ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা বা complete code of life. মানব জাতির জন্য প্রয়োজন এমন কোন বিষয় নেই যার বিবরণ ও সুষ্ঠু সমাধান ইসলামে নেই। ইসলাম মানব সমাজকে যা দিয়েছে, অন্য কোন ধর্ম তা দিতে অধ্যাবধি সক্ষম হয়নি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনেও ইসলামের অবদান অসামান্য। জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বার উন্মোচনে ইসলাম প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বলা যায়, আধুনিক বিজ্ঞানের নবজাগরণ সৃষ্টিতে ইসলামের ভূমিকা সর্বাধিক। দেড় হাযার বছর পূর্বে জাহেলিয়াতের প্রগাঢ় অন্ধকারে মানব জাতি অধঃপতনের অতল গহবরে নিমজ্জিত থাকা অবস্থায় বিশ্ব প্রভু মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেন ইসলামের প্রধান উৎস আল-কুরআন। যাকে তিনি বিজ্ঞানময় বলে ঘোষণা করেন (ইয়াসীন ২)। সে সময় থেকেই ইসলাম বিজ্ঞান সম্পর্কিত নির্ভুল তথ্য প্রদান করে আসছে। তাই ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের কোনই বিরোধ নেই। যদিও কেউ কেউ বিজ্ঞানে ইসলামের অবদানকে খুবই খাটো করে দেখার চেষ্টা করেছেন। এটা বড় পরিতাপের বিষয়। ইসলাম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণেই এমনটি হয়েছে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদ (ছাঃ)ও বিজ্ঞান গবেষণার অনেক উপাত্ত রেখে গেছেন। যা বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন। ইসলাম সর্বদা বিজ্ঞানকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে চেয়েছে। বক্ষমাণ প্রবন্ধে আধুনিক বিজ্ঞানে ইসলামের ভূমিকা প্রসঙ্গে আলোচনা উপস্থাপনের প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
বিজ্ঞান অর্থ বিশেষ জ্ঞান। আমাদের চারপাশে দৃশ্যমান মানব, জীবজগত ও বিভিন্ন বস্ত্ত মানুষের মনে কৌতুহল সৃষ্টি করে এবং এসবের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে সন্তোষজনক সমাধান খুঁজে ফিরে। এই বিশাল বিশ্বজগত কেমন করে চলছে সেই সত্য উদঘাটনই বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। কিন্তু বাহ্যিকভাবে পঞ্চেন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানকেই বিজ্ঞান একদিন শ্বাশত সত্য বলে যাহির করেছিল এবং ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আল্লাহর বাণীকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অথচ বিংশ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বললেন, Science without religion is lame and religion without science is blind অর্থাৎ ধর্মহীন বিজ্ঞান খোড়া এবং বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ।[1] বিজ্ঞান ও ধর্ম পরস্পরের পরিপূরক। এতদুভয়ের মধ্যে বিরোধ বা সংঘর্ষের আশংকা থাকতে পারে না। সুতরাং ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই। আবার এই বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদানও অনস্বীকার্য। যা অমুসলিম মনীষীগণও স্বীকার করেছেন। যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবদানের কথা স্বীকার করে সার্টন বলেন, মানব সমাজের প্রধান কাজ মুসলমানগণ সাধন করেছেন। শ্রেষ্ঠ গণিতবেত্তা আবু কামিল ও ইবরাহীম ইবনে সিনান ছিলেন মুসলমান। সর্বশ্রেষ্ঠ ভূ-গোলবিদ ও বিশ্বকোষ প্রণেতা আল-মাসঊদী ছিলেন মুসলমান। সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক আত-তাবারীও ছিলেন মুসলমান।[2] আমরা প্রকৃত সত্য উদঘাটনের মানসে সজাগ দৃষ্টি দিলে দেখতে পাই, প্রতিটি বিষয়ে মুসলমানদের অবদান অসামান্য। যেমন আমরা দেখতে পাই বিজ্ঞানে মুসলমানদের ভূমিকার বর্ণনা দিতে গিয়ে মনীষী রবার্ট ব্রিফো নির্দ্বিধায় উল্লেখ করেছেন,
Science is the most momentous contribution of Arab civilization to the modern world. The debt of our science to the Arabs does not consist in starting discoveries or revolutionary theories; Science owes a great deal more to Arab culture it owes its existence.
