রাজশাহী ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারী মোতাবেক ১২ ও ১৩ই ফাল্গুন বৃহস্পতি ও শুক্রবার :
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে দু’দিনব্যাপী ৩১তম বার্ষিক
তাবলীগী ইজতেমা ২০২১ রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে
সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। ১ম দিন বাদ আছর সোয়া ৪-টায় তাবলীগী ইজতেমা’২১-এর সভাপতি মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর
সভাপতিত্বে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ময়মনসিংহ ও অন্যান্য দূরবর্তী
যেলা সমূহ থেকে ২৩শে ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার থেকেই ইজতেমায় মুছল্লীদের আগমন
শুরু হয়। এছাড়া বিভিন্ন যেলা থেকে ৭৩৫ জনের অধিক স্বেচ্ছাসেবক দু’দিন আগে
থেকেই ইজতেমা ময়দানে দায়িত্ব পালন শুরু করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান :
প্রথমে পবিত্র কুরআন থেকে অনুবাদসহ তেলাওয়াত করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগের সহকারী পরিচালক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির। অতঃপর আহবায়কের অনুপস্থিতিতে স্বাগত ভাষণ পেশ করেন তাবলীগী ইজতেমা ব্যবস্থাপনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অতঃপর উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত। তিনি ইজতেমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা শেষে সকলকে শৃংখলা ও সহমর্মিতার সাথে ইজতেমার ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রেখে এখানে দু’দিন অবস্থানের আহবান জানান। অতঃপর তিনি আল্লাহর নামে তাবলীগী ইজতেমার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
নির্ধারিত বক্তৃতা পর্ব :
উদ্বোধনী ভাষণের পর পূর্ব নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপর ১ম দিন রাত ২-টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য পেশ করেন যথাক্রমে (১) ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ ঢাকা-দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলার সভাপতি হাফেয আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া) (বিষয় : রিযিকের স্বরূপ ও জীবিকায় বরকত লাভের উপায়) (২) ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম (মারকায) (শিশুর ঈমানী পরিচর্যা : পিতা-মাতার করণীয়) (৩) আল-ফুরক্বান ইসলামিক সেন্টার, বাহরাইন-এর দাঈ মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম (রাজশাহী) (বিশুদ্ধ আক্বীদা ও মানহাজের গুরুত্ব) (৪) ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর) (আহলেহাদীছ আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য) (৫) ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ ওলামা ও ইমাম সমিতি’-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা) (সমকালীন কিছু বিরোধপূর্ণ বিষয় ও তার সমাধান, আহলেহাদীছ মসজিদ নামকরণ, হাদীছ ও সুন্নাতের পার্থক্য, আখেরাতমুখী সংগঠন করা, ছোঁয়াচে রোগ ইত্যাদি) (৬) ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হাই (কবরের তিনটি প্রশ্ন : আমাদের প্রস্ত্ততি) (৭) খুলনা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (বৈধ ও অবৈধ অসীলা) (৮) ঢাকা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ইসলামিক সেন্টার বিভাগের ডিরেক্টর মুখতার আহমাদ (কুরআন শিক্ষা ও অনুধাবনের গুরুত্ব) (৯) সাতক্ষীরা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান (ঘুষ ও দুর্নীতি : সমাজে ও রাষ্ট্রে এর কুপ্রভাব)।
আমীরে জামা‘আতের ১ম দিনের ভাষণ :
এ দিন বাদ এশা মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ‘তাওহীদের শিক্ষা ও আজকের সমাজ’ বিষয়ে সারগর্ভ ভাষণ পেশ করেন।
২য় দিন বাদ ফজর থেকে :
২য় দিন বাদ ফজর ইজতেমা প্যান্ডেলে দরসে কুরআন পেশ করেন মাওলানা মুখলেছুর রহমান (নওগাঁ) (সূরা আছর-এর আলোকে ঈমানদারগণের চারটি বৈশিষ্ট্য)। একই সময়ে দারুলহাদীছ (প্রাঃ) বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দরসে হাদীছ পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর দফতর সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক-এর সহকারী সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (ইখলাছ : মুক্তির পাথেয়)। এ সময় ছোট মসজিদে সূরা তাকাছুরের উপর দারস পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক দুর্রুল হুদা।
