
মানব সমাজে আদিকাল থেকে নেতা নির্বাচনের বিষয়টি চলে এসেছে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব ব্যতীত সমাজ সুন্দর ও সুচারুরূপে চলে না। তাই সুশৃঙ্খল সমাজের জন্য একজন ন্যায়বিচারক শাসক আবশ্যক। কিন্তু কিভাবে এই নেতা নির্বাচিত হবে, সে বিষয়ে বর্তমান বিশ্বে নানা পদ্ধতি চলমান রয়েছে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতি অনুসরণ করা যরূরী। আবুবকর, ওমর, ওছমান ও আলী (রাঃ) ইসলামের এই চার খলীফা নির্বাচনের পদ্ধতি অবলম্বনে মুসলিম সমাজে নেতা মনোনীত হ’লে ফেৎনা-ফাসাদ থেকে মুক্তি পেত মানুষ। সমাজের সর্বত্র প্রবাহিত হত শান্তির সুবাতাস। নিম্নে ওছমান (রাঃ)-এর খলীফা মনোনয়নের ঘটনা উল্লেখ করা হ’ল।-
আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে আহত হবার কিছুদিন পূর্বে মদীনায় দেখেছি যে, তিনি হুযায়ফাহ ইবনু ইয়ামান (রাঃ) ও ওছমান ইবনু হুনায়ফ (রহঃ)-এর নিকট দাঁড়িয়ে তাঁদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন, তোমরা এটা কি করলে? তোমরা এটা কি করলে? তোমরা কি আশঙ্কা করছ যে, তোমরা ইরাক ভূমির উপর যে কর ধার্য করেছ তা বহনে ঐ ভূখন্ড অক্ষম? তারা বললেন, আমরা যে পরিমাণ কর ধার্য করেছি, ঐ ভূখন্ড তা বহনে সক্ষম। এতে বাড়তি কোন বোঝা চাপানো হয়নি। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, তোমরা আবার চিন্তা করে দেখ যে, তোমরা এ ভূখন্ডের উপর যে কর আরোপ করেছ তা বহন সক্ষম কি-না? বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা বললেন, না। অতঃপর ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তবে ইরাকের বিধবাগণকে এমন অবস্থায় রেখে যাব, যেন তারা আমার পরে কখনো অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর চতুর্থ দিন তিনি আহত হ’লেন। যেদিন ভোরে তিনি আহত হন, আমি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং তাঁর ও আমার মাঝে আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। ওমর (রাঃ) দু’কাতারের মধ্য দিয়ে চলার সময় বলতেন, কাতার সোজা করে নাও। যখন দেখতেন কাতারে কোন ত্রুটি নেই তখন তাকবীর বলতেন। তিনি অধিকাংশ সময় সূরা ইউসুফ, সূরা নাহল অথবা এ ধরনের সূরা প্রথম রাক‘আতে তিলাওয়াত করতেন, যেন অধিক পরিমাণে লোক প্রথম রাক‘আতে শরীক হ’তে পারেন। তাকবীর বলার পরেই আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, একটি কুকুর আমাকে আঘাত করেছে অথবা বলেন, আমাকে আক্রমণ করেছে। ঘাতক ইলজ দ্রুত পলায়নের সময় দু’ধারী খঞ্জর দিয়ে ডানে বামে আঘাত করে চলছে। এভাবে তের জনকে আহত করল। এদের মধ্যে সাত জন শহীদ হ’লেন।
এ অবস্থা দেখে এক মুসলিম তার লম্বা চাদরটি ঘাতকের উপর ফেলে দিলেন। ঘাতক যখন বুঝতে পারল সে ধরা পড়ে যাবে তখন সে আত্মহত্যা করল। ওমর (রাঃ) আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ)-এর হাত ধরে সামনে এগিয়ে দিলেন। ওমর (রাঃ)-এর নিকটে যারা ছিল শুধুমাত্র তারাই ব্যাপারটি দেখতে পেল। আর মসজিদের শেষে যারা ছিল তারা ব্যাপারটি এর অধিক বুঝতে পারল না যে, ওমর (রাঃ)-এর কন্ঠস্বর শুনা যাচ্ছে না। তাই তারা ‘সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ’ বলতে লাগলেন। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) তাঁদেরকে নিয়ে সংক্ষেপে ছালাত শেষ করলেন। যখন মুছল্লীগণ চলে গেলেন, তখন ওমর (রাঃ) বললেন, হে ইবনু আববাস (রাঃ)! দেখ তো কে আমাকে আঘাত করল। তিনি কিছুক্ষণ অনুসন্ধান করে এসে বললেন, মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ)-এর গোলাম (আবূ লুলু)। ওমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ঐ কারিগর গোলামটি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তার সর্বনাশ করুন। আমি তার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার মৃত্যু ইসলামের দাবীদার কোন ব্যক্তির হাতে ঘটাননি।
