তাছফিয়াহ (পরিশুদ্ধিতা) ও তারবিয়াহ (পরিচর্যা) :
হামদ ও ছানার পর আপনারা সবাই জানেন যে, আজকের দিনে আমাদের মুসলমানদের অবস্থা এতটাই খারাপ ও নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে যে তার থেকে নিচে নামা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মুসলমানের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা আজ অন্যদের লাঞ্ছনা ও দাসত্বের শিকার। মুসলিম বিশ্বের সবক’টি দেশের উপর দুঃখজনকভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসা এই লাঞ্ছনা ও দাসত্বের অনুভূতি আমাদের নানা স্তরের মানুষের মধ্যে রয়েছে, বিধায় মুসলমানদের আম-খাছ সকল সভা-সমাবেশ ও সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে হরহামেশাই এহেন অপমান ও দুর্দশার কারণ নিয়ে আমরা পরস্পরে আলোচনা করছি। আমাদের এতটা হীন অবস্থায় নেমে যাওয়ার গূঢ় রহস্য উদঘাটনেও আমরা তৎপরতা চালাচ্ছি। সাথে সাথে এহেন লাঞ্ছনা ও দুর্ভাগ্য থেকে উদ্ধার ও প্রতিকারের উপায় নিয়েও আমরা কথাবার্তা বলছি।
তবে আমাদের মতামত নানা মুনির নানা মতে পর্যবসিত হচ্ছে এবং দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা আলাদা রূপ নিচ্ছে। প্রত্যেকেই এমন এমন কর্মপন্থা বা পদ্ধতি এনে হাযির করছেন, যাকে তিনি এই সমস্যার সমাধান এবং সঙ্কটের দাওয়াই ভাবছেন।
আমি মনে করি, উম্মতের এহেন সঙ্কটের কথা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলোচনা করেছেন এবং তাঁর কিছু হাদীছে এর বিবরণ যেমন দিয়েছেন, তেমনি সমাধানের উপায়ও বলে গেছেন। তারই একটি হাদীছ নিম্নে তুলে ধরা হ’ল :
إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ سَلَّطَ اللهُ عَلَيْكُمْ ذُلاًّلاَ يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ-
‘যখন
তোমরা ‘ঈনা’ পদ্ধতিতে বেচাকেনা করবে, গরুর লেজ ধরে পড়ে থাকবে, ক্ষেত-খামার
নিয়ে খুশী থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা
চাপিয়ে দিবেন। যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে ততক্ষণ তিনি
তোমাদের থেকে ঐ লাঞ্ছনা দূর করবেন না’।[1]
সংক্ষিপ্ত পরিসরে হ’লেও হাদীছটিতে আমরা প্রসার লাভকারী সেই রোগের উল্লেখ লক্ষ্য করছি যা সকল মুসলিম সমাজকে গ্রাস করছে। নবী করীম (ছাঃ) হাদীছটিতে নমুনা হিসাবে দু’টি রোগের কথা উল্লেখ করেছেন। এমন নয় যে, তিনি অধঃপতিত মুসলিম জাতির জন্য কেবল এই দু’টি রোগকেই দায়ী করেছেন।
প্রথম প্রকার রোগ :
সজ্ঞানে অপকৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে মুসলমানদের কিছু কিছু হারামে জড়িয়ে পড়া হচ্ছে প্রথম প্রকারের রোগ। এটাই লুকিয়ে আছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উক্তি ‘যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে বেচাকেনা করবে’-এর মধ্যে। ঈনা এক প্রকার বেচাকেনা যা ফিক্বহের গ্রন্থগুলোতে একটি পরিচিত আলোচ্য বিষয়। এই হাদীছে তা হারাম হওয়ার নির্দেশ মেলে। তা সত্ত্বেও সাধারণ লোক তো দূরের কথা কিছু আলেমও তার বৈধতার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন।
ঈনা পদ্ধতির বেচাকেনা :