অর্থাৎ আধুনিক বিজ্ঞান শুধুমাত্র চমকপ্রদ আবিষ্কার বা যুগান্তকারী তত্ত্বকথার জন্যই মুসলমানদের কাছে ঋণী নয়, আধুনিক বিজ্ঞান তার অস্তিত্বের জন্যই মুসলমানদের নিকট চিরঋণী। বলা বাহুল্য, ইসলামের আবির্ভাব না ঘটলে আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম হ’ত না। হ’লেও তা নিশ্চিতরূপে যথেষ্ট বিলম্বিত হ’ত’।[3] অনুরূপভাবে বিখ্যাত পন্ডিত জওহরলাল নেহরুও স্বীকৃতি প্রদান করেছেন,
Among ancients we do not find the scientific method in Egypt or China or India. We find just a dit of it in old Greece. In Rome again it was absent. But the Arabs had this scientific spirit of inquiry and so they may be considered the fathers of modern science.
অর্থাৎ আমরা মিশরীয়, চীনা ও ভারতীয় আদি সভ্যতাগুলোতে বিজ্ঞানের অস্তিত্ব খুঁজে পাই না। তবে প্রাচীন গ্রীস সভ্যতায় এর কিছুটা প্রমাণ মেলে। আর রোম সভ্যতায় তা ছিল রীতিমত অনুপস্থিত। কিন্তু আরবদের মাঝে প্রাণবন্ত, অনুসন্ধিৎসু বিজ্ঞান বিদ্যমান ছিল। সুতরাং তাদেরকে (মুসলিমদেরকে) আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা যেতে পারে।[4]
পবিত্র কুরআনে বিভিন্নভাবে মানুষকে বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, عَالِمِ الْغَيْبِ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَلَا أَصْغَرُ مِن ذَلِكَ وَلَا أَكْبَرُ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের ছোট বড় অণু-পরমাণু এমন কোন বস্ত্ত নেই যার উল্লেখ সুস্পষ্ট কিতাবে (কুরআনে) নেই’ (সাবা ৩)। তিনি অন্যত্র বলেন, انظُرُواْ مَاذَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার প্রতি লক্ষ্য কর’ (ইউনুস ১০১)।
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণার যথেষ্ট খোরাক রয়েছে। জার্মান বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন কুরআনের আয়াতেরই ভাব প্রকাশ করলেন এভাবে, He who can no longer pause to wonder and stand rapt in awe is as good as dead and his eyes are closed.
