নবীপত্নী ও সর্দার দুহিতা ছাফিয়া (রাঃ) ছিলেন অতীব জ্ঞানী ও বিদুষী মহিলা। ইসলাম গ্রহণের পরে দ্বীনের অনুসরণ ছিল তাঁর একমাত্র ব্রত। অতুলনীয় স্বভাব-চরিত্র ও অনুপম আচার-ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন তিনি। বিনয় ও নম্রতা ছিল তাঁর চরিত্রের ভূষণ। রাসূলের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালবাসা, তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ ও দ্বীনের প্রতি সীমাহীন অনুরাগ ছিল অনুকরণীয়। বংশ কৌলিন্যে, আভিজাত্যে, ধন-সম্পদে যেমন তিনি ছিলেন শীর্ষস্থানীয়া, তেমনি ছিলেন ইবাদতগুযার, দানশীলা ও দায়িত্ব সচেতন। রাসূলপত্নী উম্মুল মুমিনীন এই মহিলা ছাহাবীর জীবন চরিত এখানে আমরা সংক্ষেপে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
নাম ও বংশ পরিচয় : তাঁর প্রকৃত নাম যয়নাব। কিন্তু ৭ম হিজরীতে খায়বার যুদ্ধে গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসাবে তিনি মুসলমানদের নিকট নীত হন এবং বণ্টনে রাসূলের ভাগে পড়েন। সেকালে আরবে নেতা বা বাদশার অংশের যুদ্ধলব্ধ সম্পদকে ‘ছাফিয়া’ বলা হ’ত। এ থেকেই ‘ছাফিয়া’ নামে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।[1]
তাঁর পূর্ণ বংশ পরিচয় হচ্ছে- ছাফিয়া বিনতু হুয়াই ইবনে আখতাব ইবনে সা‘ঈদ ইবনে ছা‘লাবা ইবনে ওবায়দ ইবনিল খাযরাজ ইবনে আবী হাবীব ইবনিন নাযর ইবনে নাহহাম ইবনে ইয়ানহূম।[2] আল্লামা ইবনু হাজার আসক্বালানী ও হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী ‘আখতাব ইবনে সা‘ঈদ’-এর স্থলে ‘আখতাব ইবনে সা‘ইয়াহ’[3] এবং ইবনু সা‘দ ‘সা‘ঈদ ইবনে ছা‘লাবা’-এর স্থলে ‘সা‘ইয়াহ ইবনে ‘আমের’ উল্লেখ করেছেন।[4] তাঁর পিতা ছিলেন মূসা (আঃ)-এর ভাই হারূণ বিন ইমরান (রাঃ)-এর অধস্তন পুরুষ।[5] তাঁর বংশধারা ইবরাহীম (আঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে। যেমন হাফেয শামসুদ্দীন উল্লেখ করেন যে, তিনি লাভী ইবনে ইসরাঈল (ইয়াকূব) ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীমের বংশধর।[6] তাঁর মাতার নাম বাররা বিনতু সামওয়াল।[7] তিনি ছিলেন মদীনার ইহুদীগোত্র বনু নাযীরের মিত্র গোত্র বনু কুরায়যার রিফা‘আহ ইবনু সামওয়ালের বোন।[8]
ছাফিয়া (রাঃ)-এর পিতৃ ও মাতৃবংশ যথাক্রমে বনু নাযীর ও বনু কুরায়যা অন্যান্য আরবীয় ইহুদী বংশের চেয়ে অধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিল। তারা প্রাচীনকাল থেকেই আরবের উত্তরাঞ্চলে বসবাস করত। ছাফিয়া (রাঃ)-এর পিতা হুয়াই ইবনু আখতাব ছিলেন গোত্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব এবং সর্বজন সম্মানিত ও মান্যবর। অপরদিকে তাঁর নানা সামওয়ালও সমগ্র আরব উপদ্বীপে বীরত্ব ও সাহসিকতায় প্রসিদ্ধ ছিলেন। ফলে ছাফিয়া (রাঃ) পিতৃ ও মাতৃ উভয় দিক দিয়েই ছিলেন বিশেষ কৌলিন্য ও আভিজাত্যের অধিকারিণী।
জন্ম ও শৈশব : সীরাত গ্রন্থাবলীতে ছাফিয়া (রাঃ)-এর জন্মকাল ও তারিখ সম্বন্ধে কিছু জানা যায় না। তবে ৭ম হিজরীতে খায়বার বিজয়ের পর রাসূলের সাথে বিবাহের সময় তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর।[9] সেই হিসাবে তাঁর জন্ম ৬১২ খৃষ্টাব্দে হয়েছিল বলে ধরে নেওয়া যায়। তাঁর শৈশবকাল সম্পর্কেও তেমন কিছু জনা যায় না। তবে খায়বারের ইহুদী কবীলা বনু নাযীর গোত্রেই তাঁর বাল্যকাল কেটেছে।
বিবাহ : মদীনার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত অতি সমৃদ্ধ স্থান খায়বারের প্রসিদ্ধ কবি ও সর্দার সাল্লাম ইবনু মাশকাম আল-কারাযীর সাথে ছাফিয়ার প্রথম বিবাহ সম্পন্ন হয় মাত্র ১৪ বছর বয়সে।[10] হাফিয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, তাঁর প্রথম বিবাহ সম্পন্ন হয় সালাম ইবনু আবুল হুকাইকের সাথে।[11] কিন্তু তাদের মধ্যে মন-মানসিকতায় ব্যবধান থাকায় বনিবনা হয়নি। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর হিজাযের খ্যাতিমান সওদাগর ও খায়বারের বিখ্যাত নেতা আবু রাফে‘র ভাতিজা কিনানা ইবনু আবিল হুকায়েকের সাথে ছাফিয়া (রাঃ)-এর দ্বিতীয় বিবাহ সম্পন্ন হয়।[12] কিনানা ছিল ছাফিয়ার চাচাত ভাই।[13] সে ছিল প্রসিদ্ধ কবি ও খায়বারের অন্যতম শক্তিশালী ও বিখ্যাত ‘আল-কামূস’ দুর্গের প্রশাসক।[14]
যুদ্ধবন্দী ছাফিয়া (রাঃ) : মদীনার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ইহুদী অধ্যুষিত একটি সমৃদ্ধ ও বর্ধিষ্ণু জনপদ খায়বার। কয়েকটি মজবুত দুর্গবেষ্টিত খায়বারে বসে ইহুদীরা মদীনা আক্রমণ করার ষড়যন্ত্র করে। মদীনা দখল করে ইসলামকে উৎখাত করতে তারা ছিল সংকল্পবদ্ধ। এজন্য তারা দীর্ঘ দিন ধরে অস্ত্র-শস্ত্র ও সৈন্য সংগ্রহ করতে থাকে। মদীনার অর্ধেক খেজুর বাগান প্রদানের শর্তে বনু গাতফান ও বনু আসাদ নামক গোত্রকেও তাদের দলভুক্ত করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ সংবাদ পেয়ে ইহুদীদের অপকর্মের মূলোচ্ছেদ করার জন্য খায়বার অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
