভূত হবার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম ইত্যাদি করে। আর আজারবাইজান এটা প্রতিহত করতে সচেষ্ট হয়। সংঘর্ষ আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলে অঞ্চলটি নিয়ে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দু’দেশ। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যেহেতু সোভিয়েত শাসনামলে নাগর্নো-কারাবাখকে আজারবাইজানের আভ্যন্তরীণ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। সে হিসাবে অঞ্চলটি সোভিয়েতের শাসনমুক্ত হয়। আর এটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসাবে গৃহীত হয়। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনীয়রা এ এলাকার দাবীতে আগ্রাসন চালায়। আজারবাইজানের তুলনায় আয়তন ও জনসংখ্যায় কম হ’লেও আধুনিক সমরাস্ত্র, প্রযুক্তি ইত্যাদির সহায়তায় বিশেষভাবে রাশিয়ার মদদে বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনীয়দের দখলকে মেনে নেয়া হয়। এ অঞ্চল নামমাত্র ‘আর্টসাখ প্রজাতন্ত্র’ হিসাবে পরিচালিত হ’লেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। কোন দেশ এ অঞ্চলকে স্বাধীন হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি।[15]
১৯৯১ সালের এ যুদ্ধে প্রায় ৩০,০০০ জনগণ মারা যায়[16] এবং ১০ লাখের বেশি মানুষ নিজ এলাকা থেকে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। এভাবে ৩ বছর যুদ্ধ চলার পর আর্মেনীয়রা বিজয়ী হয়। এরপরও নাগর্নো কারাবাখ আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত থাকে। কিন্তু তা আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
১৯৯৪ সালে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া উভয় দেশই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে যাতে সংঘর্ষ থামানো যায়। এই চুক্তির মধ্যস্থতাকারী ছিল রাশিয়া। যার সাথে আর্মেনিয়ার যোগসূত্র গভীর। আবার আজারবাইজানের সাথেও রাশিয়ার সংযোগ রয়েছে। রাশিয়া শান্তির জন্য সেনা পাঠাতে না পেরে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক শক্তিকে এ বিরোধ সমাধানের আমন্ত্রণ জানায়। যাতে ফ্রান্স ও যু্ক্তরাষ্ট্র-এর সমন্বয়ে চূড়ান্ত সমাধান হবার আশা করে রাশিয়া। কিন্তু আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান উভয় দেশই চূড়ান্ত সমাধানে অসম্মত হয়। আর্মেনীয়রা নাগর্নো কারাবাখের আদি আজারবাইজানি শহরগুলোর (দখলকৃত ৭টি শহর) নাম পরিবর্তন করে সেখানে আর্মেনীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।[17]
যখন আর্মেনীয়ার দাফতরিক নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নাগর্নো কারাবাখকে আর্মেনিয়ার একীভূত করার মানসিকতা প্রকাশ করেন, তখন আজারবাইজানও হারানো অঞ্চল ফিরে পাবার পরিকল্পনা করে। সেজন্য ২০০৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আজারবাইজান ২৪০০ কোটি (২৪ বিলিয়ন) আমেরিকান ডলার সমমূল্যের অর্থ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করে। যা আর্মেনিয়ার খরচের ৬ গুণ বেশী।[18] আজারবাইজানী প্রধানমন্ত্রী ইলহাম আলিয়েভ এটি অধিকারে দৃঢ় ও সুপরিকল্পিত অবস্থান ধরে রাখেন।
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া উভয় দেশই স্ব স্ব সীমানায় সেনা মোতায়েন রাখত আগে থেকে, যারা মাঝে মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হ’ত। ২০১৬ সালে উভয় দেশ ৪ দিনের যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এরপর তুরস্ক এ যুদ্ধে যোগ দেয়। তুরস্ক তার সেনা ও সমর সাহায্য ২০১৯-এ সিরিয়ায় ও ২০২০-এ লিবিয়ায় প্রেরণ করে। যেখানে রাশিয়াও সামরিক সাহায্য প্রেরণ করে তুরস্ক বাহিনীর বিপক্ষে। তাই আর্মেনিয়ার সাথে তিক্ততার শুরুর দিকে (জুলাই ২০২০ এ) তুরস্ক আজারবাইজানের প্রতি মনোযোগী হয়। আজারবাইজান ও তুরস্ক জাতিগতভাবে উভয় দেশের জনগণের সংস্কৃতি প্রায় একই। আগস্টে উভয় দেশ সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। আর আজারবাইজানে তুরস্কের সমরাস্ত্র প্রেরণ বৃদ্ধি পায়। যার মধ্যে অত্যাধুনিক ড্রোনও ছিল।