হে ইবনু আববাস! তুমি ও তোমার পিতা মদীনায় কাফের গোলামের সংখ্যা বৃদ্ধি পসন্দ করতে। আববাস (রাঃ)-এর নিকট অনেক অমুসলিম গোলাম ছিল। ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, যদি আপনি চান তবে আমি কাজ করে ফেলি অর্থাৎ আমি তাদেরকে হত্যা করে ফেলি। ওমর (রাঃ) বললেন, তুমি ভুল বলছ। কেননা তারা তোমাদের ভাষায় কথা বলে, তোমাদের কিবলামুখী হয়ে ছালাত আদায় করে, তোমাদের মত হজ্জ করে। অতঃপর তাঁকে তাঁর ঘরে নেয়া হ’ল। আমরা তাঁর সঙ্গে চললাম। মানুষের অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছিল, ইতিপূর্বে তাদের উপর এত বড় মুছীবত আর আসেনি। কেউ কেউ বলছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। আবার কেউ বলছিলেন, আমি তাঁর সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি।
অতঃপর খেজুরের শরবত আনা হ’ল, তিনি তা পান করলেন। কিন্তু তা তাঁর পেট হ’তে বেরিয়ে পড়ল। অতঃপর দুধ আনা হ’ল, তিনি তা পান করলেন; তাও তাঁর পেট হ’তে বেরিয়ে পড়ল। তখন সকলেই বুঝতে পারলেন, তাঁর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হ’লাম। অন্যান্য লোকজনও আসতে শুরু করল। সকলেই তাঁর প্রশংসা করতে লাগল। তখন যুবক বয়সী একটি লোক এসে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার জন্য আল্লাহর সু-সংবাদ রয়েছে, আপনি তা গ্রহণ করুন। আপনি নবী করীম (ছাঃ)-এর সাহচর্য গ্রহণ করেছেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগেই আপনি তা গ্রহণ করেছেন, যে সম্পর্কে আপনি নিজেই অবগত আছেন অতঃপর আপনি খলীফা হয়ে ন্যায় বিচার করেছেন। অতঃপর আপনি শাহাদত লাভ করেছেন। ওমর (রাঃ) বললেন, আমি পসন্দ করি যে, তা আমার জন্য ক্ষতিকর বা লাভজনক না হয়ে সমান সমান হয়ে যাক। যখন যুবকটি চলে যেতে উদ্যত হ’ল তখন তার লুঙ্গিটি মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছিল। ওমর (রাঃ) বললেন, যুবকটিকে আমার নিকট ডেকে আন। তিনি বললেন, হে ভাতিজা! তোমার কাপড়টি উঠিয়ে নাও। এটা তোমার কাপড়ের পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং তোমার রবের নিকটও পসন্দনীয়। হে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর! তুমি হিসাব করে দেখ আমার ঋণের পরিমাণ কত। তাঁরা হিসাব করে দেখতে পেলেন ছিয়াশি হাযার (দিরহাম) বা এর কাছাকাছি। তিনি বললেন, যদি ওমরের পরিবার-পরিজনের মাল দ্বারা তা পরিশোধ হয়ে যায়, তবে তা দিয়ে পরিশোধ করে দাও। অন্যথা আদি ইবনু কা‘ব এর বংশধরদের নিকট হ’তে সাহায্য গ্রহণ কর। তাদের মাল দিয়েও যদি ঋণ পরিশোধ না হয় তবে কুরাইশ কবীলা হ’তে সাহায্য গ্রহণ করবে, এর বাইরে কারো সাহায্য গ্রহণ করবে না। আমার পক্ষ হ’তে তাড়াতাড়ি ঋণ আদায় করে দাও। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)-এর খিদমতে তুমি যাও এবং বল ওমর আপনাকে সালাম পাঠিয়েছে। ‘আমীরুল মুমিনীন’ শব্দটি বলবে না। কেননা এখন আমি মুমিনগণের আমীর নই। তাঁকে বল, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব তাঁর সাথীদ্বয়ের পাশে দাফন হবার অনুমতি চাচ্ছেন।
ইবনু ওমর (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-এর খিদমতে গিয়ে সালাম জানিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, প্রবেশ কর, তিনি দেখলেন, আয়েশা (রাঃ) বসে বসে কাঁদছেন। তিনি গিয়ে বললেন, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন হবার জন্য আপনার অনুমতি চেয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) বললেন, তা আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু আজ আমি এ ব্যাপারে আমার উপরে তাঁকে অগ্রগণ্য করছি।