সম্পূর্ণ মাটিবিহীন পাত্রে বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা আঙ্গিনায় একই সাথে শাক-সবজি ও মাছ উৎপাদনের নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ সালাম। গবেষণাগার হিসাবে নিজের বাসার ছাদকে বেছে নিয়ে মাত্র ১০ বর্গমিটার জায়গায় চাষ করছেন স্ট্রবেরী, লেটুস, বেগুন, স্কোয়াশ, টমেটো, ওলকপি, পুদিনা, কলা, আমড়াসহ আরও অনেক শাক-সবজি ও ফল। বাঁশের মাচা তৈরি করে মাটিবিহীন প্লাস্টিকের পাত্রে চাষ করেন ঐ সকল শাক-সবজি। পানি ভাসমান অবস্থায় কোন প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করেই শুধুমাত্র মাছের পানিকে ব্যবহার করেই উৎপাদিত হয় ড. আব্দুস সালামের বাসার শাক-সবজি। এতে করে একদিকে পানির পরিমাণ কম লাগে, অন্যদিকে অপরিষ্কার পানিটি বিভিন্ন ধাপে পরিশোধিত হয়ে পুনরায় ট্যাংকে ফিরে আসে। ঐ পানিতেই থাকে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

একটি প্লাস্টিকের পানির ট্যাঙ্কের উপরের মাথা কেটে পানি দিয়ে পূর্ণ করে তাতে প্রতি ১০ লিটার পানিতে একটি তেলাপিয়া মাছের পোনা ছেড়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী দুই বেলা ভাসমান খাবার সরবরাহ করা হয়। এখানে শুধু তেলাপিয়াই নয়, শোল, মাগুর ইত্যাদি মাছও চাষ করা যাবে। মাছের ট্যাঙ্কে যাতে অক্সিজেনের অভাব না হয় তার জন্য একটি বায়ু পাম্পের সাহায্যে পানিতে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। এবার মাছের ট্যাঙ্কের পানিকে একটি ছোট্ট পাম্পের সাহায্যে প্রতিটি পাইপের উপর দিয়ে তার মাঝে সরবরাহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে মাছের ট্যাঙ্কে অ্যামোনিয়াযুক্ত দূষিত পানি গাছের শিকড়ের মাঝে বসবাসকারী ডি-নাইট্রিফায়িং ব্যাকটেরিয়া প্রথমে অ্যামোনিয়াকে ভেঙ্গে নাইট্রাইট ও পরে নাইট্রো-ব্যাকটর নাইট্রেটে পরিণত করে। এদিকে ঐ মাছের পানি গাছকে পুষ্টি জোগান দেয় এবং পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি মাছের ট্যাঙ্কে ফিরে আসে।

উদ্ভিদের পুষ্টির জন্য নিজের বাসার খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ, মরা ও পঁচাপাতা পাত্রে জমা রেখে পচন প্রক্রিয়ায় জৈব সার উৎপাদন করে গাছে সরবরাহ করেন বলে জানান ড. আব্দুস সালাম। ডিমের খোসাকে প্রসেসিং করে পাউডার হিসাবেও স্প্রে করে উপকার পেয়েছেন বলেও তিনি জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই পদ্ধতিটিকে যদি সফল বাস্তবায়ন করা যায়, তাহ’লে আমাদের দেশে আগামী প্রজন্মের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা সহজ ও টেকসই হবে। শুধু তাই নয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় এ পদ্ধতি আমাদের দেশের জন্য খুবই উপযোগী হবে।

[ধন্যবাদ  অধ্যাপক  আব্দুস সালামকে। আল্লাহ রূযীর মালিক। তিনি বান্দার রূযীর জন্য আরেক বান্দার মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করে দেন। এক সময় মাটি ভাগ-বাটোয়ারার হিসাবে সন্তান জন্ম দানে কম-বেশীর হিসাব করা হ’ত। যাকে ম্যালথুসিয়ান থিওরী বলা হ’ত। তারই রেশ ধরে এখনও আমাদের দেশ সহ কিছু কিছু দেশের নেতারা একটি সন্তানই যথেষ্ট বলে তাদের জনগণের উপর কঠোরতা আরোপ করে থাকেন। ফলে এখন বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তরুণ কর্মশক্তির অভাবে দেশ ক্রমেই অচল হয়ে যাচ্ছে। অধ্যাপক ছাহেবের উক্ত আবিষ্কারের জন্য সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জানাচ্ছি। অতঃপর আবিষ্কারক-এর প্রতি রইল অশেষ কৃতজ্ঞতা। এর মাধ্যমে সরকার যদি দরিদ্রতার ভয়ে সন্তান কমানোর ফন্দি-ফিকির বাদ দেয়, তাহ’লে সেটাই হবে বড় সফলতা (স.স.)]






আরও
আরও
.