২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে যুদ্ধ শুরু হয়। হামলার শুরু নিয়ে উভয় দেশই একে অপরকে দায়ী করে আসছে। আর্মেনিয়া আজারবাইজানের সীমান্ত এলাকা গ্যাঞ্জায় হামলা চালায়, যাতে বহু বেসামরিক জনগণ হতাহত হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে আজারবাইজানী সেনারা আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত এলাকার অন্তত ২০ কি. মি. অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কয়েক সপ্তাহ পরে আজারবাইজানী নিয়ন্ত্রণ আর্মেনিয়ার সীমানা পর্যন্ত চলে যায়।[19] আর্মেনিয়া পাল্টা যুদ্ধ করলেও আজারবাইজানের ড্রোনের কাছে কুলিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। যুদ্ধে তুরস্কের বাইরাক্টার (Bayraktar) ড্রোন, যা একটানা ২৪ ঘন্টা আকাশে উড়তে সক্ষম ও ৫৫ কেজি পর্যন্ত বোমা বহনে সক্ষম এবং এর সাথে ইসরাঈলের কামিকাজে (Kamikaze) বা হার্পি-২ (IAI Harop) ড্রোন ব্যবহৃত হয়।[20] ৮ই নভেম্বরে আজারবাইজানী সেনারা ঐতিহাসিক শুশা শহর দখল করে নেয়। যা নাগর্নো কারাবাখের মূল শহর স্টেপানেকার্টের কাছাকাছি। এমনকি এর ১৫ কি.মি. এর মধ্যে। ফলে আর্মেনিয়া চুক্তি মেনে নিতে বা আত্মসমর্পণ করতে সম্মত হয়। যুদ্ধে ১০০০ থেকে ৫০০০ জনগণ নিহত হয়।[21] এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি নাটকীয়ভাবে নাগর্নো কারাবাখের নিয়ন্ত্রণকারী ভবিষ্যতে কারা হবে তা পুনঃনির্ধারণ করে। আজারবাইজান যতটুকু অধিকার করেছে তার নিয়ন্ত্রণ নিবে এবং নাগর্নো কারাবাখ ছাড়া আজারবাইজানের বাকি যেসব অংশ আর্মেনিয়ার দখলে ছিল সেটাও পাবে। নাগর্নো কারাবাখে সেখানকার জাতিগত আর্মেনীয় দ্বারা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে তা একক নয়। অনেকটা ১৯৯৪ সালের চুক্তিতে আর্মেনিয়া যেমন অধিকার পেয়েছিল তেমন। সবচেয়ে বড় কথা এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি মূলত দু’দেশের শত্রুতা কোন অংশেই কমাবে না। আর শত্রুতা নিশ্চিহ্ন না হ’লে মূলতঃ চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। শুধু একটা চুক্তি হিসাবে থাকবে এবং যতদিন আবার যুদ্ধ না হচ্ছে ততদিন একই থাকবে।[22]
ফারিজ ইসমাঈল জাদে (২০০৫)-এর মতে, নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি ভৌগলিকভাবে মতবিরোধপূর্ণ। এটি পূর্ব ও পশ্চিমা শাসনের সংযোগ সেতু হিসাবে কাজ করে। এজন্য সেখানে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি করে তিক্ত শত্রুতা বজায় রাখা হয়েছে। ভৌগলিক বিষয় ছাড়াও কৌশলগতভাবে এ অঞ্চল তেল ও গ্যাস সম্পদের কারণে বাইরের শক্তিধর দেশগুলোকেও আকৃষ্ট করেছে। এখানকার শক্তি সম্পদ ব্যবহার ও সে কাজে যুক্ত হ’তে বহিঃশক্তিগুলো ঔৎসুক্য প্রদর্শন করে। কমপক্ষে ৭টি মূল দেশ আছে এ দৌড়ে। তারা হ’ল- রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান, তুরস্ক, ইসলামী সাম্রাজ্য ও চীন। প্রত্যেকে তাদের অবস্থান নিজ নিজ প্রয়োজন ও স্বার্থের খাতিরে প্রকাশ করে থাকে।[23]
