আরাফাতের দেহে ভয়ঙ্কর বিষ পোলোনিয়াম পাওয়া গেছে
ফিলিস্তীন মুক্তি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, ৩৫ বছর যাবৎ ফিলিস্তীনী স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় দলগুলোর মূল সংগঠন পিএলও’র নেতৃত্বদানকারী ইয়াসির আরাফাতের দেহের নমুনায় পোলোনিয়াম বিষের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা বলছেন তারা ইয়াসির আরাফাতের দেহাবশেষ গবেষণার পর তার হাড়ে বিষাক্ত পোলোনিয়ামের সন্ধান পেয়েছেন। এই তেজস্ক্রিয় পদার্থটি এতটাই বিষাক্ত ও ধ্বংসাত্মক যে মাত্র এক গ্রাম পোলোনিয়ামের কারণে এক কোটির বেশী মানুষের মৃত্যু হ’তে পারে। পোলোনিয়াম খুবই দুর্লভ এবং অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ। প্যারিসের একটি হাসপাতালে ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর তিনি মারা যান। তখন মৃত্যুর কারণ হিসাবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে এমন বিতর্ক বেশ কিছুদিন ধরে চলে আসায় মৃত্যুর প্রায় আট বছর পর ইয়াসির আরাফাতের দেহাবশেষ ২০১২ সালে কবর থেকে তোলা হয়। এক বছরের গবেষণায় অবশেষে বিষয়টি প্রমাণিত হ’ল।
[এর জন্য দায়ী ইহুদী-নাছারা চক্র কোনদিন দায়ী হিসাবে চিহ্নিত হবে না। এদের বিচারও কেউ করতে পারবে না। এরপরেও মহাবিচারক একজন আছেন। তাঁর প্রতিশোধ থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। আল্লাহর নিকটে আমরা সেটাই কামনা করি (স.স.)]
তুরস্কে ৯০ বছর পর হিজাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
প্রায় ৯০ বছর পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর হিজাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে তুরস্কের মধ্যপন্থী এরদোগান সরকার। সেক্যুলার কামাল আতাতুর্ক সরকার ১৯২৩ সালে সরকারী অফিস-আদালতে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এর ফলে বহু পর্দানশীন নারীই এতদিন সরকারী চাকুরীতে যোগ দিতে পারেননি। কেননা এসময় নারীরা কর্মস্থলে হিজাব পরে গেলে তাদেরকে আটক করা হতো।
এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েব এরদোগান পার্লামেন্টে দেয়া এক ভাষণে বলেন, ‘আমরা হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো সেকেলে আইনটি দূর করেছি। এটি আমাদের রাষ্ট্রের স্পিরিটের সঙ্গে মানানসই নয়। তবে এরদোগানের এই উদ্যোগে নাখোশ তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষরা। তারা বলছেন, এরদোগান তার ইসলামিক মূল্যবোধ দেশে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করছেন। উল্লেখ্য যে, এর আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পাশাপাশি পুরুষেরাও দাড়ি রাখতে পারবেন। তবে এখনও বিচারপতি, আইনজীবী, পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে।
[শতভাগ মুসলমানের দেশের এই দুরবস্থা সত্যিই দুঃখজনক। এথেকে আমাদের দেশের মুসলমানেরা শিক্ষা নিবেন কি? (স.স.)]