একজন ক্রেতা কোন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে কোন পণ্য নির্দিষ্ট মেয়াদে কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের চুক্তিতে কিনবেন। তারপর এই ক্রেতা বিক্রেতা সেজে প্রথম বিক্রেতার নিকট ঐ পণ্য প্রথম ক্রয়মূল্য অপেক্ষা কম মূল্যে নগদে বিক্রয় করবেন। এবার প্রথম বিক্রেতা যিনি ক্রেতা সাজছেন, তিনি অপেক্ষাকৃত কমে পণ্যটি কিনে তার মূল্য নগদে প্রথম ক্রেতাকে পরিশোধ করবেন এবং প্রথম ক্রেতা যিনি পরে বিক্রেতা সেজেছেন তিনি প্রথম যে মূল্যে কিনেছিলেন তা ঋণসূত্রে কিস্তিতে কিস্তিতে প্রথম বিক্রেতাকে পরিশোধ করবেন। উদাহরণস্বরূপ একটি মোটরগাড়ি দশ হাযার লিরায় বাকীতে বিক্রয় করা হ’ল; এবার ক্রেতা প্রথম বিক্রেতার নিকট আট হাযার লিরা নগদ মূলে তা বিক্রি করে দিল। ফলে মোটরগাড়ি প্রথম বিক্রেতার নিকটেই থেকে গেল। মাঝখান থেকে প্রথম ক্রেতা বিক্রেতা সেজে যে আট হাযার লিরা নগদ নিল তার উপর দুই হাযার লিরা নির্দিষ্ট মেয়াদে অতিরিক্ত দেওয়ার শর্তে চুক্তিবদ্ধ হ’ল।[2] মেয়াদ ভিত্তিক এই অতিরিক্ত অর্থই তো সূদ। যে মুসলিমই সূদ হারাম সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত এবং রাসূলের হাদীছ শুনেছে তার জন্য ফরয হবে ঈনা পদ্ধতির বেচাকেনায় যদবধি অতিরিক্ত অর্থদানের কথা থাকবে তদবধি তাকে হালাল গণ্য না করা। কেননা এতো খোলাখুলি সূদ। তথাপি কিছু মানুষ এ পদ্ধতিকে মুবাহ ভাবছেন। কারণ এটি বেচাকেনার ধারায় সম্পাদিত হয়েছে। তারা সাধারণভাবে যে সকল আয়াত ও হাদীছে বেচাকেনা হালালের উল্লেখ আছে সেগুলো দ্বারা দলীল-প্রমাণ দিয়ে থাকেন। যেমন সূদ সম্পর্কে একটি প্রসিদ্ধ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا، ‘আল্লাহ বেচাকেনা হালাল করেছেন এবং সূদ হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। তারা বলছেন, এ তো বেচাকেনাই। সুতরাং কম-বেশী যাই
হোক তাতে কোন দোষ নেই।
কিন্তু প্রকৃত সত্য তো এই যে, দশ হাযার লিরায় যিনি বাকীতে কিনেছেন, তারপর আট হাযার লিরায় নগদে বেচেছেন, তার এ কারবারের পেছনে মূলত তার ঐ আট হাযার লিরাই নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল। তিনি এও জানেন যে, এই প্রথম বিক্রেতা যে কিনা তার ধারণায় মুসলিম, সে অতিরিক্ত অর্থ ছাড়া স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আট হাযার লিরা পরিশোধের বিনিময়ে আট হাযার লিরা নগদে দেবে না। তাই উভয়েই বেচাকেনার নামে হিলা-বাহানা খাটিয়ে এই অতিরিক্ত অর্থ হালাল করেছে।
জেনে
রাখা দরকার যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’লেন প্রথমত মানব জাতির জন্য আল্লাহর
বিধান সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাকারী। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,وَأَنْزَلْنَا
إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ، ‘আর
আমরা তোমার নিকটে নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা
করে দাও, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে’ (নাহল ১৬/৪৪)।[3]