৬ সপ্তাহ (৪৪ দিন) যুদ্ধের পর আর্মেনিয়া চুক্তি মানতে রাজী হয়। এর আগে রাশিয়া কয়েকবার চুক্তি মেনে আলোচনায় বসতে আহবান জানায়। ২০০৭ সালে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি হ’লেও তা মূলত কার্যকর হয়নি। ৯ই নভেম্বর’২০ আর্মেনিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়। এর মধ্যস্থতা করে রাশিয়া। তুরস্ক অস্ত্র, সেনা প্রশিক্ষণ দিয়ে যথেষ্ট সাহায্য করে। যে কারণে তুরস্কের রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র ইব্রাহীম কালিন এক বিবৃতিতে নিজেদের ‘দু’টি রাষ্ট্রে বসবাসরত একই জাতি’ বলে অভিহিত করেন।[24]
আজারবাইজানে একে বিজয় হিসাবে গণ্য করা হয়। আর্মেনিয়া একে পরাজয় হিসাবে বিবেচনা করে। চুক্তি মতে নাগর্নো কারাবাখ সেখানকার আর্মেনীয় জাতিগোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হবে। আর আজারবাইজানের অধিকৃত জায়গা (যা আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের সীমানার অভ্যন্তরীণ) শুশা শহর সহ আর্মেনিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চল আজারবাইজান নিয়ন্ত্রণ করবে। শান্তি রক্ষার জন্য নাগর্নো কারাবাখে রাশিয়ার সেনা থাকবে। তুরস্কও সেনা পাঠাবে।
বিংশ শতাব্দী থেকেই আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ায় বিরোধ হ’লে রাশিয়া তার সমাধান করেছে। এবার তুরস্ক যুক্ত হয়। তুরস্কের সমরাস্ত্র ও সামরিক সহায়তা ভূয়সী প্রশংসা কুড়ায়। বিশেষভাবে তুরস্কের বাইরাক্টার ড্রোন। এই যুদ্ধে ড্রোনের হামলার কাছে মূলত আর্মেনীয় বাহিনী পর্যুদস্ত হয় এবং প্রথম দিকে যেমন সাহসী ও আগ্রাসী মনোভাব ছিল তা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। এছাড়াও আঙ্কা (Anka), বাইরাক্টার টিবি-২ (Bayraktar TB2), বাইরাক্টার আকিঞ্চি (Bayraktar Kamikaje) অত্যাধুনিক ড্রোন ও ইসরাঈলী কামিকাজে বা হার্পি-২ ড্রোনের কাছে অসহায় আর্মেনীয় সেনা তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে ২৬ বছর আগে হারানো এলাকা পুনরুদ্ধার হওয়ায় আজারবাইজান বিজয়োৎসব করছে।
রাশিয়া সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে।[25] চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘের রেজুলেশনভুক্ত আজারবাইজানের ভূমি আজারবাইজানকে ফেরত দেয়া হবে ১লা ডিসেম্বর ২০২০-এর মধ্যে, নাগর্নো কারাবাখের শুশা শহর সহ ৩টি এলাকা ও এর পাশ^র্বর্তী দখলকৃত ৭টি অঞ্চল আজারবাইজান পাবে। আর বাকি নাগর্নো কারাবাখ জাতিগত আর্মেনীয়দের দ্বারা পরিচালিত হবে। ৫ বছরের জন্য রাশিয়ার শান্তিরক্ষীরা লাচিন করিডোরের ৫ কি.মি. এলাকায় মোতায়েন থাকবে।[26] চুক্তি অনুযায়ী নভেম্বর ২০২০-এ রাশিয়া ঐ অঞ্চলে তাদের ১,৯৬০ জন সেনা মোতায়েন শুরুর ঘোষণা দেয়।[27]
যুদ্ধে উভয় দেশের জনসাধারণের প্রাণ গেলেও আর্মেনিয়ার ক্ষতি হয়েছে বেশী। যুদ্ধে আজারবাইজানের তুলনায় আর্মেনিয়ার ক্ষতি ৬ গুণ বেশী হয়েছে। ওরিক্স (ORYX) ব্লগ যুদ্ধের স্থিরচিত্র ও ভিডিও চিত্র বিশ্লেষণ করে তার নথি সংযুক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, যুদ্ধে আর্মেনিয়ার ২২৯টি ট্যাঙ্ক, ৬২টি সশস্ত্র যুদ্ধ সরঞ্জাম, ৭৫টি ইনফ্যান্ট্রি যুদ্ধ সরঞ্জাম, ১০টি Self-propelled anti-tank missile systems, ১৮৩টি Towed artillery, ২৪টি Self-propelled artillery, ৭৬টি Multiple rocket launchers, ১টি Ballistic Missiles, ৪০টি মর্টার, ১৫টি রাডারসহ আরো অনেক সামরিক ক্ষতি হয়েছে। যেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে, নষ্ট করা হয়েছে কিংবা আজারবাইজানী সেনা কর্তৃক দখল করা হয়েছে।[28] এছাড়াও অনেক সেনা হতাহত হয়েছে। ছোট্ট দেশ হিসাবে আর্মেনিয়ার এ ক্ষতি সত্যিই বেশী। আজারবাইজানী রাষ্ট্রপতি বলেছেন, শুধুমাত্র তুরস্কের ড্রোনের সাহায্যে আর্মেনীয় সৈন্যের অন্তত ১০০ কোটি ডলার সমমূল্যের সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে।[29]