হজ্জ করতে এসে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন দু’মহিলা
সুদানের ফাতেমা আল-মাহি ও তিউনিসিয়ার নাফীসা আল-কুরমাজী নামের দু’জন বৃদ্ধা মহিলা এবার হজ্জ করতে এসে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। ৬০ বছর বয়সী ফাতেমা জানান, তিনি ৮ বছর পূর্বে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান। এরপর কয়েকবার অপারেশন করেও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি। তিনি এ বছর হজ্জ করতে এসে মসজিদে নববীতে বসে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য দো‘আ করছিলেন। হঠাৎ তিনি বুঝতে পারেন যে তার চোখের কালো পর্দা সরে যাচ্ছে। অতঃপর তিনি আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে চিৎকার করে ওঠেন। তিনি বলেন, আমি চিকিৎসকদের উপর আশা ছেড়ে দিয়ে শুধু আল্লাহর কাছে দো‘আ করতাম এবং সেই দো‘আ অবশেষে মসজিদে নববীতে এসে কবুল হয়েছে।
৭০ বছর বয়সী নাফীসা অন্ধ অবস্থায় এবার হজ্জে এসেছিলেন। দেড় বছর আগে স্ট্রোকে চোখের দৃষ্টি হারান তিনি। চিকিৎসকরা জানান যে, স্ট্রোক হওয়ায় এবং বয়সের কারণে তার পক্ষে আর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। নাফীসা বলেন, এরপরেও আমি বিশ্বাস হারাইনি। বরং সবসময় প্রার্থনা করতাম যেন আল্লাহ আমার চোখের আলো ফিরিয়ে দেন। হজ্জে এসে আমি দো‘আর পরিমাণ বাড়িয়ে দেই। আমার স্বপ্ন ছিল পবিত্র স্থানগুলোসহ মক্কা ও মদীনা স্বচক্ষে দেখার। অবশেষে দো‘আ পাঠ করতে করতে একসময় আমি দেখতে শুরু করি। বুঝতে পারি, মহান করুণাময় প্রতিপালক ফিরিয়ে দিয়েছেন আমার দৃষ্টিশক্তি। আনন্দে কাঁদতে থাকি আমি। অন্য হজ পালনকারীরা আমার কাছ থেকে ঘটনা শোনার পর আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে তাকবীর দিতে থাকেন। আনন্দে অভিভূত নাফীসা জানান, বিশ্বের সর্বাপেক্ষা পবিত্র স্থান স্বচক্ষে দেখার জন্যই হয়ত আল্লাহ রাববুল আলামীন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফালিল্লাহিল হাম্দ।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান সঊদীআরবের
প্রথমবারের মত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসাবে ঠাঁই পেলেও সেদিনই তা প্রত্যাখ্যান করল সঊদী আরব। বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব নিরসনে পরিষদটিকে ‘দ্বৈত নীতি’র জন্য দোষারোপ করে সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। সঊদী আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কাজের পদ্ধতি ও দ্বৈত নীতির কারণে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় নিরাপত্তা পরিষদ তার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে’। পরিষদটির সংস্কার না হওয়া এবং দায়িত্ব পালনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান না করে সঊদী আরবের কোন বিকল্প নেই।
মুসলিম নির্মূলের নীলনকশা বাস্তবায়ন হচ্ছে মিয়ানমারে
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের হামলা এখন প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার সত্ত্বেও সাম্প্রতিক কালে সেখানে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় সহিংসতার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। ফলে ২০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান আজ তাদের আত্মপরিচয় ও অস্তিত্ব সঙ্কটের সম্মুখীন। বিবিসি রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সর্বাপেক্ষা নির্যাতিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর একটি হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।
রোহিঙ্গারা ছিল ঐতিহাসিক আরাকান রাজ্যের অধিবাসী। ১৯৪৮ সালে বার্মা ইংরেজ শাসকদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এ সময় সীমান্তবর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে আরাকান রাজ্যের যোগদানের আলোচনা সত্ত্বেও তা বার্মার অংশ হিসাবেই থেকে যায়।
