আল্লাহ বলেন, ‘..মানুষ হ’ল সবচেয়ে বেশী ঝগড়া প্রিয়’ (কাহফ ১৮/৫৪)। তিনি বলেন, ‘যদি তোমার প্রতিপালক চাইতেন, তবে সকল মানুষকে একই দলভুক্ত করতেন। কিন্তু তারা সর্বদা মতভেদ করতেই থাকবে’। ‘কেবল তারা ব্যতীত যাদের উপর তোমার পালনকর্তা অনুগ্রহ করেন..’ (হূদ ১১/১১৮-১৯)। মানুষ কেবল দুনিয়াতেই ঝগড়া করবে না, ক্বিয়ামতের দিনও আল্লাহর সামনে ঝগড়া করবে। যেমন তিনি বলেন, ‘অতঃপর ক্বিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সামনে আপোষে ঝগড়া করবে’ (যুমার ৩৯/৩১)। এর দ্বারা কাফির-মুমিন ও যালেম-মযলূম সবাইকে বুঝানো হয়েছে। কেননা দুনিয়াতে এদের ঝগড়া মিটবে না। আল্লাহর সামনে গিয়েও এরা ঝগড়া করবে এবং প্রত্যেকে নিজের পক্ষে ছাফাই গাইবে। কে না জানে যে, জীবনের বিপরীত হ’ল মৃত্যু। যখন তার আর কিছুই করার ক্ষমতা থাকেনা। অথচ এমন একটি অবিসংবাদিত সত্য বিষয় নিয়েও মানুষ ঝগড়া করে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যুবরণ করবে এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে’ (যুমার ৩৯/৩০)। আয়াতটি কুরআনের মৌলিক আয়াত সমূহের অন্যতম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর আবুবকর (রাঃ) শোকাহত ছাহাবীদের সামনে এই আয়াতটি পাঠ করেই তাদের শান্ত করেছিলেন। সেই সাথে তিনি আলে ইমরান ১৪৪ আয়াতটিও পাঠ করেছিলেন (বুখারী হা/৩৬৬৮)। কিন্তু যুগে যুগে মূর্তিপূজারীরা মূর্তির মধ্যে জীবনের কল্পনা করেছে। অন্যদিকে মারেফতী নামধারী কিছু লোক রাসূল (ছাঃ)-এর বরযখী জীবনকে দুনিয়াবী জীবনের সাথে তুলনা করে তিনি কবরে সবকিছু শুনতে পান ও মানুষের ভাল-মন্দ করতে পারেন বলে ধারণা করেন। সেই সাথে ‘পীর-আউলিয়ারা মরেন না’ বলে মিথ্যা প্রচার করেন। অথচ আল্লাহ এদের ঝগড়া অবশ্যই মিটাবেন সূক্ষ্ম বিচারের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ক্বিয়ামতের দিন তাদের মতভেদের বিষয়গুলিতে তাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দিবেন’ (সাজদাহ ৩২/২৫)

তিনি বলেন, ‘আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে। তারা তাদেরকে ভালোবাসে আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায়। কিন্তু যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর জন্য সর্বাধিক ভালোবাসা পোষণ করে থাকে...। ‘আর (স্মরণ কর) যেদিন অনুসরণীয়গণ তাদের অনুসারীদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে এবং তারা আযাবকে প্রত্যক্ষ করবে ও পরস্পরের সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে’। ‘(সেদিন) অনুসারীরা বলবে, যদি আমাদের (পৃথিবীতে) ফিরে যাওয়ার সুযোগ হ’ত, তাহ’লে আমরা তাদের থেকে পৃথক হয়ে যেতাম, যেমন তারা (আজ) আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এভাবেই আল্লাহ তাদের কৃতকর্ম সমূহকে তাদের জন্য অনুতাপ হিসাবে দেখাবেন। আর তারা কখনোই জাহান্নাম থেকে বের হ’তে পারবে না’ (বাক্বারাহ ২/১৬৫-৬৭)

