ইবাদতে অলসতা দূর করার উপায়

ভূমিকা :

অলসতা ও উদাসীনতা এমন মারাত্মক রোগ যা মানুষকে আখেরাতে মুক্তির পাথেয় সৎ আমল তথা ইবাদত থেকে পিছিয়ে দেয়। এজন্য প্রত্যেক মুসলমানকে অলসতা দূর করতে সচেষ্ট হওয়া কর্তব্য। সিমাক আল-হানাফী (রহঃ) বলেন, سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَكْرَهُ أَنْ يَقُولَ : إنِّي كَسْلاَنُ، ‘আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নিকট থেকে শুনেছি, তিনি কাউকে ‘আমি অলস’ একথা বলতে পসন্দ করতেন না’।[1] ইবাদতে অলসতা ও উদাসীনতা দূর করার কতিপয় উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

১. আল্লাহর সাহায্য কামনা :

মহান আল্লাহর কাছে অলসতা ও উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য সাহায্য কামনা করতে হবে। কেননা তিনিই বান্দাকে যাবতীয় কাজের শক্তি-সামর্থ্য ও তাওফীক দিয়ে থাকেন। যেমন শু‘আইব (আঃ)-এর বক্তব্য পবিত্র কুরআনে এভাবে উল্লেখিত হয়েছে, وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ ‘আর আমার কোনই ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত। আমি তাঁর উপরেই নির্ভর করি এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাই’ (হূদ ১১/৮৮)। সুতরাং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।

রাসূল (ছাঃ) ছাহাবী মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দিতেন। এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: يَا مُعَاذُ، وَاللهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ، وَاللهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ، فَقَالَ: أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُولُ: اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ،

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে অছিয়ত করছি, তুমি প্রত্যেক ছালাতের পর এ দো‘আটি বলা কখনো পরিহার করবে না- আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা। অর্থ- হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ইবাদতে আমাকে সাহায্য করুন’![2]

২. আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা :

আল্লাহর কাছে যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের জন্য মানুষকে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। তেমনি তাঁর কাছে অলসতা ও উদাসীনতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে, যাতে এই ব্যাধি থেকে তিনি আমাদেরকে মুক্তি দেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه قَالَ كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْهَرَمِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ.

আনাস বিন মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এই দো‘আ করতেন, হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা ও বার্ধক্য থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এবং জীবন ও মরণের ফিৎনা থেকে এবং কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি’।[3]

৩. নেক আমল সম্পাদনে ধৈর্য ধারণ ও কষ্ট স্বীকার :

নেক আমল সম্পাদনে ধৈর্য ধারণ করা এবং বদ আমল পরিহারে সর্বাত্মক ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করতে হবে। আল্লাহ বলেন,فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِلْ لَهُمْ، ‘অতএব তুমি ধৈর্য ধারণ কর, যেমন ধৈর্য ধারণ করেছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। আর ওদের (শাস্তির) জন্য ব্যস্ত হয়ো না’ (আহকাফ ৪৬/৩৫)

আর যখন আত্মিক ও মানসিক ত্রুটি দূর করতে অলসতা আসে, তখন তা থেকে মুক্ত হ’তে কষ্টসহিষ্ণু হওয়া ও ধৈর্য ধারণ করা যরূরী। আল্লাহ বলেন,وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا، فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا، قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا، وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا، ‘শপথ মানুষের ও তার বিন্যস্ত করণের, অতঃপর তার মধ্যে তিনি দুষ্কৃতির ও সুকৃতির প্রেরণা নিক্ষেপ করেছেন। সফল হয় সেই ব্যক্তি, যে তার নফসকে পরিশুদ্ধ করে এবং ব্যর্থ হয় সেই ব্যক্তি, যে তার নফসকে কলুষিত করে’ (শামস ৯১/৭-১০)। মুহাম্মাদ ইবনুল মুনক্বাদির (রহঃ) বলেন, ‌كَابَدتُ ‌نَفْسِي ‌أَرْبَعِيْنَ ‌سَنَةً ‌حَتَّى ‌اسْتَقَامَتْ، ‘আমি ৪০ বছর নিজের নফসের সাথে সংগ্রাম করেছি, তারপর সে (আল্লাহর আনুগত্যে) অবিচল হয়েছে’।[4]