৭ম হিজরীর প্রথম দিকে সাবা বিন আরফাতা গিফারীকে মদীনার দায়িত্বশীল নিয়োগ করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ১৪শ’ ছাহাবী সাথে নিয়ে খায়বার অভিযানে বের হন। মুসলিম বাহিনী খায়বারে পৌঁছলে ইহুদীরা খোলা ময়দানে যুদ্ধ করা সমীচীন মনে না করে দুর্গের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ করতে মনস্থ করে। তুমুল যুদ্ধে ইহুদীরা পরাজিত হয়। ইহুদীদের ৯৩ জন মৃত্যুবরণ করে। অপরদিকে ১৫ জন মুসলিম মুজাহিদ শাহাদত বরণ করেন। ইহুদীদের জন্য অতীব ক্ষতিকর এ যুদ্ধে ছাফিয়া (রাঃ)-এর বংশের নামকরা বীর ও নেতারা নিহত হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে তার পিতা, ভাই ও অনেক স্বজন ছিল। আর যুদ্ধ বন্দীদের মধ্যে তিনি নিজে ও তার অনেক আত্মীয় ছিল।[15]
হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) ছাফিয়ার স্বামী কিনানার নিহত হওয়া সম্পর্কে বলেন, বনু নাযীরের গুপ্ত ধনভান্ডার কিনানার তত্ত্বাবধানে ছিল। তাকে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে আনা হ’লে তিনি ঐ ধনভান্ডার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। কিনানা সেই স্থান চিনিয়ে দিতে অস্বীকার করে। তখন জনৈক ইহুদী রাসূলের নিকট এসে বলল, আমি কিনানাকে প্রতিদিন প্রত্যুষে এ গর্তের নিকটে ঘুরতে দেখেছি। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কিনানাকে বললেন, আমরা যদি তোমার নিকটে ঐ ধনভান্ডার পাই তাহ’লে কি তোমাকে হত্যা করব? সে উত্তরে বলল, হ্যাঁ। রাসূল ঐ গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। সেখান থেকে কিছু গুপ্তসম্পদ বের হ’ল। এরপর কিনানাকে অবশিষ্ট গুপ্তধন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বলতে অস্বীকার করে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যুবায়ের ইবনুল আওয়ামকে বললেন, ওকে শাস্তি দিয়ে তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা কর। যুবায়ের (রাঃ) আগুনের শলাকা দিয়ে শাস্তি দিয়ে তার বুকে গর্ত করে ফেললেন। সে মৃত্যুর উপক্রম হ’লেও গুপ্তধন সম্পর্কে কোন তথ্য দিল না। কিছু বলল না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে মুহাম্মাদ ইবনু মাসালামার নিকট সোপর্দ করলেন। তিনি কিনানার গর্দান কেটে ফেললেন। কেননা যুদ্ধের ময়দানে সে মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামার ভাই মাহমূদ ইবনু মাসলামাকে হত্যা করছিল।[16]
যুদ্ধের পরে গনীমতের মাল ও বন্দীদের এক স্থানে জমা করা হয়। বেলাল (রাঃ) ছাফিয়া ও তার চাচাত বোনকে ধরে নিয়ে আসেন। নিহত ইহুদীদের রক্তাক্ত লাশ যে রাস্তায় পড়েছিল, বেলাল (রাঃ) তাদেরকে নিয়ে ঐ রাস্তায় আসেন। নিহতদের মাঝে ছাফিয়ার পিতা, ভাই ও আত্মীদের লাশ ছিল। বংশের সম্ভ্রান্ত লোক ও স্বজনদের কর্তিত লাশ দেখে ছাফিয়ার চাচাত বোন নিজের মুখে চপেটাঘাত করে, মাথায় মাটি ছিটিয়ে দিয়ে, বুক চাপড়িয়ে, পরণের বস্ত্র ছিড়ে, চিৎকার করে বিলাপ করতে থাকে। কিন্তু ছাফিয়া থাকলেন নীরব নির্বাক। বেলাল (রাঃ) তাদেরকে নিয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর খেদমতে পৌঁছলে মহিলার চিৎকার-চেচামেচি দেখে বললেন, এই শয়তান মহিলাকে আমার নিকট থেকে দূরে সরাও। হে বেলাল! তোমার হৃদয়ে কি কোন দয়া নেই? এ মহিলাদেরকে এমন রাস্তা দিয়ে এনেছ, যে রাস্তায় তাদের পিতা, ভাইদের রক্তরঞ্জিত লাশ পড়ে আছে।[17]
রাসূলের সাথে বিবাহ : খায়বার যুদ্ধে ছাফিয়া বন্দী হন। গনীমত বণ্টনে তিনি দাহিয়া কালবীর অংশে পড়েন। তখন নবী করীম (ছাঃ)-কে বলা হ’ল ছাফিয়া আপনার জন্য ছাড়া অন্যের জন্য মানায় না। তখন তিনি দাহিয়ার নিকট থেকে ৭ আরুসের বিনিময়ে ছাফিয়াকে নিয়ে নেন।[18] অন্য বর্ণনায় ৭ জন বন্দীর বিনিময়ে দাহিয়ার নিকট থেকে ছাফিয়াকে খরিদ করেন।[19]
ছহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, খায়বারের যুদ্ধবন্দীদের একত্রিত করার পর দাহিয়া কালবী এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! বন্দীদের মধ্য হ’তে আমাকে একটি মেয়ে দিন। রাসূল বললেন, তুমি যাও, সেখান থেকে একটি মেয়ে নিয়ে নাও। দাহিয়া (রাঃ) ছাফিয়া বিনতু হুয়াইকে গ্রহণ করলেন। তখন জনৈক ছাহাবী এসে রাসূলকে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি বনু নাযীর ও বনু কুরায়যার নেতা হুয়াই বিন আখতাবের কন্যা ছাফিয়াকে দাহিয়া কালবীকে প্রদান করেছেন। সর্দার দুহিতা ছাফিয়া আপনি ব্যতীত অন্য কারো জন্য উপযুক্ত নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ছাফিয়া সহ দাহিয়াকে ডাক। তখন দাহিয়া আসলেন। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাফিয়ার দিকে তাকালেন এবং দাহিয়াকে বললেন, তুমি অন্য একটি মেয়েকে গ্রহণ কর। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে মুক্ত করে দেন ও বিবাহ করেন।[20] মূলতঃ ছাফিয়া (রাঃ) হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) তাকে বিবাহ করেন এবং তার মুক্তিকেই তার বিবাহের মহর নির্ধারণ করেন।[21]
