মুহাম্মাদ বিন ওবায়দুল্লাহ হ’তে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রাঃ)-এর নিকটে কিছু কাপড় আসলে তিনি সেগুলি হকদারগণের মাঝে বন্টন করে দেন। এতে আমাদের প্রত্যেকে একটি করে কাপড় পেল। কিন্তু তিনি নিজে দু’টি কাপড় দিয়ে তৈরী একটি পোষাক পরিধান করে খুৎবা দিতে মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতঃপর বললেন, হে লোকসকল! তোমরা কি আমার কথা শ্রবণ করছ না? এমতাবস্থায় বিখ্যাত ছাহাবী সালমান ফারেসী (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, জি না, আমরা শ্রবণ করব না। ওমর (রাঃ) বললেন, কেন হে আবু আব্দুল্লাহ? তিনি বললেন, আপনি আমাদেরকে একটি করে কাপড় দিয়েছেন। অথচ আপনি পরিধান করেছেন (দুই কাপড়ের) বড় পোষাক! ওমর (রাঃ) বললেন, ব্যস্ত হয়ো না হে আবু আব্দুল্লাহ! অতঃপর তিনি ছেলে আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)-কে ডাকলে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) বললেন, আমি আল্লাহ্র কসম করে জিজ্ঞেস করছি, আমার পোষাকে যে অতিরিক্ত কাপড় রয়েছে, সেটা কি তোমার নয়? আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বললেন, জি, এটি আমার। অতঃপর সালমান ফারেসী (রাঃ) বললেন, এখন আপনি বক্তব্য শুরু করুন, আমরা শ্রবণ করব (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কেঈন ২/১২৩; ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ১/২০৩)।

আবুবকর (রাঃ)-এর গোপন আমল 

প্রথম খলীফা আবুবকর (রাঃ) ফজরের ছালাত আদায় করে মরুভূমির দিকে গমন করতেন এবং সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে শহরে ফিরে আসতেন। ওমর (রাঃ) তার প্রত্যহ এরূপ গমনের দৃশ্য দেখে আশ্চর্যান্বিত হ’লেন। তাই একদিন ফজরের ছালাতের পর আবুবকর (রাঃ) যখন বের হ’লেন, তখন তিনি গোপনে তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলেন। অতঃপর তিনি একটি টিলার পিছনে লুকিয়ে থাকলেন ও আবুবকর (রাঃ)-কে একটি পুরাতন তাঁবুতে প্রবেশ করতে দেখলেন। তিনি সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর বের হয়ে গেলেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) টিলার আড়াল থেকে বের হয়ে উক্ত তাবুতে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি এক অন্ধ দুর্বল মহিলাকে দেখতে পেলেন, যার কয়েকটি শিশু রয়েছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকটে কে আসে? মহিলা বলল, আমি তাকে চিনি না। তিনি একজন মুসলিম। প্রতিদিন সকালে তিনি আমাদের কাছে আসেন। অতঃপর আমাদের গৃহ পরিষ্কার করেন, আটা পিষে দেন এবং গৃহপালিত পশুগুলির দুগ্ধ দোহন করেন, তারপর তিনি চলে যান। বিস্ময়াভিভূত ওমর বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, لَقَدْ أَتْعَبْتَ الْخُلَفَاءَ مِنْ بَعْدِك يَا أَبَا بَكَر হে আবুবকর! পরবর্তী খলীফাদের উপর তুমি কত কষ্টই না চাপিয়ে দিলে! (তারীখু দিমাশক ৩০/৩২২)।

ইমাম মাওয়ার্দী (রহঃ)-এর গোপন আমল 

ইমাম মাওয়ার্দীর গোপন আমল সম্পর্কে একটি কাহিনী প্রসিদ্ধ রয়েছে। তিনি তাফসীর, ফিক্বহসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। কিন্তু জীবদ্দশায় সেসব গ্রন্থ কোনটিই প্রকাশিত হয়নি। পরে তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে তিনি তার একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে ডেকে এনে বললেন, ‘অমুক স্থানে যে বইগুলি রয়েছে সবগুলিই আমার রচিত। যখন আমার মৃত্যুযন্ত্রণা উপস্থিত হবে, তখন তুমি তোমার হাতকে আমার হাতের মধ্যে রাখবে। এসময় যদি আমি আমার হাত টেনে নেই, তাহ’লে তুমি বুঝবে যে, আমার কিছুই আল্লাহ্র নিকটে কবুল হয়নি। এমতাবস্থায় তুমি রাতের অাঁধারে আমার সকল লেখনী দজলা নদীতে নিক্ষেপ করবে। আর যদি আমি আমার হাত প্রসারিত করি, তাহ’লে বুঝবে যে, আমার লেখাগুলো আল্লাহ্র নিকটে কবুল হয়েছে। আর আমি আমার খালেছ নিয়তে কৃতকার্য হয়েছি’। অতঃপর মৃত্যুকালে তিনি স্বীয় হাত প্রসারিত করে দিলেন। ফলে পরবর্তীতে তাঁর সকল লেখনী প্রকাশিত হ’ল। (অফিয়াতুল আ‘ইয়ান ৩/২৮৩; তারীখু বাগদাদ ১/৫৪; তাবাকাতুশ শাফেঈয়াহ ৫/২৬৮)।

