১৯৪২, ৪৮,
৭৮, ৯২ ও ২০১২-এর মত এ বছর ৯ই অক্টোবর’১৬ থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা
মুসলমানদের উপর আবারও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। ৯ জন পুলিশ হত্যার
অজুহাত তুলে সরকারী আইন-শৃংখলা বাহিনী ও বৌদ্ধ ভিক্ষু সন্ত্রাসী ক্যাডাররা
হেন বর্বরতা নেই যা নিরপরাধ রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর করছে না। এমতাবস্থায়
মিয়ানমারের নাগরিকত্বহারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য তাদের জন্মভূমি ও
সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাকে স্বাধীন ‘আরাকান রাষ্ট্র’ ঘোষণা করা ব্যতীত জাতিসংঘের
অন্য কোন পথ খোলা নেই।
অন্যদিকে সবকিছু হারিয়ে যখন তারা জীবন বাঁচানোর জন্য নদী ও সাগর পথে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের দিকে আশ্রয়ের জন্য ছুটছে, তখন তারা আমাদের সীমান্ত রক্ষী বিজিবি সদস্যদের তাক করা রাইফেলের সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে পিছনে বর্মী হায়েনাদের ও সামনে বাংলাদেশী ব্যাঘ্রদের মাঝখানে পড়ে টোকা-শ্যাওলার মত ভাসছে তাদের জীবনের ভেলা। অথচ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরাই গেয়েছিলাম ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’। আজ সেই দেশের সরকার প্রতিবেশী দেশের গণহত্যার শিকার মযলূম মানবতার পক্ষে কোন কথা বলছে না। বরং উল্টা তাদেরকে বর্মী দস্যুদের কাছে ফেরৎ পাঠাচ্ছে। এর চাইতে অমানবিক আর কি হ’তে পারে? ২০১২ সালে বর্তমান সরকারের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী নিন্দা কুড়িয়েছিল। এবারও একইভাবে নিন্দা কুড়াচ্ছে। অথচ দেশের জনমত তার বিপরীত। তাহ’লে সরকার কাদের খুশী করার জন্য কাজ করছে?
১৯৮৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কমবেশী প্রায় ১৫ থেকে ২১ বছর মিয়ানমারে গৃহবন্দী থাকার পর মুক্তি পেয়ে ২০১২ সালের ১২ই জুন নরওয়ের রাজধানী অসলোতে নোবেল পুরস্কার হাতে নিয়ে অং সান সু চি বলেছিলেন, অন্তরীণ থাকার সময় তিনি শক্তি অর্জন করতেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণার প্রস্তাবনা অনুচ্ছেদ থেকে। যাতে সমর্থন ঘোষিত হয়েছে এমন এক বিশ্বব্যবস্থার প্রতি, ‘যেখানে প্রত্যেক মানুষ বাকস্বাধীনতা ও ধর্মবিশ্বাস প্রতিপালনের অধিকার ভোগ করবে এবং ভীতি ও অভাব থেকে মুক্তির অধিকার অর্জন করবে’। অন্তরীণকালে অধিকাংশ সময় তিনি বই পড়ে কাটাতেন, তাঁর প্রিয় ব্যক্তিত্ব গান্ধীজির অহিংস নীতি ও গণতন্ত্রের কথা বলতেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের অহিংস বাণী শোনাতেন। কিন্তু এখন...! সেজন্যই সঙ্গতভাবে তার নোবেল প্রাইজ ফিরিয়ে নেওয়ার দাবী উঠেছে।
স্বাধীন বার্মার শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন রোহিঙ্গা মুসলিম নেতা উ. রাযাক। যিনি ছিলেন সু চি-র পিতা অন সানের অন্যতম প্রধান সহযোগী এবং পরে তার সাথেই তিনি নিহত হন। সু চি এখন তার পিতার বন্ধুকে ও তার জাতিকে চেনেন না। যেমন ভুলে গেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দর্শনের ছাত্রী ১৯৬৪ সালে তার ছাত্র জীবনের ঘনিষ্ঠ তরুণ পাকিস্তানী কূটনীতিক তারেক ফরহাদের মুসলিম জাতিকে। নাকি তার কারণে সেখান থেকে কোনমতে ৩য় বিভাগে পাশ করার ক্ষোভে প্রতিশোধ নিচ্ছেন জীবন সন্ধ্যায় গণহারে মুসলিম নিধনের মাধ্যমে? ধিক এইসব দ্বিমুখী মানুষদের।