মুসলিম রোহিঙ্গারা অবর্মী ও অবৌদ্ধ। তাই সেখানে তাদের বিদেশী হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। শুধু তাই নয়, তাদের ব্রিটিশ শাসনামলে বার্মায় এসে বসতি স্থাপনকারী ‘অবৈধ বাঙালি অভিবাসী’ বলা হয়, যা সঠিক নয়। সত্তর দশকের শুরুর দিকে প্রথমবারের ন্যায় বর্মী সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জাতিকে জাতিগোষ্ঠীগতভাবে নির্মূলের অভিযান শুরু করে। এ অভিযান চলাকালে রোহিঙ্গারা ব্যাপকভাবে ধর্ষণ ও নির্বিচার গ্রেফতারের শিকার হয়। বর্মী সৈন্যরা মসজিদ ও বাড়িঘর ধ্বংস করে এবং জমি-জমা দখল করে নেয়। মাত্র তিন মাসের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৯৯১ সালে সেনাবাহিনী আবার ‘অপারেশন পাই থায়া’ নামে দ্বিতীয় অভিযান শুরু করে। ২ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা আবার বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। পর্যাপ্ত খাদ্য ও ঔষধ ছাড়াই ৩ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশের অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছে।
তবে বাংলাদেশ সহ এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও তাদের প্রতি কোন সহানুভূতি প্রদর্শন করে না। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রোহিঙ্গা ‘বোট পিপল’দের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হ’তে দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে সাগরে ভাসতে থাকা, থাই নৌবাহিনীর গুলির শিকার, থাই নৌবাহিনীর হাতে আটক ও পরে মানুষ পাচারকারীদের কাছে বিক্রি, অসহায়ভাবে অনিশ্চিত জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করা ইত্যাদি।
মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গারা অব্যাহতভাবে পরিচয়হীনতার শিকার হচেছ। ১৯৮২ সালের নাগরিক আইনে সরকারীভাবে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়। যেহেতু তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নেই সে কারণে গ্রামের বাইরে যেতে, মসজিদ মেরামত করতে, ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে, এমনকি সন্তান নিতেও তাদের সরকারের কাছ থেকে পারমিট নিতে হয়। পারমিট না নিলেই গ্রেফতার ও জেল। এ পারমিট নিতে লাগে ঘুষ। যে অর্থ সবার পক্ষে দেয়া সম্ভব হয় না।
১৯৯৪ সালে এক স্থানীয় আইন বলে রোহিঙ্গাদের দু’টির বেশী সন্তান নেয়া নিষিদ্ধ করা হয়। বহু রোহিঙ্গাকে জোর করে নির্মাণ কাজে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়, যা শুধু দাসপ্রথার সাথেই তুলনা করা যেতে পারে। স্থানীয় বর্মী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীদের পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত হতে বাধ্য করে বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
২০১২ সালে রাখাইন বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লিপ্ত হয়। এতে সরকারী হিসাবে ১৯২ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হলেও রোহিঙ্গা মানবাধিকার গ্রুপের মতে নিহতের সংখ্যা হাযার হাযার। বৌদ্ধরা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। ১ লাখ ২৫ হাজার লোক স্থানচ্যুত হয়। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এ ঘটনার পর বলেন, মিয়ানমার সরকারের চোখে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। তিনি গোটা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে অন্য কোন দেশে পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে তাদের সমর্পণের প্রস্তাব দেন। সম্প্রতি মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংগঠন ‘৯৬৯’ মুসলমানদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি তাদের দোকানপাট বর্জনের জন্য উৎসাহিত করছে।
মিয়ানমারের নোবেল জয়ী গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সুচি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করলেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়ে নীরব। ২০১২ সালে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বারবার তিনি তাদের ‘বাঙালি’ বলে উল্লেখ করেন।