অতঃপর ইজতেমা প্যান্ডেলে বেলা ১১-টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আলোচনা পেশ করেন যথাক্রমে (১) ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন (সাতক্ষীরা) (ফিরক্বায়ে নাজিয়াহ-এর বৈশিষ্ট্য) (২) ঢাকা-উত্তর যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব (আদর্শ পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য) (৩) ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া-এর পিএইচ.ডি গবেষক হাফেয আব্দুল মতীন (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) (রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে প্রচলিত আক্বীদা বনাম সঠিক আক্বীদা) (৪) মাওলানা মুখলেছুর রহমান (নওগাঁ) ও ৩ জন ছাত্র (ছালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতি-ব্যবহারিক)।
অতঃপর উপস্থিত বক্তব্য পেশ করেন কুয়েত প্রবাসী আমীনুল হক, ভোলা থেকে কামরুল ইসলাম ও ফরিদপুর সালথা থেকে ইলিয়াস হোসাইন। এরপর শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মাসিক ‘আত-তাহরীক’-এর সহকারী সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম ও আল-ফুরক্বান ইসলামিক সেন্টার, বাহরাইন-এর দাঈ মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম (রাজশাহী)।
অনলাইন দা‘ওয়াহ প্রশিক্ষণ :
ইজতেমার ২য় দিন সকাল ৭-টায় মারকাযের পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানে অনলাইন দা‘ওয়াহ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। ‘আন্দোলন’-এর শূরা সদস্য কাযী হারূণুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় যুববিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, দফতর সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক-এর সহকারী সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুন নূর ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ-দক্ষিণ যেলার সভাপতি এমদাদুল হক। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’ বরিশাল যেলার সভাপতি কায়েদ মাহমূদ ইমরান।
শিক্ষক সমাবেশ :
ইজতেমার ২য় দিন সকাল সাড়ে ৮-টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ শিক্ষক সমিতি’-এর উদ্যোগে ‘শিক্ষক সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি মাওলানা দুর্রুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য প্রদান করেন (১) আমেরিকার লুজিয়ানা টেকনিক্যাল ইউনিভিার্সিটির সাবেক প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া (ঢাকা) (২) ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’-এর চেয়ারম্যান ও ‘যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব ও (৩) বোর্ডের সচিব ও মারকাযের শিক্ষক শামসুল আলম। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন (১) আল-মারকাযুল ইসলামী চট্টগ্রাম-এর পরিচালক ও চট্টগ্রাম যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ শেখ সা‘দী (২) একলারামপুর মাদ্রাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার (কুমিল্লা) প্রধান শিক্ষক ও কুমিল্লা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জামীলুর রহমান ও (৩) বায়তুল ইলম মহিলা মাদ্রাসার (দিনাজপুর) পরিচালক মাওলানা রায়হানুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নওদাপাড়া মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম। সমাবেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক পরিচালক, সভাপতি, প্রিন্সিপ্যাল, ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ও শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
যুব সমাবেশ সকাল ১০-টা থেকে ১২-টা :
