ড. শামসুযযোহা পার্ক, মেহেরপুর ১৮ই নভেম্বর শুক্রবার : অদ্য বাদ জুম‘আ যেলা শহরের ড. শামসুযযোহা পার্কে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ মেহেরপুর যেলার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত যেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত আহবান জানান।
তিনি বলেন, মানব জীবনের সফরসূচী শুরু হয় প্রথমে আল্লাহর নিকট থেকে মায়ের গর্ভে। এটা হ’ল প্রথম মনযিল। এখানে সাধারণতঃ ৯ মাস ১০ দিন থাকার পর ভূমিষ্ঠ হয়ে সে দুনিয়াতে আসে। এটা হ’ল দ্বিতীয় মনযিল বা ‘দারুদ্দুনিয়া’। এখানে সে কমবেশী ৭০ বছর অবস্থান করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার উম্মতের গড় আয়ু ষাট হ’তে সত্তুর বছরের মধ্যে হবে। খুব কম সংখ্যকই তা অতিক্রম করবে’ (তিরমিযী হা/৩৫৫০; মিশকাত হা/৫২৮০)। অতঃপর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে মৃত্যু ও কবরে গমন। এটা হ’ল তৃতীয় মনযিল বা ‘দারুল বারযাখ’। এখান থেকে তার আখেরাতের সফর শুরু হয়। যা শেষ হবে ক্বিয়ামতের দিন। এখানে কবর তার জন্য জান্নাতের টুকরা হবে বা জাহান্নামের গর্ত হবে। অতঃপর ক্বিয়ামতের দিন পুনরুত্থান শেষে সেখানে মানুষের তিনটি সারি হবে। অগ্রগামী দল, ডাইনের সারি ও বামের সারি। প্রথম দু’টি দল জান্নাতী হবে ও বামের সারি জাহান্নামী হবে। এটি হ’ল চতুর্থ মনযিল বা ‘দারুল ক্বারার’। যা হ’ল চূড়ান্ত ঠিকানা। তিনি সকলকে জীবনের সফরসূচী সামনে রেখে আখেরাতে মুক্তির লক্ষে কাজ করার উদাত্ত আহবান জানান।
তিনি সীমান্তের অপরপার্শ্বে নদীয়ার সাথে মেহেরপুরের রাজনৈতিক মানচিত্রের পার্থক্য বলতে গিয়ে ভারতীয় চেতনা বনাম বাংলাদেশী চেতনার মূল পার্থক্য যে ইসলাম, সেটি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন, ইসলামী চেতনাই হ’ল বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল চেতনা। এই চেতনাকে অস্বীকার বা দুর্বল করার অপচেষ্টা থেকে তিনি সবাইকে সাবধান করেন।[1]
সদর উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রধান উপদেষ্টা ও শাহজীপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদের সভাপতি মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, যুববিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার, শূরা সদস্য কাযী হারূণুর রশীদ, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম, ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম, যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ হায়দার আলী প্রমুখ। জাগরণী পরিবেশন করেন ‘আল-‘আওন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ তরীকুয্যামান। সম্মেলনে সঞ্চালক ছিলেন গাংনী উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি আবুল বাশার আব্দুল্লাহ ও সদর উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ রবীউল ইসলাম।
উল্লেখ্য যে, আমীরে জামা‘আত শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহজীপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদে জুম‘আর খুৎবা দেন। অতঃপর বাদ জুম‘আ কয়েকটি যেলার কর্মীদের সাথে মত বিনিময় করেন। অতঃপর প্রতিবেশী মৃত আবুল হোসেনের বাসায় আতিথেয়তা গ্রহণ করেন ও সেখানেই রাত্রি যাপন করেন। পরদিন বাদ ফজর তিনি খুলনা যেলা সম্মেলনের উদ্দেশ্যে দর্শনা রওয়ানা হন। পথিমধ্যে সফরসঙ্গীদের নিয়ে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক মুজিবনগর পরিদর্শন করেন। সেখানে দায়িত্বরত আনসার ব্যাটেলিয়ান সদস্য মুহাম্মাদ কাজল মিয়া (রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ) আমীরে জামা‘আত ও তাঁর সফর সঙ্গীদের সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখান ও বিবরণ তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, সকাল ৮-টার আগে মুজিবনগরের প্রধান ফটক খোলা নিষেধ থাকলেও বিশেষ নির্দেশক্রমে আমীরে জামা‘আত ও তাঁর সফরসঙ্গীদের মাইক্রো ও কয়েকটি হোন্ডাসহ গমনের অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে ব্যাটালিয়ন সদস্যরা আমীরে জামা‘আতকে স্যালুট দিলে তিনি এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে মুছাফাহা করেন এবং বলেন, এটিই সুন্নাত। এর মাধ্যমে তোমরা নেকী পাবে। তাদের মধ্যে জয়পুরহাটের কোমরগ্রামের এক আহলেহাদীছ যুবককে পাওয়া যায়। আমীরে জামা‘আত সবার জন্য দো‘আ করেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে আমীরে জামা‘আত দর্শনা হল্ট স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং স্থলবন্দরে পৌঁছে যাত্রা বিরতি করেন। তখন সেখানে বিজিবি ও বিএসএফ-এর মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং চলছিল। আমীরে জামা‘আত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে রেল লাইনের পাশে মৈত্রী কফি হাউজের সম্মুখে কিছু সময় বসেন। এ সময় কাস্টমস-এর ‘হেল্প বক্সে’ কর্মরত সাঈদুর রহমান নামের জনৈক কমকর্তা কাঁচের ভিতর থেকে আমীরে জামা‘আতকে দেখে ছুটে আসেন এবং সাক্ষাৎ করে বলেন, স্যার! এই মুহূর্তে আমি ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ বই পড়ছিলাম। আর এই বইয়ের মাননীয় লেখক আমার সামনে যেন বিশ্বাসই করতে পারছি না। এসময় তিনি আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে দর্শনা এলাকার সাংগঠনিক দায়িত্বশীলগণও ছুটে আসেন। আমীরে জামা‘আত সকলকে সাংগঠনিক অগ্রগতির জন্য নছীহত করে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। অতঃপর সফরসঙ্গীদের নিয়ে ট্রেন যোগে যথাসময়ে খুলনা পৌঁছেন।