দ্বিতীয়ত তিনি মুমিনদের প্রতি দয়াশীল ও করুণাময়। যেমন তিনি বলেন, بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوْفٌ رَحِيْمٌ ‘তিনি মুমিনদের প্রতি দয়াশীল, করুণাময়’ (তওবা ৯/১২৮)। তাঁর দয়া ও অনুকম্পারই একটি অংশ, মানব জাতির জন্য শয়তানের গোপন চক্রান্ত ও হিলা-বাহানা সম্পর্কে আমাদেরকে সতর্ক করা। তিনি তাঁর অনেক হাদীছে আমরা যাতে শয়তানের চক্রান্তজালে ফেঁসে না যাই সেজন্য বারবার সাবধান করেছেন। তারই একটি আমাদের আলোচ্য হাদীছ: ‘যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে বেচাকেনা করবে’ অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেছেন যখন তোমরা তা বেচাকেনার নামে অপকৌশল খাঁটিয়ে হালাল করে নিবে। কেননা এ বেচাকেনা তো আসলে অসত্যের উপর পর্দা আরোপ এবং অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ঋণ প্রদান, যা কিনা খোলাখুলি সূদ। তাই এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে আল্লাহর নির্দেশিত হারামকে হালাল করার অপকৌশলে মেতে ওঠা থেকে সাবধান করেছেন। হারামকে হারাম জেনে তাতে লিপ্ত কোন মুসলিম থেকে এভাবে কৌশল খাটিয়ে হারামকে হালালকারী মুসলিম বেশী সর্বনাশা। কারণ জেনেশুনে হারামে লিপ্ত ব্যক্তি যেহেতু জানে যে, সে যা করছে তা হারাম, তাই কোন একদিন তওবা করে নিজ রবের পথে ফিরে আসার সম্ভাবনা তার আছে। কিন্তু ভুল ব্যাখ্যার জন্যই হোক, কিংবা নীরেট মূর্খতাবশত হোক, অথবা অন্য যেকোন কারণেই হোক, নিজের খারাপ কাজ যার কাছে সুন্দর-সুশোভিত মনে হয় সে তো ভাবে যে, তার কাজে কোনই গলদ নেই। সুতরাং তার মনে যে একদিনের জন্যও আল্লাহর কাছে তওবা করার চিন্তা জাগবে না, তা একান্তই স্বতঃসিদ্ধ কথা। সুতরাং খোলামেলা হারামে লিপ্ত ব্যক্তির তুলনায় চিন্তায় ও আক্বীদায় হারামকে হালাল গণ্যকারীর বিপদ বেশী। যে সূদ খায় এবং জানে ও বিশ্বাস করে যে তা সূদ, যদিও কুরআনের বাণী অনুসারে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত- তবুও তার বিপদ ঐ লোকের তুলনায় কম, যে হালাল বিশ্বাসে সূদ খায়। যেমন, যে মদ্যপায়ী মদকে হারাম বিশ্বাসে পান করে তার বেলায় আশা করা যায় যে, একদিন সে তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসবে। কিন্তু যে মদ পান করে এবং কোন কায়দায় তা হালাল বলে বিশ্বাস করে সে প্রথমোল্লিখিত মদ্যপায়ী থেকে বেশী বিপদগ্রস্ত হবে। কেননা যতদিন সে আল্লাহর বিধানের অপব্যাখ্যায় মগ্ন থাকবে ততদিন তার তওবার সম্ভাবনা কল্পনাও করা যাবে না।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ হাদীছে ঈনা পদ্ধতির বেচাকেনা যে হারাম হওয়ার কথা বলেছেন, তা একান্তই উদাহরণ হিসাবে বলেছেন। হারামকে শুধু ঐ একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ করার মানসে তিনি তা বলেননি। তিনি এ কথা দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন যে, যত রকম হারামকেই একজন মুসলিম কোন পদ্ধতি খাড়া করে হালাল করবে তার ফল স্বরূপ আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করবেন। আর মুসলিম সমাজে যখন সেই হারাম সমানে ছড়িয়ে পড়বে, তখন তার কারণে গোটা মুসলিম জাতি লাঞ্ছিত হবে।
দ্বিতীয় প্রকার রোগ :