সেই সু চির দেশের এক সম্প্রদায়ের মানুষের মানবাধিকার আজ চরমভাবে পদদলিত হচ্ছে। তিনি এখন কার্যত ওই দেশের শাসনকত্রী। সেখানকার মানবাধিকার লংঘন ঠেকানোর ক্ষমতা তাঁর আছে। কেননা তাঁর পরিচালিত গণতান্ত্রিক সরকারই এগুলি করছে। বর্তমানে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে সংগঠিত আক্রমণ চলছে, তা গণহত্যা বা জেনোসাইড (Genocide) ভিন্ন কিছুই নয়। সরকারী সমর্থনে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধধর্মাবলম্বী লোকদের হাতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচার গণহত্যা ও গণধর্ষণ চলছে। তাদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মসজিদ, স্কুল, দোকান-পাট কোন কিছুই তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। জীবন বাঁচাতে হাযার হাযার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ সমূহে। অনেকে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে ডুবে মারা যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এই গণহত্যায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘ভিরাথু’ নামের একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। তার ও তার দলের একটাই লক্ষ্য, রোহিঙ্গাদের নির্মূল করা অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা। অথচ বৌদ্ধদের অন্যূন দেড়শ’ বছর আগে থেকেই রোহিঙ্গারা আরাকানের বাসিন্দা।
খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে আরবে যখন থেকে ইসলামের আবির্ভাব হয়, তখন থেকে চট্টগ্রামের ন্যায় আরাকানেও ইসলামের বিস্তৃতি ঘটে আরব বণিক ও মুহাদ্দিছ ওলামায়ে দ্বীনের মাধ্যমে [আহলেহাদীছ আন্দোলন (পিএইচ.ডি থিসিস) ৪০৩ পৃ.]। অনেকে ছূফীদের কথা বলেন। কিন্তু এটা ভুল। কেননা ইসলামের প্রাথমিক ও স্বর্ণযুগে কথিত ছূফীবাদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। ছূফীরা এদেশে এসেছেন ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বখতিয়ার খিলজীর আগমনের পর। তৎকালীন রাহমী রাজা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য এক কলস আদা উপঢৌকন হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। যা তিনি ছাহাবীগণের মধ্যে বণ্টন করে দেন (হাকেম হা/৭১৯০; থিসিস ৪২৫ পৃ.)। ‘ভারত রত্ন’ উপাধি প্রাপ্ত ঐতিহাসিক কাযী আতহার মুবারকপুরী (১৯১৬-১৯৯৬ খৃ.) বলেন, সম্ভবতঃ এই রাজা ছিলেন রাহমী রাজবংশের। যারা বাংলাদেশে রাজত্ব করতেন। এই বংশের রাজাগণ প্রতিবেশী রাজাদের নিকট বিভিন্ন উপঢৌকন পাঠাতেন। বিশেষ করে আদার উপঢৌকন’ (আল-ইক্বদুছ ছামীন ২৪ পৃ.)। এতে ধরে নেওয়া যায় যে, তখন থেকেই এখানে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে এবং স্থানীয় রাজাসহ সাধারণ অধিবাসীরা ইসলামকে সাদরে বরণ করেছে। জাহায ডুবির কারণেও বহু আরব এখানে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিয়ে-শাদী করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। ড. এনামুল হক (১৯০২-১৯৮২ খৃ.) বলেন, আধুনিক গবেষণা মতে অনুমান করা হয় যে, এইসব আরব ও স্থানীয় মুসলিমরা খ্রিষ্টীয় নবম ও দশম শতাব্দী হ’তে চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে নির্বাচিত আমীরের অধীনে শরী‘আত মোতাবেক পরিচালিত হ’তেন এবং এদেশীয়দের মধ্যে প্রচারকার্য চালাতেন (থিসিস ৪০৩ পৃ.)।
