উপক্রমণিকা :
ফেরেশতাগণ আল্লাহর অন্যতম সৃষ্টি। তারা সব সময় আল্লাহর নির্দেশ প্রতিপালন করে থাকেন। তারা নিজের পক্ষ থেকে কোন কিছুই বলেন না। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آَمَنُوْا قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلاَئِكَةٌ غِلاَظٌ شِدَادٌ لاَ يَعْصُوْنَ اللهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হ’তে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতামন্ডলী, যারা অমান্য করে না আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে’ (তাহরীম ৬)। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত যে, ফেরেশতামন্ডলী বিশেষ গুণাবলী সম্পন্ন মানুষের জন্য দো‘আ করে থাকেন। এ সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপিত হ’ল।-
১. মুমিন ও তাদের সৎ আত্মীয়দের জন্য :
কিছু এমন সৌভাগ্যবান লোক আছে, যাদের জন্য সম্মানিত ফেরেশতাগণ দো‘আ করে থাকেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আরশ বহনে রত এবং যারা তার চতুষ্পার্শ্বে ঘিরে আছে, তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের রব! তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। অতএব যারা তওবা করে এবং তোমার পথ অবলম্বন করে তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং জাহান্নামের শাস্তি হ’তে রক্ষা কর। হে আমাদের রব! তুমি তাদেরকে দাখিল কর স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদেরকে দিয়েছ এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকে। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় এবং তুমি তাদেরকে শাস্তি হ’তে রক্ষা কর। সেদিন তুমি যাকে শাস্তি হ’তে রক্ষা করবে, তাকে তো অনুগ্রহই করবে, এটাই তো মহা সাফল্য’ (গাফের/মুমিন ৭-৯)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি ফেরেশতাগণের দরূদ :
ফেরেশতাগণ আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করেন ও তাঁর জন্য দো‘আ করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও (আহযাব ৫৬)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠকারীর জন্য :
যারা আল্লাহর রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করে ফেরেশতারা তাদের জন্য দো‘আ করেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ صَلَّي عَلَي رَسُوْلِ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاَةً صَلَّيِ اللهُ عَلَيْهِ وَمَلائِكَتُهُ سَبْعِيْنَ صَلاَةً فَلْيُقِلَّ عَبْدٌ مِنْ ذَلِكَ أوْ لِيُكْثِرْ- ‘যে ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর উপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর সত্তর বার দয়া করেন ও তার ফেরেশতাগণ তার জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অতএব বান্দারা অল্প দরূদ পাঠ করুক বা অধিক দরূদ পাঠ করুক (এটা তার ব্যাপার)’।[1]
ওযূ অবস্থায় ঘুমন্ত ব্যক্তি :
যেসব সৌভাগ্যবান মানুষের জন্য ফেরেশতামন্ডলী দো‘আ করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হ’লেন ওযূ অবস্থায় ঘুমন্ত ব্যক্তি। এ প্রসঙ্গে হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ : طَهِّرُوْا هَذِهِ الأَجْسَادَ طَهَّرَكُمُ اللهُ، فَإِنَّهُ لَيْسَ عَبْدٌ يَبِيْتُ طَاهِرًا إِلاَّ بَاتَ مَلَكٌ فِيْ شِعَارِهِ لاَ يَنْقَلِبُ سَاعَةً مِّنَ اللَّيْلِ إِلاَّ قَالَ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِكَ فَإِنَّهُ بَاتَ طَاهِرًا-
ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের এই শরীরকে পবিত্র রাখ। আল্লাহ তোমাদেরকে পবিত্র করবেন। যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (ওযূ অবস্থায়) রাত অতিবাহিত করবে, অবশ্যই একজন ফেরেশতা তার সঙ্গে রাত অতিবাহিত করবেন। রাতে যখনই সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে তখনই সে ফেরেশতা বলেন, হে আল্লাহ! আপনার এই বান্দাকে ক্ষমা করুন। কেননা সে পবিত্রাবস্থায় (ওযূ অবস্থায়) ঘুমিয়েছে’।[2]