সুতরাং নেক আমলে ধৈর্য ধারণ ও সাধ্যমত কষ্ট স্বীকার করার মাধ্যমে অলসতা ও উদাসীনতা থেকে মুক্তি মেলে। যেভাবে সালাফে ছালেহীন করতেন। বকর বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন,اجتهدوا ‌في ‌العمل، فإن قصّر بكم ضعف فكفّوا عن المعاصي، ‘তোমরা আমল সম্পাদনে পরিশ্রম কর। যদি দুর্বলতা তোমাদের বাধাগ্রস্ত করে, তবে গোনাহ থেকে বিরত থাক’।[5] হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,‌من ‌كان ‌قويا ‌فليعتمد على قوّته في طاعة الله؛ وإن كان ضعيفا فليكّف عن معاصي الله، ‘যে ব্যক্তি শক্তিশালী, সে যেন আল্লাহর আনুগত্যে স্বীয় শক্তির উপর নির্ভর করে (অর্থাৎ শক্তিশালী ব্যক্তির মতো ইবাদত করে)। আর যে (ইবাদতে) দুর্বল, সে যেন আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকে’।[6] ছাবিত আল-বুনানী বলেন,كَابَدْتُ الصَّلَاةَ عِشْرِينَ سَنَةً، وَتَنَعَّمْتُ بِهَا عِشْرِينَ سَنَةً، ‘আমি বিশ বছর ছালাতে কষ্ট স্বীকার করেছি। এর ফলশ্রুতিতে আমি বিশ বছর নে‘মত লাভ করেছি’।[7]

৪. সময়ের সদ্ব্যবহার :

প্রত্যেকের জানা উচিত যে, তার জীবনকাল প্রতি মুহূর্তে ক্ষয়ে যাচ্ছে। সুতরাং অলসতা ও উদাসীনতায় তার জীবনের সময়গুলো নষ্ট করা উচিত নয়। প্রতিটি মুহূর্ত, ঘণ্টা-মিনিট, প্রতিটি দিন-রাত, মাস-বছর জীবনকালের অংশ। তা অবহেলা, অলসতা ও উদাসীনতায় নিঃশেষ করা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। হাসান (রাঃ) বলেন,ابْنَ آدَمَ، إِنَّمَا أَنْتَ أَيَّامٌ، كُلَّمَا ذَهَبَ يَوْمٌ، ذَهَبَ بَعْضُكَ، ‘আদম সন্তান! নিশ্চয়ই তুমি কতগুলি দিবসের সমষ্টি। যখনই একটি দিন চলে যায়, তখন তোমার (জীবনের) একটা অংশ চলে যায়’।[8] জীবনের সময়কালের সদ্ব্যবহার না করে হেলায় হারালে অবশেষে তাকে হা-হুতাশ করতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ، لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ، ‘অবশেষে যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু এসে যায়, তখন সে বলে, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) ফেরত পাঠান। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি করিনি। কখনই নয়। এটা তো তার একটি (বৃথা) উক্তি মাত্র যা সে বলে। বরং তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (মুমিনূন ২৩/৯৯-১০০)

৫. কর্মহীন ও পরনির্ভরশীল না হওয়া :

মুমিন কখনও অকর্মণ্য ও পরনির্ভরশীল হবে না। বরং সে পরিশ্রমী ও কর্মঠ হবে। পার্থিব জীবনে তার দায়িত্ব পালন করবে। আর এখান থেকে নিজের প্রাপ্য গ্রহণ করবে এবং অন্যের হক আদায় করবে। আল্লাহ বলেন,هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِنْ رِزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ، ‘তিনিই তো পৃথিবীকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং আল্লাহর দেওয়া রিযিক থেকে ভক্ষণ করে থাক। আর তাঁর দিকেই হবে তোমাদের পুনরুত্থান’ (মুলক ৬৭/১৫)। তিনি আরো বলেন,وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ، ‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন, তার দ্বারা আখেরাতের গৃহ সন্ধান কর। অবশ্য দুনিয়া থেকে তোমার প্রাপ্য (অপচয়হীন হালাল) অংশ নিতে ভুলো না। আর অন্যের প্রতি অনুগ্রহ (ছাদাক্বা) কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর যমীনে ফাসাদ সৃষ্টির (কৌশল) সন্ধান কর না। আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না (অর্থাৎ প্রতিশোধ নেবেন)’ (ক্বাছাছ ২৮/৭৭)

কর্মচঞ্চল হওয়ার ব্যাপারে হাদীছেও নির্দেশনা এসেছে,

عَنِ الْمِقْدَامِ رضى الله عنه عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ، وَإِنَّ نَبِىَّ اللهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ.