শরী‘আত সম্মত হবে না জেনেও আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারণকৃত ফরযসমূহ ছেড়ে দিয়ে কেবলমাত্র জাগতিক কাজে সকলে একজোট হয়ে লিপ্ত হওয়া। এ লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে বেচাকেনা করবে, গরুর লেজ ধরে পড়ে থাকবে, ক্ষেত-খামার নিয়ে খুশী থাকবে’ অর্থাৎ তোমরা জাগতিক ধন-সম্পদের পেছনে তোমাদের শ্রম-সাধনা ব্যয় করবে এবং আল্লাহ রূযী তালাশ করতে আদেশ দিয়েছেন বলে তার দোহাই দিয়ে রূযী তালাশে মশগূল হবে। মুসলিমরা এভাবে কেবলই দুনিয়া নিয়ে মেতে থাকবে এবং আল্লাহর নির্দেশিত ফরয দায়িত্ব সমূহ ভুলে যাবে। তারা ক্ষেত-খামার, পশুপালন এবং অন্যান্য পেশা ও বৃত্তি নিয়ে পড়ে থাকবে। এসব কাজে লিপ্ত থাকার দরুন আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর যেসব দায়িত্ব পালন ফরয বা আবশ্যিক করেছেন তারা তা ভুলে যাবে। উদাহরণ হিসাবে তিনি এ হাদীছে আল্লাহর পথে জিহাদের কথা ভুলে যাওয়ার কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘যখন তোমরা ‘ঈনা’ পদ্ধতিতে বেচাকেনা করবে, গরুর লেজ ধরে পড়ে থাকবে, ক্ষেত-খামার নিয়ে খুশী থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন। তোমরা যতক্ষণ না তোমাদের দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে ততক্ষণ তিনি তোমাদের থেকে ঐ লাঞ্ছনা দূর করবেন না’।
এ হাদীছ নবী করীম (ছঃ)-এর নবুঅতের অন্যতম স্মারক। এ লাঞ্ছনা তো আজ আমাদের মাঝে বাস্তব রূপ লাভ করেছে। আফসোস! আমরা তা স্বচক্ষে দেখছি! সুতরাং হাদীছে রোগ ও তার ফল হিসাবে লাঞ্ছনা বর্ণনার পর তার যে ওষুধ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন আজ তা গ্রহণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। আমরা তো রোগের কারণগুলো বরণ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছি, এখন আমাদের অবশ্য কর্তব্য হবে তিনি রোগের যে দাওয়াই বাতলিয়েছেন তা আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে কার্যকর করা।
তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, যখন আমরা দ্বীন ইসলামের দিকে ফিরে যাব তখন আল্লাহ আমাদের থেকে এ অপমান ও লাঞ্ছনা তুলে নিবেন। লোকেরা এ হাদীছ বহুবার পড়ে এবং তাঁর বাণী ‘তোমরা যতক্ষণ না তোমাদের দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে ততক্ষণ তিনি তোমাদের থেকে ঐ লাঞ্ছনা দূর করবেন না’ বহুবার শোনে তাদের মনে ধারণা জন্মে যে, দ্বীনের দিকে ফেরা তো একটা সহজ ব্যাপার। কিন্তু আমার ধারণায় এর থেকে কঠিন কাজ আর কিছু নেই। কারণ এই দ্বীনের প্রকৃত রূপ বা আসল সত্যকে বহু ক্ষেত্রে নানান ছুতো ও ফন্দি খাটিয়ে বদলে ফেলা হয়েছে। অনেকেই এ ধরনের পরিবর্তন-পরিবর্ধন ধরতে সক্ষম। কিছু পরিবর্তন তো অনেকের কাছেই সুবিদিত। আবার এমন কিছু পরিবর্তন আছে যা কিছু লোক ধরতে পারলেও অধিকাংশ লোক তার সন্ধান জানে না। পরিবর্তনকৃত এসব মাসআলার কিছু ঈমান-আক্বীদার সাথে জড়িত এবং কিছু ফিক্বহের সাথে জড়িত।