আলী বিন হুসায়েন (রহঃ)-এর গোপন আমল 

আলী (রাঃ)-এর পৌত্র আলী বিন হুসায়েন (রহঃ) বলতেন, ‘রাতের অন্ধকারে কৃত ছাদাক্বা আল্লাহ্র ক্রোধ দূরীভূত করে’। তাই রাতের অাঁধারে তিনি ছাদাক্বার খাদ্যসমূহ পিঠে বহন করে শহরের ফকীর-মিসকীন ও বিধবাদের গৃহে পৌঁছে দিতেন; অথচ তারা জানতে পারতো না কে তাদেরকে এ খাদ্যসামগ্রী দিয়ে গেল। আর সবার অজান্তে যাতে এ কাজ করতে পারেন, সেজন্য তিনি কোন খাদেম, দাস কিংবা অন্য কারোরই সহযোগিতা নিতেন না। এভাবে অনেক বছর যাবৎ তিনি গোপনে এ কাজ করে যান। কিন্তু ফকীর ও বিধবারা জানতেই পারেনি যে, কিভাবে তাদের নিকটে এ খাদ্য আসে। অতঃপর যখন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন এবং তারা তার পৃষ্ঠদেশে কালো দাগ দেখতে পেল। তারা বুঝতে পারল যে, তিনি তাঁর পিঠে কিছু বহন করার ফলে এই দাগের সৃষ্টি হয়েছে। অতঃপর তাঁর মৃত্যুতে শহরে উক্ত গোপন দান বন্ধ হয়ে গেল। রাবী ইবনে আয়েশা বলেন, তাঁর মৃত্যুর পর শহরবাসী বলতে লাগল, আলী বিন হুসায়েন মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা গোপন দান থেকে বঞ্চিত হইনি। (হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/১৩৬; ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ২/৯৬; আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ৯/১১৪; তাহযীবুল কামাল ১৩/২৪২, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৪/৩৯৩)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَكُونَ لَهُ خَبِيءٌ مِنْ عَمَلٍ صَالِحٍ فَلْيَفْعَلْ ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সৎ আমলসমূহ গোপনে করতে পারে, সে যেন তাই করে (ছহীহুল জামে‘ হা/৬০১৮; ছহীহাহ হা/২৩১৩)।





খলীফা হারূনুর রশীদের নিকটে প্রেরিত ইমাম মালেক (রহঃ)-এর ঐতিহাসিক চিঠি - ইহসান ইলাহী যহীর
খলীফা হারূণুর রশীদের নিকটে প্রেরিত ইমাম মালেক (রহঃ)-এর ঐতিহাসিক চিঠি (শেষ কিস্তি) - ইহসান ইলাহী যহীর
একজন কৃষ্ণকায় দাসের পরহেযগারিতা - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
তাতারদের আদ্যোপান্ত (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
দরিদ্র পরহেযগার ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিলেন সাঈদ ইবনু মুসাইয়েব - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
বিরোধীদের প্রতি ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ)-এর ক্ষমাসুন্দর আচরণ - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ধৈর্যের অনন্য দৃষ্টান্ত - আবু রাযিয়া, নিয়ামতপুর, নওগাঁ
তাতারদরে আদ্যোপান্ত - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
পরিবর্তনের জন্য চাই দৃঢ় সংকল্প - নাজমুন নাঈম
সুলতান মাহমূদের আহলেহাদীছ হওয়ার বিস্ময়কর কাহিনী - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
হারামাইন প্রাঙ্গনের শীতলতার রহস্য - আত-তাহরীক ডেস্ক
পৃথিবীর বৃহত্তম রাষ্ট্রের খলীফা হারূণুর রশীদের প্রতি ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ)-এর ঐতিহাসিক পত্র - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.