২য় দিন সকাল ১০-টা থেকে মারকাযের পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানে ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় উদ্যোগে ‘যুব সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের পক্ষে ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন (১) ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর) (২) সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া) (৩) ‘আন্দোলন’-এর শূরা সদস্য ও ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জালালুদ্দীন (নরসিংদী) (৪) ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম (৫) ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ড. মুখতারুল ইসলাম (রাজশাহী) ও (৬) প্রশিক্ষণ সম্পাদক আহমাদুল্লাহ (কুমিল্লা)।
অতঃপর যেলা দায়িত্বশীলদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন (১) জয়পুরহাট যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ নাজমুল হক (২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মুনতাছির আহমাদ (৩) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মুছাদ্দিক ও (৪) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আব্দুর রঊফ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুন নূর। সমাবেশে ‘যুবসংঘে’র বিভিন্ন স্তরের বিপুল সংখ্যক কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
জুম‘আর খুৎবা :
ইজতেমার ২য় দিন শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এবং মারকাযী জামে মসজিদে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন জুম‘আর খুৎবা প্রদান করেন। এ সময় মূল প্যান্ডেল ছাড়াও প্যান্ডেলের বাইরে বিভিন্ন স্থানে ও মহাসড়কে বসে বিপুল সংখ্যক মুছল্লী খুৎবা শ্রবণ করেন।
জুম‘আর ছালাতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুযযামান লিটন অংশগ্রহণ করেন এবং ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে তিনি মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের প্রস্তাবিত দারুলহাদীছ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও তাবলীগী ইজতেমা ময়দানের জমি ক্রয়ের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
২য় দিন বাদ আছর থেকে পরদিন ফজর পর্যন্ত :
এ দিন নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপর ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য পেশ করেন (১) ‘আন্দোলন’-এর শূরা সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন (নরসিংদী) (সমাজ সংস্কারে মহিলাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য) (২) জামালপুর-উত্তর যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী (জঙ্গীবাদ ও চরমপন্থীদের বিশ্বাসগত বিভ্রান্তির জবাব) (৩) মারকাযের সাবেক ছাত্র ড. আব্দুল্লাহিল কাফী (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) (মুনাফিকের আলামতসমূহ ও নিফাকের পরিণতি) (৪) ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম (জয়পুরহাট) (সমাজ সংস্কারে যুবসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য) (৫) আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম (সীরাত পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা) (৬) ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব (যুবসমাজের কতিপয় সমস্য ও উত্তরণের উপায়) (৭) ‘আন্দোলন’-এর দফতর সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক-এর সহকারী সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের কল্যাণ-কারিতা ও কতিপয় সংশয় নিরসন) (৮) প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক-মাযহাবী হিংসা-বিদ্বেষ নিরসনে করণীয় সহ) (৯) গাযীপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমাম হোসাইন (বিদ‘আত : পরিচিতি ও ভয়াবহতা-প্রচলিত কিছু বিদ‘আত সহ) (১০) ড. আহসানুল্লাহ বিন ছানাউল্লাহ (ঢাকা) (ছালাতের হেফাযত এবং খুশু খুযূর গুরুত্ব ও পদ্ধতি) (১১) নওগাঁ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক আফযাল হোসাইন (সামাজিক অনাচার রোধে অভিভাবকদের দায়িত্ব ও সঠিক সময়ে বিবাহের প্রয়োজনীয়তা; বিবাহের সুন্নাতী পদ্ধতিসহ) (১২) ঢাকা-দক্ষিণ যেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রচার সম্পাদক আব্দুল ওয়াদূদ (দো‘আর গুরুত্ব ও দো‘আ কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়) (১৩) নারায়ণগঞ্জ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা শফীকুল ইসলাম (যেনা-ব্যভিচারের ভয়াবহতা ও চোখের হেফাযত) (১৪) বগুড়া যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আল-আমীন (জাহান্নামের শাস্তি) (১৫) নরসিংদী যেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামূন (জান্নাতের বিবরণ) (১৬) ঢাকা নয়াবাজারস্থ বায়তুর রহমান আহলেহাদীছ জামে মসজিদের খতীব হাফেয শামসুর রহমান আযাদী (শিরকের ভয়াবহতা ও পাঁচ প্রকার শিরক পর্যালোচনা) (১৭) রাজশাহীর পবা উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আবুবকর (হারাম উপার্জনের পরিণতি; মদ-জুয়া-লটারী ও দাদন ব্যবসাসহ)।
ইজতেমায় গৃহীত প্রস্তাব সমূহ :
২য় দিন বাদ এশা আমীরে জামা‘আতের ভাষণের পর ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম সরকারের নিকট নিম্নোক্ত প্রস্তাব ও দাবী সমূহ পেশ করেন এবং উপস্থিত সকলে হাত তুলে সমস্বরে সেগুলির প্রতি জোরালো সমর্থন জানান।-
(১) পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।
(২) মানুষের রক্তচোষা সূদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বাতিল করে অনতিবিলম্বে ইসলামী অর্থনীতি চালু করতে হবে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সূদী এনজিও ও মহাজনী দাদন প্রথা এবং সেই সাথে অফিস-আদালত থেকে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
(৩) দেশের বিভিন্ন শহরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী আক্বীদা ও সংস্কৃতি বিরোধী মূর্তি-ভাস্কর্য ও শহীদ মিনার নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য এই সম্মেলন সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছে।
(৪) জঙ্গীবাদের মূলোৎপাটন এবং সামাজিক অনাচার সমূহ প্রতিরোধের জন্য শিক্ষার সর্বস্তরে বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
(৫) মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজের সিলেবাস থেকে ডারউইনের নাস্তিক্যবাদী বিবর্তনবাদ সহ সকল প্রকার ইসলাম বিরোধী মতবাদ প্রত্যাহার করার জন্য এই সম্মেলন সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছে।
(৬) যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে মদ-জুয়ার অবাধ সয়লাব রোধ করতে হবে এবং ইন্টারনেটের অশ্লীল ওয়েবসাইট সমূহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
(৭) কাশ্মীর, ফিলিস্তীন, মিয়ানমার ও চীনের উইঘুর সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ সম্মেলন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ সম্মেলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।
(৮) এ সম্মেলন করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক অবিলম্বে খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার জোর দাবী জানাচ্ছে।
(৯) এ সম্মেলন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।
প্রস্তাবগুলি ২৮.২.২০২১ রবিবার দৈনিক ইনকিলাব ৫ম পৃষ্ঠার ১ম কলামে ইজতেমার বড় ছবিসহ প্রকাশিত হয়।
বিদায়ী ভাষণ, বায়‘আত ও দো‘আ :
ইজতেমার ৩য় দিন শনিবার ইজতেমার মূল প্যান্ডেলে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত-এর ইমামতিতে ফজরের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়। ছালাত শেষে তিনি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বিদায়ী ভাষণ পেশ করেন। এ সময় তিনি মুছল্লীদের দাবীক্রমে তাদের আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন। অতঃপর সভাপতি হিসাবে তিনি সবাইকে পুনরায় ধন্যবাদ জানিয়ে মজলিস ভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে দু’দিন ব্যাপী ৩১তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
ইজতেমার অন্যান্য রিপোর্ট
১. পরিচালকবৃন্দ : দু’দিন ব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার বিভিন্ন অধিবেশনে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন (১) ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (২) সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (৩) প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (৪) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক দুর্রুল হুদা (৫) প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন ও (৬) দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম।
