ইরাকে মার্কিন অভিযানের ১০ বছর পূর্তি
বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের এক ভীতিকর দেশ
ইরাক যুদ্ধের ১০ বছর অতিক্রান্ত হ’ল গত ২০ মার্চ। পারমাণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্র থাকার মিথ্যা অভিযোগ এনে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হন। অতঃপর ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। তাঁকে ফাঁসির দড়ি পরানোর সময় যখন ইরাকী মীরজাফররা টিটকারি করে বলেছিল ‘জাহান্নামে যাও’, অন্তিম মুহূর্তেও অবিচল সাদ্দাম পাল্টা পরিহাস করেন ‘কোন জাহান্নাম, যার নাম ইরাক?’ মার্কিন আগ্রাসনের ১০ বছর পর ইরাক এখন সত্যিই এক নরকের নাম। যেখানে প্রতি মাসে গড়ে নিহত হচ্ছে তিন শতাধিক বনু আদম। যুদ্ধের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তি দিয়েছিলেন, ইরাকে বিপুল পরিমাণ গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্র আছে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে দেখা যায়, সেখানে কোন ধরনের গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্র নেই। বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা অজুহাতে কেবল ইরাকের বিশাল তেল সম্পদ দখল করতেই যুক্তরাষ্ট্র এ আক্রমণ করে। দেশটিতে এখনো ৫০ হাযার সেনা মোতায়েন রাখা তারই প্রমাণ।
এই যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখের বেশী। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে ৮৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও অধিক। যুক্তরাজ্যের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ইউরো। ইরাকের সরকারী সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন আগ্রাসনের পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩৫ লাখ ইরাকী হতাহত হয়েছেন। ১৪ লাখ নারী হয়েছেন বিধবা। ইয়াতীম হয়েছে ৬০ লাখ শিশু। ২০০৮ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত ৮ লাখ ইরাকী নিখোঁজ হয়েছে। ইতিমধ্যে এ সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে সাড়ে চার হাযার সেনা নিহত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন হামলায় ধ্বংস হয়েছে হাযার বছরের মুসলিম ঐতিহ্য। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের থাবায় দেশটি হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। সে ক্ষত সারিয়ে উঠতে চেষ্টা চলছে দেশটিতে। তবে সাদ্দাম হোসেনের সমৃদ্ধ ইরাক আজকের ইরাকবাসীকে হয়তো কল্পনার চোখেই দেখতে হবে বৈকি!
[২০০৩ সালে বাগদাদে নিযুক্ত জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শক সংস্থার প্রধান হ্যান্স ব্লিক্স সম্প্রতি স্বীকার করেছেন- ইরাক যুদ্ধ ছিল ইতিহাসের এক ভয়ংকর ভুল। একইভাবে স্বীকার করেছেন আরও অনেকে। যে ভুলে প্রাণ গিয়েছে ১০ লক্ষাধিক মানুষের। আজও রক্ত ঝরেই চলেছে। অথচ সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, কলিন পাওয়েল, টনি ব্লেয়াররা যুদ্ধাপরাধী নন! কি চমৎকার ন্যায়বিচার! কি চমৎকার গণতন্ত্র! (স.স)]
ধ্বংসের পথে সিরিয়া
বাশার আল-আসাদ আর কত দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন, তা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও, গৃহযুদ্ধ যে ধীরে ধীরে সিরিয়াকে শেষ করে দিচ্ছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বাশার সরকারের পতন হ’লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। তখন ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবে পরস্পরবিরোধী গোষ্ঠীপ্রধান, ইসলামপন্থী ও দুর্বৃত্ত চক্র। সিরিয়া হয়তো পরিণত হ’তে পারে এক নতুন সোমালিয়ায়। গোষ্ঠীগুলো সরকারের সাথে লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে যে লড়াই চালাচ্ছে, সেটাই বাশার পরবর্তী সিরিয়ার দুরবস্থার জানান দিচ্ছে। পাশাপাশি শিয়া-সুন্নী বিষময় বিরোধ তো ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। অথচ মধ্যপ্রাচ্যে মোটামুটি একটি নিরিবিলি জনপদ হিসাবেই পরিচিত ছিল সিরিয়া। একটানা জনবসতি থাকার বিচারে বিশ্বের প্রাচীনতম রাজধানী শহর সে দেশের দামেস্ক নগর। নগরবাসী গর্ব করে বলত, মুসলমান, খ্রীষ্টানসহ অনেক ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছে দামেস্কে। রাজধানীর বিপণি বিতানগুলো গমগম করত ক্রেতার ভিড়ে। মধ্যরাতের পরও রাজপথে চলতে ভয় পেত না একাকী কোন নারী। দেশটি জুড়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনা। তার মধ্যে আছে স্থাপত্যশিল্পের বিচারে অনন্য নিদর্শন বিখ্যাত উমাইয়া মসজিদ, যাও আজ বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ হাযার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। হাযার হাযার লোক নিখোঁজ। সরকারের কারাগারে বন্দী দেড় থেকে দুই লাখ। দেশের ভেতরে গৃহহীন হয়ে খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে দিন গুজরান করছে ২০ লক্ষাধিক মানুষ। আর সীমান্ত পেরিয়ে বিভিন্ন দেশের মাটিতে চরম দুর্গতির মধ্যে বাস করছে আরও লাখ দশেক সিরীয়।
[ইহুদী-খ্রীষ্টান বিশ্ব এভাবেই একে একে শেষ করে দিচ্ছে মুসলিম বিশ্বকে। অথচ মুসলিম রাষ্ট্রনেতারা পাশ্চাত্য তোষণে ব্যস্ত। তাদের কি কখনো হুঁশ ফিরবেনা? আল্লাহ তুমি মুসলমানদের রক্ষা কর! (স.স.)]।