অর্থাৎ ‘যে মানুষ সৃষ্টি জগতের অবলিলা দেখে বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয় না, তার মনে ভয়-ভীতি রেখাপাত করে না, সে যেন মৃতবৎ, দৃষ্টিশক্তি তার রহিত হয়ে গেছে’।[5]
মানুষের সামনে আল্লাহর নিদর্শন সমূহের উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের জন্য আর একটি নিদর্শন রাত্রি, আমরা তা হ’তে দিনকে বের করে আনি, তৎক্ষণাৎ তারা অন্ধকারে এসে যায় এবং সূর্য তার নিজের অবস্থান স্তরেরও পর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চলেছে, এটা সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞ আল্লাহরই নির্দেশ। চন্দ্রের জন্য আমরা তার মনযিল নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, এমনকি অবশেষে তা পুনরায় খেজুরের পুরাতন শুকনা শাখার মত হয়ে যায়। সূর্যের সাধ্য নেই যে, চন্দ্রকে ধরতে পারে এবং রাত্রিরও ক্ষমতা নেই যে, দিনকে অতিক্রম করে। প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষ পথে চলছে’ (ইয়াসীন ৩৭-৪০)।
উপরোক্ত আলোচনায় সুস্পষ্টভাবে বহুবিধ নিয়মের দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে। এসব নিয়ম মহাশূন্যে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র সমূহের কার্যাবলী ও গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসব জ্যোতিষ্ক মন্ডলের গঠন ও শৃংখলা দর্শন করলে বিষ্ময়ে অভিভূত হ’তে হয়। বিশ্বভ্রহ্মান্ডে এমন কিছু নেই যারা বিশৃংখলভাবে ঘোরাফেরা করে বেড়াচ্ছে। সবকিছুই সুমহান সৃষ্টিকর্তার নিয়মের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।[6]
ইসলাম মানুষকে বিভিন্নভাবে বিজ্ঞান গবেষণায় উৎসাহিত করেছে। যার ভূরিভূরি প্রমাণ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বিদ্যমান। এসব বিষয় গবেষণা করে মুসলিমগণ অনেক জিনিস আবিষ্কারের শুভ সূচনাও করেছিলেন। কালক্রমে তা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের হাতে চলে যায়। পবিত্র কুরআনের বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনাকে মেনে নিয়ে ড. মরিস বুকাইলি বলেন, ‘কুরআনের এমন একটা বক্তব্যও নেই, যে বক্তব্যকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিচারে খন্ডন করা যেতে পারে’।[7] পবিত্র কুরআনে একাধিক আয়াতে ভূগোল গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ভূগোল বিষয়ক তত্ত্ব প্রণয়ন, মূল্যবান প্রবন্ধাবলীর সংকলন ও প্রাপ্ত তথ্যাবলীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে মুসলমানগণ ভূগোল শাস্ত্রে অত্যন্ত উঁচুমানের অবদান রেখেছেন।[8] পি.কে. হিট্টি বলেন, মুসলমানদের ভূগোল গবেষণার মূলে প্রধান প্রেরণা ছিল পবিত্র হজ্জ পালন, মসজিদের ক্বিবলা নির্ধারণ এবং ছালাতের দিক নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা।[9] ভূগোল ও জ্যোতির্বিদ্যায়ও স্পেনের মুসলমানরা বিখ্যাত ছিলেন। খলীফা আল-মামূন ও ফার্নেল পৃথিবীর পরিধি মাপেন। তাঁরাই প্রথম পৃথিবী গোলাকার এবং স্থির নয়, এ তথ্য প্রদান করেন। কিন্তু এর কয়েকশ’ বৎসর পরেও ইউরোপবাসীদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, পৃথিবী স্থির ও সমতল।[10] একজন মুসলিম গবেষক তাইতো আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেছেন, ঊনসত্তরজন মুসলমান ভূগোলবিদ নিয়ে পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র কি অাঁকা হয়নি? যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘ছূরাতুল আরয’ অর্থাৎ পৃথিবীর আকার। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কম্পাস যন্ত্রের আবিষ্কারক হচ্ছেন ইবনে আহমাদ- স্যার বারটনের বিবরণে স্পষ্টভাবে কি তা লেখা নেই?[11]