অন্য বর্ণনায় এসেছে ওযূ অবস্থায় ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হ’লেও ফেরেশতা তার জন্য দো‘আ করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَنْ بَاتَ طَاهِرًا فِيْ شِعَارِهِ مَلَكٌ فَلَمْ يَسْتَيْقِظْ إلاَّ قَالَ الْمَلَكُ أللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِكَ فُلاَنًا بَاتَ طَاهِرًا-
‘যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (ওযূ অবস্থায়) ঘুমায় তার সঙ্গে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, সে ঘুম থেকে জাগ্রত হ’লে ফেরেশতা বলেন, হে আল্লাহ! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছে’।[3]
ছালাতের জন্য অপেক্ষারত মুছল্লীবৃন্দ :
ওযূ অবস্থায় ছালাতের জন্য অপেক্ষারত মুছল্লীদের জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَزَالُ الْعَبْدُ فِيْ صَلَاةٍ مَّا كَانَ فِي الْمَسْجِدِ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ مَا لَمْ يُحْدِثْ أللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ أَللَّهُمَّ ارْحَمْهُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি যখন ওযূ অবস্থায় ছালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে, তার জন্য ফেরেশতামন্ডলী দো‘আ করতে থাকেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! তুমি তার উপর কল্যাণ দান কর’।[4]
প্রথম কাতারের মুছল্লীবৃন্দ :
প্রথম কাতারের মুছল্লীবৃন্দের জন্য ফেরেশতামন্ডলী দো‘আ করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُوْلُ إنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَي الصَّفِّ الأوَّلِ-
‘প্রথম কাতারের মুছল্লীদেরকে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করবেন ও ফেরেশতামন্ডলী তাদের জন্য দো‘আ করবেন’।[5]
কাতারের ডান পার্শ্বের মুছল্লীবৃন্দ :
কাতারের ডান পার্শ্বের মুছল্লীবৃন্দের জন্য ফেরেশতামন্ডলী দো‘আ করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَي مَيَامِنِ الصُّفُوْفِ-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ দয়া করেন ও ফেরেশতামন্ডলী দো‘আ করেন ডান পার্শ্বে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের উপর’।[6]
কাতারে পরস্পর মিলিতভাবে দাঁড়ানো মুছল্লীবৃন্দ :
কাতারে পরস্পর মিলিতভাবে দাঁড়ানো মুছল্লীবৃন্দের জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করে থাকেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَي الَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ الصُّفُوْفَ-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ দয়া করেন এবং ফেরেশতামন্ডলী দো‘আ করেন, যারা একে অপরের সাথে মিলে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করে’।[7]
এ কারণে ছাহাবীগণ জামা‘আতে ছালাত আদায়কালীন পরস্পর মিলিত হয়ে দাঁড়ানোতে গুরুত্ব দিতেন। বিশিষ্ট ছাহাবী আনাস (রাঃ) বলেন,
وَكَانَ أحَدُنَا يَلْزَقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَقَدَمَهُ بِقَدَمِهِ-
অর্থাৎ ‘আমাদের সবাই ছালাতে একে অপরের কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম’।[8] রাসূল (ছাঃ) ছালাত আরম্ভের পূর্বে মুছল্লীদের দিকে তাকিয়ে বলতেন,
أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ ثَلاَثًا وَاللهِ لَتُقِيْمَنَّ صُفُوْفَكُمْ أوْ لِيُخَالِفَنَّ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ-
‘তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর তিনবার বলতেন। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কাতারকে সোজা কর, অন্যথা আল্লাহ তোমাদের অন্তরের মাঝে বক্রতা সৃষ্টি করবেন’।[9] বর্ণনাকারী কাতার সোজা করার নিয়মাবলী এভাবে বর্ণনা করেন,
