ভূমিকা :
অল্পে তুষ্টি মুমিন চরিত্রের ভূষণ। সুখী জীবন লাভের অন্যতম হাতিয়ার। অল্পে তুষ্টির এই অনন্য গুণটি যে অর্জন করতে পারে, জীবনের শত দুঃখ-কষ্ট ও অপূর্ণতায় তার কোন আক্ষেপ থাকে না। আল্লাহ প্রদত্ত নির্ধারিত জীবন-জীবিকায় তিনি পরিতৃপ্ত থাকেন। অল্পতে তুষ্ট থাকার মধ্যেই কল্যাণ ও সফলতার ভিত্তি প্রোথিত থাকে। কারণ অতিভোগী, উচ্চাকাঙক্ষী ও মাত্রাতিরিক্ত বিলাসী জীবন মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। ইবাদতের আগ্রহ নষ্ট করে ফেলে। মানুষকে চরম হতাশাগ্রস্থ ও অস্থির করে তোলে। তাই সুখী ও প্রশান্ত জীবন লাভের জন্য অল্পে তুষ্টির গুণ অর্জন করা অপরিহার্য। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আমরা অল্পে তুষ্টি বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব ইনশআল্লাহ।
অল্পে তুষ্টির পরিচয় :
অল্পে তুষ্টির আরবী প্রতিশব্দ হ’ল القَنَاعَةُ। যার অর্থالرِضا بِالْيَسِيرِ مِنَ الْعَطَاءِ، ‘স্বল্প লব্ধ জিনিসে পরিতুষ্ট থাকা’।[1] পরিভাষায় বলা হয়, هي الرضا بما أعطى الله، ‘আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা’।[2]
ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেন,القناعة: الرضا بما دون الكفاية، وترك التشوُّف إلى المفقود، والاستغناء بالموجود، ‘অল্পে তুষ্টির অর্থ হ’ল অপর্যাপ্ত বিষয়ে তুষ্ট থাকা, অপ্রাপ্ত জিনিস পাওয়ার লোভ পরিত্যাগ করা এবং যা আছে তা নিয়েই প্রাচুর্যবোধ করা’।[3]
ইয়াসির আব্দুল্লাহ আল-হূরী বলেন,القناعة هي الرضا بما قسمه الله وأعطاه، والاستغناء بالحلال عن الحرام، وامتلاء القلب بالرضا وعدم التسخط والشكوى، ‘অল্পে তুষ্টি হচ্ছে আল্লাহ তাক্বদীরে যা কিছু বণ্টন করেছেন এবং দিয়েছেন তাতে খুশি থাকা, হারাম বর্জন করে হালাল জিনিসে পরিতৃপ্ত থাকা এবং অভিযোগ ও রাগ পরিহার করে অন্তরকে সন্তুষ্টি দিয়ে ভরে দেওয়া’।[4]
অল্পে তুষ্টির আলোচনা করা অনেকটা সহজ হ’লেও এই মহান গুণ অর্জন করা ততটা সহজ নয়। তবে প্রকৃত ঈমানদার ও পরহেযগার বান্দাদের জন্য এই গুণ অর্জন করা কঠিন নয়। কিন্তু দুর্বল ঈমানদার ব্যক্তিদের জন্য এটা কঠিন বটে। কেননা শয়তান সব সময় মানুষকে লোভের মায়াজালে বন্দী করতে চায় এবং দুনিয়ার মোহে প্ররোচিত করে তাকে উদ্ভ্রান্ত জীবনের দিকে আহবান করে। সেকারণ পরিতুষ্ট জীবন লাভের জন্য ঈমান ও তাক্বওয়ার বলে বলীয়ান হয়ে সর্বদা শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হয়।
অল্পে তুষ্টির ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা :
অল্পে তুষ্ট জীবনই প্রকৃত সুখের জীবন। ইসলাম মানুষকে সেই সুখী জীবন গঠনে উৎসাহিত করে। কেননা সম্পদের প্রতি মানুষের যে অস্বাভাবিক আকর্ষণ রয়েছে, তা মানুষকে আমৃত্যু তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। কিন্তু যারা লোভের মুখে লাগাম টেনে স্বভাবগত এই রিপু শক্তিকে জয় করতে পারে এবং নিজের যা আছে তা নিয়ে পরিতৃপ্ত থাকতে পারে, তাদের জন্য দুনিয়াটা হয়ে যায় সুখের নীড়। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে অল্পে তzুষ্টর নির্দেশ দিয়ে বলেন,لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ- ‘আমরা তাদের ধনিক শ্রেণীকে যে বিলাসোপকরণ সমূহ দান করেছি, তুমি সেদিকে চোখ তুলে তাকাবে না। আর তাদের ব্যাপারে তুমি দুশ্চিন্তা কর না। ঈমানদারগণের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনত রাখ’ (হিজর ১৫/৮৮)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘এই আয়াতে মানুষকে অন্যের ধন-সম্পদের প্রতি লোভ করতে নিষেধ করা হয়েছে’।