মিকদাম (রাঃ) সূত্রে নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নবী দাঊদ (আঃ) নিজ হাতের কামাই খেতেন’।[9]

কর্মহীন থাকাকে অপসন্দ করে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন,إِنِّي أَكْرَهُ أَنْ أَرَى الرَّجُلَ فَارِغًا، لَيْسَ فِي عَمَلِ آخِرَةٍ، وَلَا دُنْيَا، ‘আমি কোন ব্যক্তিকে অকর্মণ্য দেখতে অপসন্দ করি, যে না আখিরাতের জন্য কোন কাজ করে আর না দুনিয়ার জন্য কোন কাজ সম্পাদন করে’।[10]

৬. সাধ্যমত চেষ্টা করা :

পার্থিব জীবনে সাধ্যমত কাজ করা এবং নেক আমলে সচেষ্ট হওয়া দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হওয়ার একমাত্র উপায়। কেননা মানুষ চেষ্টা ব্যতীত কোন কিছুই লাভ করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى ‘আর মানুষ কিছুই পায় না তার চেষ্টা ব্যতীত’ (নাজম ৫৩/৩৯)। সুতরাং ইবাদতে অলসতা ও উদাসীনতা দূর করার জন্য যথাযথভাবে চেষ্টা করতে হবে।

সেই সাথে পরকালীন জীবনে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ ও জান্নাত লাভে ধন্য হওয়ার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা এবং সৎকর্ম সম্পাদন করা যরূরী। আল্লাহ বলেন,وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ، ‘আর এটাই হ’ল জান্নাত, যার উত্তরাধিকারী তোমাদের করা হয়েছে তোমাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ’ (যুখরুফ ৪৩/৭২-৭৩)। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,

 عن أبي هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ خَافَ أَدْلَجَ، وَمَنْ أَدْلَجَ بَلَغَ المَنْزِلَ، أَلَا إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ، أَلَا إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ الجَنَّةُ،

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভয় পায় সে ভোররাতেই যাত্রা শুরু করে, আর যে ভোররাতে যাত্রা শুরু করে, সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখ, আল্লাহর পণ্য খুবই দামী। জেনে রাখ, আল্লাহর পণ্য হ’ল জান্নাত’।[11]

অলসতা-উদাসীনতা, দুর্বলতা-অক্ষমতা ইত্যাদি পরিহার করে তাক্বওয়া সহকারে চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতে কামিয়াব হওয়া সম্ভব। আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ، ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর। পরস্পরে দৃঢ় থাক এবং সদা প্রস্ত্তত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (আলে ইমরান ৩/২০০)

৭. দীর্ঘজীবী হওয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা পরিহার :

অনেকে দীর্ঘ জীবন লাভের আশা করে নেক আমল পরে করার চিন্তা করে কিংবা শেষ জীবনে পাপ থেকে তওবা করবে বলে বিলম্ব করে। এটা সরাসরি শয়তানী ধোঁকা। যা মানুষকে আমলে ছালেহ ও তওবা বিমুখ করে দেয়। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,ويتولد من طول الأمل الكسل عن الطاعة والتسويف بالتوبة، ‘দীর্ঘ আশা থেকে ইবাদতে অলসতা ও তওবার ক্ষেত্রে গড়িমসির সৃষ্টি হয়’।[12] অতএব দীর্ঘজীবনের আশা পরিহার করা কর্তব্য। যেমন মানুষের অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, هَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا أَنْ تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا قُلِ انْتَظِرُوا إِنَّا مُنْتَظِرُونَ، ‘তারা কি কেবল এই অপেক্ষায় রয়েছে যে, তাদের কাছে (মৃত্যুর) ফেরেশতা আসবে কিংবা স্বয়ং তোমার প্রতিপালক আসবেন (অর্থাৎ তাঁর গযব আসবে) অথবা তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে। (মনে রেখ) যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন (যেমন ক্বিয়ামত প্রাক্কালে সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠা) এসে যাবে, সেদিন তাদের ঈমান কোন কাজে আসবে না, যারা ইতিপূর্বে ঈমান আনেনি অথবা তাদের ঈমান দ্বারা কোন সৎকর্ম করেনি। বলে দাও যে, তোমরা অপেক্ষায় থাক, আমরাও অপেক্ষায় রইলাম’ (আন‘আম ৬/১৫৮)