فَرَايْتُ الرَّجُلَ يَلْزَقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَرُكْبَهُ بِرُكْبَةِ صَاحِبِهِ وَكَعْبَهُ بِكَعْبِهِ-
অর্থাৎ আমি দেখেছি যে, ব্যক্তি তার নিজের কাঁধ অপরের কাঁধের সাথে, হাঁটু অপরের হাঁটুর সাথে এবং পা অপরের পায়ের সাথে মিলিয়ে দাঁড়াত।[10]
ইমামের সূরা ফাতিহা শেষে আমীন পাঠকারীবৃন্দ :
ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ করলে আমীন বলা শরী‘আত সম্মত। এ সময় ফেরেশতামন্ডলীও আমীন বলে থাকেন। ইমাম ও মুছল্লীদের আমীন এবং ফেরেশতাদের আমীন মিলে গেলে গোনাহ মাফ হয়। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِذَا قَالَ الْإِمَامُ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلاَالضَّالِّيْنَ، فَقُوْلُوْا آمِيْنَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلُ الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ-
‘ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগযুবি আলাইহিম ওয়ালায যল্লীন’ বলবে, তখন তোমরা আমীন বল। কেননা যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে, তার অতীত জীবনের গোনাহগুলিকে ক্ষমা করে দেয়া হবে’।[11]
উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইমাম সূরা ফাতিহা সমাপ্ত করার পর ফেরেশতাগণ সমবেত মুছল্লীদের জন্য আমীন বলে আল্লাহর সমীপে সুপারিশ করে থাকেন, যার অর্থ হ’ল, হে আল্লাহ! আপনি ইমাম ও মুছল্লীদের সূরা ফাতিহায় বর্ণিত দো‘আ সমূহ কবুল করুন। কারণ আমীন অর্থ হ’ল আপনি কবুল করুন’।[12]
ছালাত শেষে ওযূসহ স্বস্থানে অবস্থানকারীবৃন্দ :
ছালাত শেষে ওযূসহ যেসব মুছল্লী স্বীয় স্থানে বসে থাকে তাদের জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
الْمَلاَئِكَةُ تُصَلِّيْ عَلَي أحَدِكُمْ مَا دَامَ فِيْ مُصَلاَّهُ الَّذِيْ صَلَّي فِيْهِ مَالَمْ يُحْدِثِ اللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُ وَاللَّهُمَّ أرْحَمِهُ-
‘তোমাদের মধ্যে যারা ছালাতের পর স্বস্থানে বসে থাকে, তাদের জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তার ওযূ ভঙ্গ না হবে, (তারা বলেন,) হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং হে আল্লাহ! আপনি তাদের উপর দয়া করুন।[13]
জামা‘আতে ফজর ও আছর ছালাত আদায়কারীর জন্য :
যারা ফজর ও আছর ছালাত জামা‘আতে আদায় করে, তাদের জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَجْتَمِعُ مَلاَئِكَةُ اللَّيْلِ وَمَلاَئِكَةُ النَّهَارِ عِنْدَ صَلاَةِ الْفَجْرِ وَصَلاَةِ الْعَصْرِ فَإِذَا عَرَجَتْ مَلاَئِكَةُ النَّهَارِ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ مِنْ أَيْنَ جِئْتُمْ فَيَقُوْلُوْنَ جِئْنَاكَ مِنْ عِنْدِ عِبَادِكَ أَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّوْنَ وَجِئْنَاكَ وَهُمْ يُصَلُّوْنَ، فَإِذَا عَرَجَتْ مَلاَئِكَةُ اللَّيْلِ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ مِنْ أَيْنَ جِئْتُمْ قَالُوْا جِئْنَاكَ مِنْ عِنْدِ عِبَادِكَ أَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّوْنَ وَجِئْنَاكَ وَهُمْ يُصَلُّوْنَ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘রাত ও দিনের ফেরেশতাগণ ফজর ও আছরের ছালাতে একত্রিত হন। দিনের ফেরেশতা যখন উপরে উঠে যান, তখন তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কোথা থেকে আসলে? তারা বলে, আমরা আপনার বান্দাদের নিকট থেকে আপনার কাছে এসেছি। আমরা যখন তাদের নিকট উপস্থিত হয়েছিলাম, তখন তাদেরকে ছালাত রত পেয়েছিলাম এবং যখন আমরা তাদের ছেড়ে এসেছি তখনও তাদেরকে ছালাত রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। অতঃপর যখন রাতের ফেরেশতাগণ উপরে উঠে যান, তখন তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কোথা থেকে আসলে? তারা বলে, আমরা আপনার বান্দাদের নিকট থেকে আপনার কাছে এসেছি। আমরা যখন তাদের নিকট উপস্থিত হয়েছিলাম, তখন তাদেরকে ছালাত রত পেয়েছিলাম এবং যখন আমরা তাদের ছেড়ে এসেছি তখনও তাদেরকে ছালাত রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি’।[14]
মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণের জন্য প্রার্থনাকারী :
সাফওয়ান (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, সন্ধ্যা উপনীত হ’লে আমি আবুদ দারদার ঘরে উপস্থিত হ’লাম, কিন্তু আমি তাকে ঘরে পেলাম না। উম্মুদ দারদা (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হ’লে তিনি বললেন, এ বছর তোমার কি হজ্জ করার ইচ্ছা আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমাদের মঙ্গলের জন্য দো‘আ করবে। কেননা নবী (ছাঃ) এরশাদ করেছেন,
دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لِأَخِيْهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكٌ مُؤَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيْهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلكُ الْمُؤَكَّلُ بِهِ آمِيْنَ وَلَكَ بِمِثْلٍ-
‘কোন মুসলিম তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দো‘আ করলে তা কবুল করা হয় এবং তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন, যখনই সে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য মঙ্গলের দো‘আ করে তখন সেই নিযুক্ত ফেরেশতা বলেন, ‘আমীন’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! কবুল করুন এবং তোমার জন্য অনুরূপ। (অর্থাৎ তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে, আল্লাহ তোমাকেও তাই দান করুন)।
সাফওয়ান (রাঃ) বলেন, তারপর আমি বাজারে গেলাম, সেখানে গিয়ে আবুদ দারদা (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ পেলাম, তিনিও নবী (ছাঃ) হ’তে একই রকম হাদীছ শুনালেন।[15]
ফেরেশতাদের দো‘আ পাওয়ার প্রত্যাশায় অতীত যামানার মনীষীগণ অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য দো‘আ করাকে অত্যধিক গুরুত্ব দিতেন।
কুরআন মাজীদে সেই মুমিনদের প্রশংসা করা হয়েছে যারা অতীত মুমিনদের জন্য দো‘আ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَالَّذِيْنَ جَاؤُوْا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ آمَنُوْا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ-
‘যারা তাদের পরে আগমন করেছে, তারা বলে যে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকের ক্ষমা করুন এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি দয়ালু ও পরম করুণাময়’ (হাশর ১০)।
কল্যাণের পথে ব্যয়কারীদের জন্য :
সেসকল লোক যারা কল্যাণের পথে ব্যয় করে থাকেন, তাদের জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন। নিম্নের হাদীছ তার উজ্জ্বল প্রমাণ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ العِبَادُ فِيْهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ، فَيَقُوْلُ أَحَدُهُمَا: اَللَّهُمَّ اعْطِ مُنْفِقًا خَلْفَاً وَيَقُوْلُ الآخَرُ: اَللَّهُمَّ أعْطِ مُمْسِكاً تَلَفاً-
‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন, একজন বলেন, হে আল্লাহ! দানকারীর সম্পদ বাড়িয়ে দাও। অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! যে দান করে না তার সম্পদকে বিনাশ করে দাও’।[16]
এই হাদীছে নবী (ছাঃ) তাঁর উম্মতকে এ সংবাদ দিয়েছেন যে, ভাল পথে ব্যয়কারীর জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন যে, আল্লাহ তাদের খরচকৃত সম্পদের প্রতিদান দান করুন।
মোল্লা আলী কারী (রহঃ) এ হাদীছের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ফেরেশতাদের দো‘আয় যে (خلف) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এর অর্থ হ’ল মহাপুরস্কার।[17]