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) যখন ফিরে আসছেন তখন বলা হ’ল- এই যে আব্দুল্লাহ ফিরে আসছে। তিনি বললেন, আমাকে উঠিয়ে বসাও। তখন এক ব্যক্তি তাকে ঠেস দিয়ে বসিয়ে ধরে রাখলেন। ওমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কি সংবাদ? তিনি বললেন, আমীরুল মুমিনীন! আপনি যা কামনা করেছেন, তাই হয়েছে, তিনি অনুমতি দিয়েছেন। ওমর (রাঃ) বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে বড় কোন বিষয় আমার নিকট ছিল না। যখন আমার মৃত্যু হয়ে যাবে তখন আমাকে উঠিয়ে নিয়ে, তাঁকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। যদি তিনি অনুমতি দেন, তবে আমাকে প্রবেশ করাবে আর যদি তিনি অনুমতি না দেন তবে আমাকে সাধারণ মুসলিমদের কবরস্থানে নিয়ে যাবে। এ সময় উম্মুল মুমিনীন হাফছাহ (রাঃ)-কে কতিপয় মহিলাসহ আসতে দেখে আমরা উঠে পড়লাম। হাফছাহ (রাঃ) তাঁর নিকট গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। অতঃপর পুরুষরা এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে, তিনি ঘরের ভিতর গেলে ঘরের ভেতর হ’তেও আমরা তাঁর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি অছিয়ত করুন এবং খলীফা মনোনীত করুন।
ওমর (রাঃ) বললেন, খিলাফতের জন্য এ কয়েকজন ছাড়া অন্য কাউকে আমি যোগ্যতম পাচ্ছি না, যাঁদের প্রতি নবী করীম (ছাঃ) তার মৃত্যুর সময় রাযী ও খুশী ছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের নাম বললেন, আলী, ওছমান, যুবায়ের, ত্বালহা, সা‘দ ও আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এবং বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) তোমাদের সঙ্গে থাকবে। কিন্তু সে খিলাফত লাভ করতে পারবে না। তা ছিল শুধু সান্তবনা মাত্র। যদি খিলাফতের দায়িত্ব সা‘দের (রাঃ) উপর ন্যস্ত করা হয় তবে তিনি এর জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। আর যদি তোমাদের মধ্যে অন্য কেউ খলীফা নির্বাচিত হন তবে তিনি যেন সর্ববিষয়ে সা‘দের সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। আমি তাঁকে অযোগ্যতা বা খিয়ানতের কারণে অপসারণ করিনি।
আমার পরের খলীফাকে আমি অছিয়ত করছি, তিনি যেন প্রথম যুগের মুহাজিরগণের হক সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তাদের মান-সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন। আমি তাঁকে আনছার ছাহাবীগণ, যাঁরা মুহাজিরগণের আসার আগে এই নগরীতে (মদীনায়) বসবাস করে আসছেন এবং ঈমান এনেছেন, তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার অছিয়ত করছি। তাঁদের মধ্যে নেককারগণের ওযর-আপত্তি যেন গ্রহণ করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে কারোর ভুল-ত্রুটি হ’লে তা যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। আমি তাঁকে এ অছিয়তও করছি যে, তিনি যেন রাজ্যের বিভিন্ন শহরের আধিবাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করেন। কেননা তাঁরাও ইসলামের হিফাযতকারী এবং তারাই ধন-সম্পদের যোগানদাতা। তারাই শত্রুদের চোখের কাঁটা। তাদের হ’তে তাদের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে কেবলমাত্র তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ যেন যাকাত আদায় করা হয়। আমি তাঁকে পল্লীবাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করারও ওছিয়ত করছি। কেননা তারাই আরবের ভিত্তি এবং ইসলামের মূল শক্তি। তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ এনে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে যেন বিলিয়ে দেয়া হয়। আমি তাঁকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর যিম্মীদের (অমুসলিম সম্প্রদায়) বিষয়ে অছিয়ত করছি যে, তাদের সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার যেন পূরণ করা হয়। তাদের পক্ষাবলম্বনে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি-সামর্থ্যের অধিক জিযিয়া যেন চাপানো না হয়। (রাবী বলেন) ওমর (রাঃ)-এর মৃত্যু হয়ে গেলে আমরা তাঁর লাশ নিয়ে পায়ে হেঁটে চললাম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে সালাম করলেন এবং বললেন, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) অনুমতি চাচ্ছেন। আয়েশা (রাঃ) বললেন, তাকে প্রবেশ করাও।