সেদিন ‘তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের সম্মুখে হাযির করা হবে সারিবদ্ধভাবে..., ‘অতঃপর পেশ করা হবে আমলনামা। তখন তাতে যা আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদের দেখবে আতংকগ্রস্ত। তারা বলবে, হায় আফসোস! এটা কেমন আমলনামা যে, ছোট-বড় কোন কিছুই ছাড়েনি, সবকিছুই গণনা করেছে? আর তারা তাদের কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। বস্ত্ততঃ তোমার প্রতিপালক কাউকে যুলুম করেন না’ (কাহফ ১৮/৪৮-৪৯)। তিনি বলেন, ‘...আর ক্বিয়ামতের দিন আমরা তাকে বের করে দেখাব একটি আমলনামা, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে’। ‘(সেদিন আমরা বলব,) তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট’। ‘যে ব্যক্তি সৎপথ অবলম্বন করে, সে তার নিজের মঙ্গলের জন্যেই সেটা করে। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, সে তার নিজের ধ্বংসের জন্যেই সেটা হয়। বস্ত্ততঃ একের বোঝা অন্যে বহন করে না। আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেই না’ (ইসরা ১৭/১৩-১৫)। ‘যেদিন অবিশ্বাসীদের জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নেওয়া হবে। অতঃপর যখন তারা জাহান্নামের কিনারে এসে উপস্থিত হবে ও তার দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হবে, তখন তার দাররক্ষীরা বলবে, তোমাদের নিকটে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেন নি?... তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিলেন।... বলা হবে, তোমরা জাহান্নামে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে। কতইনা নিকৃষ্ট আবাসস্থল এটি অহংকারীদের জন্য’ (যুমার ৩৯/৭১-৭২)। সেদিন বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্তরা বলবে, ‘হায় যদি আমাকে আজ আমলনামা না দেওয়া হ’ত’! ‘হায় যদি আমি আমার হিসাব জানতে না পারতাম’! ‘আজ আমার ধন-সম্পদ কোন কাজে লাগল না’! ‘আমার রাজনৈতিক ক্ষমতা আজ ধ্বংস হয়ে গেছে’! ‘এ সময় বলা হবে, ওকে ধর’। ‘অতঃপর ওকে বেড়ীবদ্ধ কর’। ‘অতঃপর ওকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর’। ‘অতঃপর সত্তুর হাত লম্বা শিকল দিয়ে ওকে শক্ত করে বেঁধে ফেল’ (হাক্কাহ ৬৯/২৫-৩২)

‘সেদিন তারা বলবে, হায়! যদি আমরা আল্লাহকে মানতাম ও রাসূলকে মানতাম’! ‘তারা আরও বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতাদের ও বড়দের আনুগত্য করতাম। অতঃপর তারাই আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল’। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে তুমি দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদেরকে মহা অভিশাপ দাও’ (আহযাব ৩৩/৬৬-৬৮)। আল্লাহ বলেন, ‘...সেদিন পাপীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না। তারা বলবে, বাঁচাও বাঁচাও’। ‘আর আমরা সেদিন তাদের কৃতকর্মসমূহের দিকে মনোনিবেশ করব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (ফুরক্বান ২৫/২২-২৩)। ‘যালেম সেদিন নিজের দু’হাত কামড়ে বলবে, হায়! যদি (দুনিয়াতে) রাসূলের পথ অবলম্বন করতাম’। ‘হায় দুর্ভোগ! যদি আমি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম’! ‘আমার কাছে উপদেশ (কুরআন) আসার পর সে আমাকে পথভ্রষ্ট করেছিল। বস্ত্ততঃ শয়তান মানুষের জন্য পথভ্রষ্টকারী’। ‘সেদিন রাসূল বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমার উম্মত এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছিল’। ‘এভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু করেছি। আর তোমার জন্য পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসাবে তোমার পালনকর্তাই যথেষ্ট’ (ফুরক্বান ২৫/২৭-৩১)

‘(সেদিন) জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদের (উপহাস করে) বলবে, আমাদের প্রতিপালক আমাদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সবই আমরা যথার্থভাবে পেয়েছি। এখন তোমরা কি তোমাদের প্রতিপালকের দেওয়া প্রতিশ্রুতি যথার্থভাবে পেয়েছ? তারা বলবে, হ্যাঁ। অতঃপর একজন ঘোষক উভয় দলের মধ্যে ঘোষণা করে বলবে, যালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাৎ’। ‘তারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা খুঁজে বেড়াত। আর তারা আখেরাতকে অস্বীকার করত’ (আ‘রাফ ৭/৪৪-৪৫)

অতঃপর মানব জাতির প্রতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নাযিলকৃত সর্বশেষ আয়াত, ‘আর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবে। আর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)। তালাবদ্ধ হৃদয় সমূহে কুরআনের উপরোক্ত বাণীগুলি করাঘাত করবে কি? অতঃপর ২০তম বর্ষের শুরুতে আল্লাহর জন্য রইল সকল প্রশংসা (স.স.)






ইহূদীরা বিশ্ব শাসন করছে! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভারত ভাগ হয়ে যাচ্ছে - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ধর্মনিরপেক্ষতার ভয়াল রূপ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২০ বছর পর - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আত-তাহরীক : যাত্রা হ’ল শুরু (২য় সংখ্যা) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তাবলীগী ইজতেমা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমেরিকার নির্বাচন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হ্যান্স তুমি ইসলাম কবুল কর - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বাবরী মসজিদের রায় : ভূলুণ্ঠিত ন্যায়বিচার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মঙ্গল শোভাযাত্রার অমঙ্গল ঠিকানা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.