[5] ইমাম শাওক্বানী (রহঃ) বলেন, এই আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন,لا تطمح ببصرك إلى زخارف الدنيا طموح رغبة فيها، ‘তুমি কামনার দৃষ্টি দিয়ে দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থেক না’।[6] নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অল্পে তুষ্ট মানুষ ছিলেন। কিন্তু এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে আমাদেরকেই নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে কুরআনের একটি সারগর্ভ দো‘আ শিখিয়েছেন। তা হ’লرَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের ইহকালে কল্যাণ দাও ও পরকালে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও!’ (বাক্বারাহ ২/২০১)। ইবনু কুতাইবাহ সহ অনেক মুফাসসিরের মতে, এখানে দুনিয়ার কল্যাণ বলতে অল্প রিযিকে পরিতুষ্ট থাকা, পাপ থেকে বিরত থাকা, সৎ কাজের তাওফীক্ব লাভ করা ও সৎ সন্তান প্রভৃতি বুঝানো হয়েছে।[7]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর জীবনাদর্শের মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মাদীকে অল্পে তুষ্ট থাকার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করেছেন। ওবায়দুল্লাহ ইবনু মিহছান আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِيْ سِرْبِهِ، مُعَافًى فِيْ جَسَدِهِ، عِنْدَهُ قُوْتُ يَوْمِهِ، فَكَأَنَّمَا حِيْزَتْ لَهُ الدُّنْيَا بِحَذَافِيْرِهَا، ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার নিকট সারা দিনের খোরাকী থাকে, তাহ’লে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াটাই একত্রিত করা হ’ল’।[8]
ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীন এ সমস্ত হাদীছের মাধ্যমে তাদের জীবনকে আলোকিত করেছিলেন। শুধু নিজেরাই আলোকিত হননি, তাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও সেই আলোর কাফেলায় শামিল করার চেষ্টা করেছেন। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) তার ছেলেকে উপদেশ দিয়ে বলেন, يا بني! إذا طلبت الغنى فاطلبه بالقناعة، فإنها مال لا يَنْفَدُ؛ وإياك والطمَع فإنه فقر حاضر؛ وعليك باليأس، فإنك لم تيأس من شيء قطُّ إلا أغناك الله عنه، ‘হে বৎস! যদি তুমি প্রাচুর্য তালাশ কর, তাহ’লে অল্পে তুষ্টির মাধ্যমে সেটা অন্বেষণ কর। কেননা অল্পে তুষ্টি এমন সম্পদ, যা কখনো নিঃশেষিত হয় না। আর তুমি লোভ-লালসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা লোভ একটি চাক্ষুষ নিঃস্বতা। পাশাপাশি তুমি অপরের সম্পদ থেকে বিমুখ থাক। কেননা যখনই তুমি কোন কিছু (পার্থিব জৌলুষ) থেকে নিবৃত্ত থাকবে, আল্লাহ তোমাকে এর থেকে মুখাপেক্ষীহীন করে দিবেন’।[9]
বকর বিন আব্দুল্লাহ আল-মুযানী (রহঃ) বলেন, يَكْفِيكَ مِنَ الدُّنْيَا مَا قَنِعْتَ بِهِ وَلَوْ كَفُّ تَمْرٍ، وَشَرْبَةُ مَاءٍ، وَظِلُّ خِبَاءٍ، وَكُلُّ مَا انْفَتَحَ عَلَيْكِ مِنَ الدُّنْيَا شَيْءٌ ازْدَادَتْ نَفْسُكَ بِهِ تَعَبًا، ‘দুনিয়াতে তোমার জন্য ততটুকু সম্পদই যথেষ্ট, যতটুকুতে তুমি পরিতৃপ্ত থাকতে পার। সেটা হ’তে পারে এক মুঠো খেজুর, কয়েক ঢোক পানি এবং একটি তাঁবুর ছায়া। কিন্তু যখনই তোমার সামনে দুনিয়ার কোন সম্ভারের প্রকাশ ঘটবে, এর প্রতি তোমার নফসের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে’।[10] সুতরাং ইসলাম আমাদেরকে অল্পে তুষ্টির প্রতি প্রেরণা জুগিয়েছে। শুধু তাই নয় সালাফে ছালেহীন অল্পে তুষ্টির গুণ বিবর্জিত জীবনকে প্রকৃত দরিদ্র জীবন বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম রাগেব ইস্পাহানী (রহঃ) বলেন, ‘দরিদ্রতার বিভিন্ন রকমভেদ রয়েছে। আখেরাতের দরিদ্র সেই ব্যক্তি, যার নেকী কম। দুনিয়ার প্রকৃত দরিদ্র সেই ব্যক্তি, যে অল্পে তুষ্ট থাকতে পারে না। দুনিয়ার সমুদয় সম্ভার তার হস্তগত হ’লেও বাস্তবতার নিরিখে সেই প্রকৃত দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তি’।[11]
