বার্ষিক কর্মী সম্মেলন ২০২০

আহলেহাদীছ আন্দোলন আপোষহীন ইসলামী আন্দোলন

-মুহতারাম আমীরে জামা‘আত

নওদাপাড়া, রাজশাহী ১৪ই আগস্ট শুক্রবার : অদ্য সকাল সাড়ে ৯-টা হ’তে রাত ৯-টা পর্যন্ত রাজশাহীর নওদাপাড়ায় ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত কথা বলেন।

তিনি বলেন, আহলেহাদীছ ‘যুবসংঘ’-এর জন্ম হয়েছিল বিশুদ্ধ ইসলাম প্রচারের জন্য। বাংলাদেশে যে ইসলাম চলছে তা বিশুদ্ধ ইসলাম নয়। আমাদের প্রত্যেককে জীবনের প্রতিটি কাজের হিসাব আল্লাহর নিকট দিতে হবে।

তিনি বলেন, কোন অবস্থাতেই হককে বাতিলের সাথে মিশানো যাবে না। দুনিয়ায় আহলেহাদীছরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানের পাহারাদার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আহলেহাদীছদের ঘরেই কুলখানি হয়েছে। তারাই শবেবরাত ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে। তাই তাদেরকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরিয়ে আনতে আমাদেরকে ‘যুবসংঘ’ করতে হয়েছে। ‘যুবসংঘে’র দাওয়াতের মাধ্যমে এদেশে বিশুদ্ধ ইসলামের বীজ রোপিত হয়েছে। শিরক ও বিদ‘আত বিদূরিত হয়ে প্রকৃত সুন্নাত প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তাই ‘যুবসংঘে’র ছেলেদেরকে আমাদের নছীহত, তোমাদেরকে আক্বীদায় হতে হবে মযবূত ও আচরণে থাকতে হবে নরম।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দাওয়াত ছিল প্রথমে আক্বীদা সংশোধনের। তিনি প্রথমে ওযূ-গোসল শিখাননি। কেননা মানুষকে প্রথমে বুঝতে হবে, সে কার দাসত্ব করবে আল্লাহর, না শয়তানের? আল্লাহ বলেন, হে মানুষ তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁকে তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না (নিসা ৪/৩৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নবুঅত প্রাপ্তির আগে আল-আমীন উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। কিন্তু তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ায় তাঁকে নানারূপ অপবাদ ও নির্যাতনের শিকার হ’তে হয়। কিন্তু তিনি দাওয়াত থেকে পিছপা হননি। আমাদেরকে একইভাবে দাওয়াত দিয়ে যেতে হবে। সার্বিক জীবনে আমরা আল্লাহর বিধান মেনে চলব। আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সার্বিক জীবন পরিচালিত হবে অহি-র বিধান অনুযায়ী। এই দাওয়াত ইতিমধ্যে মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ফলে ক’দিন আগেও ভোলাতে যারা আহলেহাদীছ মসজিদ জ্বালিয়ে দিয়েছিল তারাই আজ সেখানে মসজিদ তৈরীর জন্য জমি দিচ্ছে। তাই মানুষ যখন বুঝবে যে, এটাই জান্নাতের পথ, তখন তাদেরকে এ পথ থেকে কেউ ফিরাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। তিনি যুবসংঘের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের হেফাযত ও এশা‘আত দু’টিই করে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ইবাদত হবে স্রেফ আল্লাহর জন্য। আমাদের ইত্তেবা হবে স্রেফ রাসূলের জন্য এবং আমাদের আমল হবে স্রেফ আল্লাহর জন্য। যেখানে কোন ‘রিয়া’ থাকবে না।