মিয়ানমার ও বাইরে রোহিঙ্গাদের অনিঃশেষ দুর্দশা, পাশাপাশি সমগ্র মিয়ানমারে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিস্তৃতি বিগত ৫০ বছরের তুলনায় আরো অবনতি ঘটেছে এবং নতুন নতুন গোষ্ঠীর মধ্যে তা বিস্তার লাভ করছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমারে এখন যা করা প্রয়োজন তা হল মানবাধিকার ও বহুত্ববাদিতার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ, সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আইনের শাসনের উন্নয়ন করে তৃণমূলে পৌঁছে দেয়া, রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বের স্বীকৃতিসহ তাদের দুর্দশা লাঘবের ব্যবস্থা নেয়া। তাহলেই শুধু আন্তর্জাতিক সমাজ ও নিজের জনগণের কাছে গণতান্ত্রিক মিয়ানমার বৈধতার স্বীকৃতি পেতে পারে।
হজ্জ করলেন ইসলাম বিদ্বেষী চলচ্চিত্র
‘ফিতনা’র নির্মাতা ভ্যান দুর্ন
এক সময়ের চরম ইসলামবিদ্বেষী ডাচ পার্লামেন্টারিয়ান ও ইসলামবিদ্বেষী চলচ্চিত্র ‘ফিতনা’র নির্মাতা আর্নোড ভ্যান দুর্ন কয়েক মাস আগে ইসলাম গ্রহণ করার পর এবার হজ্জব্রত পালন করেছেন। হজ্জ পালন শেষে দুর্ন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সম্প্রতি শেষ হওয়া হজ্জ পালনের সময় তিনি অভূতপূর্ব প্রশান্তি অনুভব করেছেন। তিনি আবেগাপ্লুত ভাষায় বলেন, ‘আমি আশা করি, তওবার পর অনুতাপে ঝরে পড়া আমার চোখের পানিতে আমার সব গোনাহ ধুয়ে যাবে।’ মূলত ‘ফিতনা’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে মুসলমানরা ব্যাপক প্রতিবাদ করায় দুর্ন ইসলাম ও নবী (ছাঃ) সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশুনা শুরু করেন এবং এ ধর্মের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, মিডিয়ার কারণে ইউরোপীয়ানরা ইসলামের সঠিক চিত্রটি জানতে পারে না। যদি তারা জানত যে, ইসলাম ধর্ম কত মাধুর্যময় ও বিজ্ঞতাপূর্ণ, তাহলে তারা গ্রত্যেকেই ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হত।
‘পাকিস্তানের আলবানী’ খ্যাত শায়খ যুবায়ের আর নেই
গত ১০ নভেম্বর’১৩ রবিবার সকাল ৭-টায় রাওয়ালপিন্ডির এক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন পাকিস্তানের সাম্প্রতিককালের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়খ যুবায়ের আলী যাই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজে‘ঊন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৬ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি নিজ বাড়িতে হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে পারালাইজড হয়ে যান এবং ব্রেন হেমোরেজে আক্রান্ত হয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। পরে তাকে ইসলামাবাদের ‘আশ-শিফা ইন্টারন্যাশনাল’ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও অবস্থার কোন উন্নতি না হ’লে রাওয়ালপিন্ডির এক হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে দীর্ঘ ৫৭ দিন যাবৎ অচেতন থাকার পর সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
একই দিন দিবাগত রাত ৮-টায় তাঁর নিজ গ্রাম ও কর্মস্থল ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ৮০ কিঃমিঃ দূরে রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনের আটোক যেলার হাযারো তহসিলের পীরদাদ গ্রামে পীরদাদ বাজার সংলগ্ন ময়দানে তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন তাঁরই সাবেক শিক্ষক, রাওয়ালপিন্ডিস্থ ‘মসজিদে মুহাম্মাদী’র খতীব মাওলানা আব্দুল হামীদ আযহার। জানাযায় স্থানীয়রা ছাড়াও পেশাওয়ার, ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, সারগোধা প্রভৃতি এলাকা থেকে প্রায় দশ হাযার মুছল্লী অংশগ্রহণ করেন। জানাযায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পেশোয়ারের জামে‘আ সালাফিয়ার প্রিন্সিপ্যাল আব্দুর রশীদ নূরিস্থানী, জামে‘আ আছারিয়া পেশওয়ারের প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল আযীয নূরিস্থানী, ইসলামাবাদের ড. ফযলে ইলাহী যহীর, ড. সুহায়েল আহমাদ, ড. মুহাম্মাদ ইদ্রীস যুবায়ের, শামশাদ সালাফী, লাহোরের হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ, শায়খ মুবাশ্শির রববানী, শায়খ ইয়াহইয়া আরীফী, পেশোয়ারের হারাকাতুশ শাবাব আস-সালাফিয়ার প্রধান রূহুল্লাহ তাওহীদী প্রমুখ আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরাম। এছাড়া ইসলামাবাদে অবস্থানরত ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব উক্ত জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।