ওয়ালীমা ও বাসর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাফিয়ার হায়েয শেষ হওয়া পর্যন্ত খায়বারে অবস্থান করেন। তিনি পবিত্র হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খায়বার থেকে বের হন। রওয়ানা হওয়ার জন্য উটের নিকটবর্তী হয়ে ছাফিয়ার জন্য রাসূল (ছাঃ) নিজের পা নিচু করে রাখলেন, যাতে তাঁর হাটুর উপরে পা রেখে ছাফিয়া (রাঃ) সহজইে উঠের পিঠে উঠতে পারে। কিন্তু রাসূলের পায়ের উপর পা দেওয়া চরম বেয়াদবী মনে করে ছাফিয়া পা দিতে অস্বীকার করেন। অতঃপর তিনি রাসূলের উরুর উপরে হাঁটু দিয়ে ভর করে উটের পিঠে চড়েন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে স্বীয় সওয়ারীর পিছনে রাখেন, তার উপর চাদর দিয়ে তার পৃষ্ঠদেশ ও মুখমন্ডল ঢেকে দেন। তাকে স্বীয় স্ত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করেন। অতঃপর খায়বার থেকে ৬ মাইল দূরে ‘তাবার’ মনযিলে পৌঁছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাসর যাপনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলে ছাফিয়া (রাঃ) অমত পোষণ করেন। এতে রাসূল মনে কষ্ট পান। অতঃপর খায়বার থেকে দূরবর্তী মনযিল ‘ছাহবা’-এ পৌঁছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাত্রা বিরতি করেন। তখন আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর মাতা উম্মু সুলাইম বিনতু মিলহান[22] ছাফিয়াকে চুল অাঁচড়িয়ে পরিপাটি করে সাজিয়ে, সুগন্ধি মাখিয়ে রাসূলের জন্য প্রস্ত্তত করেন। অন্য বর্ণনায় আছে, উম্মু সিনান আল-আসলামিয়া ছাফিয়াকে সাজিয়ে সুগন্ধি মাখিয়ে দেন।[23]
উম্মু সুলাইম বলেন, তাঁবু বা সামিয়ানার অভাবে আমরা দু’টি আবা (পোষাক বিশেষ) বা দু’টি কাপড় গাছের সাথে টাঙিয়ে পর্দা করে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাফিয়ার নিকটবর্তী হ’লে তিনি এগিয়ে আসেন। এরূপ করতে তাকে বলে দেওয়া হয়েছিল। রাসূল সেখানে বাসর যাপন করেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, প্রথম মনযিলে আমি বাসর যাপনের ইচ্ছা করলে, তুমি অমত করলে কেন? ছাফিয়া বললেন, আমি আপনার জন্য ইহুদীদের অনিষ্টের আশংকা করছিলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাফিয়া (রাঃ)-এর সাথে কথা-বার্তা বলে সারা রাত্রি নির্ঘুম অতিবাহিত করেন। প্রত্যুষে উম্মু সুলাইম জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলকে কেমন দেখলে? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে পেয়ে খুশি হয়েছেন। সকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খেজুর, পনির ও ঘি দ্বারা বিশেষভাবে তৈরী ‘হীস’ নামক এক প্রকার খাদ্য দ্বারা ওয়ালীমা করেন।[24] হাকিমের বর্ণনায় আছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রুটি ও গোশত দ্বারা ছাফিয়ার বিবাহোত্তর ওয়ালীমা করেন।[25]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় ‘আল-আযবা’ নামক উটনীর পিছনে ছাফিয়া (রাঃ)-কে নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে উটনী হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে নবী করীম (ছাঃ) ও ছাফিয়া (রাঃ) দু’জনেই পড়ে যান। কিন্তু তাঁরা কোন আঘাত পাননি। আল্লাহ তাদের নিরাপদে রাখেন। কিন্তু নবী করীম (ছাঃ) ও ছাফিয়া (রাঃ) হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় চিৎকার করে ওঠেন। তখন আবু তালহা স্বীয় সওয়ারী থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং রাসূলের নিকটে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কোন ক্ষতি হয়নি তো? তিনি বললেন, না, তুমি মহিলার প্রতি খেয়াল কর। তখন আবু তালহা স্বীয় চোখের সামনে কাপড় টানিয়ে দিয়ে ছাফিয়ার দিকে একটি কাপড় ছুড়ে দিলেন। তিনি তা ধরে উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি সওয়ারীতে উঠলেন এবং নবী করীম (ছাঃ)ও আরোহন করলেন।[26] অতঃপর খায়বার থেকে ১৬ মাইল দূরে ‘কুছাইবাহ’ নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাত্রা বিরতি করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছাফিয়া (রাঃ)-এর সাথে বাসর যাপন করেন, সে সময় তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর।[27]
রাসূলকে পাহারা দান: রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছাফিয়া (রাঃ)-এর তাঁবুতে প্রবেশ করেন তখন আবু আইয়ুব (রাঃ) তাঁবুর সামনে খোলা তরবারি নিয়ে রাসূলের নিরাপত্তার জন্য সারা রাত্রি জেগে পাহারা দিতে থাকেন। সকালে রাসূল তাকে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ছাফিয়া (রাঃ) একজন অল্প বয়সী তরুণী, যার পিতা, ভাই ও স্বামী আপনার সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তাই তাকে আপনার জন্য নিরাপদ মনে করিনি। তখন রাসূল হাসলেন এবং তার জন্য দো‘আ করলেন।[28]
ছাফিয়া (রাঃ)-এর স্বপ্ন : ছাফিয়া (রাঃ) একদা স্বপ্নে দেখেন যে, চন্দ্র ছুটে এসে তাঁর ক্রোড়ে পতিত হয়েছে। এ স্বপ্নের কথা তার মায়ের নিকটে প্রকাশ করলে সে সজোরে ছাফিয়ার মুখে চপেটাঘাত করে এবং বলে, তুই কি এ আশা করিস যে, আরবের বাদশার রাণী হবি?[29] অন্য বর্ণনায় এসেছে, বাসর রাতে রাসূলুল্লাহ ছাফিয়ার চোখের পার্শ্বে সবুজ দাগ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিসের দাগ? তখন তিনি বললেন, আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম যে, ইয়াছরিবের দিক থেকে চন্দ্র ছুটে এসে আমার ক্রোড়ে পতিত হয়েছে। অন্য বর্ণনায় আছে, সূর্য পতিত হয়েছে। আমি এই স্বপ্নের কথা আমার স্বামী কিনানার নিকট ব্যক্ত করলাম। তখন সে বলল, মদীনা থেকে আগত ঐ বাদশার অধীনস্ত তুমি হও এটা কি তুমি ভালবাস? একথা বলে সে সজোরে আমার মুখে চপেটাঘাত করে।[30]