ভাষণের শুরুতে মাননীয় প্রধান অতিথি প্রথমে লন্ডনসহ বিদেশী মেহমানদের প্রতি এবং সংগঠনের দেশ-বিদেশের নেতা-কর্মীদের প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে ইংরেজীতে ভাষণ দেন। অতঃপর পাকিস্তানী মেহমানের প্রতি উর্দূতে এবং সবশেষে দেশীয় ভাইদের উদ্দেশ্যে বাংলায় বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য যে, করোনা মহামারীর কারণে উক্ত সম্মেলনটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় এবং তা ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব বলেন, যুবসমাজকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছভিত্তিক বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জনের প্রতি মনোযোগী হ’তে হবে, যেন শিরক ও বিদ‘আতের ঘন আঁধারে নিমজ্জিত মুসলিম সমাজে তাওহীদ ও সুন্নাহর জাগরণ নিশ্চিত করা যায়। ‘যুবসংঘে’র প্রত্যেক কর্মীকে আদর্শবাদী হ’তে হবে এবং নিজেকে দাঈ ইলাল্লাহ হিসাবে প্রস্ত্তত করতে হবে। তিনি প্রত্যেককে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ থাকার জন্য কর্মীদের প্রতি আহবান জানান। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ পেশ করেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুস্তাকীম আহমাদ।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, যুববিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক ও আত-তাহরীক অনলাইন টিভির পরিচালক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন, ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়ার ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম, ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম, মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল মাদানী (পাবনা), আল-ফোরক্বান ইসলামিক সেন্টার, বাহরাইন-এর দাঈ শরীফুল ইসলাম মাদানী ও মাওলানা মুখলেছুর রহমান মাদানী (নওগাঁ)।

সম্মেলনে বিদেশী অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লন্ডনের সেক্রেটারী জেনারেল ড. ছুহায়েব হাসান (পাকিস্তানের খ্যাতনামা আলেম মরহূম মাওলানা আব্দুল গাফফার হাসানের জ্যেষ্ঠ পুত্র), লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ডীন ও প্রফেসর ড. হাম্মাদ লাখভী, জমঈয়তে আহলেহাদীছ পাকিস্তানের চীফ অর্গানাইজার (আল্লামা ইহসান এলাহী যহীরের জ্যেষ্ঠ পুত্র) হাফেয ইবতিসাম ইলাহী যহীর, আহলেহাদীছ ইউথফোর্স পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফায়ছাল আফযাল এবং ফিলিস্তীনের গাযার তরুণ শিক্ষক ও গবেষক ড. হাসান নাছর বাযাযো প্রমুখ। সম্মেলনে ‘আন্দোলন’-এর প্রবাসী শাখার দায়িত্বশীলদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন সঊদী আরব শাখার সভাপতি মুশফিকুর রহমান, সহ-সভাপতি হাফেয আখতার মাদানী, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মীযানুর রহমান, সিঙ্গাপুর শাখার সভাপতি শফীকুল ইসলাম, মালয়েশিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক আল-আমীন, কাতার শাখার যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুল হক এবং সাইপ্রাস শাখার আহবায়ক কাছীদুল হক কুতুব।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ছফিউল্লাহ, খুলনা যেলা সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, সাতক্ষীরা যেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, রাজশাহী-পূর্ব যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি যিল্লুর রহমান, বরিশাল যেলা সভাপতি কায়েদ মাহমূদ ইমরান, কুমিল্লা যেলা সভাপতি আহমাদুল্লাহ, সাতক্ষীরা যেলা সভাপতি মুজাহিদুর রহমান, বগুড়া যেলা সভাপতি আল-আমীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আহবায়ক মুহাম্মাদ ফেরদাঊস, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসাদুল্লাহ আল-গালিব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আব্দুর রঊফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মোছাদ্দেক প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করেন ‘আল-‘আওন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির ও ঢাকা-দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ,  ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), ঢাকা-দক্ষিণ সাংগঠনিক যেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ ও ফরীদুল ইসলামের নেতৃত্বে আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম (জয়পুরহাট) ও প্রচার সম্পাদক ইহসান ইলাহী যহীর (কুমিল্লা)।

বিদেশী অতিথিদের মধ্যে ড. হাসান নাছর খামীস বাযাযো সমাজে ছহীহ আক্বীদার প্রচার ও প্রসারে যুবকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যে বলেন, সঠিক আক্বীদা একজন মুমিনের প্রকৃত মানদন্ড নির্ধারণ করে। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম সমাজে সঠিক আক্বীদার বিষয়টি সবচেয়ে বেশী অবহেলিত ও অচর্চিত। তিনি সঠিক আক্বীদার প্রসারে যুবকদের ভূমিকার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, যুবকরাই পারে মুসলিম সমাজকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে। এজন্য তাদেরকে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে এবং নম্রভাষায় ইখলাছের সাথে দাওয়াতী কাজ করতে হবে, যেন মানুষ দাওয়াত কবুল করে। কিন্তু যদি তারা কর্কশভাষী ও অহংকারী হয় তবে নিশ্চয়ই মানুষ দাওয়াত গ্রহণ করবে না। এজন্য দাওয়াতী কাজে আখলাক ও হেকমতকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তীনে সালাফী দাওয়াতের প্রচার ও প্রসার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে সেখানকার ওলামায়ে কেরামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