দশমিক প্রথা, বীজগণিত, সংখ্যা গণনা পদ্ধতি প্রভৃতি বিজ্ঞানের শাখাগুলোও মুসলমানদের আবিষ্কার। অধ্যাপক আর্নল্ডের মতে, তারা (মুসলমানগণ) প্রকৃতপক্ষে সমতল ক্ষেত্র ও গোলাকার ত্রিকোণমিতির প্রতিষ্ঠাতা। তা প্রকৃতপক্ষে গ্রীক পন্ডিতদের জানা ছিল না। তিনি আরো বলেন, আরবগণ পাশ্চাত্য জগতকে সংখ্যা গণনা পদ্ধতি শিক্ষাদান করেন। ফলে আরবী প্রতীক এখনও পৃথিবীর সকল জাতি ব্যবহার করে।[12] তারাই বীজগণিতকে পূর্ণাঙ্গরূপ দান করেন। এটা তাঁদের একক গৌরবময় কীর্তি বলে জগতবাসী স্বীকার করে নিয়েছেন। বীজগণিত ছাড়া পরিসংখ্যান, অংক, জ্যামিতি প্রভৃতি ফলিত বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাও মুসলমানদের আবিষ্কার। তারাই প্রথম ইউক্লিডের জ্যামিতি অনুবাদ করেন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের সমীকরণ আবিষ্কার করে দ্বিঘাত সমীকরণ ও দ্বিপদ উপপাদ্যের উন্নতি সাধন করেন।[13] তাঁদের গাণিতিক আবিষ্কারগুলো মুসলিম নাবিক, বণিক, সমুদ্রচারী ও ভ্রমণকারী পন্ডিতগণ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে নিয়ে যান এবং তাঁদেরই মাধ্যমে ইউরোপসহ পৃথিবীর অন্য জাতিগুলো এ বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন।[14] মুহাম্মাদ ইবনু জাবির আল-বাত্তানী (৮৫৮-৯২৯ খৃঃ), আবুল ওয়াফা (৯৪০-৯৯৭ খৃঃ), বিখ্যাত দার্শনিক আল-কিন্দী (৮৭৪ খৃঃ), আল-বালাখী (৮৮৮ খৃঃ), আল-সারাখামী (৮৮৮ খৃঃ), নাছিরুদ্দীন তুসী এবং আরো অনেক মুসলিম বিজ্ঞানী গণিতশাস্ত্রের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার উপর মৌলিক অবদান রেখে গেছেন। গণিতশাস্ত্র বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি। এই বিজ্ঞানেই যখন মুসলিম বিজ্ঞানীগণ অবদান রেখে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কারক ও বিজ্ঞানী হ’তে পেরেছেন তখন বিজ্ঞানকেও সমৃদ্ধ ও আলোকিত করেছিলেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।[15] মুহাম্মাদ ইবনে মূসা আল-খাওয়ারিজমী পৃথিবীতে প্রথম বীজগণিতের জন্মদাতা। সে সময়ে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম গণিতজ্ঞ ছিলেন।[16]
চিকিৎসা বিজ্ঞানেও মুসলমানদের অসামান্য অবদান রয়েছে। আর-রাযী মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম এবং সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ ছিলেন। তিনি তরুণ বয়সে আলকেমী চর্চা করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তার খ্যাতি যখন পশ্চিম এশিয়ার সকল অঞ্চলের শিষ্য ও রোগী আকর্ষণ করে তখন তিনি একান্তভাবে চিকিৎসাশাস্ত্রে আত্মনিয়োগ করেন। তার জ্ঞান ছিল সর্বব্যাপক এবং বৈজ্ঞানিক অবদান ছিল সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি ২০০টিরও বেশী গ্রন্থ রচনা করেন, যার অর্ধেক চিকিৎসা সংক্রান্ত।[17]
মহানবী (ছাঃ) চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলিম জাতিকে উৎসাহিত করে বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন রোগ দেননি যার ঔষধ তৈরী করেননি’।[18] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক রোগের জন্য ঔষধ রয়েছে। সুতরাং সঠিক ঔষধ যখন রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন আল্লাহর হুকুমে রোগী রোগমুক্ত হয়ে যায়’।[19] তিনি আরো বলেন, ‘জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের তাপ হ’তে। সুতরাং তোমরা পানি দ্বারা তা ঠান্ডা কর’।[20] জ্বরে পানি ও বরফের ব্যবহার বর্তমানে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত এবং এটি একটি সাধারণ ব্যবস্থা। জ্বর বেড়ে গেলে মাথায় পানি ঢেলে কিংবা আইস-ব্যাগ লাগিয়ে তাপ নিবারণ করা একটি ডাক্তারী বিধান। সুতরাং একথা মানতেই হবে যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর এই বাণী আধুনিককালের চিকিৎসাশাস্ত্রেও বিধিসম্মত।[21] মহানবী (ছাঃ) আরো বলেন, ‘কালজিরার মধ্যে মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের প্রতিষেধক নিহিত রয়েছে’।[22] এ কালজিরা বহু রোগের প্রতিরোধক হিসাবে বর্তমানে স্বীকৃত। যেমন কটু অম্ল, রস ও উষ্ণবীর্য্য এবং আদোষ, ক্রিমি, অপান বায়ুর উদার্যতা,
উদররোগ, হৃদরোগ ও অর্শরোগে হিতকর।[23]
এভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আমরা মুসলিম বৈজ্ঞানিকদের অবদান দেখতে পাই। যেমন পৃথিবীতে প্রথম বন্দুক তৈরী ও উন্নত ধরনের বারুদের ব্যবহার মুসলমানদের মাধ্যমেই হয়। সিরিয়ার মুসলমানগণ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম চিনি তৈরী করেন এবং আরবী ‘সাকার’ (অর্থ চিনি) নাম তাঁদেরই দেয়া। তার থেকেই ইংরেজী ‘সুগার’ শব্দ উদ্ভূত।[24] জলের গভীরতা ও সমুদ্রের স্রোত-মাপক যন্ত্রের আবিষ্কারক ইবনে আব্দুল মজীদ নামক মুসলমান। ৭০২ খ্রীঃ তুলা থেকে তুলট কাগজ প্রথম তৈরী করেন ইউসুফ ইবনে ওমর। তার দু’বছর পর বাগদাদে কাগজের কারখানা তৈরী হয়।[25] খলীফা হারূনুর রশীদের যুগে মুসলিম বিজ্ঞানীরাই সর্বপ্রথম জলঘড়ি তৈরী করেন।[26] প্রথম পানি জমিয়ে বরফ তৈরী করাও মুসলিম বিজ্ঞানীদের অমর কীর্তি। ইউরোপ তার অনেক পর নিজের দেশে বরফ প্রস্ত্তত কারখানা চালু করে।[27]
মুসলিম আমলে স্পেনে সব ধরনের চাষাবাদ করা হ’ত। ভবিষ্যতের জন্য স্পেনে সব সময়ই খাদ্য সংগৃহীত করে রাখা হ’ত। এসব খাদ্য সংগ্রহ করার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারী খাদ্যগুদাম ছিল। সেই আমলে কর্ডোবা, সেভিল, গ্রানাডা, সারাগোজা, টলেডো প্রভৃতি জায়গায় বড় বড় গুদাম তৈরী করা হয়। টলেডো এবং গ্রানাডার আবহাওয়া শষ্য রক্ষার অত্যন্ত অনুকূল ছিল। পাহাড়ের গায়ে তৈরী এসব গুদামের (কোল্ড স্টোরেজ) শষ্য ৫০ থেকে ৭০ বৎসর পর্যন্ত অবিকৃত থাকত (যা আধুনিক যুগেও প্রায় অসম্ভব)। শুকনো ফলমূল ১০ বছর পর্যন্ত রাখা যেত। গ্রানাডা অধিকারের দু’শো বছর পরেও সেখানকার এক গুদামের শষ্য সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।[28]