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) এ হাদীছের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চমৎকার কথা বলেছেন যে, ফেরেশতাদের দো‘আয় সৎপথে ব্যয় করার পুরস্কার নির্দিষ্ট নয়। কেননা এর তাৎপর্য হ’ল যাতে করে এতে সম্পদ, ছওয়াব ও অন্যান্য জিনিসও শামিল হয়। সৎপথে ব্যয়কারীদের অনেকেই উক্ত সম্পদ ব্যয়ের প্রতিদান পাওয়ার পূর্বেই ইন্তিকাল করেন এবং প্রতিদান নেকীর আকারে পরকালে অবধারিত হয়। অথবা উক্ত খরচের বিনিময় বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।[18]
আবু দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
مَا طَلَعَتِ شَمْسٌ قَطُّ إِلاَّ بُعِثَ بِجَنْبِتَيْهَا مَلَكَانِ يُنَادِيَانِ يُسْمِعَانِ أَهْلَ الْأَرْضِ إِلاَّ الثَّقَلَيْنِ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ! هَلُمُّوْا إِليَ رَبِّكُمْ فَإِنْ مَا قَلَّ وَكَفَي خَيْرٌ مِّمَّا كَثُرَ وَأَلْهَي. وَلاَ آبَتْ شَمْسٌ قَطُّ إِلاَ بُعِثَ بِجَنْبَتَيْهَا مَلَكَانِ يُنَادِيَانِ يُسْمِعَانِ أَهْلَ الْأُرْضِ إِلاَّ الثَقَلَيْنِ: اللَّهُمَّ اَعْطِ مُنْفِقًاً خَلْفًاً وَأَعْطِ مُمْسِكاً تَلَفاً-
‘প্রতিদিন সূর্য উদয়ের সময় তার দুই পার্শ্বে দুই ফেরেশতাকে প্রেরণ করা হয়, তারা বলতে থাকে, হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের রবের দিকে অগ্রসর হও। পরিতৃপ্তকারী অল্প সম্পদ, উদাসীন ব্যক্তির অধিক সম্পদ হ’তে উত্তম। তাদের কথা মানুষ ও জীন ব্যতীত সবাই শুনতে পায়। অনুরূপ সূর্যাস্তের সময় তার পার্শ্বে দুই ফেরেশতা প্রেরণ করা হয়, তারা বলতে থাকে, হে আল্লাহ! দানকারীর সম্পদ বৃদ্ধি করে দাও এবং যারা দান করে না তাদের সম্পদকে ধ্বংস করে দাও। তাদের কথা মানুষ ও জীন ব্যতীত সবাই শুনতে পায়।[19]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ مَلَكَانِ بِبَابٍ مِّنْ أَبْوَابِ الجَنَّهِ يَقُوْلُ مَنْ يُّقْرِضُ الْيَوْمَ يَجِزُ غَدًا وَمَلَكٌ بِبَابٍ آخَرَ يَقُوْلُ اللَّهُمَّ إِعْطِ مُنْفِقًا خَلْقًا وَأَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا-
‘জান্নাতে দরজার পার্শ্বে এর ফেরেশতা দাঁড়িয়ে বলেন, যে ব্যক্তি আজ ঋণ (আল্লাহর রাস্তায় দান করবে) দিবে, তার প্রতিদান পাবে আগামীকাল (ক্বিয়ামত দিবসে)। আর অন্য দরজায় এক ফেরেশতা দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহ! দানকারীর সম্পদ বৃদ্ধি করে দাও এবং যারা দান করে না তাদের সম্পদকে ধ্বংস করে দাও’।[20]
সাহরী ভক্ষণকারীদের জন্য :
যারা ছিয়াম রাখার নিয়তে সাহরী খায় তাদের জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন।
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَي المُتَسَحِّرِيْنَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সাহরী ভক্ষণকারীদের জন্য দয়া করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন’।[21]
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السَّحُوْرُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ فَلاَ تَدَعُوْهُ وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِيْنَ-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সাহরী খাওয়াতে বরকত রয়েছে, সাহরী কখনো ছাড়বে না যদিও এক ঢোক পানি পান করেও হয়। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সাহরী গ্রহণকারীদের উপর দয়া করেন এবং তাদের জন্য ফেরেশতাগণ ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন’।[22]
রোগী দর্শনকারীর জন্য ফেরেশতাদের ক্ষমা প্রার্থনা:
যারা কোন মুসলিম রোগীকে দেখতে যায় তাদের জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَا مِنْ مُسْلِمٍ عَادَ أَخَاهُ إِلاَّ ابْتَعَثَ اللهُ لَهُ سَبْعِينَ أَلْفَ مَلَكٍ يُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ مِنْ أَيِّ سَاعَاتِ النَّهَارِ كَانَ حَتَّى يُمْسِيَ وَمِنْ أَيِّ سَاعَاتِ اللَّيْلِ كَانَ حَتَّى يُصْبِحَ-
আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ) কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি তার কোন মুসলমান রোগী ভাইকে দেখতে যায়, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য সত্তর হাযার ফেরেশতা প্রেরণ করেন, তারা দিনের যে সময় সে দেখতে যায় সে সময় থেকে দিনের শেষ তথা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। আর সে রাতের যে সময় দেখতে যায় সে সময় থেকে রাতের শেষ তথা সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন’।[23]
অন্য একটি হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ عَادَ مَرِيْضًا بَكَرًا شَيَّعَهُ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُ لَهُ حَتَّى يُمْسِيَ وَكَانَ لَهُ خَرِيْفٌ فِي الْجَنَّةِ وَإِنْ عَادَهُ مَسَاءً شَيَّعَهُ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُ لَهُ حَتَّى يُصْبِحَ وَكَانَ لَهُ خَرِيْفٌ فِي الْجَنَّةِ-
আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকাল বেলা কোন রোগীকে দেখতে গেল তার সাথে সত্তর হাযার ফেরেশতা যায় এবং তারা সবাই সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্ধারণ করা হয়। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোন রোগীকে দেখতে গেল, তার সাথে সত্তর হাযার ফেরেশতা যায় এবং তারা সবাই সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্ধারণ করা হয়’।[24]
রোগী দেখতে যাওয়ার ছওয়াব সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) থেকে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখিত হ’ল-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَادَ مَرِيْضًا لَمْ يَزَلْ يَخُوْضُ فِى الرَّحْمَةَ حَتَّى يَجْلِسَ، فَإِذَا جَلَسَ، غَمَرَ فِيْهَا-
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোগী দেখতে গেল, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে আচ্ছন্ন থাকল এবং যখন সে রোগীর কাছে বসে তখন সে রহমতের ভিতরে ডুবে থাকে’।[25]
মোল্লা আলী কারী এ হাদীছটির ব্যাখ্যায় বলেন, রোগী দেখার নিয়তে নিজ বাড়ী থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহর রহমতে প্রবেশ করে থাকে। فَإِذَا جَلَسَ اِغْتَمَسَ যখন সে রোগীর কাছে বসে, তখন সে আল্লাহর রহমতে ডুবে যায়। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, اِغْتَمَسَ فِيْهَا রহমতের মাঝে সে ডুবে হাবুডুবু খেতে থাকে।[26]
রোগী দর্শনের জন্য যাওয়ার সময়ই শুধু রহমতে আচ্ছন্ন হয় না বরং বাড়ীতে ফেরার সময়ও তাকে আল্লাহ রহমত দ্বারা আচ্ছন্ন করেন। উপরোল্লেখিত হাদীছের শব্দ, لَمْ يَزَلْ يَخُوْضُ فِى الرَّحْمَةَ حَتَّى يَرْجِعَ বাড়ী ফেরা পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে প্রবেশ করে তা প্রমাণ করে। এছাড়া আরও একটি বর্ণনায় এসেছে, وَإِذَا قَامَ مِنْ عِنْدِهُ فَلاَ يَزَلٌ يَخْوُضُ فِى الرَّحْمَةَ حَتَّى يَرْجِعَ حَيْثُ خَرَجَ- ‘যখন সে রোগীর কাছ থেকে রওয়ানা হয় তখনও আল্লাহর রহমত তাকে ঢেকে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত যেখান থেকে সে এসেছে, সেখানে ফিরে না আসে’।[27] পক্ষান্তরে রোগীর দেখাশুনা না করলে শাস্তি পেতে হবে। এমর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُوْلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُوْدُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِيْ فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِيْ عِنْدَهُ؟
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি রোগে আক্রান্ত ছিলাম, তুমি আমার সেবা করনি। সে বলবে, হে আমার রব! আপনি সারা বিশ্বের রব, আমি আপনার সেবা কিভাবে করব? তিনি বলবেন, তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দাহ রোগাক্রান্ত ছিল? তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে সেখানেই আমাকে পেতে’।[28]
রোগী ও মৃত ব্যক্তির নিকট উক্তির উপর ফেরেশতাদের আমীন বলা :