আহলেহাদীছ ইউথফোর্স পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জনাব ফয়ছাল আফযাল পাকিস্তান জমঈয়তে আহলেহাদীছের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দাওয়াত প্রসারে জমঈয়ত বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। তন্মধ্যে বেফাকুল মাদারিসের মাধ্যমে হাযারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা, ওয়ায মাহফিল, সভা-সেমিনার, মসজিদ নির্মাণ ও সমাজসেবা ইত্যাদি কর্মসূচি অন্যতম। এছাড়া বর্তমানে রাজনীতিতেও জমঈয়ত সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। আর জমঈয়তের যুবশাখা হিসাবে আহলেহাদীছ ইউথফোর্স এসকল কার্যক্রমে পূর্ণ সহযোগিতা করছে এবং দাওয়াত ও খেদমতে খালককে তারা মূলমন্ত্র করে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি ‘যুবসংঘ’-এর কর্মী সম্মেলনে তাঁকে আহবান করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিভিন্ন দেশের আহলেহাদীছ ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ, যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আহলেহাদীছ ভাইদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরী করবে এবং দাওয়াতী কাজে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হবে ইনশাআল্লাহ।  

হাফেয ইবতিসাম এলাহী যহীর উপমহাদেশে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রসারে তাঁর পিতা আল্লামা ইহসান এলাহী যহীরের অবদান এবং যুবকদের মধ্যে তাঁর দাওয়াতের প্রভাব সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, লেখনী ও বক্তব্যের ময়দানে তিনি স্বল্প সময়েই বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন, যা পাকিস্তানে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তিনি একজন যুগসচেতন সংগ্রামী আলেম ছিলেন। সমাজ সংস্কার ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। কাদিয়ানী ও শী‘আ মতবাদসহ বাতিল ফের্কাগুলোর জন্য তিনি ছিলেন মূর্তিমান আতংক। বাতিলের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থান যুবসমাজকে খুবই প্রভাবিত করেছিল। বহু যুবক তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে হকের আন্দোলনে নেমে পড়ে। বিশেষতঃ বোমা হামলায় তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যু এবং মদীনার বাকী‘ গোরস্তানে তাঁর দাফন বহু যুবকের মনে গভীর রেখাপাত করে এবং তাঁর দেখানো সংস্কারের পথে আত্মোৎসর্গ করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। তিনি ‘যুবসংঘ’-এর কর্মী সম্মেলনে যোগদান করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে সশরীরে বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন।                                     

ড. হাম্মাদ লাখভী দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন, দাওয়াত মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। মানুষ প্রাকৃতিকভাবে কোন না কোন দাওয়াতের সাথে সংযুক্ত থাকে। হয় সেটা আল্লাহর পথে নতুবা শয়তানের পথে। যদি সে দাওয়াতদাতা না হয়, তবে সে দাওয়াতগ্রহীতা হয়ে পড়ে। আজকে মুসলিম উম্মাহ দাওয়াতের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ফলে দাওয়াতগ্রহীতায় পরিণত হয়েছে। ফলে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের দাসত্ব করছে। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানকে প্রাত্যহিকভাবে দাওয়াতী কাজ করতে হবে এবং একে জীবনের অপরিহার্য কর্তব্য হিসাবে গণ্য করতে হবে। নইলে সে অন্যের দাওয়াতের শিকারে পরিণত হবে। তিনি সালাফী দাওয়াত প্রসারের প্রতিবন্ধকতা হিসাবে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেন এবং বিশেষতঃ আন্তঃধর্ম সংলাপকে তিনি ধ্বংসাত্মক বলে উল্লেখ করে একে ইসলাম থেকে মানুষকে দূরে সরানোর চক্রান্ত হিসাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুবসমাজের প্রতি কিছু বলার সুযোগ পেয়ে তিনি সম্মানিতবোধ করছেন।

