করোনা ভাইরাস
চীনের উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে গত ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। পরিস্থিতি ৩০ কোটি মানব ভ্রূণ হত্যাকারী চীন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় একপর্যায়ে এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘যরূরী স্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। বর্তমানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন রোগী ও মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। আক্রান্তদের শতকরা ৯৯ ভাগই চীনের নাগরিক। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল আতঙ্ক লুকিয়ে রয়েছে বাকী এক শতাংশে! কারণ, তারা চীনের বাইরে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন। প্রতিনিয়ত তাদের থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে অন্যের শরীরে। এভাবেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী দিনে বিশ্বের ৮০ শতাংশ মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হ’তে পারে! কারণ এ ভাইরাসটি ইতিপূর্বেকার সকল ভাইরাসের চাইতে অধিক ছোঁয়াচে। এই ভাইরাসের প্রতিষেধক বের করতে নাকি এখনও ১৮ মাস সময় লাগবে।
বিস্ময়ের ব্যাপার হ’ল, কেবল হালাল খাবারেই করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে চীনের ঝিংঝিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমরা। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন এ রিপোর্ট প্রকাশ করে (০৯.০২.২০২০) বলেছে, যে পরিবেশে তাদের রাখা হয়েছে, তাতে করে তাদেরই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল বেশী। মগজ ধোলাইয়ের নামে বিভিন্ন বন্দী শিবিরে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে রাখা হয়েছে অস্বাস্থ্যকর মানবেতর পরিবেশের মধ্যে। তাদের মেয়েদের ঔষধের মাধ্যমে জোর করে বন্ধ্যা করে দেয়া হচ্ছে। কুরআন পাঠ সহ সব ধরনের ধর্মীয় আচার-বিধি পালন নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেখানে। উল্লেখ্য, চীনাদের প্রিয় খাদ্য তেলাপোকা, টিকটিকি, ইঁদুর, ব্যাঙ ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ। আর সেগুলোই মারাত্মক ভাইরাস বহন করে থাকে। মুসলিমরা এইসব খাদ্য ধর্মীয় নিষেধের কারণে খান না।
১৯৭০ সালের পর বৈশ্বিকভাবে আলোচিত নতুন রোগ হ’ল ৩২টি। এর মধ্যে ১৮টি রোগ শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে। ১০ বছর আগে ঢাকার একটি সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি-আটলান্টা) সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথের সহকারী পরিচালক পিটার বি ব্লোল্যান্ড তার উপস্থাপনায় বলেছিলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাযার ৪০০ জীবাণু দ্বারা মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস আছে। এসব জীবাণুর ৬১ শতাংশের উৎস প্রাণীজগৎ। ১৯৮০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মানুষ ৮৭টি নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমেরিকা, আফ্রিকা বা ইউরোপের কোন দেশে দেখা দেওয়া নতুন রোগ কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে চলে আসে। কখনো সময় নেয় বেশী, কখনো কম। যেমন এইচআইভি/এইড্স আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮০ সালে। বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। নিপাহ ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায়। এর তিন বছরের মাথায় ২০০১ সালে তা বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছিল।
দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল গযব আসে আল্লাহর হুকুমে অবাধ্য বান্দাদের সতর্ক করার জন্য এবং তাদেরকে আল্লাহর পথে ফিরে আসার জন্য। যে পানির অপর নাম জীবন, সেই পানিই বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের হিংস্র রূপ নিয়ে মানব বসতি ধ্বংস করে আল্লাহর হুকুমে। যে মৃদুমন্দ বায়ু প্রাণীর জন্য অপরিহার্যভাবে কাম্য, সেই বায়ু হঠাৎ প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে সর্বত্র প্রলয়কান্ড ঘটিয়ে দেয় আল্লাহর হুকুমে। নিষ্প্রাণ এইসব বস্ত্তগুলি হঠাৎ কিভাবে প্রাণঘাতী হয়ে পড়ে, এর জবাব বস্ত্তবাদীদের নিকটে নেই। কেবলমাত্র ঈমানদাররাই বলবেন যে, এগুলি স্রেফ আল্লাহর গযব। আল্লাহ বলেন, ‘বস্ত্ততঃ তোমার প্রতিপালকের সেনাবাহিনী সম্পর্কে কেউ জানে না তিনি ব্যতীত’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩১)। তিনি বলেন, ‘(আখেরাতে) কঠিন শাস্তির পূর্বে (দুনিয়াতে) আমরা তাদের অবশ্যই লঘু শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো। যাতে তারা (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে’ (সাজদাহ ৩২/২১)।
গত ১০ই ফেব্রুয়ারী সোমবার চীনা প্রেসিডেণ্ট শিং জিনপিং ভিডিও কলের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান শহরের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন এবং বলেন, আত্মবিশ্বাস রয়েছে যে, আমরা অবশ্যই এই ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হব। ভাইরাস মোকাবেলায় আরও দৃঢ় পদক্ষেপের আহবান জানিয়েছেন তিনি’। অথচ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে উহান শহরের প্রধান প্রধান হাসপাতালগুলিতে এখন ডাক্তারের বদলে রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে ফেরাঊনও মূসার বিরুদ্ধে তার লোকদের এরূপ সাহস দিয়েছিল ও মূসাকে হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু একে একে দুর্ভিক্ষ, তূফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত, প্লেগ ও সবশেষে সাগরডুবির গযব পাঠিয়ে বিপুল সেনাবাহিনী সহ আল্লাহ ফেরাঊনকে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেন। কিন্তু তার লাশকে অক্ষত রাখেন মানুষের শিক্ষা গ্রহণের জন্য (ইউনুস ১০/৯২)। কিন্তু মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করেনি। বর্তমান বিশ্বের বৃহৎ শক্তি বলে কথিত রাষ্ট্রগুলি নমরূদ ও ফেরাঊনের ন্যায় হিংস্র ভূমিকা পালন করছে। তাদের মোকাবিলার ক্ষমতা অন্যদের নেই। তাই অসহায় মানুষের কাতর আকুতি ও কুনূতে নাযেলাহ পাঠের ফলাফল হ’ল আজকের এ বিশ্বব্যাপী মরণঘাতী ভাইরাসের হামলা। ইতিমধ্যে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় ক্বিয়ামত সদৃশ দাবানল বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। পানির অভাবে অস্ট্রেলিয়ানরা হাহাকার করছে। উটে বেশী পানি খায় বলে তারা ৫ হাযার অসহায় উটকে হত্যা করেছে। ফলে তার শাস্তি হিসাবে আল্লাহ তাদেরকে প্লাবনে ডুবিয়ে মারছেন। এখন আবার শুরু হয়েছে ব্যাপকভাবে সাপের হামলা। অন্যদিকে ধেয়ে আসছে লাখে লাখে পঙ্গপাল। কেনিয়ায় ফসলের ক্ষেত সাবাড় করে তারা এখন ভারত সীমান্তে হানা দিয়েছে। গো-পূজারী ও নিহত বাবরী মসজিদের স্থলে কথিত রাম মন্দির নির্মাণকারী ভারত সরকার এখন কোনদিকে দৌঁড়াবেন বিশ্ববাসী তা সত্বর দেখবে বলে আশা করি।
মুমিনদের বাঁচার পথ হ’ল দু’টি : তাক্বদীর ও তাওয়াক্কুল। আল্লাহর হুকুম না হ’লে কোন ভাইরাসের ক্ষমতা নেই কারু ক্ষতি করার। আর ভরসা স্রেফ আল্লাহর উপরেই করতে হবে ও প্রাণ ভরে দো‘আ করতে হবে। সেই সাথে সাধ্যমত প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। সান্ত্বনার বিষয় হ’ল, শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দো‘আর বরকতে উম্মতের উপর শাস্তি আসবে, কিন্তু অন্য জাতির মত তাদেরকে একসাথে নিশ্চিহ্ন করা হবে না (মুসলিম হা/২৮৯০; মিশকাত হা/৫৭৫১)। বরং তওবার সুযোগ দেওয়া হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাও। যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (নূর ২৪/৩১)। অতএব একমাত্র করণীয় হ’ল পাপ থেকে তওবা করা এবং আল্লাহর বিধান সমূহ মেনে চলা। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)।