আব্দুল্লাহ ইবনু সিনান (রহঃ) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক এবং মু‘তামির ইবনু সোলাইমানের সাথে তারাসুসে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ মানুষের মাঝে যুদ্ধ যাত্রার রব উঠল। যুদ্ধের খবর পেয়ে মানুষ বের হতে লাগলো। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারকও বেরিয়ে পড়লেন। রোমান ও মুসলিম বাহিনী প্রস্ত্তত। উভয়পক্ষ মুখোমুখি। যুদ্ধের রীতি অনুযায়ী একজন রোমান সৈন্য এগিয়ে এসে মুসলিম সেনাদের মল্লযুদ্ধের প্রতি আহবান করল। জনৈক মুসলিম সৈনিক এগিয়ে এলেন। যুদ্ধ শুরু হ’ল। শত্রুপক্ষের সৈন্যটি খুবই শক্তিশালী ছিল। সে মুসলিম সৈনিককে শহীদ করে ফেলল। এভাবে পর পর ছয়জনকে শহীদ করে ফেলল। ফলে স্বভাবতই তার দম্ভ ও অহমিকা অনেকগুণ বেড়ে গেল। সৈন্যদের দুই সারির মাঝে সে চক্কর দিতে থাকল আর যুদ্ধের জন্য আহবান করতে থাকল। কিন্তু মুসলিম সেনাদের মধ্যে আর কেউ তার সাথে মোকাবেলার সাহস করছিল না। ফলে কেউ এগিয়ে আসল না।
আব্দুল্লাহ ইবনু সিনান বলেন, এ সময় আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হে ভাই, আমি যদি শহীদ হয়ে যাই, তাহ’লে আমার অমুক অমুক কাজগুলো করে দিয়ো। এই কথা বলে তিনি ঘোড়া ছুটালেন। কাফির সৈন্যটির সাথে তুমুল মল্লযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন। ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধ চলার একপর্যায়ে রোমক সৈন্যটিকে তিনি হত্যা করে ফেললেন। এরপর পরবর্তী মল্লযুদ্ধের জন্য তিনি তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। ফলে ধারবাহিকভাবে মোট ছয়জন এগিয়ে এলো এবং তিনিও একের পর এক তাদেরকে হত্যা করে ফেললেন। এরপর তিনি যুদ্ধের জন্য আহবান করতেই থাকলেন; কিন্তু কেউ-ই আর তার সাথে লড়াই করার সাহস পেল না। ইতিমধ্যে রোমকদের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়ল। এদিকে তিনি তার ঘোড়া হাকালেন এবং কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
পরবর্তী সময়ে তার সাথে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, হে আল্লাহর বান্দা, আমি জীবিত থাকতে এই ঘটনা যদি কাউকে বলো...‘এতটুকু বলেই তিনি থেমে যান। (অর্থাৎ জীবদ্দশায় যুদ্ধের ময়দানে তার এই অসামান্য বীরত্বের ঘটনা তিনি কাউকে জানাতে চাননি। তাই ঘটনাটি বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন। কারণ ঘটনাটি তার জীবদ্দশায় প্রকাশ হয়ে পড়লে মানুষ তার প্রশংসা করবে, তাকে বীর বলবে। এজন্যই তিনি বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন) (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/৩৮৩-৮৪)।