প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের বিখ্যাত ঐতিহাসিকগণের লিখিত ইসলামের অবদান সম্পর্কে অধ্যয়ন করলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারি যে, বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে মুসলমানদের দান অপরিসীম। ঐতিহাসিক গীবন তাঁর 'Decline and fall of Roman Empire' গ্রন্থে বলেন, লন্ডনের রাস্তা যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকত, কর্ডোভার রাস্তা তখন আলোয় উদ্ভাসিত থাকত। ড্রেপার, গীজা ডেভেনপোর্ট, লেইনপুল, সার্টন, হিট্টি প্রমুখ পাশ্চাত্য খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে মুসলিম অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।[29] এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ঐতিহাসিক মন্তব্য করেন, অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগ হ’তে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত আরবী ভাষাভাষী লোকেরা সমগ্র বিশ্বের বুদ্ধি ও সভ্যতার আলোকবর্তিকা ছিলেন। তাঁদের মাধ্যমে প্রাচীন বিজ্ঞান এবং দর্শন পুনরুজ্জীবিত, সংযোজিত ও সম্প্রসারিত হয়। যার ফলে পশ্চিম ইউরোপে রেনেসাঁর উন্মেষ সম্ভবপর হয়।[30]
একজন গবেষক হাযার বছর পূর্বের মুসলিম স্পেনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আটটি বড় শহর ও তিন হাযারের বেশী ছোট ছোট শহর কর্ডোভার অধীনে ছিল। প্রতি বৎসর রাজস্ব পাওয়া যেত আঠারো কোটি পঁচাত্তর লক্ষ টাকা। শহরের প্রত্যেকটি রাস্তার ধারে রাত্রে সরকারী বাতি জ্বলতো। অথচ এর সাতশ’ বছর পরেও লন্ডনের রাজপথে কোন বাতির চিহ্ন ছিল না।[31] রাজকর্মচারীদের প্রাসাদ ছাড়াও সাধারণ লোকদেরই ১,১৩,০০০ প্রাসাদ, ৩,৮০০ মসজিদ, ৯০০ স্নানাগার ও ৪,০০০ দোকান ছিল। আধুনিক কোন ইউরোপীয় শহরও এত সমৃদ্ধশালী কি-না তা সন্দেহের বিষয়।[32] মোটকথা সে সময় মুসলিম স্পেন সভ্যতার চরম শিখরে উন্নীত ছিল।
মুসলিম জাতি শিক্ষা-দিক্ষায়ও পিছিয়ে ছিল না। মেজর আর্থার গ্রীন লিনওয়ার্ড বলেন, আরববাসীদের উচ্চশিক্ষা, সভ্যতা ও মানসিক উৎকর্ষ এবং তাদের উচ্চশিক্ষার প্রণালী প্রবর্তিত না হ’লে ইউরোপ অদ্যাপি অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমগ্ন থাকত। বিজেতার উপর সদ্ব্যবহার ও উদারতা তাঁরা যে প্রকার প্রদর্শন করেছিলেন তা প্রকৃতই চিত্তাকর্ষক।[33]
যখন ইউরোপে অন্ধযুগের অভিশাপে শিক্ষা শুধু গীর্জা ও মঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তখন কর্ডোভা, গ্রানাডা, সেভিল, জ্যালেনসিয়া, টলেডো, জাতিভা ও আলমেরিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গড়ে উঠেছিল। এসব মুসলিম সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করে। এগুলোকে ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্মদাতা বলা যায়। অবশ্য ইংরেজরা তাদের লেখায় পরিষ্কারভাবে তা স্বীকার করেছেন। যেমন মিঃ নিকোলসন বলেছেন, মুসলমানদের কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয় স্পেন, ফ্রান্স, ইটালী এমনকি জার্মানীর জ্ঞান সাধকদের চুম্বকের মতো টেনে আনতো।[34] একমাত্র কর্ডোভাতে বিনা বেতনে শিক্ষাদানের জন্য স্কুলের সংখ্যা ছিল ৮০০টি। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ থেকেই শিক্ষার্থীরা এখানে এসে ভিড় করত। জাতশত্রু খৃষ্টানরাও এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেত। দ্বিতীয় ‘পোপ সিলভারস্টার’ জারবার্তা এর শিক্ষালাভ ঘটেছিল কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কুরআন ও মুসলিম আইন ছাড়াও গ্রীক, ল্যাটিন, হিব্রু, প্রকৃতি বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, কবিতা, শিল্প, রসায়ন ও সঙ্গীত শিল্প শিক্ষা দেয়া হ’ত। নবম শতাব্দীতে কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১১ হাযার।[35]