সুতরাং সুখী হওয়ার জন্য কাড়ি কাড়ি সম্পদের প্রয়োজন হয় না। শুধু প্রয়োজন হয় অল্পে তুষ্ট একটা হৃদয়ের। কারণ আমাদের আশপাশে এমন অনেক ধনী ও সম্পদশালী আছেন, যাদের নিরস কণ্ঠ থেকে ভেসে আসে না পাওয়ার আক্ষেপ, যাদের পেরেশানি আকাশচুম্বি। রাতের পর রাত কেটে যায় নিদ্রাহীন অবস্থায়। আবার এমন মানুষও আছে, যারা দিন এনে দিন খায়। এতেই তাদের পরম সুখ। নেই কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন এবং অধিক পাওয়ার তৃষ্ণা। আছে শুধু অল্পে তুষ্টির মত এক মহাগুণ।
অল্পে তুষ্টির গুরুত্ব ও ফযীলত
ইসলামের প্রতিটি দিকনির্দেশনায় মানবজাতির জন্য দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। অল্পে তুষ্টির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাছাড়া অল্পে তুষ্ট থাকা অন্তরের ইবাদত। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে এর গুরুত্ব ও ফযীলত বিধৃত হয়েছে। নিমেণ অল্পে তুষ্টির গুরুত্ব ও ফযীলত আলোকপাত করা হ’ল-
১. অল্পে তুষ্টি মযবূত ঈমানের পরিচায়ক :
অল্পে তুষ্ট থাকা বান্দার ঈমানী মযবূতির পরিচায়ক। আল্লাহ ও তাঁর নির্ধারিত ফায়ছালার ওপর চূড়ান্ত বিশ্বাস ছাড়া কেউ স্বল্প জীবিকায় তুষ্ট থাকতে পারে না। প্রখ্যাত তাবেঈ হাসান বছরী (রহঃ) বলেন,يَابْنَ آدَمَ خَفْ مِمَّا خَوَّفَكَ اللهُ تَعَالَى يَكْفِيْكَ مَا خَوَّفَكَ النَّاسُ، وَإِنَّ مِنْ ضَعْفِ يَقِيْنِكَ أَنْ تَكُوْنَ بِمَا فِيْ يَدِكَ أَوْثَقَ مِنْكَ بِمَا فِيْ يَدِ اللهِ تَعَالَى، ‘হে আদম সন্তান! আল্লাহ তোমাকে যা থেকে সতর্ক করেছেন, তা থেকে সতর্ক থাক। মানুষ তোমাকে যে ব্যাপারে [দরিদ্রতা] ভয় দেখায়, সেই ব্যাপারে আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তোমার দুর্বল ঈমানের অন্যতম লক্ষণ হ’ল- আল্লাহর কাছে যা আছে তার চেয়ে তোমার উপার্জিত জিনিসের উপর তুমি বেশী নির্ভর কর’।[12] সুতরাং অল্পে তুষ্ট না থাকা দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক এবং আল্লাহ প্রদত্ত অল্প জীবিকায় খুশি থাকা মযবূত ঈমানের পরিচায়ক।
২. পবিত্র জীবন লাভ :
অল্পে তুষ্ট থাকার মাধ্যমে পবিত্র জীবন লাভ করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ، ‘পুরুষ হৌক বা নারী হৌক মুমিন অবস্থায় যে সৎকর্ম সম্পাদন করে, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অপেক্ষা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব’ (নাহল ১৬/৯৭)। এই আয়াতে ঈমান ও নেক আমলের পার্থিব পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেটা হ’ল পবিত্র জীবন। আলী ইবনে আবী তালেব, ইবনু আববাস, হাসান বছরী, ইকরিমা, ওয়াহাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) প্রমুখ বিদ্বানদের মতে এই আয়াতে ‘পবিত্র জীবন’ বলতে ‘অল্পে তুষ্ট জীবন’ বুঝানো হয়েছে।[13] মুহাম্মাদ আলী ছাবূনী (রহঃ) বলেন, এই আয়াতে আল্লাহর ঘোষণা হ’ল-فلنحيينَّه في الدنيا حياة طيبة بالقناعة والرزق الحلال، والتوفيق لصالح الأعمال، ‘আমি দুনিয়াতে তাকে অল্পে তুষ্টি, হালাল রিযিক্ব এবং নেক আমল সম্পাদন করার তাওফীক্ব দানের মাধ্যমে পবিত্র জীবন দান করব’।[14]