লোকেরা মনে করে পরিবর্তিত এসব মাসআলা দ্বীনের অংশ, অথচ দ্বীনের সাথে এগুলোর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। ইতিপূর্বে উল্লেখিত দৃষ্টান্ত আমাদের থেকে বেশী দূরে যায়নি। এটিই প্রথম কারণ যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই হাদীছে বলেছেন, ‘যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে বেচাকেনা করবে’।
দেখুন, ঈনা পদ্ধতির বেচাকেনাকে সকলে হারাম বলে মেনে নিতে পারেনি অথবা তা হারাম বলে সবার জানা নেই। এমনকি যেসব মুসলিম দেশ এখনও অনৈসলামী দেশের সভ্যতা-সংস্কৃতি দ্বারা তেমন একটা প্রভাবিত হয়নি, যেসব দেশকে আমরা ইসলামের আশ্রয়স্থল মনে করি- সেসব দেশের বহু আলেম ‘ঈনা’ পদ্ধতিতে বেচাকেনা বৈধ বলে ফৎওয়া দেন। অথচ এই বিক্রয় পদ্ধতির মধ্যে সূদ হালাল করার জন্য অপকৌশল ও ফন্দি খাটানো হয়েছে। এটি এ ধরনের অনেক উদাহরণের মাত্র একটি। ইসলামী ফিক্বহ চর্চাকারীরা এসব উদাহরণের সঙ্গে ভালো মত পরিচিত।
এ জাতীয় বেচাকেনা রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক হারাম ঘোষণা এবং তাতে লিপ্ত হওয়া জাতিগত লাঞ্ছনার কারণ বলা সত্ত্বেও মুসলমানদের তাতে লিপ্ত হওয়ায় দ্বীনের পানে ফেরা যে সহজ নয়, এটি আমাদের সে দাবীরই ডজন ডজন উদাহরণের একটি।
এখন আমাদের আবশ্যকীয়ভাবে নতুন করে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে দ্বীন বুঝতে হবে। মনে রাখা আবশ্যক যে, কোন কোন ক্ষেত্রে হাদীছে কিছু বিষয় সুস্পষ্টভাবে হারাম বলার পরও কিছু আলেম সেগুলোকে মুবাহ ঠাওরে থাকেন বলে যখন আমরা বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করি তখন তাদের সমালোচনা বা ভৎর্সনা করার উদ্দেশ্যে আমরা তা করি না, বরং আমাদের উদ্দেশ্য মুসলিমদের কল্যাণ কামনা এবং তাদের সহ সকলের বিশেষ করে যারা ইসলামী ফিক্বহের সাথে জড়িত তাদের সহযোগিতা গ্রহণ করা। এছাড়া কারো কারো থেকে যে কারণেই হোক কিছু মাসআলায় যে বিচ্যুতি ঘটেছে তার প্রতিকার করা। সে প্রতিকার হ’তে হবে কুরআনের একটি আয়াতের দিকে ফেরার মাধ্যমে। আয়াতটি আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। কিন্তু তাকে আমলে নিতে আমাদের খুব কমই দেখা যায়। সেই আয়াতটি হচ্ছে,فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً- ‘অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)।
ফিক্বহ শাস্ত্র অধ্যয়নকারীরা জানেন যে, ‘ঈনা’ পদ্ধতির বেচাকেনাসহ আরও অনেক প্রকার বেচাকেনা নিয়ে আধুনিক কালের আলেম-ওলামা তো দূরের কথা, প্রাচীন কালের আলেমদের মধ্যেও মতানৈক্য রয়েছে। সুতরাং এ যুগের আলেমরা এ জাতীয় মতভেদপূর্ণ মাসআলাসমূহ নিয়ে কী করবে সেটাই বড় প্রশ্ন। আমার যা জানা তাতে তাদের অধিকাংশই এ মতভেদ বহাল রাখা এবং পুরাতনকে তার পুরাতন অবস্থায় রাখার পক্ষে।
এমতাবস্থায় আমার জিজ্ঞাসা, তাহ’লে কীভাবে মুসলমানরা তাদের দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে? অথচ রাসূল (ছাঃ)-এর কথা মতে এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা দ্বীনকে ধারণ করা। দ্বীনকে ধারণ করলেই কেবল এ লাঞ্ছনা ও দুর্গতি দূর হবে, নচেৎ নয়। তিনি বলেছেন, ‘যখন তোমরা ‘ঈনা’ পদ্ধতিতে বেচাকেনা করবে, গরুর লেজ ধরে পড়ে থাকবে, ক্ষেত-খামার নিয়ে খুশী থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন। তোমরা যতক্ষণ না তোমাদের দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে ততক্ষণ তিনি তোমাদের থেকে ঐ লাঞ্ছনা দূর করবেন না’।
এখন এর একমাত্র চিকিৎসা দ্বীনের দিকে প্রত্যাবর্তন। কিন্তু এই দ্বীন যেমনটা সকলেই এবং বিশেষত ফিক্বহবিদরা জানেন যে সাংঘাতিকভাবে মতভেদপূর্ণ। অনেক লেখক বা আলেমের ধারণা এবং তারা বলেও বেড়ান যে, এই মতভেদ ফারঈ বা ফিক্বহ বিষয়ক অল্প কিছু শাখা-প্রশাখাগত মাসআলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু তাদের কথা সঠিক নয়। বরং ফারঈ বা ফিক্বহ বিষয়ক মাসআলা ছেড়েও এ মতভেদ আক্বীদাগত বা মৌলিক মাসআলাতেও সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা দেখি, আশ‘আরী ও মাতুরিদীদের মধ্যে আক্বীদার বিষয়ে বড় রকমের মতভেদ রয়েছে। আবার এদের সাথে মু‘তাযিলাদের আক্বীদারও অনেক পার্থক্য আছে। অন্যান্য ফিরক্বা বা দলের কথা আর নাই বা বললাম। আমাদের ধারণা মতে এরা সবাই মুসলিম এবং সবাই এই হাদীছের হুকুমভুক্ত ‘আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন। তোমরা যতক্ষণ না তোমাদের দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে ততক্ষণ তিনি তোমাদের থেকে ঐ লাঞ্ছনা দূর করবেন না’। তাহ’লে কোন সে দ্বীন, যার পানে আমাদের ফেরা কর্তব্য? তা কি অমুক ইমামের বাতলানো মাযহাবী দ্বীন? তারপরও তো এখানে অনেক মাযহাব রয়েছে। আমরা না হয় মতভেদটা চার মাযহাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি যাদেরকে আমরা আহলুস সুন্নাহর মাযহাব বলি। তাহ’লে কোন সে দ্বীন আমাদের এই দুর্গতি থেকে উদ্ধার করতে পারবে? আমরা যেকোন একটা মাযহাবকে দেখলে সেখানে কম-বেশী এমন অনেক মাসআলা পাব যা সুন্নাহর বিপরীত; যদিও তন্মধ্যকার কিছু মাসআলা কুরআনের বর্ণনার পরিপন্থী নয়।
এজন্য আমি মনে করি, আজকের দিনে ইসলামের দাঈদের এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ অনুসন্ধানীদের ইখলাছের সঙ্গে যে সংস্কার হাতে নেওয়া আবশ্যক তা এই যে, প্রথমতঃ তারা নিজেদের বুঝ এই মর্মে পাকাপোক্ত করবে যে, দ্বীন তাই যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিয়ে এসেছিলেন। দ্বিতীয়ত: সকল মুসলিম উম্মাহকেও তারা বুঝাবে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা নিয়ে এসেছিলেন দ্বীন কেবল তাই। আর সকল ফক্বীহ এ কথায় একমত যে, আল্লাহ যে দ্বীন নাযিল করেছেন, তাকে প্রকৃত অর্থে বুঝতে হ’লে কুরআন ও সুন্নাহর অধ্যয়ন ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে ইমামগণ রাহেমাহুমুল্লাহু তা‘আলা উক্ত কথায় একমত। এটা আমাদের প্রতি তাঁদের অনুগ্রহ এবং তাঁদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকেও তাঁদের উপর অনুগ্রহ যে, তাঁরা তাঁদের প্রথম যুগের (সমকালীন) অনুসারীদের তাঁদের অনুসরণ ও তাক্বলীদ করতে এবং শরী‘আতের মূল সূত্র কুরআন ও সুন্নাহকে ভুলে গিয়ে প্রতিটি মাসআলা-মাসায়েলে তাঁদের কথা চূড়ান্ত গণ্য করা থেকে সাবধান করে গেছেন। অথচ তাঁদের তৎকালীন অনুসারীরা কিন্তু বড় বিদ্বান ছিলেন।
প্রিয় পাঠক!
