করলা ও উচ্ছে তেতো হ’লেও অতি পুষ্টিকর সবজি। স্বাদে তিক্ত হ’লেও এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বাজারে অধিকাংশ সময় এটা উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। করলা ও উচ্ছে সারাবছর বাজারে পাওয়া যায়। করলা আকারে একটু বড় ও উচ্ছে একটু ছোট হয়। করলার অনেক ঔষধি গুণ আছে। এর রস বহুমূত্র, চর্মরোগ, বাত এবং হাঁপানী রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহূত হয়। সাধারণভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হিসাবে কেউ কেউ বিশেষত ডায়বেটিস রোগীরা নিয়মিত এটি খেয়ে থাকেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোন কোন স্থানে ঔষধ হিসাবে এর ব্যবহার প্রচলিত।

মাটির বৈশিষ্ট্য : সব রকম মাটিতেই করলা/উচ্ছের চাষ করা যেতে পারে। তবে জৈব সারসমৃদ্ধ দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়।

উৎপাদন মৌসুম : বছরের যেকোন সময় করলার চাষ সম্ভব হ’লেও এ দেশে প্রধানত খরা মৌসুমেই করলার চাষ হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোনো সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। উচ্ছে বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায়। তবে শীতকালে এর চাষ বেশী হয়ে থাকে।

জমি বাছাই এবং তৈরী : করলা চাষের জন্য প্রথমেই সঠিক জমি নির্বাচন করতে হবে। সেচ ও নিষ্কাশনের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি বাছাই করতে হবে। চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ঢেলাহীন ও ঝুরঝুরে করতে হবে। করলা গাছের শিকড় যথাযথ বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত উত্তমরূপে তৈরী করতে হবে। এছাড়া একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ পরিহার করতে পারলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কমানো যাবে।

রোপন পদ্ধতি : মাটি ভালোভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে ১৫-২০ দিন বয়সের চারা পরেরদিন বিকালে রোপণ করতে হবে। চারা মাটির দলাসহ লাগাতে হবে। তারপর গর্তে পানি দিতে হবে।

পরিচর্যা :

সেচ দেয়া : খরা হ’লে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। পানির অভাবে গাছের বৃদ্ধির বিভিন্ন ধাপে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন প্রাথমিক অবস্থায় চারার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া, পরে ফুল ঝরে যাওয়া, ফলের বৃদ্ধি বন্ধ হওয়া ও ঝরে যাওয়া ইত্যাদি। করলার বীজ উৎপাদনের সময় ফল পরিপক্ব হওয়া শুরু হ’লে সেচ দেয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

পানি নিষ্কাশন : জুন-জুলাই মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আর সেচের প্রয়োজন হয় না। জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য বেড ও নিষ্কাশন নালা সর্বদা পরিষ্কার করে রাখতে হবে। কারণ করলা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

মালচিং : সেচের পর জমিতে চটা বাঁধলে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কাজেই প্রত্যেক সেচের পর গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে।

আগাছা দমন : চারা লাগানো থেকে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

বাউনি দেয়া : বাউনির ব্যবস্থা করা করলার প্রধান পরিচর্যা। চারা ২০-২৫ সে.মি. উঁচু হতেই ১.০-১.৫ মিটার উঁচু মাচা তৈরী করতে হবে। কৃষক ভাইয়েরা সাধারণত উচ্ছে চাষে বাউনি ব্যবহার না করে তার বদলে সারির চারপাশের জমি খড় দিয়ে ঢেকে দেয়। উচ্ছের গাছ খাটো হওয়ায় এ পদ্ধতিতেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে এভাবে করলা বর্ষাকালে মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিকে বিবর্ণ হয়ে বাজারমূল্য কমে যায় ও ফলে পচন ধরে প্রাকৃতিক পরাগায়ন কমে যাওয়ায় ফলনও কম হয়। আর বাউনি বা মাচা ব্যবহার করলে খড়ের আচ্ছাদনের তুলনায় উচ্ছের ফলন ২৫-৩০% বৃদ্ধি পায়। ফলের গুণগত মানও ভালো হয়।