আরাকান হ’ল টেকনাফের পূর্বে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১০০ মাইল দীর্ঘ নাফ নদীর পূর্ব পাড়ে ৭২ মাইল দীর্ঘ দুর্লংঘ্য ও সুউচ্চ ইয়োমা (Yoma) পর্বতমালা বেষ্টিত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী প্রায় ২২ হাযার বর্গমাইল ব্যাপী একটি বৃহৎ সমতল ভূমি। যার বর্তমান জনসংখ্যা ২০ লাখের মত। যদিও কমিয়ে বলা হয়ে থাকে। এটাকে প্রাচীন রাহমী (رهمي) বা ‘রামু’ রাজ্যভুক্ত এলাকা বলে ধারণা করা হয়। রামু বর্তমানে কক্সবাজার যেলার অন্তর্ভুক্ত একটি উপযেলার নাম। আরাকানী মুসলমানদের সহযোগিতায় বর্মী মগদস্যুদের হাত থেকে মাত্র ৩৬ ঘণ্টায় শায়েস্তা খান কর্তৃক ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম দখলের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম আরাকান রাজ্যভুক্ত ছিল। তাছাড়া প্রাকৃতিক দিক দিয়ে দুর্গম ইয়োমা পর্বতমালা আরাকানকে বার্মা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সেকারণ নাফ নদীর পশ্চিম তীরবর্তী টেকনাফ, বান্দরবান, কক্সবাজার ও সমগ্র চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকানের সবচাইতে নিকটতম ও সুগম্য এলাকা। কিন্তু ভারত ছেড়ে যাওয়ার আগে ভেদবুদ্ধি সম্পন্ন বৃটিশ ও ভারতীয় হিন্দু নেতারা কাশ্মীর, জুনাগড়, মানভাদর, হায়দরাবাদ প্রভৃতি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য সমূহকে ভারতের সাথে জুড়ে দেওয়ার ন্যায় আরাকান রাজ্যকেও বার্মার সাথে জুড়ে দেয়। অথচ ধর্ম, ভাষা ও ভৌগলিক কারণে এটা বাংলাদেশেরই অংশ হওয়া উচিত ছিল।
আরাকানে ইসলাম আগমনের প্রায় দেড়শ’ বছর পর ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দের বহু পরে তিববত হয়ে মিয়ানমারে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবেশ ঘটে। ব্রাহ্মণদের অত্যাচারে বিতাড়িত হয়ে বৌদ্ধরা তাদের আদি বাসভূমি ভারত ছেড়ে থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, তিববত, মিয়ানমার, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে অভিবাসী হয়। ভারত এখন প্রায় বৌদ্ধশূন্য বলা চলে। অথচ মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। মধ্যযুগে আরাকানের রাজধানীর নাম ছিল ম্রোহাং। সেটারই অপভ্রংশ হ’ল রোহাং বা রোসাঙ্গ এবং সেখানকার অধিবাসীরা হ’ল রোহিঙ্গা। ১৪৩০ থেকে ১৭৮৫ খৃ. পর্যন্ত আরাকান ছিল সাড়ে তিনশ’ বছরের অধিক কাল যাবৎ একটি স্বাধীন রাজ্য এবং এর রাজধানী ছিল রোসাঙ্গ। এখানকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী ছিল মুসলমান। আর মুসলিমদের শতকরা ৯২ জন ছিল রোহিঙ্গা। ১৪৩৪ থেকে ১৬৪৫ খৃ. পর্যন্ত দু’শো বছরের অধিক কাল যাবৎ কলিমা শাহ, সুলতান শাহ, সিকান্দার শাহ, সলীম শাহ, হুসায়েন শাহ প্রমুখ ১৭ জন মুসলিম রাজা স্বাধীন আরাকান রাজ্য শাসন করেন। তাদের মুদ্রার এক পিঠে কালেমা ত্বাইয়িবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও অন্য পিঠে রাজার নাম ও সাল ফারসীতে লেখা থাকত। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তখন বাংলা ভাষার চরমোন্নতি সাধিত হয়। কবি আলাওল, দৌলত কাযী, মরদান শাহ প্রমুখ কবিগণ আরাকান রাজসভা অলংকৃত করেন। আজকে যেমন বাংলা ভাষার রাজধানী হ’ল ঢাকা, সেযুগে তেমনি বাংলা ভাষার রাজধানী ছিল রোসাঙ্গ। এক সময় আকিয়াবের চাউল বন্যা উপদ্রুত বাংলাদেশের খাদ্যাভাব মিটাতো। তাই রোহিঙ্গাদের নিকট বাংলাভাষা ও বাংলাদেশের ঋণ অনেক বেশী। আজ তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমাদের নিকট আশ্রয়প্রার্থী। আমরা কি পারি না এই সুযোগে তাদের ঋণের কিছুটা হ’লেও পরিশোধ করতে? প্রশ্ন জাগে, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙ্গালীদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের যতটা দরদ, আরাকানের মুসলিম বাঙ্গালীদের প্রতি তার বিপরীত কেন? তাহ’লে সরকার সাম্প্রদায়িক হয়ে যাবেন, সেই ভয়ে?
