এক গ্রামে এক পরহেযগার আলেম বাস করতেন। তিনি প্রত্যেক কাজে আল্লাহর প্রতি ভরসা করতেন। তার কাছে কেউ দো‘আ চাইলে তিনি বিদ‘আতী পন্থা ত্যাগ করে সুন্নাতী পন্থায় দো‘আ করতেন। আর তাহ’ল তিনি ছালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দো‘আ করার পদ্ধতি জানতেন। দো‘আর পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বর্ণনা করেন, আওত্বাসের যুদ্ধে আবু আমের (রাঃ)-এর দেহে তীর লাগলে তিনি আমাকে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এ বলে পাঠালেন যে, তুমি আমার পক্ষ থেকে রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম পৌছে দিবে এবং আমার জন্য ক্ষমা চাইতে বলবে। আমি রাসূল (ছাঃ)-কে গিয়ে সংবাদ দিলে তিনি ওযূর পানি নিয়ে ডাকলেন। ওযূ করে দু’হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ!  ঊবায়েদ আবু আমেরকে ক্ষমা করে দাও। (রাবী বলেন,) আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি আরো প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তোমার সৃষ্ট মানুষের অনেকের ঊর্ধ্বে তার মর্যাদা করে দাও’ (বুখারী হা/৪৩২৩)

পরহেযগার আলেমের এক মহিলা প্রতিবেশী ছিল। সেও দ্বীন-ইসলামের বিধান পালন করত। যারা ইসলামের বিধান পালন করে তাদের উপর বিপদ-আপদ বেশী আসে। একদিন পুলিশ এসে মহিলার একমাত্র ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। তখন মহিলা বুযুর্গ পরহেযগার ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল, আমার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি থানায় গিয়ে সুপারিশ করুন। যাতে আমার ছেলেকে মারধর না করা হয়, রিমান্ডে না নেওয়া হয় বা হত্যা না করা হয়। একথা শুনে ঐ লোক ওযূ করে ছালাত আদায় করতে লাগলেন এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে ছালাত আদায় করলেন। কারণ তিনি জানতেন পুলিশকে সুপারিশ করে কোন কাজ হবে না। এরা নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। এদিকে মহিলা তা দেখে কাঁদতে লাগল এবং বলল, আমি আসলাম তাকে সুপারিশের অনুরোধ করতে, আর তিনি ছালাত আদায় করতে শুরু করলেন? যখন বুযুর্গ ছালাত শেষ করলেন তখন মহিলা বলল, আমি আমার ছেলেদের ব্যাপারে সুপারিশের জন্য এসেছিলাম আর আপনি সুপারিশ না করে নফল ছালাত আদায় করতে শুরু করলেন?

তিনি উত্তরে বললেন, আমি তোমার জন্য সুপারিশই তো করছিলাম। আমি তোমার সন্তানের মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করেছি। আর এটাই সবচেয়ে বড় সুপারিশ। তিনি যাকে মুক্ত করবেন, তাকে কেউ আটক রাখতে পারবে না।

এ বুযুর্গ মুছাল্লা থেকে উঠে না দাঁড়াতেই অন্য এক মহিলা এ মহিলাকে ডাকতে এসে বলল, বোন! তোমার বরকত হোক, তোমার কল্যাণ হোক! তোমার ছেলেকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। সে বাড়ীতে ফিরে এসেছে। একথা শোনা মাত্রই ঐ মহিলা বাড়ী ফিরে আসল। মহিলা বুঝতে পারল বিপদ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। যেমন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (ছাঃ)-এর নিকট যখন কোন কাজ কঠিন হয়ে যেত, তখন তিনি ছালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন (আবূদাউদ হা/১৩১৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭০৩)

বিপদ থেকে মুক্তির ব্যাপারে ছালাতের চেয়ে বড় হাতিয়ার আর কিছু নেই। ছালাত আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়তে, তাঁর নিকটতর হ’তে এবং তাঁর সাথে কথোপকথনের মাধ্যম। সিজদার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।

মুসলিম ভাইগণ! আল্লাহ দো‘আ কবুলের মালিক, আর আমরা তার ইবাদতকারী বান্দা। সিজদায় বেশী বেশী দো‘আ করতে হবে, তাহ’লে আমাদের দো‘আ কবুল হবে এবং আমরা ক্ষমা লাভ করব। যে সমস্যায় পতিত হয়েছে তার উচিত স্বীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা, যাতে  আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। কেননা তাঁরই হাতে সমস্ত ক্ষমতা, তাঁরই দুই আঙ্গুলের মাঝে রয়েছে মানুষের অন্তর, যেমন খুশি তেমনভাবে তিনি তা উলট-পালট করেন। হাদীছে এসেছে, আদম সন্তানের অন্তর আল্লাহ তা‘আলার দুই আঙ্গুলের মাঝে একটি অন্তরের মত। তিনি যেভাবে খুশী সেভাবে তা উলট-পালট করেন। তাই মুসলিম বান্দার উচিত তার সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ছালাতের মাধ্যমে দো‘আ করা। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে সেই শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ছালাতের মাধ্যমে দো‘আ করার তাওফীক দিন-আমীন!

* আব্দুর রহীম

নিয়ামতপুর, নওগাঁ।






আরও
আরও
.