রোগী ও মৃত ব্যক্তির নিকট যা বলা হয় তা কবুল হওয়ার জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন।
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَضَرْتُمُ الْمَرِيْضَ أَوِ الْمَيِّتَ فَقُوْلُوْا خَيْرًا فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ يُؤَمِّنُوْنَ عَلَى مَا تَقُوْلُوْنَ-
উম্মে সালামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা যখন কোন রোগী বা মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হবে, তখন ভাল কথা বলবে, কেননা ফেরেশতাগণ তা কবুল হওয়ার জন্য আমীন বলে থাকেন’।[29]
রোগীর নিকটে গেলে আল্লাহ তা‘আলার নিকটে তার রোগ মুক্তির জন্য দো‘আ কর এবং মৃত ব্যক্তির নিকট গেলে তার ক্ষমার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করবে। অনুরূপ যে জায়গায় যাও নিজের জন্য ভাল কথাই বলবে।[30]
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এই হাদীছে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে যে, এ ধরনের স্থানে যেন উত্তম কথা বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলার নিকট রোগী বা মৃতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় এবং তার প্রতি যেন মেহেরবানী, সহজ ও নরম ব্যবহার করা হয়, সেজন্য দো‘আ করা হয় তা কবুল হওয়ার জন্য তারা আমীন বলে থাকেন।[31]
সৎকাজের শিক্ষা প্রদানকারীর জন্য :
যারা মানুষকে ভাল কথা শিক্ষা দেয় তাদের জন্য ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন। যেমন-
عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِيْ عَلَى أَدْنَاكُمْ-
আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে দুই ব্যক্তি সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হ’ল, যাদের একজন আলেম, অপরজন আবেদ (ইবাদতকারী)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আবেদের তুলনায় আলেমের মর্যাদা হ’ল যেমন তোমাদের সর্বনিম্ন লোকের তুলনায় আমার মর্যাদা’।[32] তারপর রাসূল (ছাঃ) বললেন,
إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرَضِيْنَ حَتَّى النَّمْلَةَ فِيْ جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوْتَ لَيُصَلُّوْنَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ-
‘নিশ্চয়ই মানুষকে ভাল কথা শিক্ষাদানকারীর প্রতি আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে থাকেন এবং ফেরেশতাগণ, আসমান ও যমীনের অধিবাসীরা এমনকি গর্তের পিপিলিকা ও পানির মৎসও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে’।[33]
হাদীছে মানুষকে উত্তম কথা শিক্ষা দেওয়ার অর্থ সম্পর্কে মোল্লা আলী কারী (রাঃ) বলেন, সেটা এমন শিক্ষা যার সাথে মানুষের মুক্তি জড়িত। রাসূল (ছাঃ) প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য ক্ষমার উল্লেখ করেননি; বরং مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ অর্থাৎ মানুষের উত্তম শিক্ষা দাতার কথা বলেছেন। যেন এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ক্ষমার উপযুক্ত ঐ শিক্ষক যিনি মানুষকে কল্যাণের পথে পেঁŠছার জন্য ইলম শিক্ষা দান করে থাকেন।৩৪
[চলবে]
মুহাম্মাদ আবু তাহের
এম.ফিল গবেষক, আল-হাদীছ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
[1]. আল-মুসনাদ হা/৬৬০৫, ১০/১০৬-১০৭, হাদীছ হাসান। দ্র: আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ২/৪৯৭; মাযমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১৬০; আল-কাউলুল বাদী, ১৫৩ পৃঃ।
[2]. আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১মখন্ড (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, ১৪০১), পৃঃ ৪০৮-৪০৯; হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী হাদীছটিকে জাইয়িদ বলেছেন। দ্রঃ ফাতহুল বারী, ১১তম খন্ড (সঊদী আরব: রিয়াসাতু ইদারাতিল বুহুছিল ইলমিয়্যাহ), পৃঃ ১০৯।