১৯৪২ সালের এক অন্ধকার রাতে ইয়োমা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে বর্মী শাসকদের উস্কানীতে নিরীহ আরাকানী মুসলমানদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় হিংস্র মগ দস্যুরা এবং মাসাধিককাল ব্যাপী হত্যাযজ্ঞে প্রায় এক লাখ মুসলমানকে তারা হত্যা করে। তাতে বিতাড়িত হয় কয়েক লাখ মুসলমান। এরপর ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারী বৃটিশের কাছ থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হ’তে নির্যাতনের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলে। ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন ক্ষমতা দখলের পর রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেন। দেশটির ২০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে সরকারীভাবে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সে দেশের প্রায় ১৩৫টি মতান্তরে ১৩৯টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মধ্যে রোহিঙ্গা অন্যতম। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদের বৈধ ক্ষুদ্র জাতিসত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারায। এমনকি সরকারী জনসংখ্যা গণনার সময় রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া হয়। প্রায় সব ধরনের মৌলিক মানবাধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়। অতঃপর শুরু হয় একের পর এক নির্যাতন ও বিতাড়নের পালা। প্রশ্ন হয়, তাহ’লে কি রোহিঙ্গারা মানুষ নয়? তাদের কি নিজ জন্মভূমিতে স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার নেই? এভাবে দীর্ঘ সামরিক শাসন শেষে ২০১৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি-র নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর গত ৯ই অক্টোবর’১৬ থেকে শুরু হয়েছে পূর্বের চাইতে বহুগুণ বেশী বর্বরোচিত নির্মূল অভিযান। ক্ষমতায় আসীন হয়ে কথিত গান্ধীবাদী অহিংস নীতির খোলস ফেলে দিয়ে তিনি এখন স্ব মূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছেন। আর এটাই হ’ল মগদের আসল চরিত্র। যারা ইতিপূর্বে বাংলাদেশে লুটপাট ও দস্যুবৃত্তি চালাতো। সেকারণ আজও এদেশে ‘মগের মুল্লুক’ প্রবাদ চালু আছে এবং ‘বর্গী এলো দেশে’ কবিতা বহুল প্রচলিত।
মিয়ানমারের পূর্বে চীন, যেটি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশ ও ভেটো ক্ষমতার অধিকারী। পশ্চিমে ভারত, যা বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ বলে খ্যাত। আর আছে বাংলাদেশ, যা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। বাংলাদেশেরই নিকটতম প্রতিবেশী আরাকান মুসলিম রাজ্য। যাকে ফিলিস্তীনের ন্যায় মুসলিম শূন্য করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ধরে নেওয়া যায় যে, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দাবাড়ুদের ইঙ্গিতেই মিয়ানমার সরকার এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও মুখে সবাই গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার বুলি কপচায়। কিন্তু বাস্তবে তারা সবাই ইসলামের শত্রুতায় ঐক্যবদ্ধ এবং মুসলমানদের মানবাধিকার হরণে একাত্ম।
সুতরাং ইতিপূর্বে যেভাবে শুধু খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার অজুহাতে ২০০২ সালের ২০শে মে ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে এবং ২০১১ সালের ৯ই জুলাই সূদান থেকে দক্ষিণ সূদানকে জাতিসংঘ কর্তৃক পৃথক রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়েছে, সেভাবে মুসলিম সংখ্যাগুরু হওয়ার কারণে অতীতের ন্যায় আরাকানকে পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে সত্যিকারের মানবতাবাদী রাষ্ট্রনেতাদের প্রতি উক্ত দাবী সমর্থনের আহবান জানাচ্ছি। সর্বোপরি আল্লাহর নিকটে এই নির্যাতিত জনপদকে তাঁর গায়েবী মদদে যালেমদের হাত থেকে মুক্ত করার প্রার্থনা জানাচ্ছি। আল্লাহ তুমি যালেমকে ধ্বংস কর ও মযলূমকে বিজয়ী কর- আমীন! (স.স.)।