রাসূলের সাথে বিবাহের আকাঙ্খা : খায়বার যুদ্ধ বিজয়ের পর ছাফিয়া (রাঃ) বন্দী হয়ে আসলে এক সময় তাকে রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, আমার ব্যাপারে তোমার কোন আগ্রহ আছে কি? তিনি উত্তরে বললেন, শিরকের মধ্যে নিমজ্জিত থাকার সময় আমি এই আশা পোষণ করতাম। সুতরাং ইসলাম গ্রহণের দ্বারা আল্লাহ আমাকে আপনার সাহচর্য লাভের যে সুযোগ দিয়েছেন, সে সুযোগ আমি কিভাবে হারাতে পারি?[31] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ছাফিয়া (রাঃ) যখন রাসূলের নিকট আসলেন, তখন তিনি বললেন, তোমার পিতা ইহুদী ছিলেন, যে আমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করত। অবশেষে আল্লাহ তাকে নিহত করলেন। তখন ছাফিয়া বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন, وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى ‘একজনের (পাপের) বোঝা অন্যের উপর চাপানো হবে না’ (আন‘আম ১৬৪; ইসরা ১৫; ফাতির ১৮; যুমার ৭; নাজম ৩৮)। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি যা পসন্দ কর, বেছে নেও। যদি তুমি ইসলামকে পসন্দ কর, তাহ’লে আমি তোমাকে আমার জন্য রেখে দিব। আর যদি তুমি ইহুদী ধর্মমতকে পসন্দ কর, তাহ’লে আমি তোমাকে মুক্ত করে দেব, যাতে তুমি তোমার কওমের সাথে মিলিত হ’তে পার। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ইসলামকে ভালবেসেছি, আপনি আমাকে দাওয়াত দেওয়ার পূর্বেই আমি আপনাকে সত্য বলে স্বীকার করেছি, এমনকি আমি আপনার সওয়ারীতে চড়েছি। ইহুদী ধর্মের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ বা অনুরাগ নেই। আর সেখানে আমার পিতা, ভাই, কেউ নেই। আপনি কুফরী বা ইসলাম যেকোনটি গ্রহণের এখতিয়ার দিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই আমার নিকট অধিক প্রিয় স্বাধীন হওয়ার চেয়ে এবং আমার কওমের নিকট ফিরে যাওয়ার চেয়ে। তখন তাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজের জন্য রেখে দিলেন।[32]
ছাফিয়াকে বিবাহের কারণ : বিভিন্ন কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাফিয়াকে বিবাহ করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নরূপ :
(১) আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী নিহত এবং নিজেও স্বীয় ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ায় ছাফিয়া শোক বিহবল ছিলেন। তার শোকাহত হৃদয়কে শান্ত করা ও তাকে দ্বীন ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য তাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিবাহ করেন।
(২) এ বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে বনু নাযীর ও বনু কুরায়যার বিরোধিতা ও শত্রুতা হ্রাসকরণ এবং প্রশমনের অভিপ্রায়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাফিয়াকে বিবাহ করেন। যা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হয়েছিল।[33]
(৩) সরদার দুহিতা ছাফিয়ার যথাযথ সম্মান বজায় রাখা এবং এই নযীরবিহীন ইহসানের প্রতি লক্ষ্য করে ইহুদী সম্প্রদায় যাতে আল্লাহদ্রোহিতা থেকে ফিরে এসে ইসলাম কবুল করতে অনুপ্রাণিত হয়, এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাফিয়াকে বিবাহ করেন।[34]
ছাফিয়া (রাঃ)-এর রূপ ও সৌন্দর্য : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘ছাহবা’-এ তিন দিন অবস্থান করার পর মদীনায় ফিরে আসেন।[35] মদীনায় পৌঁছে তিনি নব বিবাহিতা স্ত্রী ছাফিয়াকে নিয়ে হারিছ বিন নু‘মানের বাড়ীতে ওঠেন। রাসূলের প্রিয় এ ছাহাবী ছিলেন বিত্তশালী এবং রাসূলের প্রয়োজনের প্রতি অত্যন্ত সজাগ। নবী করীম (ছাঃ)-এর সহযোগিতায় তিনি সদা প্রস্ত্তত থাকতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার বাড়ীতে উঠলে ছাফিয়া (রাঃ)-এর রূপের কথা শুনে আনছার মহিলাদের সাথে উম্মুল মুমিনীন যয়নাব বিনতু জাহাশ, হাফছা, জুওয়াইরিয়া ও আয়েশা (রাঃ) হারিছের বাড়ীতে আসেন। আয়েশা (রাঃ) ছিলেন মুখে নেকাব পরিহিতা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে চিনে ফেলেন। চলে যাবার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশার পিছনে পিছেনে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! কেমন দেখলে? তিনি বললেন, সে তো ইহুদী নারী। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ওকথা বল না। সে ইসলাম কবুল করেছে এবং উত্তম মুসলিম হয়েছে।[36] অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশার নিকট গিয়ে তার কাপড় টেনে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, كيف رأيت يا شقيراء ‘কেমন দেখলে হে শাকীরা (আয়েশা)! তিনি বললেন, আমি দেখলাম, সে একজন ইহুদী মহিলা।[37]
ছাফিয়া (রাঃ) যে অপূর্ব সুন্দরী ছিলেন তা উম্মু সিনান আল-আসলামিয়া (রাঃ)-এর উক্তিতে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, وكانت من أضواء ما يكون من النساء ‘তিনি ছিলেন সৌম্যকান্তি, যা মহিলাদের মধ্যে বিরল’।[38] আব্দুল্লাহ জরদানী বলেন, وكانت جميلة رضى الله تعالى عنها ‘তিনি ছিলেন সুন্দরী’।[39]
স্বভাব-চরিত্র : তিনি ছিলেন অত্যন্ত উন্নত চরিত্র ও উত্তম বৈশিষ্ট্যের অধিকারিণী। তিনি অতি নম্র স্বভাবের ও ধৈর্যশীলা মহিলা ছিলেন। ইবনু আব্দুল বার্র বলেন, كانة صفية حليمة عاقلة فاضلة ‘ছাফিয়া (রাঃ) ছিলেন ধৈর্যশীলা, বুদ্ধিমতী ও গুণবতী’।[40] হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, وكانت شريفة عاقلة ذا حسب وجمال ودين رضى الله عنها ‘তিনি ছিলেন ভদ্র, বুদ্ধিমতী, উঁচু বংশীয়া, রূপবতী ও দ্বীনদার মহিলা’।[41]
ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পরও ইহুদী হওয়ার ভৎর্সনা বা ঠাট্টা-বিদ্রূপ তাঁর জন্য অতি পীড়াদায়ক ও বড় অন্তর জ্বালার ব্যাপার ছিল। তথাপি এসব বিদ্রূপও তিনি অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে সহ্য করতেন। তিনি কাউকে কখনও কোন কটু কথা বলেননি এবং কারো তিরস্কারের কঠিন জবাব দেননি। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা ছাফিয়া (রাঃ)-এর নিকটে এ খবর পৌঁছল যে, হাফছা বিনতু ওমর তাকে ইহুদী বলে। তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। এমতাবস্থায় নবী করীম (ছাঃ) তার নিকটে প্রবেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কাঁদছ কেন? তিনি বললেন, হাফছা আমাকে ইহুদীর মেয়ে বলে। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি নবীর কন্যা, তোমার চাচা নবী এবং তুমিও নবীর অধীনে আছ। সুতরাং তোমার উপর কে গর্ব করতে পারে? অতঃপর তিনি হাফছাকে বললেন, হে হাফছা! আল্লাহকে ভয় কর’।[42]
দানশীলতা : তিনি ছিলেন অল্পে তুষ্ট ও দানশীলা মহিলা। তিনি রাসূলের সাথে মদীনায় আগমন করলে ফাতিমাতুয যাহরা তাকে দেখতে আসলেন। তখন তিনি নিজের কানের মূল্যবান ঝুমকা বা দুল খুলে ফাতিমাকে দিলেন এবং তাঁর সাথে আগত অন্যান্য মহিলাকেও কোন না কোন গহনা প্রদান করলেন।[43] ছাফিয়া (রাঃ) স্বীয় ব্যক্তিগত গৃহখানা জীবদ্দশায়ই ছাদাক্বা করে দেন।[44] তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে জমি ও আসবাবপত্রের মূল্য বাবদ একলক্ষ দিরহাম পেয়েছিলেন। এর এক-তৃতীয়াংশ স্বীয় ভাগ্নার জন্য অছিয়ত করে যান। যার পরিমাণ ছিল ৩০ হাযার দেরহাম।[45] এ ব্যক্তি ছাফিয়া (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর ইসলাম কবুল করেন।[46] অপর এক বর্ণনায় আছে যে, লোকেরা ছাফিয়া (রাঃ)-এর ভাগ্নাকে অর্থ প্রদানে গড়িমসি করে। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং ছাফিয়ার অছিয়ত পূর্ণ কর। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী অছিয়ত পূরণ করা হয়।[47]
রাসূলের প্রতি ভালবাসা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি ছাফিয়া (রাঃ)-এর ছিল সীমাহীন ভালবাসা, অকৃত্রিম প্রেম, অশেষ মুহাববাত। এটা রাসূলের সাক্ষ্যদানে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়েছে। নবী করীম (ছাঃ) অন্তিম শয্যায় শায়িত, মৃত্যু যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করছেন। তাঁর চতুর্দিকে এসে সমবেত হয়েছেন তাঁর সহধর্মিনীগণ। তখন রাসূলের অস্থিরতা দেখে ছাফিয়া (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার এ যন্ত্রণা যদি আমার হ’ত! একথা শুনে রাসূলের অন্যান্য স্ত্রীগণ তাঁর দিকে তাকালেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যান্য স্ত্রীদের দিকে তাকালেন এবং বললেন, তোমরা কি অনর্থক ভাবলে? তারা বললেন, কোন জিনিসকে, হে আল্লাহর নবী! তিনি বললেন, যে বিষয়ে তোমরা তোমাদের সাথীর প্রতি কটাক্ষের দৃষ্টিতে তাকালে? আল্লাহর কসম! সে সত্যই বলেছে’।[48] অর্থাৎ এটা নিছক কথার কথা নয়, প্রদর্শনী মূলকও নয়। সে অন্তর থেকেই একথা বলেছে।
রাসূলের ভালবাসার পাত্রী : ছাফিয়া (রাঃ) যেমন রাসূলকে ভালবাসতেন, তেমনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও ছাফিয়াকে মুহাববাত করতেন। ছাফিয়ার সঙ্গ পসন্দ করতেন এবং তার প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় পত্নীগণ সহ হজ্জে গমনকালে ছাফিয়ার উট (দুর্বল হয়ে) বসে পড়লে তিনি কেঁদে ফেললেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এসে নিজ হাতে তার অশ্রু মুছিয়ে দেন ও কাঁদতে নিষেধ করেন। তিনি লোকদের নিয়ে যাত্রা বিরতি করেন। অতঃপর ‘রাওয়াহ’ নামক স্থানের নিকটবর্তী হয়ে যয়নাব বিনতু জাহাশকে বললেন, তোমার বোনকে একটি উট দাও। তার কাছে সবার চেয়ে বেশি বাহন ছিল। যয়নাব বললেন, আমি এই ইহুদীকে উট দিব? এতে রাসূলুল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হ’লেন। মদীনায় ফিরে আসা অবধি তার সাথে কথা বলেননি। দু’তিন মাস (যুলহিজ্জাহ থেকে মুহাররম বা ছফর পর্যন্ত) তার নিকটে যাননি। যয়নাব বলেন, রাসূলের উষ্মা আমাকে প্রায় নিরাশ করে ফেলেছিল। রবী‘উল আউয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ যয়নাবের নিকটে গেলে রাসূলকে দেখে যয়নাব এগিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরূপ আমি কখনও বলব না। যয়নাবের একটি দাসী ছিল, সেটা তিনি রাসূলকে দান করেন। নবী করীম (ছাঃ) যয়নাবের ঊর্ধ্বে ওঠানো খাট নিজ হাতে নামিয়ে তাতে বসলেন এবং যয়নাবের প্রতি সন্তুষ্ট হ’লেন।[49]