সে সময় মিশরের সুলতান মোস্তানছিরের লাইব্রেরীতে আশি হাযার, ত্রিপোলীর লাইব্রেরীতে দুই লক্ষ, স্পেনের খলীফা দ্বতীয় হাকামের লাইব্রেরীতে ছয় লক্ষ ও কায়রোর ফাতেমিয়া খলীফাদের লাইব্রেরীতে দশ লক্ষ পুস্তক ছিল।[36]
স্বামী বিবেকানন্দ এ সত্যটি স্বীকার করে বলেন, মুর নামক মুসলমান জাতি স্পেন (Spain) দেশে অতি সুসভ্য রাজ্য স্থাপন করলে, নানা বিদ্যা চর্চা করলে ইউরোপে প্রথম ইউনিভার্সিটি হ’ল। ইতালি, ফ্রান্স, সুদূর ইংল্যান্ড হ’তে বিদ্যা শিখতে এল। বাড়ি-ঘরদোর সব নতুন ঢঙে বনতে লাগল।[37] শ্রী মানবেন্দ্রনাথ রায় বলেন, Leaming form the Muslim Europe became the leader of modern civilization. অর্থাৎ মুসলিম শিক্ষার প্রভাবেই ইউরোপ আধুনিক সভ্যতার নেতা হ’তে পেরেছে।[38]
আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে এ কথাই বলতে হয় যে, আধুনিক বিজ্ঞানে মুসলমানদের ভূমিকা অপরিসীম। যার সত্যতা অমুসলিম জ্ঞান সাধকরাও অকপটে স্বীকার করেছেন। শিক্ষা-সভ্যতা, কুরআন-সুন্নাহ, দর্শন, চিকিৎসা বিজ্ঞান, রসায়ন, ভূগোল, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত প্রভৃতি বিদ্যায় ছিল মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবাধ বিচরণ। কালক্রমে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়ে মুসলিম সভ্যতার পতন ঘটে। সাথে সাথে সব কিছুই চলে যায় তাদের নিয়ন্ত্রণে। পিছিয়ে পড়ে মুসলিম জাতি। যা আজও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই বলে তাদের অতীত অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। প্রতিটি জিনিসের সূচনাকারীর স্থান সর্বগ্রে এটা চির সত্য কথা।
ইসলাম বিজ্ঞানের প্রতিবন্ধক নয়, বরং ইসলাম বিজ্ঞানকে ঢেলে সাজাতে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে। তাই আমরা বলতে পারি, বিশ্ব সভ্যতায় ইসলামের অবদান সর্বাধিক। এ প্রসঙ্গে আধুনিক পন্ডিত মিঃ ব্রিফল্ট-এর মন্তব্য পেশ করে আলোচনার শেষ করতে পারি, Science is the most momentous contribution of Arab civilization to the modern world. ‘আধুনিক বিশ্বের জন্য বিজ্ঞান হ’ল আরব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ দান’।[39] তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, European Science owes its existence to the Arabs. অর্থাৎ ‘ইউরোপীয় বিজ্ঞান তার অস্তিত্বের জন্যই আরবদের তথা মুসলমানদের নিকট চিরঋণী’।[40]
ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
আখিলা, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
[1]. বিজ্ঞান চর্চায় ইসলামী দৃষ্টিকোণ, (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, জুন ২০০১), পৃঃ ৬৩।
[2]. অধ্যাপক কে. আলী, মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস, (ঢাকা: আলী পাবলিকেন্স, ১৯৮১), পৃঃ ২৩১।
[3]. Robert Briffault, The making of History (London; 1934), P. 191.
[4]. Jawaharlal Nehru, Glimpses of world History (London: 1934), P. 154.