আমাদের ইমামদের সকল কথা যেই একটি বাক্যকে ঘিরে আবর্তিত সেই বাক্যের
অতিরিক্ত কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজন হবে না। তাঁদের সকলের থেকেই
ছহীহ-শুদ্ধভাবে বর্ণিত আছে,إِذَا صَحَّ الْحَدِيْثُ فَهُوَ مَذْهَبِيْ،
‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনে রেখ সেটাই আমার মাযহাব’।[4]
এখন তাঁদের অনুসরণের জন্য তাঁদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এই একটি কথাই যথেষ্ট। এটা এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, ঐসকল ইমামের প্রত্যেকেই কোন হাদীছ তাঁর ইজতিহাদ ও সিদ্ধান্তের বিপরীত হ’লে তাঁর অনুসারীদের হাদীছের দিকে ফিরে যাওয়ার আদেশ দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে যেমন তাঁর নিজের কল্যাণ কামনা করেছেন, তেমনি মুসলিম উম্মাহ ও তাঁর অনুসারীদেরও কল্যাণ কামনা করেছেন। তাদের এ বক্তব্য এখন কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়ার পথ খুলে দিবে।
আমরা এ বিষয়ে কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি। এসব উদাহরণ আমাদের শারঈ মাদরাসা, কলেজ ও অনুরূপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্য বইগুলোতেই মজুদ আছে। একটি মাযহাবে আছে, ছালাত আদায়কারী ছালাত আরম্ভের শুরু থেকে তার দু’হাত ঝুলিয়ে রাখবে, হাত বাঁধবে না। কেন এ প্রবণতা? কারণ এমনটাই মাযহাব!! ছালাতে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর ডান হাত দ্বারা বাম হাত পেঁচিয়ে ধরেননি মর্মে হাদীছ বিশারদদের কেউই একটা হাদীছও পান নাই। এমনকি যঈফ কিংবা জাল হাদীছও না। দু’হাত ঝুলিয়ে রাখার হাদীছের কোন অস্তিত্বই নেই। তারপরও তা মুসলিমদের কোন কোন মাযহাবে আছে। এটাই কি তাহ’লে রাসূল (ছাঃ) আনীত সেই ইসলাম, যার দিকে তিনি আমাদের ফিরে যেতে বলেছেন? আমি জানি যে, আপনাদের কেউ কেউ বলবেন, এতো ফিক্বহী শাখা-প্রশাখাগত মাসআলা। আবার কেউ কেউ আর এক ডিগ্রি নিচে নেমে বলবেন, এতো একটা তুচ্ছ ও সামান্য বিষয়, এ নিয়ে এতো মাথা ব্যথার কী আছে? আমি কিন্তু বিশ্বাস করি যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্বীন ও ইবাদতের সাথে সম্পর্কিত যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার কোনটাই সামান্য ও তুচ্ছ নয়।
আমরা বিশ্বাস করি, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা কিছু নিয়ে এসেছেন, সেগুলোকে আমাদের প্রথমেই দ্বীন হিসাবে ভাবা ফরয। অবশ্য শরী‘আতের দলীলে সেগুলোকে ওযন বা যাচাই করতে হবে। তাতে যেটা ফরয প্রমাণিত হবে সেটাকে ফরয এবং যেটা সুন্নাত হবে সেটাকে সুন্নাত মানতে হবে। কিন্তু কোনটা মুস্তাহাব বা নফল হ’লে তাকে আমরা তুচ্ছ বা ফলের খোসা নাম দিতে পারি না। এটা ইসলামী আদব-কায়দা বা ভদ্রতার কোন পর্যায়ে মোটেও পড়ে না। আক্ষরিকভাবে যদি আমি তাদের কথা মেনেও নেই তবুও তো এ কথা অবশ্যই সত্য যে, ফলের শাঁস খোসা ছাড়া হেফাযত করা যায় না।
ছালাতে হাত ঝুলিয়ে রাখার মত একটি আমল কী করে মুসলমানরা অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছে? অথচ সুন্নাহর প্রতিটি গ্রন্থে একের পর এক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত বাঁধতেন। এটা কি ইমামদের কথা- ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনে রেখ সেটাই আমার মাযহাব’-এর বিরোধিতা করে তাঁদের অন্ধ অনুকরণ এবং জ্ঞানের বন্ধ্যাত্ব নয়?
এই সুস্পষ্ট উদাহরণে কেউ কেউ হয়তো সন্তুষ্ট নাও হ’তে পারে। তাই আমি আরেকটা উদাহরণ টানছি: কিছু ফিক্বহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘মদ দুই প্রকার। এক প্রকার যা আঙ্গুর থেকে উৎপাদিত। এ ধরনের মদ কম-বেশী যাই পান করা হোক হারাম। আরেক প্রকার মদ যা আঙ্গুর বাদে যব, চাউল/ভুট্টা, খেজুর ইত্যাদি অন্য কোন কিছু থেকে উৎপাদিত। আজকের যুগে তো কাফেররা শিল্প-কারখানায় অনেক ভাবে অনেক নামে অনেক প্রকার মাদকদ্রব্য তৈরি করছে। এ ধরনের সব মদ হারাম নয়। এর মধ্যে যেগুলো নেশার উদ্রেক করে কেবল সেগুলো হারাম।[5] ফিক্বহের বইগুলোতে বারবার এ কথা কেন লেখা হচ্ছে?!