শায়খের সংক্ষিপ্ত পরিচয় : হাফেয যুবায়ের আলী যাই-এর জন্মস্থান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আটোক যেলার ঐতিহাসিক হাযারো তহসিলের পীরদাদ গ্রামে। ১০০৮ খৃষ্টাব্দে এই হাযারোতেই সুলতান মাহমূদ গজনভী হিন্দু রাজাদের বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করেন। ১৯৫৭ সালের ২৫ জুন শায়খ যুবায়ের এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাজী মুজাদ্দাদ খান (৮৮) ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। যিনি এখনও বেঁচে আছেন।
১৯৭২-৭৫ সালে মাদরাসায় বুখারীর দারস গ্রহণের সময় তিনি আহলেহাদীছ হন। অতঃপর কর্মজীবনের শুরুতে বেশ কয়েক বছর জাহাযের নাবিক হিসাবেও তিনি চাকুরী করেছিলেন। নাবিক জীবনে বিশ্বের বহু দেশ সফরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠেন। বিশেষতঃ গ্রীক ও ইংরেজী ভাষায় তিনি প্রভূত দক্ষতা অর্জন করেন। আরবী ও ইংরেজীতে তিনি অনর্গল কথা বলতেন। তিনি প্রসিদ্ধ লাইব্রেরী দারুস সালামের রিয়াদ এবং লাহোর অফিসে প্রায় ৫ বছর যুক্ত ছিলেন। এ সময় তিনি দারুস সালাম থেকে প্রকাশিত হাদীছ গ্রন্থ সমূহের তাখরীজ ও তাহকীকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দারুস সালাম প্রকাশিত কুতুবে সিত্তাহ-র একক সংকলনটি প্রাচীন পান্ডুলিপির সাথে মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিভিউ করেন।
পরবর্তীতে তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে হাদীছ গবেষণায় পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করেন এবং জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে নিজ বাড়ীতেই ‘মাকতাবাতুয যুবায়রিয়া’ নামে একটি বিশাল লাইব্রেরী গড়ে তোলেন। গবেষণার কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি কোন মাদরাসাতেও শিক্ষকতা করতেন না। তাঁর লাইব্রেরীই ছিল তাঁর কর্মস্থল।
তাখরীজের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান : দারুস সালাম থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি সুনানে আরবা‘আর পূর্ণাঙ্গ তাখরীজ সম্পন্ন করেন। অতঃপর একে একে মুসনাদ হুমায়দী’, ‘সীরাতে ইবনে হিশাম’, ‘তাফসীরে ইবনে কাছীর’, ‘মিশকাত’, ‘বুলূগুল মারাম’ প্রভৃতি হাদীছ, তাফসীর ও সীরাত গ্রন্থ সমূহের তাখরীজ সম্পন্ন করেন। তাহকীক ও তাখরীজের ময়দানে তাঁর এই অমূল্য খেদমতের কারণে তাঁকে ‘পাকিস্তানের আলবানী’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। এতদ্ব্যতীত ‘দেওবন্দিয়াহ আওর মুনকিরীনে হাদীছ’ ‘নূরুল আয়নাইন ফি ইছবাতে রাফ‘ইল ইয়াদায়েন’, ‘হিদায়াতুল মুসলিমীন’ প্রভৃতি গ্রন্থ সহ আরবী ও উর্দূ ভাষায় তাঁর এযাবৎ ৬২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া অপ্রকাশিত রয়েছে আরো বেশ কিছু গ্রন্থ। তাঁর কিছু বই ইংরেজীতেও অনূদিত হয়েছে। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ‘আল-হাদীছ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। পাকিস্তানে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে তিনি যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। ১৯৮৩ সালে তিনি যখন দাওয়াত শুরু করেন তখন তাঁর এলাকায় কোন আহলেহাদীছ ছিল না। অথচ তাঁর দাওয়াতের বরকতে এখন সেখানে ১১টি আহলেহাদীছ মসজিদ স্থাপিত হয়েছে। বাহাছ-মুনাযারায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তার নম্র আচরণ অথচ অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও দলীলভিত্তিক আলোচনায় এ পর্যন্ত বহু মানুষ আহলেহাদীছ হয়েছে। এজন্য তিনি দেওবন্দী ও ব্রেলভীদের চক্ষুশূলে পরিণত হন।
[তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে বেদনাহত। তাঁর রেখে যাওয়া অমূল্য খিদমতকে আল্লাহ ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ হিসাবে কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দান করুন! (স.স.)]