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবার পর আর্মেনিয়ায় তীব্র জনরোষ সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘিরে বিক্ষোভ হয়, তাঁর পদত্যাগের দাবী ওঠে। মন্ত্রীসভার অনেক মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। যদিও তাঁর বক্তব্যে সেসময় স্পষ্ট হয় যে, সামরিক ক্ষতির পরিসংখ্যান বিবেচনায় যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া ছাড়া আর্মেনিয়ার আর করণীয় কিছু ছিল না। বিশ্লেষকগণ মনে করেন, এতে আর্মেনীয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী একটা সংকট দেখা দিবে। নাগর্নো কারাবাখের যেসব অঞ্চল আজারবাইজানী সেনা কর্তৃক অধিকৃত হয়েছে, সেখান থেকে আর্মেনীয় নৃগোষ্ঠী স্থান ত্যাগ করবে। অনেকে তাদের জায়গা ছেড়ে দেয়ার সময় নিজেদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন। এর পূর্বের যুদ্ধে আজারীরা তাদের বাড়ি যেরূপ ছেড়ে গিয়েছিল। অপরদিকে পূর্বে বিতাড়িত আজারীরা হয়ত ফিরে আসবে।[30] যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও আজারবাইজানের অনেক বেদখল এলাকা নিয়ন্ত্রণে আসলেও সেখানকার আর্মেনীয়রা এটাকে ইতিবাচকভাবে মেনে নিবে না। তারপরও বন্দী বিনিময়সহ নানা কার্যক্রম ও বৈঠক চলমান আছে। ২০২১-এর ৫ই জানুয়ারীতে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া প্রধানকে নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠক করেন। এতেও দু’দেশ হাত মেলানো থেকে বিরত থাকে, যাতে এটা পরিস্কার যে, উভয় দেশে যুদ্ধবিরতি হ’লেও মূলত শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমান আগ্রহী নয়।
যুদ্ধ আসলে কোন সমাধান নয়। পশ্চিমা দেশগুলো উন্নত সভ্যতার ছোঁয়ায় নিজেদের মধ্যেকার সীমানায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, প্রতিবেশীদের সুবিধা দিলেও বিশে^র নানা প্রান্তের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ জিইয়ে রাখে। এই বিরোধের বীজ উপ্ত করেই মূলতঃ তাদের শান্তির জন্য যুদ্ধ পরিচালিত হয়, অস্ত্র কেনাবেচা হয়, নিজেদেরকে নানা সন্ধি, চুক্তির কারিগর বা মধ্যস্থতাকারী সাজিয়ে বাহবা কুড়ানো যায়। তাই রাহুল আনজুম-এর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে হয়, ‘নাগার্নো কারাবাখ নিয়ে যুদ্ধ আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের একক যুদ্ধ নয় বরং পশ্চিমের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ’।[31] আল্লাহ আমাদের নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় ঘটান ও মুসলিম শাসকদের স্বীয় গৌরব অর্জনে তাওফীক দান করুন-আমীন!
এম. এড. (অধ্যয়নরত), শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়।
[1]. Cornell, S. E.(1999), The Nagorno-Karabakh Conflict, Report no. 46, Department of East European Studies, Uppsala (Sweden): Uppsala University, p. 5.
[2]. চিত্রে চিহ্নিত স্থানটুকু নাগর্নো কারাবাখ, যা আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯১ সালের দখলদারিত্ব ১৯৯৪ এ চুক্তিতে স্বীকৃতি পাওয়ায় আর্মেনীয়রা নাগর্নো কারাবাখসহ আশপাশের ৭টি আজারবাইজানী এলাকার দখল নেয়। ২০২০ সালে যার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ নেয় আজারবাইজান।
[3]. Ellis, Sam (Dec. 3, 2020). The Armenia and Azerbaijan war, explained And where it leaves war-torn Nagorno-Karabakh. retrived from: https://www.vox.com /2020/12/3/22150110/armenia-azerbaijan-war-russia-nagorno-karabakh-turke.