৮. নেক আমল ও তওবা দ্রুত করা :

আমলে ছালেহ ও তওবা করার চিন্তা মনে আসা মাত্রই তা করে ফেলা। আজকের নেক আমল ও তওবা আজকেই করতে হবে। আগামীকালের অপেক্ষায় রেখে দেয়া যাবে না। কেননা আগামীকাল সুযোগ ও সময় নাও মিলতে পারে। আল্লাহ বলেন,وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ، ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য’ (আলে ইমরান ৩/১৩৩)। তিনি আরো বলেন,سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، ‘তোমরা প্রতিযোগিতা কর তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে। যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার ন্যায়’ (হাদীদ ৫৭/২১)

৯. নবী-রাসূল ওসৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ :

অনেক সময় অলসতার অন্যতম কারণ হয়ে থাকে উৎসাহ-উদ্দীপনার অভাব। এজন্য অলসতা ও উদাসীনতা দূর করতে এবং নিজেকে উদ্যমী করতে নবী-রাসূল ও সৎকর্মশীল মুত্তাক্বী ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ করা দরকার। যেমন আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِأُولِي الْأَلْبَابِ ‘নিশ্চয়ই নবীদের কাহিনীতে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ রয়েছে’ (ইউসুফ ১২/১১১)। এসব অলসতা দূর করতে অত্যধিক কার্যকর। বিশর ইবনু হারেছ (রহঃ) বলতেন,بِحَسْبِكَ أَنَّ قَوْمًا مَوْتَى تَحْيَى الْقُلُوبُ بِذِكْرِهِمْ، وَأَنَّ قَوْمًا أَحْيَاءً تَقْسُو الْقُلُوبُ بِرُؤْيَتِهِمْ ‘তোমার জন্য এটা জানা যথেষ্ট যে, কিছু মৃত মনীষী এমন আছেন যে, তাদের আলোচনা করলেও অন্তর জীবিত হয় এবং কিছু জীবিত মানুষ এমন রয়েছে, যাদেরকে দেখলেও অন্তর শক্ত হয়ে যায়’।[13]

১০. সৎকর্মশীলদের সাহচর্যে থাকা :

যারা অধিক কর্মচঞ্চল, উদ্যমী এবং নেক আমলে অগ্রগামী তাদের সাহচর্য লাভ করা। বিশেষত মুত্তাক্বী-পরহেযগারদের মজলিসে বসা, তাদের কথা শোনা এবং তাদের থেকে উৎসাহ-উদ্দীপনা লাভ করা কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَاالَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ، ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ৯/১১৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا تُصَاحِبْ إِلَّا مُؤْمِنًا، وَلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلَّا تَقِيٌّ، ‘তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার ব্যক্তি ছাড়া না খায়’।[14]

১১. নিজেকে উদ্যমী ও অনুপ্রাণিত করা :

যখন অলসতা ভর করে ঠিক তখন নিজেকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করা। যা নেক আমল করতে উদ্বুদ্ধ করবে। অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা শয়তানের সৃষ্টি এবং ব্যর্থ মানুষের স্বভাব। সুতরাং নিজেকে শয়তানের শিকারে পরিণত করে ব্যর্থদের কাতারে শামিল হওয়ার পরিবর্তে শয়তানকে পরাস্ত করতে ‘আউযুবিল্লাহ’ ও ইস্তেগফার পড়ে আমলে ব্রতী হ’তে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ، خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ، وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَلَا تَعْجَزْ، ‘আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন অপেক্ষা অধিক উত্তম ও প্রিয়তর। আর প্রত্যেকের মাঝে কল্যাণ রয়েছে। তুমি তোমার জন্য উপকারী বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও অক্ষম হয়ো না’।[15] পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা সফল হয়েছেন, তাদের কর্মবহুল জীবনী অবগত হওয়া এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মস্পৃহ, উদ্যমী ও কর্মঠ হওয়ার চেষ্টা করা। সকল অলসতা ঝেড়ে ফেলা।

১২.অলসতা আনয়নকারী ও সময় বিনষ্টকারী বস্ত্ত পরিহার :

বর্তমানে মানুষ তাদের অবসর সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষত ফেসবুক, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ ও টেলিভিশন ইত্যাদির সাথে যুক্ত থাকে। এসবের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। বিশেষভাবে এগুলো অনেকের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়, কর্মবিমুখ ও উদ্যমহীন করে দেয়। আধুনিক এসব যন্ত্র যেন নিজের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য ক্ষতিকর বস্ত্ততে পরিণত না হয় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ، ‘ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হ’ল, অনর্থক বিষয় পরিহার করা’।[16]