৩. অল্পে তুষ্টি সফলতার সোপান :
সমাজের বড় বড় ব্যবসায়ী, চাকুজীবী, উদ্যোক্তা প্রমুখ লোকদেরকে আমরা সফল ব্যক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করে থাকি। কিন্তু প্রকৃত সফলতার ভীত প্রোথিত থাকে ইসলাম ও অল্পে তুষ্টির মাঝে। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ، وَرُزِقَ كَفَافًا، وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ، ‘সেই ব্যক্তি সফলকাম যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে প্রয়োজন মাফিক রিযিক্ব দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে অল্পে তুষ্টি দান করেছেন’।[15] অন্যত্র তিনি বলেছেন,طُوبَى لِمَنْ هُدِيَ إِلَى الإِسْلَامِ، وَكَانَ عَيْشُهُ كَفَافًا وَقَنَعَ، ‘সেই ব্যক্তি কতই না সৌভাগ্যবান, যে ইসলামের দিকে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে। তার জীবিকা পরিমিত এবং সে অল্পে তুষ্ট থাকে।[16]
৪. আল্লাহ ও মানুষের ভালোবাসা অর্জন :
অল্পে তুষ্টি এমন একটি আধ্যাত্মিক সম্পদ, যা অর্জন করলে আল্লাহ ও মানবমন্ডলী উভয়ের ভালোবাসা অর্জন করা যায়। সাহ্ল ইবনে সা‘দ আস-সা‘দী (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল,يَا رَسُولَ اللهِ دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا أَنَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِي اللهُ وَأَحَبَّنِي النَّاسُ؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষও আমাকে ভালোবাসবে’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبَّكَ اللهُ، وَازْهَدْ فِيْمَا فِيْ أَيْدِي النَّاسِ يُحِبُّكَ النَّاسُ، ‘দুনিয়া বিমুখ হয়ে যাও, তাহ’লে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর মানুষের কাছে যা আছে তার প্রতি লোভ করো না, তাহ’লে লোকেরা তোমাকে ভালোবাসবে’।[17] হাসান বছরী (রহঃ) বলেন,لَا تَزَالُ كَرِيمًا عَلَى النَّاسِ وَلَا يَزَالُ النَّاسُ يُكْرِمُوْنَكَ مَا لَمْ تَتَعَاطَ مَا فِيْ أَيْدِيْهِمْ فَإِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ اسْتَخَفُّوْا بِكَ وَكَرِهُوْا حَدِيْثَكَ وَأَبْغَضُوْكَ، ‘যতদিন তুমি মানুষের সম্পদে আসক্ত না হবে, ততদিন তুমি মানুষের কাছে সম্মানিত থাকবে এবং তারা তোমাকে সম্মান করবে। কিন্তু যখন তুমি তাদের কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, তারা তোমাকে ছোট মনে করবে, তোমার কথা অপসন্দ করবে এবং তোমার প্রতি তাদের ঘৃণা তৈরী হবে’।[18]
আইয়ূব আস-সাখতিয়ানী (রহঃ) বলেন,لَا يَنْبُلُ الرَّجُلُ حَتَّى تَكُوْنَ فِيْهِ خَصْلَتَانِ: الْعِفَّةُ عَمَّا فِي أَيْدِي النَّاسِ، وَالتَّجَاوُزُ عَمَّا يَكُوْنُ مِنْهُمْ، ‘কোন ব্যক্তি দু’টি গুণ অর্জন না করা পর্যন্ত মহান হ’তে পারে না- (১) মানুষের সম্পদ থেকে নির্মোহ থাকা এবং (২) অন্যের অনাকাঙ্খিত আচরণ ক্ষমা করে দেওয়া’।[19]
৫. অন্তরের ধনাঢ্যতা বাড়ে :
মানুষ কখনো অর্থ-সম্পদের মাধ্যমে সুখী হ’তে পারে না; বরং অর্থ-সম্পদকে সুখের একটি উপাদান বলা যেতে পারে মাত্র। কেননা সমাজে অনেক বিত্তশালী লোক আছে, তাদের অনেক অর্থ-সম্পদ থাকার পরেও অধিক পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাদেরকে দরিদ্র বানিয়েছে। আবার এমন গরীব মানুষ আছে, তাক্বদীরে বণ্টিত রিযিক পেয়েই যে পরিতুষ্ট। আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হৃদয় নিয়ে সে সুখে-শান্তিতে দিন গুজরান করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَيْسَ الغِنَى عَنْ كَثْرَةِ العَرَضِ، وَلَكِنَّ الغِنَى غِنَى النَّفْسِ، ‘সম্পদের আধিক্য প্রকৃত ধনাঢ্যতা নয়; বরং প্রকৃত ধনাঢ্যতা হ’ল অন্তরের ধনাঢ্যতা’।[20]
আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে উপদেশ দিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ، ‘তোমার তাক্বদীরে আল্লাহ যা বণ্টন করে রেখেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকবে, তাহ’লে মানুষের মাঝে সর্বাপেক্ষা ধনী হ’তে পারবে’।[21] এর ব্যাখ্যায় ইমাম মানাভী (রহঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাক্বদীরের নির্ধারিত রিযিক্ব পেয়ে তুষ্ট থাকে, সে কখনো মানুষের সম্পদের দিকে প্রলুব্ধ হয় না। ফলে সে অভাবমুক্ত থাকে এবং অন্তরের দিক থেকে ধনী হয়ে ওঠে’।[22]
সুতরাং বান্দা অল্পে তুষ্ট থাকলে, আল্লাহ তার হৃদয়কে ধনী ও অভাবমুক্ত করে দেন। মানুষের হৃদয় তার দেহের রাজধানী। এই হৃদয়ে ঈমান ও অল্পে তুষ্টির বসবাস। সেকারণ অন্তর অল্পে তুষ্ট হয়ে গেলে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও আল্লাহমুখী ও অন্যের অমুখাপেক্ষী হয়ে যায়। যেমন আবূ হাতেম (রহঃ) বলেন,القناعة تكون بالقلب؛ فمن غني قلبه غنيت يداه، ومن افتقر قلبه لم ينفعه غناه، ومن قنع لم يتسخط وعاش آمنا مطمئنًا، ‘অল্পে তুষ্টি হৃদয়ে বিরাজ করে। যার অন্তর অভাবমুক্ত হয়ে যায়, তার দুই হাতও অভাবমুক্ত হয়ে যায়। আর যার অন্তর দরিদ্র হয়ে যায়, তার ধনাঢ্যতা তাকে কোন উপকার করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি অল্পে তুষ্ট থাকে, সে কখনো (তাক্বদীরের প্রতি) অসন্তুষ্ট হয় না। সে নিশ্চিন্ত ও প্রশান্ত চিত্তে জীবন নির্বাহ করে’।[23]
৬. বান্দার সম্মান ও মর্যাদা বেড়ে যায় :
পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে কাঙিক্ষত বিষয় হ’ল মান-সম্মান। সমাজের বুকে সবাই সম্মানী ব্যক্তি হিসাবে অভিহিত হ’তে চায়। জীবনে অন্যের ভালোসা, শ্রদ্ধা ও সেণহের ফল্গুধারায় সিক্ত হ’তে চায়। ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই নিজের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার কোশেশ করে। মর্যাদা পাওয়ার লোভে মানুষ কখনো কখনো অমানুষের মতো কাজ করে ফেলে। দুনিয়াদার লোকেরা পার্থিব সম্মান পাওয়ার উদগ্র বাসনা নিয়ে এতকিছু করলেও মুমিন বান্দারা আল্লাহর আনুগত্যেই মর্যাদা তালাশ করে। পরমুখাপেক্ষিতা ও অল্পে তুষ্টির গুণ অর্জন করে তারা নিজেদের সম্মানকে উর্ধ্বগামী করে তোলে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে অহি-র মাধ্যমে সম্মানিত ও মর্যাদামন্ডিত জীবন লাভের সূত্র শিখিয়েছেন। সাহ্ল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, ‘একদা জিবরীল আমীন এসে নবী করীম (ছাঃ)-কে বললেন,يَا مُحَمَّدُ شَرَفُ الْمُؤْمِنِ قِيَامُ اللَّيْلِ وَعِزُّهُ اسْتِغْنَاؤُهُ عَنِ النَّاسِ، ‘হে মুহাম্মাদ! মুমিনের সম্মান বৃদ্ধি পায় ক্বিয়ামুল লায়লের মাধ্যমে এবং মানুষের সম্পদ থেকে নির্মোহ থাকার মাধ্যমে তার ইয্যত বেড়ে যায়’।[24] কবি বলেছেন,
كُنْ صَابِرًا بِالفَقْرِ وَادَّرِعْ الرِّضَا * بمَا قَدَّرَ الرَّحمنُ وَاشْكُرْهُ تُحْمَد
فَمَا الْعِزُّ إلَّا فِي الْقَنَاعَةِ وَالرِّضَا * بِأَدْنَى كَفَافٍ حَاصِلٍ وَالتَّزَهُّدِ
‘দরিদ্রতায় ধৈর্যশীল হও, দয়াময় আল্লাহ যা কিছু নির্ধারণ করেছেন তা গ্রহণের জন্য সন্তুষ্টির বর্ম পরিধান কর এবং তাঁর প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ কর, তাহ’লে তুমি প্রশংসিত হবে। সম্মান রয়েছে তো কেবল অল্পে তুষ্টি, উপার্জিত সামন্য জীবিকায় খুশি থাকা এবং দুনিয়া বিমুখতার মাঝে’।[25]