২. উপস্থাপকবৃন্দ : (১) আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম (২) ‘আন্দোলন’-এর শূরা সদস্য কাযী হারূণুর রশীদ (৩) ‘আন্দোলন’-এর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার (৪) ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ও (৫) ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুন নূর।
৩. অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত : (১) আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয ও মক্তব বিভাগের সহকারী পরিচালক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির (২) হিফয বিভাগের শিক্ষক হাফেয আব্দুন নূর, ঢাকা-দক্ষিণ যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া) (৩) মারকাযের মক্তব বিভাগের শিক্ষক ক্বারী আব্দুল আউয়াল (৪) মারকাযের হিফয বিভাগের ছাত্র আরযুল ইসলাম শাফী (রাজশাহী) (৫) তাওফীকুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ) (৬) বাঁকাল দারুলহাদীছ আহমাদিয়া সালাফিইয়াহ মাদ্রাসার ছাত্র উমায়ের (সাতক্ষীরা)।
৪. জাগরণী : আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য (১) আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া) (২) মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট) (৩) আব্দুল্লাহ আল-মামূন (সাতক্ষীরা) (৪) ইয়াকূব আলী (মেহেরপুর) (৫) রাক্বীবুল ইসলাম (মেহেরপুর) (৬) মীর বখতিয়ার (যশোর) (৭) হাফেয আব্দুল আলীম (দিনাজপুর) (৮) কেরামত আলী (পাবনা)।
৫. প্যান্ডেল : এবার মোট ৩টি প্যান্ডেল করা হয়। (১) ট্রাক টার্মিনাল ময়দান (২) মহিলা মাদ্রাসার ময়দানে পুরুষ প্যান্ডেল (৩) মারকাযের পশ্চিম পার্শ্বের ময়দান। এছাড়াও ছিল বৃহদাকার খাদ্য প্যান্ডেল ও পৃথক খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্যান্ডেল। এলইডি মনিটরের মাধ্যমে ট্রাক টার্মিনাল থেকে সব প্যান্ডেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
৬. টয়লেট : ট্রাক টার্মিনালের পশ্চিম পার্শ্বে হাইওয়ের ক্যানালে ১০০টি সাময়িক ও মহিলা মাদ্রাসার ৩৫টি টয়লেট।
৭. বুক স্টল : ট্রাক টার্মিনালের দক্ষিণ পার্শ্বে ৩২টি এবং মারকাযের সম্মুখে ৮টি মোট ৪০টি বুক স্টল স্থাপন করা হয়।
অন্যান্য বারের ন্যায় এবারেও ইজতেমায় দেশের প্রায় সকল যেলা থেকে বিভিন্ন যানবাহন যোগে লক্ষাধিক মুছল্লী অংশগ্রহণ করেন। সঊদী আরব, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন ও ভারত সহ অন্যান্য দেশ থেকেও সদ্য দেশে ফেরা অনেক প্রবাসী কর্মী ও সুধী ইজতেমায় যোগদান করেন। তাছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের হাযার হাযার শ্রোতা ইজতেমার সরাসরি সম্প্রচার দেখেন।
৮. জাতীয় গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতা :
বিগত বছরের ন্যায় এবারও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে ‘জাতীয় গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচিত গ্রন্থ ছিল মুহতারাম আমীরে জামা‘আত লিখিত তাফসীরুল কুরআন (২৬-২৮তম পারা)। এতে শীর্ষস্থান অধিকারী তিনজন হ’ল (১) ইরফানুল ইসলাম (কুমিল্লা, ছাত্র, ছানাবিয়া ১ম বর্ষ, মারকায), (২) মুহাম্মাদ রিয়াযুল ইসলাম (নওগাঁ) (৩) আব্দুল মজীদ (নওগাঁ)। এছাড়া বিশেষ পুরস্কার প্রাপ্ত ৫ জন হ’ল (১) মুহাম্মাদ আতীকুর রহমান যাকারিয়া (নওগাঁ, ছাত্র, ৭ম শ্রেণী, মারকায) (২) মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল-জোবায়ের (পাবনা) (৩) ইমদাদুল হক (রাজশাহী) (৪) কাওছার আহমাদ (রাজশাহী, ছাত্র, ছানাবিয়া ১ম বর্ষ, মারকায) (৫) মুহাম্মাদ হাফীযুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ, ছাত্র, ছানাবিয়া ১ম বর্ষ, মারকায)। এছাড়া গত ২৯শে জানুয়ারী শুক্রবার অনুষ্ঠিত সীরাত প্রতিযোগিতার উত্তীর্ণ প্রথম তিনজন হলেন, (১) আব্দুল জাববার (টিকনামপুর, চাপাই নবাবগঞ্জ) (২) মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান (চাপাই নবাবগঞ্জ, শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর) (৩) রিয়াযুল ইসলাম (নিয়ামতপুর, নওগাঁ/সাবেক ছাত্র মারকায, বর্তমানে আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)। ইজতেমার দ্বিতীয় দিন রাতে ইজতেমা মঞ্চে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত।
