এবারের
বাজেট উপস্থাপনকালে সংসদের পরিবেশে যেমন ভিন্নতা ছিল তেমনি বাজেট
বক্তৃতায়ও ছিল নতুনত্ব। করোনার কারণে বাজেট বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করে ৫২
মিনিটে শেষ করা হয়। অধিকাংশ বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করা হয়। আর অর্থমন্ত্রীর
বক্তৃতার একটি বড় অংশ উপস্থাপিত হয় ডিজিটাল মাধ্যমে। এর বাইরে এবারের
বাজেট বক্তৃতায় সুন্দর যে উদাহরণটি সৃষ্টি হয়েছে সেটা হ’ল পবিত্র কুরআনের
আয়াতের উদ্ধৃতি। এছাড়া অর্থমন্ত্রীর কণ্ঠে চলমান করোনা দুর্যোগ থেকে
আল্লাহর কাছে বিনীত প্রার্থনার বিষয়টিও দৃষ্টি কেড়েছে সবার।
বাজেট বক্তৃতায় চলমান করোনা মহামারীকে অর্থমন্ত্রী আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য কঠিন পরীক্ষা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এর সপক্ষে তিনি সূরা বাক্বারার ১৫৫ নম্বর আয়াত উপস্থাপন করেন, যেখানে বলা হয়েছে, ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও’। অতঃপর সূরা শরহ-এর ৫ নম্বর আয়াত উল্লেখ করে আশার বাণী শুনিয়েছেন মন্ত্রী। যেখানে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে’। এছাড়া তিনি আরো কয়েকটি আয়াতের উদ্ধৃতি পেশ করেন।
বাজেট বক্তৃতা শেষ করার আগে মহান আল্লাহর দরবারে অর্থমন্ত্রীর বিনীত প্রার্থনাও দৃষ্টি কেড়েছে। এসময় তিনি হাত তুলে বলেন, শেষ করার আগে মহান আল্লাহর নিকটে আমার বিনীত প্রার্থনা ‘ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিরহমাতিকা আস্তাগীছ’। হে আমাদের প্রভু! তোমার রহমত থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না। আমরা তোমার উপর ভরসা করি ও তোমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি। হে আমাদের প্রভু! তুমি যদি রক্ষা না করো, তবে আমাদের রক্ষা করবে কে?
তিনি বাজেট বক্তৃতা শেষ করেছেন এভাবে- তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলকু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। সালামুন ‘আলাল মুরসালীন। ওয়ালহামদুলিল্লাহি রবিবল ‘আলামীন। সবশেষে তিনি আল্লাহর দরবারে করোনার দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে একটি সুন্দর সকালের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তার স্মরণীয় বক্তৃতাটি সমাপ্ত করেন।
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী তার বিভিন্ন বক্তৃতায় প্রায়ই কুরআনের উদ্ধৃতি দেন। এমনটি অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রোগ্রামেও মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রায়ই কুরআনের আলোচনায় চলে যান। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতি স্বাবলম্বী করতে যাকাতের ব্যাপারে তিনি সব সময় জোর দিয়ে থাকেন।
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে দেশের আলেমগণ এটাকে আল্লাহর আযাব ও পরীক্ষা হিসাবে আখ্যায়িত করলে কথিত অনেক সুশীল ব্যক্তি এর কড়া সমালোচনা করেন। এমনকি এমপি-মন্ত্রীদের মুখেও করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা, করোনার চেয়ে আমরা শক্তিশালী ইত্যাদি দাবী করতে দেখা যায়। তবে বৈশ্বিক অবস্থা যখন ভয়াবহ রূপ নেয় তখন তারা চুপসে যান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালে বিভিন্ন প্রোগ্রামে করোনার কাছে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অসহায়ত্ব তুলে ধরেন। আল্লাহর এই আযাবের সামনে নিজেরা কতটা শক্তিহীন সেটা অকপটে স্বীকার করেন।