সত্যবাদিনী ও স্পষ্টভাষিণী : ওমর ফারূক (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ছাফিয়া (রাঃ)-এর জনৈক দাসী খলীফার নিকট অভিযোগ করল যে, উম্মুল মুমিনীন ছাফিয়ার নিকট থেকে এখনও ইহুদীবাদের গন্ধ আসে। কেননা তিনি শনিবারকে উত্তম জ্ঞান করেন এবং ইহুদীদের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক রাখেন। ওমর (রাঃ) একথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নিজেই ছাফিয়া (রাঃ)-এর গৃহে গমন করেন। তিনি আগমনের কারণ বর্ণনা করলে ছাফিয়া (রাঃ) বললেন, যখন থেকে আল্লাহ আমাকে শনিবারের পরিবর্তে শুক্রবার দিয়েছেন, তখন থেকেই শনিবারের প্রতি ভালবাসার প্রয়োজন থাকেনি। আর ইহুদীদের মাঝে আমার আত্মীয়-স্বজন থাকার কারণে তাদের সাথে আমার কেবল আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখতে হয়। তাঁর সত্যবাদিতা ও সুস্পষ্ট বক্তব্যে খলীফা খুশি হয়ে ফিরে এলেন। এরপর উম্মুল মুমিনীন দাসীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার বিরুদ্ধে খলীফার কাছে অভিযোগ করতে কোন জিনিস তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে? সে বলল, শয়তান আমাকে প্ররোচনা দিয়েছে। তখন তিনি বললেন, যাও, তোমাকে আযাদ করে দিলাম।[50]
ছাফিয়া (রাঃ) স্বীয় পিতা হুয়াই বিন আখত্বাব সম্পর্কে বলেন, আমি আমার বাপ-চাচাদের নিকটে তাদের সকল সন্তানের মধ্যে অধিক প্রিয় ছিলাম এবং সকলের আগেই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে তারা আদর করতেন। যেদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রথম ইয়াছরিবে আগমন করেন ও কুবায় বনু আমর বিন আওফের গোত্রে অবতরণ করেন, সেদিন অতি প্রত্যুষে আমার পিতা ও চাচা রাসূলের দরবারে উপস্থিত হন। অতঃপর সন্ধ্যার দিকে তারা ক্লান্ত ও অবসন্নচিত্তে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। আমি ছুটে তাদের কাছে গেলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! তারা এত চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন যে, আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না। এ সময় আমি আমার চাচাকে বলতে শুনলাম, তিনি আমার আববাকে বলছেন, أهو هو؟ ‘ইনিই কি তিনি? আববা বললেন, نعم والله ‘আল্লাহর কসম! ইনিই তিনি’। চাচা বললেন, فما فى نفسك منه ‘এখন তাঁর সম্পর্কে আপনার চিন্তা কী’? আববা বললেন, عداوتُه والله ما بقيتُ ‘তার শত্রুতা, আল্লাহর কসম! যতদিন আমি বেঁচে থাকব’।[51]
সহানুভূতি ও কর্তব্য সচেতনতা : ছাফিয়া (রাঃ) অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি তাঁর কর্তব্য ও দায়িত্বের প্রতিও সচেতন ছিলেন। ৩৫ হিজরীতে ওছমান (রাঃ) বিদ্রোহীদের দ্বারা নিজ গৃহে বন্দী হয়ে পড়লে বাইরের সকল যোগাযোগ তাঁর সাথে বন্ধ হয়ে যায়। ছাফিয়া (রাঃ) একজন খাদেমকে নিয়ে খচ্চরে আরোহণ করে তাঁর গৃহাভিমুখে রওয়ানা হন। আশতার নাখঈ দেখতে পেয়ে তাঁকে ফিরাতে খচ্চরের মুখে আঘাত করে। তখন ছাফিয় (রাঃ) বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও, এখানে আমাকে অপদস্ত কর না। তিনি ফিরে আসেন। তারপর তিনি স্বীয় বাড়ী থেকে ওছমান (রাঃ)-এর বাড়ীতে হাসান (রাঃ)-এর মাধ্যমে খাদ্য পানীয় পৌঁছে দেন।[52]
ইলমী খিদমত : ছাফিয়া (রাঃ) অন্যান্য উম্মুল মুমিনীনের ন্যায় ইসলামী জ্ঞানের কেন্দ্রভূমি ছিলেন। লোকেরা তাঁর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে সন্তোষজনক জবাব পেত। হাদীছ, ফিকহ সহ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল। ইবনুল আছীর বলেন, كانت عاقلة من عقلاء النساء ‘বুদ্ধিমতী-জ্ঞানী মহিলাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অতিশয় জ্ঞানী’।[53] আবু ওমর বলেন, كانة صفية عاقلة فاضلة ‘ছাফিয়া ছিলেন জ্ঞানী গুণবতী মহিলা’।[54] শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, كانت صفية ذات حلم ووقار ‘ছাফিয়া ছিলেন বুদ্ধিমতী ও মর্যাদাশীলা’।[55] মূলতঃ তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর সাহচর্যে থাকায় হাদীছ সহ ইসলামী শরী‘আতের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। মুহায়রা বিনতু হায়কাল নাম্নী এক মহিলা হজ্জ সমাপন করে ছাফিয়া (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে মদীনায় আসেন। তিনি গৃহে প্রবেশ করে দেখেন কূফার বহু মহিলা বসে আছেন এবং ছাফিয়া (রাঃ)-কে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করছেন। আর তিনি বিচক্ষণতার সাথে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। তিনি মহিলাদের মাধ্যমে নাবীয (খেজুর ভিজানো শরবত) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা হারাম করেছেন।[56]
তাঁর থেকে মোট ১০টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে ১টি বুখারী ও মুসলিম যৌথভাবে নিজ নিজ গ্রন্থে সংকলন করেছেন।[57] তবে আমাদের পরিসংখ্যানে তাঁর বর্ণিত হাদীছগুলোর মধ্যে পুনরুল্লেখ সহ বুখারীতে ৭টি, মুসলিমে ১টি, তিরমিযীতে ৩টি, সুনান আবু দাঊদে ৪টি এবং ইবনু মাজাহতে ২টি হাদীছ সংকলিত হয়েছে। তিনি মূলতঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে হাদীছ বর্ণনা করেন। তাঁর নিকট থেকে তাঁর ভাই, তাঁর গোলাম কিনানা, আলী ইবনু হুসাইন ইবনে আলী, যয়নুল আবেদীন ইবনু আলী ইবনে হাসান, ইসহাক ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনে হারিছ, মুসলিম ইবনু ছাফওয়ান, ইয়াযীদ ইবনু মু‘আত্তাব প্রমুখ হাদীছ বর্ণনা করেন।[58]
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খায়বার থেকে প্রাপ্ত ফসল হ’তে ছাফিয়াকে ৮০ ওয়াসাক খেজুর এবং ২০ ওয়াসাক যব বা গম দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি তাঁর পিতৃ-মাতৃ সূত্রে প্রাপ্ত জমি ও আসবাবপত্রের মূল্য বাবদ এক লক্ষ দেরহাম পেয়েছিলেন।[59]