৯. দেওয়াল পত্রিকা :
তাবলীগী ইজতেমা’২১ উপলক্ষে ‘সোনামণি’ মারকায এলাকার পক্ষ থেকে ‘সোনামণি প্রতিভা’ নামে দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যা ইজতেমা প্যান্ডেলের দক্ষিণ পার্শ্বস্থ বুক স্টলের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় প্রদর্শিত হয়।
১০. ফৎওয়া বুথ : গতবারের ন্যায় এবারও ফৎওয়া বুথের ব্যবস্থা করা হয়। আত-তাহরীক কার্যালয়ে স্থাপিত ফৎওয়া বুথে বিভিন্ন যেলা থেকে আগত কর্মী ও সুধীবৃন্দের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ‘দারুল ইফতা’র সদস্য মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম। ইজতেমার ১ম ও ২য় দিন বাদ আছর থেকে রাত ১২-টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
১১. আল-‘আওন : ইজতেমা ময়দানে ‘স্বেচ্ছাসেবী নিরাপদ রক্তদান সংস্থা’ আল-‘আওন-এর ক্যাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পিংয়ে ১৭০ জনের ব্ললাড গ্রুপিং করা হয় এবং ১১৩ জন ডোনর তালিকাভুক্ত হন। উক্ত ক্যাম্পিংয়ে কেন্দ্রসহ বিভিন্ন যেলার দায়িত্বশীলগণ অংশগ্রহণ করেন।
১২. যরূরী চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র : ট্রাক টার্মিনাল ময়দানের পূর্ব পার্শ্বে এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথির দু’টি পৃথক যরূরী চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সংগঠনের চিকিৎসক কর্মীগণ সেখানে ফ্রি চিকিৎসা প্রদান করেন। ইজতেমার পক্ষ থেকে এসব কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ-পত্র সরবরাহ করা হয়।
১৩. নিরাপত্তা : প্রশাসনের প্রস্তাবক্রমে ৪টি ওয়াচ টাওয়ার ও ২৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা হয়। সেই সাথে সংগঠনের ৭৩৫ জনের অধিক স্বেচ্ছাসেবক দু’দিন আগে থেকে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও ছিল পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যগণের নিয়মিত তদারকি।
১৪. সাইকেলে আগমন : অন্যান্য বারের ন্যায় এবারও সাইকেলে আসেন সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল বারী (৬৫) সাং মানিকহার, উপযেলা তালা। এবারে তিনি ১৭তম বর্ষে ২১ ঘণ্টায় এই দীর্ঘ ২৮৫+১৪= ২৯৯ কি.মি. পথ অতিক্রম করে আসেন। অন্যজন জয়নাল আবেদীন (৮৩) সাং কাওনডাঙ্গা, উপযেলা সাতক্ষীরা সদর। এবারে তিনি ১৮তম বর্ষে সাড়ে ২১ ঘণ্টায় এই দীর্ঘ ২৮৫+১৫= ৩০০ কি.মি. পথ অতিক্রম করে আসেন।
১৫. ড্রোন ক্যামেরা : গতবারের ন্যায় এবারও ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে ইজতেমার বৃহৎ প্যান্ডেল ও মারকাযসহ অন্যান্য প্যান্ডেলগুলির ভিডিও ধারণ করা হয়।
১৬. সাঁওতাল থেকে মুসলমান : ১ম দিন বাদ এশা মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের ভাষণের পর স্থানীয় হিন্দু সাঁওতাল যুবক শুকু (৩৫) (জন্মস্থান : ঘাটনগর, পোরশা, নওগাঁ। বর্তমান ঠিকানা : মল্লিকপুর, মোহনপুর, রাজশাহী) তাঁর হাতে বায়‘আত করেন এবং কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করে মুসলমান হন। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন আব্দুল্লাহ। অতঃপর তিনি তাঁকে তাওহীদের উপর দৃঢ় থাকার উপদেশ দেন। এসময় তিনিসহ উপস্থিত হাযারো মুছল্লী তার জন্য দো‘আ করেন।
ইজতেমার পূর্ব দিনের অনুষ্ঠান সমূহ
১. আল-হেরা : তাবলীগী ইজতেমা ২০২১ উপলক্ষে ২৪শে ফেব্রুয়ারী বুধবার সকাল ৯-টা থেকে আছর পর্যন্ত আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ভবনে ‘যুবসংঘ’-এর সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন ‘আল-হেরা শিল্পীগোষ্ঠী’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০২১’-এর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১২০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। উল্লেখ্য, প্রাথমিক বাছাই পর্বে মোট ৭৩৪ জন অংশগ্রহণ করে। বাদ এশা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ১২ জন বিজয়ীসহ ২৮ জনকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ও অতিথিবৃন্দ। নিম্নে প্রতিযোগিতার বিষয়বস্ত্ত ও বিজয়ীদের নাম উল্লেখ করা হ’ল।-
