চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই, বিকল্প নেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশেও। মায়ের দুধের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’। ১ থেকে ৭ আগস্ট মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্যকর ধরিত্রীর জন্য মায়ের দুধকে সমর্থন করুন’।

যেকোন মা-ই সফলভাবে দুধ পান করাতে সক্ষম। কিন্তু নানা কারণে সব শিশু এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং বা ছয় মাস অবধি কেবল মাতৃদুগ্ধ পানের সুযোগ লাভে ব্যর্থ হয়। মাতৃদুগ্ধ পান বা ব্রেস্ট ফিডিংয়ের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা সবাই বুঝতে পারলে এ বিষয়ে সবার সচেতনতা বাড়বে। সেজন্য চাই সচেতনতা ও সংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা। জেনে নেওয়া যাক শিশুর বিকাশে মাতৃদুগ্ধ কেন যরূরী?

১. শালদুধ বা কলোস্ট্রাম হলুদাভ ঘন তরল, যা গর্ভাবস্থার শেষ দিক থেকেই স্তন থেকে নিঃসৃত হ’তে শুরু করে। এটি নবজাতকের শ্রেষ্ঠ খাবার। ভূমিষ্ঠ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে মায়ের বুকে তুলে দিতে হবে এই দুধ খাওয়ানোর জন্য। নবজাতককে পানি, মিছরিমিশ্রিত পানি বা মধু এসব কিছুই দিবেন না। প্রথমেই দিবেন এই শালদুধ।

২. জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধই শিশুর পর্যাপ্ত পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আর কোন খাবারের প্রয়োজন নেই, এমনকি আলাদা পানিও না। ছয় মাস থেকে অন্যান্য খাবার একটু একটু করে ধাপে ধাপে শুরু হবে কিন্তু মাতৃদুগ্ধ পান চালিয়ে যেতে পারবেন একেবারে দুই বছর বয়স পর্যন্ত।

৩. প্রি-ম্যাচিউর, অসুস্থ, সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ বা কম ওযনবিশিষ্ট শিশুকেও মায়ের দুধ অবিলম্বে দিতে হবে। সেই শিশু যদি হাসপাতালে ইনকিউবেটরে বা আইসিইউতে থাকে, তাহ’লেও মা বারবার গিয়ে বা দরকার হ’লে টেনে পাত্রে নিয়ে দুধ দেবেন বা প্রয়োজনে কাপে, চামচে বা নাকের নল দিয়ে পান করাতে হবে।

৪. মায়ের দুধে নানা রকম ইমিউনোগ্লোবিউলিন, অ্যান্টিবডি এবং রোগপ্রতিরোধক থাকে, যা শিশুকে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। যেসব শিশু প্রথম ছয় মাস এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং করেনি, তাদেরই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া প্রভৃতির সংক্রমণ বেশী হয়।

৫. শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণে ও শারীরিক গঠন বৃদ্ধিতে যে অ্যামাইনো অ্যাসিড, প্রোটিন, শর্করা ও চর্বির সুসমন্বয় দরকার, তা মায়ের দুধেই আছে। আর বয়স অনুপাতে এর পরিমাণ মাত্রা পরিবর্তিত হয়। তাই মায়ের দুধই আদর্শ ও সুষম খাবার।

৬. শিশুর পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্র মায়ের দুধের ভিটামিন, খনিজ ও এনজাইম সম্পূর্ণরূপে শোষণ করতে ও কাজে লাগাতে সক্ষম ও প্রস্ত্তত। অন্য কোন দুধের হজমের জন্য প্রস্ত্তত নয়। মায়ের দুধে শিশুর বদহজম বা অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি নেই।

৭. মায়ের দুধে থাকা উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে এবং এটি ভিটামিন ডি হরমোন তৈরিতে সহায়ক।

৮. মায়ের দুধের ওপর নির্ভরশীল শিশু প্রথম বছরে তিন গুণ ওযন লাভ করে এটা গবেষণালব্ধ সত্য। তাই বুকের দুধে স্বাস্থ্য হয় না, এই ধারণা ভুল। যখন অন্যান্য খাবার শুরু হয়ে যায়, তখনো বুকের দুধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ নবজাতক ও আরেকটু বড় শিশু বা টডলাররা (১-৩ বছর বয়সী) এ থেকে উপকার পেয়ে থাকে।

৯. শিশুর আকস্মিক মৃত্যু (সিডস), সর্দি-কাশি বা ফ্লু, কান পাকা, হাঁপানি, একজিমা, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, দন্তরোগ, স্থূলতা, শিশুদের ক্যানসার এবং পরবর্তী জীবনে মানসিক রোগ প্রভৃতি সমস্যা প্রতিরোধে মাতৃদুগ্ধ পানের উপকারিতা আবিষ্কৃত হয়েছে।

১০. বুকের দুধ পান করানোর ফলে মা-ও নানাভাবে উপকৃত হন। যত বেশী স্তন্যপান করানো হবে, তত দ্রুত জরায়ু সংকুচিত হয়ে আগের অবস্থানে ফিরে আসবে। প্রসব-পরবর্তী রক্তপাত কম হয়, মা দ্রুত আগের ওযনে ফিরে আসতে সক্ষম হন। মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে শর্করা কমে আসে দ্রুত। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।

[সংকলিত]






বিষয়সমূহ: চিকিৎসা
আরও
আরও
.