ইন্তিকাল : ওয়াকেদী বলেন, ছাফিয়া (রাঃ) মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর শাসনামলে ৫০ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। ইবনু হিববান ও ইবনু মান্দা বলেন, তিনি ৩৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। কেউ বলেন, তিনি ৫২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। কারো মতে, তিনি ৫০ হিজরীর রামাযান মাসে ৬০ বছর বয়সে মদীনায় ইন্তিকাল করেন।[60] ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, মু‘আবিয়ার শাসনামলে তিনি ইন্তিকাল করেছেন বলে ইবনু হিববান যা উল্লেখ করেছেন, তা সঠিক নয়। কেননা আলী ইবনু হাসান ছাফিয়া (ছাঃ) থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, এটা ছহীহাইনে রয়েছে। আর অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, আলী ইবনু হাসান ৩৬ হিজরীর পরে জন্মগ্রহণ করেছেন।[61] সুতরাং ছাফিয়া (রাঃ) ৫০ বা ৫২ হিজরীতে ইন্তিাকল করেছেন। এটাই বিশুদ্ধ মত। আমর ইবনুল আছ মতান্তরে মু‘আবিয়া (রাঃ) তাঁর জানাযা ছালাত পড়ান। মদীনার বাকীউল গারক্বাদ নামক গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।[62]
পরিশেষে বলব, বিদুষী ছাহাবিয়া, পতীপরায়না ও রাসূলের একান্ত অনুগতা ছাফিয়া (রাঃ)-এর ঘটনাবহুল জীবনী থেকে আমাদের কন্যা-জায়া-জননীদের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। তাঁর জীবনী থেকে ইবরাত হাছিল করে জীবন রাঙাতে পারলে সকলের জীবন, সংসার ও সমাজ হবে সুন্দর ও সুখময়। আল্লাহ আমাদেরকে উম্মুল মুমিনীন ছাফিয়া (রাঃ)-এর জবীনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
মুসাম্মাৎ শারমীন আখতার
পিঞ্জুরী, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।
[1]. দায়িরায়ে মা‘আরিফে ইসলামিয়্যাহ, ১ম খন্ড (করাচী: মাদানী কুতুবখানা, তা.বি), পৃঃ ৯৯২।
[2]. আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ আল-হাকিম আন-নাইসাপুরী, আল-মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন, ৪র্থ খন্ড (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১ম প্রকাশ ১৯৯০ খৃঃ/১৪১১ হিঃ), পৃঃ ৩০।
[3]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, আল-ইছাবাহ ফী তাময়ীযিছ ছাহাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলামিয়্যাহ, তা.বি.), পৃঃ ১২৬; হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড (বৈরুত: মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ৩য় প্রকাশ, ১৯৮৫ খৃঃ/১৪০৫ হিঃ), পৃঃ ২৩১।
[4]. মুহাম্মাদ ইবনু সা‘দ, আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১ম প্রকাশ, ১৯৯০ খৃঃ/১৪১০ হিঃ), পৃঃ ৯৫।
[5]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৬; আত-তাবাক্বাত, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৯৫।
[6]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩১।
[7]. আল-মুস্তাদরাক, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৩০।
[8]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৯৫।
[9]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৭; আল-ইছাবাহ ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৭।
[10]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৯৫; আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৬।
[11]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩১।
[12]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৭; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩১।
[13]. হাফেয ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ২য় খন্ড, ৪র্থ জুয (কায়রো: দারুর রাইয়ান লিত-তুরাছ, ১ম প্রকাশ ১৪০৮ হিঃ/১৯৮৮ খৃঃ), পৃঃ ১৯৭।
[14]. ড. আয়েশা আব্দুর রহমান, তারাজিমু সায়্যেদাতি বায়তিন নবুওয়াত (বৈরুত: দারুর রাইয়্যান, তাবি), পৃঃ ৩৬৪-৬৫।
[15]. তালিবুল হাশেমী, মহিলা সাহাবী, অনুবাদ: আব্দুল কাদের (ঢাকা: আধুনিক প্রকাশনী, ১৪১৪ হিঃ/১৯৯৪ খৃঃ), পৃঃ ৭১-৭৩; মুহাম্মাদ নূরুযযামান, সংগ্রামী নারী, (ঢাকা: আধুনিক প্রকাশনী, ১৪১১ হিঃ/১৯৯০ খৃঃ), পৃঃ ৯২-৯৩।
[16]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ২য় খন্ড, ৪র্থ জুয, পৃঃ ১৯৮-৯৯।
[17]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৬; তারাজিমু সায়্যেদাতি বায়তিন নবুওয়াত, পৃঃ ৩৬৫-৬৬।
[18]. আহমাদ, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১২৩, ২৪৬; আবু দাঊদ হা/২৯৯৭; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩১-৩২।
[19]. ছহীহ মুসলিম, ‘কিতাবুন নিকাহ’, হা/১৩৬৫।
[20]. মুসলিম, হা/১৩৬৫ (৮৪); বুখারী, ‘মাগাযী’ অধ্যায়, ‘খায়বার যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ।
[21]. বুখারী, ‘মাগাযী’ অধ্যায়, ‘খায়বার যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ, ‘বিবাহ’ অধ্যায়, ‘দাসী মুক্তিই মহর’ অনুচ্ছেদ ও ‘ওয়ালীমা’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম, হা/১৩৬৫ (৮৫), ‘বিবাহ’ অধ্যায়; আবু দাঊদ, হা/২০৫৪; তিরমিযী, হা/১১১৫; নাসাঈ, মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩২।
