কুরআন
তেলাওয়াত অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ ইবাদাত। এটি যেমন পাঠকারীর জন্য প্রভূত
কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে, তেমনি তেলাওয়াতকারীর পিতা-মাতাও সেই কল্যাণধারায়
সিক্ত হন। যদি কোন সন্তান কুরআন পড়া শেখে, কুরআন তেলাওয়াত করে, কুরআন
মুখস্থ করে এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালানা করে তাহ’লে এতে মৃত পিতা-মাতা
উপকৃত হন। ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে উজ্জ্বল মুকুট পরানো হবে এবং উজ্জ্বল
জান্নাতী পোষাক পরানো হবে।
বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ছাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমতাবস্থায় তাঁকে আমি বলতে শুনেছি যে, ‘তোমরা সূরা বাক্বারাহ শিক্ষা কর। কেননা এটি শিক্ষা করাতে কল্যাণ রয়েছে এবং তা পরিত্যাগ করাতে পরিতাপ রয়েছে। আর বাতিলপন্থীরা (যাদুকররা) এটি (মোকাবেলা করতে) সক্ষম হবে না’। এরপর তিনি কিছু সময় চুপ করে থাকলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমরা সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান শিক্ষা কর। কেননা সে দু’টি যেন সমুজ্জ্বল জ্যোতি। এ দু’টি ক্বিয়ামতের দিন তার পাঠকের জন্য উপস্থিত হবে যেন সে দু’টি গামামা তথা দু’খন্ড মেঘ। কিংবা (তিনি বলেছিলেন) সে দু’টি গায়ায়া তথা মেঘ বা বাদল। কিংবা যেন সে দু’টি ডানা বিস্তারকারী পাখীর দু’টি ঝাঁক।
ক্বিয়ামতের দিন যখন কবর বিদীর্ণ হবে তখন কুরআন তার পাঠকের নিকট জীর্ণ-শীর্ণ লোকের অবয়বে উপস্থিত হয়ে বলবে, তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ? তখন লোকটি বলবে, আমি তোমাকে চিনি না। তখন কুরআন বলবে, আমিই তোমার সাথী, কুরআন। এই আমিই তোমাকে দিনে পিপাসার্ত-পরিশ্রান্ত করেছি এবং রাতে বিনিদ্র রেখেছি। প্রত্যেক ব্যবসায়ী ব্যবসায় মুনাফা লাভ করে, আর আজকে তুমিও তোমার সকল ব্যবসার মুনাফা লাভ করবে। তখন তার ডান হাতে রাজত্ব দান করা হবে এবং বাম হাতে অমরত্ব দান করা হবে। আর তার মাথায় মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। আর তার মাতা-পিতাকে দুই প্রস্ত পোষাক পরিধান করানো হবে, যা দুনিয়াতে তাদের জন্য তৈরী করা হয়নি। তখন তারা উভয়ে বলবে, আমাদেরকে এ পোষাক পরিধান করানো হ’ল (কেন)? তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের সন্তানদের কুরআন শিক্ষা করার জন্য। তখন তাকে (কুরআন পাঠকারীকে) বলা হবে, তুমি পাঠ করতে থাক এবং জান্নাতের সিঁড়ি ও কামরা বেয়ে উপরে আরোহণ করতে থাক। তার দ্রুত বা ধীর পাঠ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার আরোহণ করা চলতেই থাকবে’ (দারেমী হা/৩৩৯১; আহমাদ হা/২৩০০০; ছহীহাহ হা/২৮২৯)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَتَعَلَّمَهُ وَعَمِلَ بِهِ أُلْبِسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَاجًا مِنْ نُورٍ ضَوْءُهُ مِثْلُ ضَوْءِ الشَّمْسِ، وَيُكْسَى وَالِدَيْهِ حُلَّتَانِ لَا يَقُومُ بِهِمَا الدُّنْيَا فَيَقُولَانِ: بِمَا كُسِينَا؟ فَيُقَالُ: بِأَخْذِ وَلَدِكُمَا الْقُرْآنَ– ‘যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করবে, কুরআনের ইলম অর্জন করবে ও সে অনুসারে আমল করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাঁর পিতা-মাতাকে নূরের মুকুট পরানো হবে। যার আলো সূর্যের আলোর মতো। আর তাঁর পিতা-মাতাকে দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে মূল্যবান দু’টি পোষাক পরানো হবে। তারা বলবেন, কিসের জন্য আমাদের এসব পোষাক পরানো হচ্ছে? তাঁদেরকে বলা হবে, তোমাদের সন্তান কুরআনকে গ্রহণ করেছে, এজন্য তোমাদেরকে এভাবে সম্মানিত করা হচ্ছে’ (হাকেম হা/২০৮৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৩৪)।
শিক্ষা :
১. পবিত্র কুরআন শিক্ষাকারীর জন্য ক্বিয়ামতের দিন কুরআন তার সঙ্গী হবে।
২. কুরআন তেলাওয়াতকারীর সম্মানার্থে ক্বিয়ামতের দিন তাকে নূরের মুকুট পরানো হবে।
৩. সেদিন কুরআন তেলাওয়াতকারীকে বলা হবে, পাঠ কর এবং উপরে উঠতে থাক। তোমার তেলাওয়াতের শেষ আয়াত পর্যন্ত হবে তোমার শেষ মনযিল।
৪. তেলাওয়াতকারীর পিতা-মাতাও পরকালে উপকৃত হবেন এবং তাদেরকেও সম্মানের পোষাক পরিধান করানো হবে।
পরিশেষে বলব, আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআন শিক্ষা করার এবং তেলাওয়াত করার তাওফীক দিন। সেই সাথে আমাদের সন্তান-সন্ততিকে কুরআন শেখার ও কুরআনের ধারক ও বাহক হওয়ার তাওফীক দিন-আমীন!
মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
নিয়ামতপুর, নওগাঁ।