[4]. Retrieved from: https://www. britannica.com/place/ Azerbaijan.
[5]. Retrieved from: https://www.britannica.com/place/Ar menia.
[6]. Cornell, op. cit. p.4; Suzanne Goldenberg, Pride of Small Nations: The Caucasus and the Post-Soviet Disorder, London: Zed, 1994, p. 158.
[7]. Bournoutian, George A.”The Ethnic Composition and the Socio-Economic Condition of Eastern Armenia in the First Half of the Nineteenth Century”, in Suny (ed.) Transcaucasia, op. cit. [5], pp. 78-79.
[8]. Cornell, ফুটনোটে বলেন,An interesting fact is that Sunni Azeris tended to migrate to the Ottoman empire (a movement which initiated long before the Russian involvement) whereas Shi’ite Azeris moved towards Shi’ite Persiaঅর্থাৎ একটা মজার বিষয় হ’ল, সুন্নী আজারীরা অটোমান সাম্রাজ্যে আর শী‘আ আজারীরা ইরানে স্থানান্তরে আগ্রহী হয়।
[9]. Cornell, op. cit. p.5
[10]. Erich Feigl, Un Mythe de la Terreur Le Terrorisme Arménien, ses Origines et ses Causes, Salzburg: Druckhaus Nonntal, 1991, 215.
[11]. Bammate,Haidar. “The Caucasus and the Russian Revolution (from a political viewpoint)”, in Central Asian Survey, no. 1-2, 1991. (Article first published in Paris in 1929)
[12]. Cornell, op. cit. p.7
[13]. Cutler, Robert M, What is behind the Nagorno-Karabakh flare-up?And how can it be resolved? ALJAZEERA, 19 October, 2020, retrieved from https://www.aljazeera.com/opinions/2020/10/19/what-is-behind-the-nagorno-karabakh-flare-up
[14]. Zia Weise, Jan Cienski And David M. Herszenhorn, The Armenia-Azerbaijan conflict explained What you need to know about the deadly clashes over the region of Nagorno-Karabakh., Politico, September 28, 2020. retrieved fromhttps://www.politico.eu/article/the-nagor no-karabakh-conflict-explained-armenia-azerbaijan/
[16]. প্রথম আলো, ১০ই নভেম্বর ২০২০; https://www.prothomalo.c om/world/europe & https://www.vox.com/2020/11/10/ 21558428/armenia-azerbaijan-war-nagorno-karabakh-russia-turkey.
[17]. Ellis, Sam. op. cit.
[18]. Ibid
[19]. Ellis, Samop. cit.
[20]. The Print, Episode 618, aired on 13 November, 2020 retrieved from: https://www.youtube.com/watch? v=KDmDi_QN3kE
[21]. Retrieved from: https://www.vox.com/2020/11/10/ 21558428/armenia-azerbaijan-war-nagorno-karabakh-russia-turkey.
[22]. Ellis, Samop. cit.
[23]. Ismailzade, Fariz.The Geopolitics of the Nagorno-Karabakh Conflict.Global Dialogue; Nicosia Vol. 7, Iss. 3/4, (Summer 2005): 104-111.
[24]. Why are Armenia and Azerbaijan fighting over Nagorno-Karabakh? Start Here, Al Jazeera English, 21 October, 2020, retrieved from: https://www.youtube .com/watch?v=kHCvXr-CCzM&t=17s.
[25]. Ellis, Sam op. cit.
[26]. Retrieved from: https://www.vox.com/2020/11/10/2155 8428/armenia-azerbaijan-war-nagorno-karabakh-russia-turkey.
[27].প্রথম আলো, ১০ই নভেম্বর ২০২০,https://www.proth omalo.com/world/europe.
[28]. Mitzer, Stijin.The Fight For Nagorno-Karabakh: Documenting Losses on The Sides Of Armenia and Azerbaijan, oryx, 27 september, 2020 retrieved from: https://www.oryxspioenkop.com/2020/09/the-fight-for-nagorno-karabakh.html
[29]. All eyes on Turkish drones after Azerbaijan’s victory, retrieved from: https://www.youtube.com/watch?v=S_X 9oWLmfU
[30]. Ellis, Sam op. cit.
[31]. রাহুল আনজুম. ঐ।