[5]. বিজ্ঞান চর্চায় ইসলামী দৃষ্টিকোণ, পৃঃ ৬৭।
[6]. Written by a Board of Researchers, Scientific Indication in the Holy Quran (Dhaka: Islamic Foundation Bangladesh, December 1990), p. 173.
[7]. ডঃ মরিস বুকাইলি, রূপান্তর: আখতার উল আলম, বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান, (ঢাকা: জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, ১৯৯৬), পৃঃ ১০।
[8]. ডঃ নাফিস আহমাদ, রূপান্তর: মুহাম্মাদ নূরুল আমিন জাওহার, ভূগোল বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান, (ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২০০৫), পৃঃ ১৫।
[9].P.K. Hitti, History of the Arabs, (London, 1970), P. 383.
[10]. সরকার শরীফুল ইসলাম, মুসলিম স্পেন, (ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৮৭), পৃঃ ৬৫।
[11]. গোলাম আহমদ মোর্তজা, বাজেয়াপ্ত ইতিহাস (বর্ধমান: বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন, সপ্তম সংস্করণ, ২০০২), পৃঃ ৭৪।
[12]. মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস, পৃঃ ২৫১।
[13]. প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৫২।
[14]. ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সাত্তার, ইসলাম ও জ্ঞান-বিজ্ঞান (ঢাকাঃ ইসলামিক রিসার্চ একাডেমী, ১৯৯২), পৃঃ ৪০।
[15]. বিজ্ঞান চর্চায় ইসলামী দৃষ্টিকোণ, পৃঃ ৩০৪; বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন-Ameer Ali, The Spirit of Islam (London-1967), P. 360-403.
[16]. গোলাম আহমাদ মোর্তজা, চেপে রাখা ইতিহাস (বর্ধমান: বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন, অষ্টম মুদ্রণ, ২০০০), পৃঃ ২৫।
[17]. নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, পাশ্চাত্য সভ্যতায় ইসলাম (ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, জুন-২০০০), পৃঃ ৩৩০।
[18]. বুখারী, মিশকাত, হা/৪৫১৪।
[19]. মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৫১৫।
[20]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৫২৫।
[21]. আফলাতুল কায়সার অনূদিত, বাংলা মিশকাত, (ঢাকাঃ এমদাদিয়া লাইব্রেরী, জুন-১৯৯৫ ইং), পৃঃ ৮/২৬৫-২৬৬।
[22]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৫২০।
[23]. শ্রীনগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, দ্রব্যগুণ-শিক্ষা (কলিকাতা: নগেন্দ্র টীম প্রিন্টিং ১৯১৯ ইং), পৃঃ ৭২।
[24]. বাজেয়াপ্ত ইতিহাস, পৃঃ ৭৪।
[25]. চেপে রাখা ইতিহাস, পৃঃ ২২।
[26]. বাজেয়াপ্ত ইতিহাস, পৃঃ ৭৫।
[27]. চেপে রাখা ইতিহাস, পৃঃ ২২।
[28]. মুসলিম স্পেন, পৃঃ ৩৫।
[29]. বিজ্ঞান চর্চায় ইসলামী দৃষ্টিকোণ, পৃঃ ২৮৮-২৮৯।
[30]. History of the Arabs, P. 557.
[31]. মুসলিম স্পেন, পৃঃ ৭৩-৭৪।
[32]. তদেব, পৃঃ ৭৪।
[33]. চেপে রাখা ইতিহাস, পৃঃ ১৮।
[34]. তদেব, পৃঃ ২৭-২৮।
[35]. মুসলিম স্পেন, পৃঃ ৫২-৫৩।
[36]. তদেব, পৃঃ ৫৪।
[37]. বাজেয়াপ্ত ইতিহাস, পৃঃ ৫১।
[38]. চেপে রাখা ইতিহাস, পৃঃ ১৯।
[39]. বিজ্ঞান চর্চায় ইসলামী দৃষ্টিকোণ, পৃঃ ৩০৪।
[40]. তদেব, পৃঃ ৩০৪।