৭. আল্লাহর শুকরগুযার বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য :
আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা ফরয। কেননা মানব সৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্য হ’ল আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় মাবজাতিকে তাঁর নে‘মতের শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,مبْنى الدّين على قاعدتين الذّكر وَالشُّكْر ‘দ্বীনের বুনিয়াদ দু’টি স্তম্ভের উপর ভিত্তিশীল। আর সেটা হ’ল যিক্র ও শুক্র। কেননা আল্লাহ বলেছেন, فَاذْكُرُونِيْ أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِي وَلَا تَكْفُرُوْنِ، ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না’ (বাক্বারাহ ২/১৫২)।[26] আর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্যতম উপায় হ’ল অল্পে তুষ্ট থাকা। রাসূল (ছাঃ) একবার আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন,يَا أَبَا هُرَيْرَةَ كُنْ وَرِعًا، تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ، وَكُنْ قَنِعًا، تَكُنْ أَشْكَرَ النَّاسِ، ‘হে আবূ হুরায়রা! তুমি আল্লাহভীরু হয়ে যাও, তাহ’লে লোকেদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী হ’তে পারবে। তুমি অল্পে তুষ্ট থাকো, তাহ’লে লোকেদের মধ্যে সর্বোত্তম কৃতজ্ঞ বান্দা হ’তে পারবে’।[27]
৮. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন :
তাক্বদীরের প্রতি যার ঈমান যত মযবূত, অল্পে তুষ্ট থাকা তার জন্য ততটাই সহজ। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত রিযিকে সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে তাওহীদ পূর্ণতা লাভ করে। কেননা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হ’ল তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে মন্দ তাক্বদীর দিয়ে বেশী পরীক্ষা করে থাকেন। ভাল তাক্বদীরকে সবাই মেনে নিতে পারে। কিন্তু মন্দ তাক্বদীরকে সবাই মেনে নিতে পারে না। আবার তাক্বদীরের মন্দ ফায়ছালাকে মেনে নেওয়া এবং সেই মন্দ ফায়ছালার উপর সন্তুষ্ট থাকাও এক নয়। কেননা যে ব্যক্তি কোন উপায় না পেয়ে মন্দ তাক্বদীরকে মেনে নেয়, আর যে ব্যক্তি তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয় এই দু’জনের ঈমান কখনো সমান নয়। সুতরাং যারা আল্লাহ কর্তৃক তাক্বদীরের নির্ধারিত ফায়ছালার উপর সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إنَّ عِظَمَ الجزاءِ مَع عِظَمِ البَلاء، وإنَّ الله تعالى إذَا أَحَبَّ قَوْماً ابْتَلاَهُمْ، فَمنْ رَضِيَ فلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ، ‘নিশ্চয়ই বড় পরীক্ষায় বড় পুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন, তখন তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। ফলে তাতে যে সন্তুষ্ট হবে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে (আল্লাহর পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি’।[28] সুতরাং যারা অল্পে পরিতুষ্ট থাকে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং যারা অল্পে তুষ্ট থাকে না, তাদের প্রতি নাখোশ হন।
৯. অল্পে তুষ্টি আল্লাহর একটি বড় নে‘মত :