[22]. উম্মু সুলাইমের আসল নাম ‘সাহলাহ’। যিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দুধ সম্পর্কের খালা ছিলেন। দ্রঃ সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ জরদানী, ফাতহুল আল্লাম বিশারহি মুরশিদিল আনাম, ১ম খন্ড (কায়রো: দারুস সালাম, ৪র্থ প্রকাশ, ১৯৯০/১৪১০ হিঃ), পৃঃ ২৩৯।
[23]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৯৬।
[24]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৬-২৭; আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৯৬-৯৭; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ২য় খন্ড, ৪র্থ জুয, পৃঃ ১৯৭।
[25]. আল-মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৩০।
[26]. বুখারী, মুসলিম হা/১৩৬৫ (৮৭); সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৩।
[27]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৯৬-৯৭।
[28]. আল-মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৩০; তারাজিমু সায়্যেদাতি বায়তিন নবুওয়াত, পৃঃ ৩৬৯।
[29]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৬।
[30]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৯৬; আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৬; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ২য় খন্ড, ৪র্থ জুয, পৃঃ ১৯৮; তারাজিমু সায়্যিদাতি বায়তিন নবুওয়াত, পৃঃ ৩৬৮।
[31]. ফাতহুল আল্লাম বিশারহি মুরশিদিল আনাম, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৩৯।
[32]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৯৭, তারাজিমু সায়্যিদাতি বায়তিন নবুওয়াত, পৃঃ ৩৬৬।
[33]. ছালাহুদ্দীন মাকবুল আহমাদ, আল-মারআতু বায়না হিদায়াতিল ইসলাম ওয়া গাওয়াতিল ই‘লাম (কুয়েত: দারুল ইলাফ আদ-দাওলিয়া, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৭/১৪১৮ হিঃ), পৃঃ ২৬৯।
[34]. মাহমূদ শাকির, আত-তারীখুল ইসলামী, ১ম ও ২য় খন্ড (বৈরুত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪১১হিঃ/১৯৯১), পৃঃ ৩৬১।
[35]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ২য় খন্ড, ৪র্থ জুয, পৃঃ ১৯৮।
[36]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৭; আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১০০; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৬-৩৭।
[37]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৭; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৩৭।
[38]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৬।
[39]. ফাতহুল আল্লাম, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৩৮।
[40]. আবু ওমর ইউসুফ ইবনু আব্দুল বার্র, আল-ইস্তি‘আব ফী মা‘রিফাতিল আছহাব (কায়রো: দারুন নাহযাতিল মিছরিয়া, তাবি), ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ১৮৭২।
[41]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৬-৩৭।
[42]. তিরমিযী, হা/৩৮৯৪, সনদ ছহীহ।
[43]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১০০; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৭; আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৭।
[44]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১০২।
[45]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৮।
[46]. আত-তাবক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১০১।
[47]. ঐ, পৃঃ ১০২।
[48]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১০১; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৫; আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৭।
[49]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৩-৩৪; মুসনাদে আহমাদ ৬/৩৩৭-৩৮; আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৬; আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১০০।
[50]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩২-৩৩।
[51]. তারাজিমু সায়্যিদাতি বায়তিন নবুওয়াতে, পৃঃ ৩৬৮-৬৯।
[52]. ঐ, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৩৭; তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১০১।
[53]. আলী ইবনু মুহাম্মাদ ইবনিল আছীর, উসুদুল গাবা ফী মা‘রিফাতিছ ছাহাবা ৫ম খন্ড (বৈরুত: দারুল ইহইয়া আত-তুরাছিল আরাবী, তা.বি.), পৃঃ ৪৯০।
[54]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৭।
[55]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৫।
[56]. মুসনাদ আহমাদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৩৭০।
[57]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৮।
[58]. হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ১২শ খন্ড (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৪/১৪১৫হিঃ), পৃঃ ৩৮০; আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৭।
[59]. আত-তাবাক্বাতুল কুবরা, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১০১-১০২।
[60]. আল-ইছাবাহ, ৪র্থ খন্ড, ৮ম জুয, পৃঃ ১২৭।
৬১. তাহযীবুত তাহযীব, ১২শ খন্ড পৃঃ ৩৮০।
[62]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৩৮।