কলা চাষ

পুষ্টিকর ফল হিসাবে বিশ্বব্যাপী কলার চাহিদা ব্যাপক। একবার কলার চারা রোপণ করলে ২/৩ মৌসুম চলে যায়। কলার গাছ বড় হওয়ার কারণে গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য বেড়া দিতে হয় না। বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত না হ’লে ১ একর জমি থেকে ধান পাওয়া সম্ভব (ইরি-আমন মিলিয়ে) ৮০/৯০ মণ। এর আনুমানিক মূল্য ৪৫/৫০ হাযার টাকা। এতে খরচ হবে (সার, লেবার, চাষ ও পরিষ্কারসহ) প্রায় ১৬ হাযার টাকা। পক্ষান্তরে এক একর জমির কলা বিক্রি হবে ১ লাখ ৮০ হাযার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। এতে সর্বোচ্চ খরচ হবে ৫০ হাযার টাকা। এছাড়া কলার মোচা উৎকৃষ্টমানের তরকারি হিসাবে ব্যবহ্নত হয়।

জাত বাছাই : বাংলাদেশে অমৃত সাগর, মেহের সাগর, সবরি, অনুপম, চাম্পা, কবরী, নেপালি, মোহনভোগ, মানিকসহ বিভিন্ন জাতের কলাচাষ হয়ে থাকে।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ : ৭/৮ বার চাষ দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরি করে নিতে হয়। অতঃপর জৈবসার (যেমন গোবর, কচুরিপানা ইত্যাদি) হেক্টর প্রতি ১২ টন হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। অতঃপর ২ু২ মিটার দূরত্বে গর্ত খনন করতে হবে। প্রতিটি গর্তে ৬ কেজি গোবর, ৫০০ গ্রাম খৈল, ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমপি, ১০০ গ্রাম জিপসাম, ১০ গ্রাম জিংক এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর প্রতিটি গর্তে নির্ধারিত জাতের সতেজ ও সোর্ড শাকার (তরবারি চারা) চারা রোপণ করতে হবে। এভাবে একরপ্রতি সাধারণত ১ হাযার থেকে ১ হাযার ১শ’ চারা রোপণ করা যায়। পরবর্তী সময়ে ২ কিস্তিতে গাছ প্রতি ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম এমপি ৩ মাস অন্তর অন্তর প্রয়োগ করতে হবে।

রোপণের সময় : কলার চারা বছরে তিন মৌসুমে রোপণ করা যায়। প্রথম মৌসুম মধ্য জানুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ। দ্বিতীয় মৌসুম মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে। তৃতীয় মৌসুম মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা : শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচের প্রয়োজন হয়। গাছ রোপণের প্রথম অবস্থায় ৫ মাস পর্যন্ত বাগান আগাছামুক্ত রাখা যরূরী। কলাবাগানে জলাবদ্ধতা যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সাথী ফসল : চারা রোপণের প্রথম ৪/৫ মাস বলতে গেলে জমি ফাঁকাই থাকে। যদি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চারা রোপণ করা হয়, তবে কলাবাগানের মধ্যে অন্তঃফসল হিসাবে মিষ্টি কুমড়া, শসা ও বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করা যায়।

কলার রোগ ও তা প্রতিরোধ : সাধারণত কলাতে বিটল পোকা, পানামা রোগ, বানচিটপ ভাইরাস ও সিগাটোকা রোগ আক্রমণ করে থাকে। বিটল পোকায় আক্রান্ত হ’লে কলা সাধারণত কালো কালো দাগযুক্ত হয়। প্রতিরোধের জন্য ম্যালথিয়ন অথবা লিবাসিস ৫০ ইসিসহ সেভিন ৮৫ ডব্লিউপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। পানামা রোগে সাধারণত কলাগাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। কোন কোন ক্ষেত্রে গাছ লম্বালম্বি ফেটে যায়। এ রোগের প্রতিরোধে গাছ উপড়ে ফেলা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বাঞ্চিটর ভাইরাসে আক্রান্ত হ’লে কলার পাতা আকারে ছোট ও অপ্রশস্ত হয়। এটি দমনের জন্য রগর বা সুমিথিয়ন পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সিগাটোগায় আক্রান্ত হ’লে পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। এক সময় এ দাগগুলো বড় ও বাদামি রং ধারণ করে। এ অবস্থা দেখা দিলে আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং মিলিটিলট-২৫০ ইসি অথবা ব্যাভিস্টিন প্রয়োগ করা যেতে পারে।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.