মহান আল্লাহ যাকে অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব দিয়েছেন, তাকে যেন অনেক বড় একটি নে‘মত দান করেছেন। যে নে‘মতের পরশ দিয়ে মানুষের মৃতপ্রায় অন্তরগুলো আল্লাহর ইবাদতের জন্য প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আবূ সুলায়মান (রহঃ) বলেন, আমি আমার বোনকে বলতে শুনেছি,الفقراء كلهم أموات إلا من أحياه الله تعالى بعز القناعة والرضا بفقره، ‘দরিদ্ররা সবাই মৃত। তবে তারা নয়, যাদেরকে আল্লাহ অল্পে তুষ্টির সম্মান ও স্বীয় দারিদ্রে পরিতুষ্টির মাধ্যমে জীবিত রেখেছেন’।[29]
আবূ হাতেম (রহঃ) বলেন,مِن أكثر مواهب الله لعباده وأعظمها خطرًا القناعة، وليس شيء أروح للبدن من الرضا بالقضاء، والثقة بالقسم، ولو لم يكن في القناعة خصلة تُحمد إلا الراحة، وعدم الدخول في مواضع السوء لطلب الفضل، لكان الواجب على العاقل ألا يفارق القناعة على حالة من الأحوال، ‘বান্দার প্রতি আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার ও বিপদ-সংকটে সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হ’ল ‘অল্পে তুষ্টি’। তাক্বদীরে বণ্টিত নির্ধারিত ফায়ছালার ওপর আস্থাশীল ও খুশি থাকার চেয়ে শরীরের জন্য প্রশান্তিদায়ক কোন কিছু নেই। যদি অল্পে তুষ্টির মাঝে প্রশান্তির মত প্রশংসনীয় কোন গুণ নাও থাকত এবং শ্রেষ্ঠত্বের অন্বেষণে বিভিন্ন মন্দ ক্ষেত্রে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ও না থাকত, তবুও জ্ঞানী ব্যক্তির উপর সকল অবস্থায় অল্পে তুষ্টির গুণ বর্জন না করা ওয়াজিব হয়ে যেত’।[30]
১০. রিযিকে বরকত নাযিল হয় :
রিযিকে বরকত লাভের অন্যতম উপায় হ’ল অধিক পাওয়ার বল্গাহীন আকাঙ্ক্ষা দূরীভূত করে হৃদয় যমীনে অল্পে তুষ্টির চারা রোপণ করা। অল্পে তুষ্ট ব্যক্তির আয়-রূযীতে আল্লাহ সীমাহীন বরকত নাযিল করেন। হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। তারপর বললেন,يَا حَكِيمُ، إِنَّ هَذَا الـمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، فَمَنْ أَخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُوْرِكَ لَهُ فِيهِ، وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ، كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ، اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى، ‘হে হাকীম! এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ছাড়া) তা গ্রহণ করে, তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে, তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না। যেন সে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপরের হাত নিচের হতের চেয়ে উত্তম’। হাকীম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত (সওয়াল করে) আমি কাউকে সামান্যতমও ক্ষতিগ্রস্ত করব না’।[31]
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, যারা লোভের মুখে লাগাম টেনে হারাম পথ বর্জন করে হালাল পথে উপার্জন করে এবং তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তাদের জীবনে বরকত দান করেন।[32] সুতরাং আল্লাহ আমাদেরকে প্রতি মাসে যত টাকা উপার্জন করার তাওফীক্ব দিয়েছেন তাতেই যদি আমরা সন্তুষ্ট থাকি, তাহ’লে এই অল্প টাকাতেই আল্লাহ এমন বরকত দিবেন যে, আমরা মাসের সব প্রয়োজন অল্পতেই মিটাতে পারব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু লাখ লাখ টাকা আয় করেও যদি আমরা সন্তুষ্ট না থাকতে পারি, তাহ’লে আমাদের আয় বরকতশূন্য হয়ে যাবে এবং আমাদের অভাবও কখনো ফুরাবে না। মহান আল্লাহ আমাদেরকে অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন! [চলবে]