আত্মপক্ষ সমর্থনে অনেকেই এর নানা রকম উত্তর হাযির করে। অন্য কোন কারণে নয়, বরং এজন্য যে, মুসলিম ইমামদের একজন ইমাম (ইমাম আবু হানীফা রহঃ)
ইজতিহাদ
করে এ কথা বলেছেন! অথচ আমাদের মাযহাব ও মাশরাব আলাদা আলাদা হওয়া সত্তেবও
আমরা সবাই হাদীছের কিতাবগুলোতে হরহামেশা ছহীহ সনদযুক্ত এসব হাদীছ পড়ি, مَا
أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ ‘যার বেশী মাত্রায় নেশা আনয়ণ করে
তার স্বল্প মাত্রাও হারাম’।[6]كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ ‘যাবতীয় নেশার দ্রব্য মদ এবং সকল মদই হারাম’।[7]
তাহ’লে এমন ভয়াবহ কথা দ্বারা কেন সেসব মানুষকে মাদকের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, যারা কিনা পাপাচারের খাদের কিনারে অবস্থান করছে? এমনকি তারা কার্যত তার মধ্যে ডুবে আছে? তারা তো এখন আঙ্গুর বাদে অন্য শ্রেণীর মদ স্বল্প মাত্রায় এই দলীলে মযাসে পান করছে যে, অমুক ইমাম এ কথা বলেছেন, আর তিনি তো একজন আলেম ফাযেল (মহৎ বিদ্বান) মানুষ। আফসোস! মদ হালাল করার জন্য কী জঘন্য দলীল!!
[চলবে]
[1]. আবূদাঊদ হা/৩৪৬২; ছহীহাহ হা/১১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪২৩। (আরবী ‘যুল্লুন’ ও ‘যিল্লাতুন’-এর বাংলা ‘লাঞ্ছনা’। অপমানজনক দুরবস্থা ও দুর্গতিকে লাঞ্ছনা বলে। আবদুল ওয়াদুদ, ব্যবহারিক শব্দকোষ)।-অনুবাদক।
[2]. তুর্কী মুদ্রাকে লিরা বলা হয়।
[3]. আলোচ্য আয়াত ও অনুরূপ অন্যান্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ইসলামের সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা প্রদান এবং ব্যবহারিক বা প্রায়োগিকভাবে তা দেখিয়ে দেওয়ার অধিকার দিয়েছেন। ঈমান-আক্বীদা, ইবাদত, মু‘আমালাত বা পারস্পরিক কারবার, আইন-বিচার, রাজ্য শাসন, মু‘আশারাত বা সমাজ পরিচালনা, চরিত্র বা আদব-আখলাক ইত্যাদি বিষয়ে তিনি যা কিছু বলেছেন, যা হাদীছ বা সুন্নাহ নামে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে তা দ্বারাই তিনি আল্লাহর বিধানকে সুস্পষ্ট করেছেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেছেন,صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّى، ‘তোমরা ছালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’ (বুখারী হা/৬৩১)। তিনি ওযূ থেকে নিয়ে সালাম ফেরানো পর্যন্ত ছালাতের যাবতীয় নিয়ম-কানুন হাদীছে বলে গেছেন। ছাহাবাদের তিনি হাতে কলমে ছালাত শিখিয়েছেন। কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তিনি তাকে প্রথমেই ছালাত শিখাতেন। তাঁর তরীকাই কুরআনের তরীকা। আল্লাহ বলেন,مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، ‘যে রাসূলকে মানল সে আল্লাহকে মানল’ (নিসা ৪/৮০)। তাঁর তরীকা অমান্য করা কুফর এবং নিজেদের ইচ্ছামত তাতে নতুন কিছু সংযোজন বিদ‘আত।-অনুবাদক।
[4]. মুহাম্মাদ আমীন ইবনু আবেদীন দামেশক্বী (১১৯৮-১২৫২ হি.), রাদ্দুল মুহতার (বৈরূত : দারুল ফিক্র ১৩৯৯/১৯৭৯) ১/৬৭ পৃ.; আব্দুল ওয়াহহাব শা‘রানী, মীযানুল কুবরা (দিল্লী : ১২৮৬ হি.) ১/৩০ পৃ.।
[5]. হিদায়া, কিতাবুল আশরিবা বা পানীয় অধ্যায় দেখুন।
[6]. আবূদাঊদ হা/৩৬৮১; ইবনু মাজাহ হা/৩৩৯৩; ইরওয়া হা/২৩৭৫।
[7]. মুসলিম হা/২০০৩; আবূদাঊদ হা/৩৬৭৯; ইরওয়া হা/২৩৭৩।