অতঃপর তাঁকে প্রবেশ করানো হ’ল এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন করা হ’ল। যখন তাঁর দাফন কাজ শেষ হ’ল, তখন ঐ ব্যক্তিবর্গ একত্রিত হ’লেন। তখন আব্দুর রহমান (রাঃ) বললেন, তোমরা তোমাদের বিষয়টি তোমাদের মধ্য হ’তে তিনজনের উপর ছেড়ে দাও। তখন যুবায়ের (রাঃ) বললেন, আমি আমার বিষয়টি আলী (রাঃ)-এর উপর অর্পণ করলাম। তবালহা (রাঃ) বললেন, আমার বিষয়টি ওছমান (রাঃ)-এর উপর ন্যস্ত করলাম। সা‘দ (রাঃ) বললেন, আমার বিষয়টি আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ)-এর উপর ন্যস্ত করলাম। অতঃপর আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) ওছমান ও আলী (রাঃ)-কে বললেন, আপনাদের দু’জনের মধ্যেকার কে এই দায়িত্ব হ’তে অব্যাহতি পেতে ইচ্ছা করেন? এ দায়িত্ব অপর জনের উপর অর্পণ করব। আল্লাহ ও ইসলামের হক আদায় করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব হবে। কে অধিকতর যোগ্য সে সম্পর্কে দু’জনেরই চিন্তা করা উচিত। তাঁরা চুপ থাকলেন। তখন আব্দুর রহমান (রাঃ) নিজেই বললেন, আপনারা এ দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করতে পারেন কি? আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আপনাদের মধ্যকার যোগ্যতম ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে একটুও ত্রুটি করব না। তাঁরা উভয়ে বললেন, হ্যাঁ। তাদের একজনের হাত ধরে বললেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে আপনার যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা এবং ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামিতা আছে তা আপনিও ভালভাবে জানেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এটা আপনার জন্য যরূরী হবে যে, যদি আপনাকে খলীফা মনোনীত করি তাহ’লে আপনি ইনছাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। আর যদি ওছমান (রাঃ)-কে মনোনীত করি তবে আপনি তাঁর কথা শুনবেন এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকবেন। অতঃপর তিনি অপর জনের সঙ্গে একান্তে অনুরূপ কথা বললেন। এভাবে অঙ্গীকার গ্রহণ করে তিনি বললেন, হে ওছমান (রাঃ)! আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) তাঁর হাতে বায়‘আত করলেন। অতঃপর আলী (রাঃ) ওছমান (রাঃ)-এর হাতে বায়‘আত করলেন। তারপর মদীনাবাসীগণ এগিয়ে এসে সকলেই বায়‘আত করলেন’ (বুখারী হা/৩৭০০)।
১. ইমাম কাতার ঠিক করার জন্য কাতারের মধ্যে গমন করতে পারেন।
২. ছালাত ছেড়ে দিয়ে শত্রুকে ধরার চেষ্টা করা যায়।
৩. মুছল্লীরা যাতে জামা‘আতে শরীক হ’তে পারে সে জন্য প্রথম রাক‘আতে দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করা যায়।
৪. ইমাম অসুস্থ হ’লে মুছল্লীদের মধ্যে থেকে কাউকে ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া যায়।
৫. কোন কর্মীর মাঝে ত্রুটি দেখলে নেতা সংশোধন করে দিবেন।
৬. কারো ঋণ থাকলে ঋণপরিশোধের জন্য ওয়ারিছদের তাকীদ করা।
৭. মুত্তাক্বী-পরহেযগার ব্যক্তির পার্শ্ববর্তী স্থানে কবরস্থ হওয়ার আশা করা যায়।
৮. নেতা তার পরবর্তী দায়িত্বশীল মনোনয়নের জন্য শূরাপরিষদ গঠন করে দিয়ে যাবেন। সেই সাথে তিনি পরবর্তী দায়িত্বশীলকে অছিয়ত করে যাবেন।
৯. জনগণের উপরে সাধ্যাতীত করারোপ করা উচিত নয়।
১০. শূরার মাধ্যমে নেতা বা খলীফা মনোনীত হ’লে তার আনুগত্য করা সবার জন্য আবশ্যক হয়ে যায়।
-আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ
নওদাপাড়া, রাজশাহী।