[3]. আমীল আলাউদ্দীন ফারেসী, আল-ইহসান ফী তাক্বরীবি ছহীহ ইবনে হিববান, ৩য় খন্ড (বৈরুত: মুয়াস্সাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৮ হিঃ), পৃঃ ৩২৮-২২৯; হাদীছ ছহীহ। দ্রঃ ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১ম খন্ড (রিয়াদ: মাকতাবাতুল মাআরিফ, ১৪০৯ হিঃ) পৃঃ ৩১৭।
[4]. ছহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড (সঊদী আরব: রিয়াসাতু ইদারাতুল বুহুছিল ইলমিয়্যাহ, ১৪০০ হিঃ), পৃঃ ৪৬০, হা/৬১৯।
[5]. আল-ইহসান ফী তাক্বরীবি ছহীহ ইবনে হিববান, ৫ম খন্ড, পৃঃ ৫৩০-৫৩১; হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল জামে‘ হা/১৮৩৯।
[6]. আল-ইহসান ফী তাক্বরীবি ছহীহ ইবনে হিববান, ৫ম খন্ড, পৃঃ ৫৩৩-৫৩৪; সুনানু আবী দাঊদ আওনুল মাবুদসহ, ২য় খন্ড (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১০ হিঃ), পৃঃ ২৬৩; হাদীছ হাসান, দ্রঃ ছহীহ আবু দাউদ হা/৬৮০।
[7]. ছহীহ ইবনে হিববান ৫/৫৩৬ পৃঃ; হাদীছ হাসান, ছহীহ। দ্রঃ ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫০১, ১/২৭২ পৃঃ।
[8]. ছহীহ বুখারী ফাতহুল বারী সহ, ২য় খন্ড (সঊদী আরব: রিয়াসাতু ইদারাতিল বুহুছিল ইলমিয়্যাহ তাবি), পৃঃ ২১১।
[9]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩১।
[10]. প্রাগুক্ত; ফাতহুল বারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ২১১।
[11]. বুখারী, হা/৭৮২, ‘আযান’ অধ্যায়, ‘মুক্তাদীদের জোরে আমীন বলা’ অনুচ্ছেদ।
[12]. ফাতহুল বারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৬২।
[13]. ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, ১৬তম খন্ড (বৈরুত: মুয়াস্সাতুর রিসালাহ, ১৪১৭ হিঃ), পৃঃ ৩২, হাদীছ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭২৭।
[14]. আল-মুসনাদ হা/৯৪১০, ১৭/১৫৪; ছহীহ ইবনে খুযায়মা হা/৩২২, ১/১৬৫; আল-ইহসান ফি তাক্বরীব। ছহীহ ইবনে হিববান হা/২০৬১, ৫/৪০৯-৪০১০; হাদীছ ছহীহ। দ্রঃ ছহীহুল জামে‘ হা/৮০১৯।
[15]. ছহীহ মুসলিম হা/৮৮ (২৭৮৮), ৪/২০৯৪।
[16]. বুখারী হা/১৪৪২, ৩/৩০৪; মুসলিম হা/৫৭ (১০১০), ২/৭০০।
[17]. মোল্লা আলী কারী, মিরকাতুল মাফাতীহ, ৪র্থখন্ড (মক্কা: আল মাকতাবাতুত তিজারিয়্যাহ, তাবি), পৃঃ ৩৬৬।
[18]. ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী, ৩য় খন্ড (সঊদী আরব: রিয়াসাতু ইদারাত, তাবি), পৃঃ ২০৫।
[19]. আল-মুসনাদ ৫/১৯৭; আল-ইহসান ফি তাকরিব ছহীহ ইবনে হিববান হা/৩৩২৯, ৮/১২১-১২২; আল-মুসতাদরাক আলাছ ছহীহায়ন ২/৪৪৫, হাদীছ ছহীহ। দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৪৪; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১/৪৫৬।
[20]. আল-মুসনাদ ২/৩০৫-৩০৬; আল-ইহসান ফী তাকরীব ছহীহ ইবনে হিববান হা/৩৩৩৩, ৮/১২৪; সিলাসিলা ছহীহাহ হা/৯২০।
[21]. আল-ইহসান ফি তাকরীব ছহীহ ইবনে হিববান হা/৩৪৬৭, ৮/২৪৬, হাদীছ ছহীহ। দ্রঃ ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১/৫১৯; সিলাসিলা ছহীহাহ হা/১৬৫৪।
[22]. আল-মুসনাদ হা/১০৬৬৪; সিলাসিলা ছহীহাহ হা/৩৪০৯।
[23]. আল-মুসনাদ হা/৮১৫, আল-ইহসান ফী তাকরীব ছহীহ ইবনে হিববান হা/২৯৫৮, ৭/২২৪-২২৫, হাদীছ ছহীহ, সিলাসিলা ছহীহাহ হা/১৩৬৭।
[24]. আল-মুসনাদ হা/৯২৮, হাদীছ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৬৭।
[25]. আল-মুসনাদ হা/৩০১৮, হাদীছ ছহীহ,ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৪৭৭।
[26]. মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/৫২।
[27]. মাজমাঊয যাওয়ায়েদ ২/২৯৭।
[28]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৬৬১।
[29]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৬১৭।
[30]. মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/৮৪।
[31]. শারহ নববী ৬/২২২।
[32]. জামে তিরমিযী হা/২৬০৯, হাদীছ ছহীহ, ছহীহ সুনানে তিরমিযী ২/৩৪৩।
[33]. প্রাগুক্ত।
৩৪. মিরকাতুল মাফাতীহ ১/৪৭৩।