সাইফুল আজম, যিনি আকাশপথে যুদ্ধের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরাঈলী বিমান ভূপাতিত করার রেকর্ডধারী। যিনি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, জর্ডান ও ইরাকের বিমানবাহিনীর বৈমানিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যিনি বৈমানিক হিসাবে অসামান্য অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনী কর্তৃক বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ঈগলস’-এর একজন হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। লড়াকু এই আকাশ যোদ্ধা গত ১৪ই জুন ঢাকার সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

পাবনার অধিবাসী সাইফুল আজম ১৯৬০ সালে জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসাবে যোগ দেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে। অতঃপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৬৩ সালে যোগ দেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ঢাকা কেন্দ্রে। এরপর তিনি প্রশিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান করাচীর মৌরিপুরের বিমান ঘাঁটিতে। এখানেই তিনি বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানকে প্রশিক্ষণ দেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের পক্ষে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা ‘সিতারা-ই-জুরাত’ এ ভূষিত হন। ১৯৬৬ সালে জর্ডানের বিমানবাহিনীতে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি হিসাবে যান সাইফুল আজম। সেখানে তিনি উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেন। ১৯৬৭ সালের জুন মাসে তৃতীয় আরব-ইসরাঈল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ইরাকী বিমানবাহিনীতে বদলী হন তিনি। এসময় তিনি ইসরাঈলী বিমানবাহিনীর কয়েকটি বিমান আক্রমণ ভন্ডুল করে দেন এবং মাত্র ৭২ ঘন্টায় তিনটি ইসরাঈলী বিমান ভূপাতিত করেন। এই কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ জর্ডান থেকে সাইফুল আজমকে ‘হুসাম-ই-ইস্তিকলাল’ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।

১৯৭১ সালে সাইফুল আজম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের শুরুতেই তাঁর ওপর পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে সাময়িকভাবে উড্ডয়ন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। স্বাধীনতার পর  তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৭ সালে তাকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঢাকা ঘাঁটির অধিনায়ক করা হয়। পরবর্তীতে দু’বার তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ১৯৯১-৯৬ সালে পাবনা-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ারভাইস মার্শাল ফখরুল আজম তার আপন ভাই।






আরও
আরও
.