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম. এ (অধ্যয়নরত), আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. ইবনে মানযূর, লিসানুল আরব, (বৈরূত: দারুছ ছাদের, ৩য় সংস্করণ, ১৪১৪হি.) ৮/২৯৮; ইবনুল আছীর, আন-নিহায়াহ ফী গারীবিল হাদীছ ওয়াল আছার, (বৈরূত: মাকতাবাতুল ইলমিয়্যাহ, ১৩৯৯হি./১৯৭৯খ্রি.), ৪/১১৪ পৃঃ।
[2]. আবুল ফায্ল বুস্তী, মাশারিকুল আনওয়ার, (লেবানন: আল-মাকতাবাতুল আতীক্বাহ, তাবি) ২/১৮৭।
[3]. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী, মু‘জামু মাক্বালীদিল ‘উলূম, তাহক্বীক্ব: ড. মুহাম্মাদ ইবরাহীম উবাদাহ (কায়রো: মাকতাবাতুল আদাব, ১ম সংস্করণ, ১৪২৪হি./২০০৪খ্রি.) পৃ. ২০৫, ২১৭।
[4]. https://www.alukah.net/sharia/0/111519
[5]. তাফসীরে ত্বাবারী ১৭/১৪১।
[6]. শাওক্বানী, তাফসীরে ফাৎহুল ক্বাদীর ৩/১৭১।
[7]. আবূ হাইয়ান আন্দালূসী, আল-বাহরুল মুহীত্ব ২/৩১০।
[8]. তিরমিযী হা/২৩৪৬; ইবনু মাজাহ হা/৪১৪১; মিশকাত হা/৫১৯১, সনদ হাসান।
[9]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব, তাহক্বীক: আমর আল-আমরী (বৈরূত: দারুল ফিক্র, ১৪১৫হি./১৯৯৫খ্রি.) ২/৩৬৩।
[10]. ইবনু আবীদ্দুনইয়া, আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, তাহক্বীক: মুছত্বফা আব্দুল ক্বাদের (বৈরূত: আল-মুআস্সাতুল কুতুব আছ-ছাক্বাফিয়্যাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৩হি./১৯৯৩খ্রি.), পৃ: ৬২।
[11]. রাগেব ইস্পাহানী, তাফসীরে রাগেব ১/৫৬৪।
[12]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৫০।
[13]. তাফসীরে কুরতুববী ১০/১৭৪; তারফসীর ইবনে কাছীর ৪/৬০১; তাফসীরে বায়যাবী ৩/২৩৯; তাফসীরে মারাগী ১৪/১৩৬।
[14]. মুহাম্মাদ আলী ছাবূনী, ছাফওয়াতুত তাফাসীর ২/১৩১।
[15]. মুসলিম হা/১০৫৪; তিরমিযী হা/২৩৪৮; ইবনু মাজাহ হা/৪১৩৮; মিশকাত হা/৫১৬৫।
[16]. তিরমিযী হা/২৩৪৯; ছহীহাহ হা/১৫০৬, সনদ ছহীহ।
[17]. ইবনু মাজাহ হা/৪১০২; ছহীহাহ হা/৯৪৪; মিশকাত হা/৫১৮৭।
[18]. আহমাদ ইবনু হাম্বাল, আয-যুহদ (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৯৯৯খ্রি./১৪২০হি.) পৃ: ২১৬।
[19]. ইবনু রজব হাম্বলী, জামে‘উল উলূম ওয়াল হিকাম, তাহক্বীক: শু‘আইব আরনাঊত্ব (বৈরূত: মু‘আস্সাতুর রিসালাহ, ৭ম সংস্করণ, ১৪২২হি./২০০১খ্রি.) ২/২০৫।
[20]. বুখারী হা/৬৪৪৬; মুসলিম হা/১০৫১; তিরমিযী হা/২৩৭৩; ইবনু মাজাহ ৪১৩৭; মিশকাত হা/৫১৭০।
[21]. তিরমিযী হা/২৩০৫; ছহীহাহ হা/৯৩০; মিশকাত হা/৫১৭১, সনদ হাসান।
[22]. মানাভী, আত-তাইসীর বি শারহে আল-জামিইছ ছাগীর (রিয়াদ: মাকতাবাতুল ইমাম আশ-শাফে‘ঈ, ২য় সংস্করণ, ১৪০৮হি./১৯৮৮খ্রি.) ১/২৭।
[23]. আবূ হাতেম বুস্তী, রাওযাতুল ‘উক্বালা, তাহক্বীক: মুহাম্মাদ মুহীউদ্দীন, (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, তাবি) পৃ: ১৫১।
[24]. হাকেম, হা/৭৯২১; ছহীহুত তারগীব হা/৬২৭, সনদ হাসান।
[25]. আব্দুল আযীয সালমান, মিফতাহুল আফকার, ৩/১১০।
[26]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৩৯৩হি./১৯৭৩খ্রি.) পৃ: ১২৮।
[27]. ইবনু মাজাহ হা/৪২১৭; ছহীহুত তারগীব হা/১৭৪১, সনদ ছহীহ।
[28]. ইবনু মাজাহ হা/৪০৩১; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪০৭; মিশকাত হা/১৫৬৬।
[29]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া তাহক্বীক: আহমাদ ইবনে আলী (কায়রো: দারুল হাদীছ, ২০০০খ্রি./১৪২১হি.) ২/৪৩১।
[30]. রওযাতুল ‘উক্বালা, পৃ: ১৪৯।
[31]. বুখারী হা/১৪৭২; মুসলিম হা/১০৩৫; মিশকাত হা/১৮৪২ ।
[32]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৪/১৩১০।