ড. ছুহায়েব হাসান যুবকদের উদ্দেশ্যে নছীহতমূলক বক্তব্যে দশটি বিষয় উল্লেখ করেন। আল্লাহ, রাসূল (ছাঃ) ও কুরআনের সাথে সুদৃঢ় সম্পর্ক তৈরীর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক যুবকের উচিৎ রাসূল (ছাঃ)-এর সীরাত জানা এবং জ্ঞানার্জনের জন্য ঘরে একটি লাইব্রেরীর ব্যবস্থা রাখা। সেই সাথে নিজেকে দাওয়াতী ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডে ব্যস্ত রাখা, সর্বপ্রকার গোঁড়ামি পরিহার করে ভ্রাতৃত্বভাব বজায় রাখা, সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো, ভাল বন্ধু নির্বাচন করা। তিনি সচ্চরিত্রতা অর্জনের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। পরিশেষে তিনি ‘যুবসংঘ’-এর কর্মী সম্মেলনের সার্বিক সফলতার জন্য দো‘আ করেন।

সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব সমূহ :

‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম সরকারের নিকট ১৯ দফা প্রস্তাবনা ও দাবী পেশ করেন। তন্মধ্যে প্রধান প্রধান দাবীগুলো নিম্নরূপ :

১. পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।

২. সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশ হিসাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের সমন্বয়ে সাংবিধানিকভাবে একটি ‘ধর্মীয় উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করা হোক। যাতে এই পরিষদ ইসলাম বিরোধী আইন-কানূনসমূহ যাচাই-বাছাই করতে পারে এবং তা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। সেই সাথে ধর্মীয় অঙ্গনে প্রচলিত শিরক, বিদ‘আত ও যাবতীয় কুসংস্কারসমূহ দূরীকরণে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে।

৩. বৃটিশদের রেখে যাওয়া দুর্বল ও ক্রটিপূর্ণ বিচারব্যবস্থাকে সংস্কার করে বিচারবিভাগকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে এবং ইসলামী আইন ও বিচারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।

৪. ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ব্যতীত সামাজিক অনাচার, দুর্নীতি, খুন, নারী নির্যাতন কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। অতএব প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা কোর্স বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৫. স্কুল-মাদ্রাসার সিলেবাস থেকে ইসলামবিরোধী বিষয়সমূহ অপসারণ করতে হবে এবং কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক ছহীহ আক্বীদা শিক্ষা দিতে হবে।

৬. এ সম্মেলন কাদিয়ানী, হিজবুত তাওহীদ, দেওয়ানবাগীসহ ইসলামের নামে ভ্রান্ত ফের্কাসমূহের বিরুদ্ধে সরকারীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছে।

৭. বাবরী মসজিদে ভেঙ্গে তদস্থলে রাম মন্দির নির্মাণের বিরুদ্ধে এ সম্মেলন তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

৮. উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবসান কল্পে দেশে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৯. ধর্ষণের শাস্তির ক্ষেত্রে পৃথক আইন প্রণয়ন করা হৌক। স্বল্প সময়ের মধ্যে ধর্ষক চিহ্নিত করা এবং দ্রুততার সাথে জনসম্মুখে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করলে এ ব্যাপারে অপরাধীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এছাড়া বিবাহ বহির্ভূত যেকোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি বিধান করা এবং বিবাহকে অধিক উৎসাহিত করা ও বয়সের বাধাকে উঠিয়ে দেয়া হৌক।

১০. সংস্কৃতির নামে বর্তমানে যা কিছু হচ্ছে, তার অধিকাংশই মানুষের মনুষ্যত্ব বৃদ্ধি না করে পশুবৃত্তি জাগিয়ে তুলছে। তাই সকল সংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মৌলিক লক্ষ্য যেন নৈতিকতাসম্পন্ন আদর্শ মানুষ সৃষ্টি করা হয়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত যরূরী।

১১. চিকিৎসা ব্যয় হ্রাসের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন রোগ পরীক্ষণ. ঔষধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ঔষধের প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যয় কমিয়ে আনা ইত্যাদি।






আরও
আরও
.