(ক) ক্বিরাআত : ১ম : উমায়ের (সাতক্ষীরা); ২য় : জামীল আহমাদ (গাইবান্ধা); ৩য় : মাযহারুল ইসলাম (নারায়ণগঞ্জ)।
(খ) জাগরণী (সোনামণি গ্রুপ) : ১ম : আরযুল ইসলাম শাফী (রাজশাহী); ২য় : আব্দুল্লাহ আশ-শাফী (গাযীপুর); ৩য় : আব্দুর রহমান (সাতক্ষীরা)।
(গ) জাগরণী (উন্মুক্ত গ্রুপ) : ১ম : মীর বখতিয়ার (যশোর); ২য় : তানভীরুযযামান (মেহেরপুর); ৩য় : মুহাম্মাদ অলিউল্লাহ (নারায়ণগঞ্জ)।
(ঘ) উপস্থিত বক্তৃতা : ১ম : মুহাম্মাদ রেযওয়ান (নারায়ণগঞ্জ); ২য় : মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ (নারায়ণগঞ্জ); ৩য় : মুহাম্মাদ তাসনীম (চাঁপাই নবাবগঞ্জ)।
২. র্যালি : তাবলীগী ইজতেমা’২১ উপলক্ষ্যে ‘সোনামণি’ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের উদ্যোগে ২৪শে ফেব্রুয়ারী বুধবার বাদ আছর থেকে সোনামণি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি মারকায থেকে শুরু হয়ে মহাসড়ক ধরে পূর্ব দিকে নতুন বাস-টার্মিনালে যায়। সেখান থেকে মহাসড়ক দিয়ে পশ্চিম দিকে ইজতেমা ময়দান ট্রাক টার্মিনালে যায়। সেখান থেকে কালুর মোড় হয়ে উত্তর দিকে ভূগরইল মোড়ে যায়। সেখান থেকে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক দিয়ে মারকাযে ফিরে আসে।
৩. ইসলামী জাগরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২০২১ : ২৪শে ফেব্রুয়ারী বুধবার বাদ মাগরিব থেকে রাত সাড়ে ১০-টা পর্যন্ত মারকাযের পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানে ‘ইসলামী জাগরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২০২১’ অনুষ্ঠিত হয়। আল-হেরা শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান পরিচালক মুস্তাফীযুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আল-হেরা শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। বিশেষ অতিথি ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার, শূরা সদস্য কাযী হারূণুর রশীদ, পৃষ্ঠপোষক ও ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ডের সচিব শামসুল আলম প্রমুখ। অতিথিগণ স্ব স্ব ভাষণে উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানান এবং জাগরণীর মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে সমাজ গড়ার জন্য তাদের প্রতি আহবান জানান।
প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, আমি দো‘আ করি তোমাদের কণ্ঠই যেন তোমাদের জান্নাতে যাওয়ার অসীলা হয়। সবশেষে তিনি অতিথিবৃন্দ, ‘আন্দোলন’, ‘যুবসংঘ’, ‘সোনামণি’ ও ‘আল-‘আওন’-এর সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল ও প্রতিযোগীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করে জামীল আহমাদ (গাইবান্ধা) ও বিভিন্ন পর্যায়ে জাগরণী পেশ করেন হাফেয আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ, রাক্বীবুল ইসলাম, মীযানুর রহমান, ইয়াকূব আলী, কেরামত আলী, হাসান শাহরিয়ার, মীর বখতিয়ার, আরযুল ইসলাম শাফী, আব্দুর রহমান ও অলিউল্লাহ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন সোনামণি রাজশাহী মহানগরের পরিচালক আবু রায়হান। অনুষ্ঠান শেষে মুহাম্মাদ আজমালকে পরিচালক ও রাক্বীবুল ইসলামকে সহকারী পরিচালক করে ২০২১-২০২৩ সেশনের জন্য ৮ সদস্য বিশিষ্ট আল-হেরা কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ পুনর্গঠন করা হয়।
সুধী সমাবেশ
পাবনা, ৯ই মার্চ মঙ্গলবার : অদ্য বাদ আছর পাবনা পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন পিসিসিএস বাজার মিলনায়তনে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ পাবনা সদর উপযেলার উদ্যোগে এক সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা বেলালুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সুধী সমাবেশে কেন্দ্রীয় মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’ -এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যেলা ‘আন্দোলন’-এর সেক্রেটারী সোহরাব আলী, প্রচার সম্পাদক আফতাবুদ্দীন, সদর উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি তারিক হাসান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল মজীদ প্রমুখ।