১৩.ছালাতে যত্নবান হওয়া :

ছালাতে যত্নবান হওয়া বিশেষ করে ফজরের ছালাতে। কেননা ফজরের ছালাত আদায় করতে না পারলে এটাই হবে সারাদিনের আমলহীনতা ও অলসতার সূতিকাগার। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ، فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللهَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ، وَإِلاَّ أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ، ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পিছনের অংশে তিনটি গিরা দেয়। প্রতিটি গিরায় সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে (দো‘আ পাঠ করে) তখন একটি গিরা খুলে যায়। পরে ওযূ করলে আরেকটি গিরা খুলে যায়, অতঃপর ছালাত আদায় করলে আরেকটি গিরা খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথা সে সকালে উঠে কলুষিত মনে ও আলস্য সহকারে’।[17]

১৪.ফজরের পরে ঘুম বর্জন :

অলসতা ও উদ্যমহীনতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ ফজর পরবর্তী ঘুম। সুতরাং এই সময়ে না ঘুমিয়ে ছালাত আদায় করা, তাসবীহ-তাহলীল, যিকির-আযকার ও কুরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকা কর্তব্য। অতঃপর নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সমাধা করা। এমনটি করতে পারলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দো‘আ পাওয়া যায় এবং সারাদিনের কাজে অলসতা কেটে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই বলে দো‘আ করেন,اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا، ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য প্রত্যুষে বরকত দান করুন’।[18]

উপসংহার :

পরিশেষে বলব, অলসতা, উদাসীনতা ইহকালে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনি ইবাদতে অলসতা মানুষকে পরকালীন জীবনে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে ছাড়বে। তাই সাবধান হয়ে সকল প্রকার অলসতা পরিহার করে ইবাদতে নিয়োজিত হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক দান করুন-আমীন!


[1]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২২৭, ৯/৬৭।

[2]. আবুদাউদ হা/১৫২২; নাসাঈ হা/১৩০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৬৯।

[3]. বুখারী হা/২৮২৩; মুসলিম হা/২৭০৬; মিশকাত হা/২৪৬০।

[4]. হাফেয শামসুদ্দীন যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (বৈরূত : মুআস্সাসাতুর রিসালাহ, ১৪০৫ হিঃ/১৯৮৫ খ্রিঃ), ৫/৩৫৫।

[5]. ইবনু কুতায়বা, উয়ূনুল আখবার ২/৩৯৭।

[6]. ইবনু আব্দি রবিবহী, আল-ইক্বদুল ফারীদ ৩/১৩৪।

[7]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৫/২২৪ পৃঃ; ছালাহুদ্দীন আছ-ছাফাদী, আল-ওয়াফী বিল ওয়াফায়াত (বৈরূত : দারু ইহ্য়াইত তুরাছ, ১৪২০ হিঃ/২০০০ খ্রিঃ), ১০/২৮৪ পৃঃ।

[8]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৪/৫৮৫; হিলয়াতুল আওলিয়া, ২/১৪৮।

[9]. বুখারী হা/২০৭২; মিশকাত হা/২৭৫৯।

[10]. তাবারাণী, কাবীর; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৬২৩৫; ইবনুল মুবারক, আয-যুহদ ওয়ার রাক্বায়েক্ব, ১/২৫৬ পৃঃ।

[11]. তিরমিযী হা/২৪৫০; মিশকাত হা/৫৩৪৮; ছহীহাহ হা/৯৫৪,২৩৩৫।

[12]. ফৎহুল বারী ১১/২৩৭।

[13]. ইবনু আসাকির, তারিখু মাদীনাতি দিমাশক (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১৪১৫হিঃ/১৯৯৫ খ্রিঃ), ১০/২১৪; ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মাদ ইস্ফাহানী, সিয়ারু সালাফিছ ছালিহীন, ১/১০৮৮।

[14]. আবুদাউদ হা/৪৮৩২; তিরমিযী হা/২৩৯৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৩৪১; মিশকাত হা/৫০১৮।

[15]. মুসলিম হা/২৬৬৪; ইবনু মাজাহ হা/৭৯; মিশকাত হা/৫২৯৮।

[16]. তিরমিযী হা/২৩১৭-১৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৬; মিশকাত হা/৪৮৩৯।

[17]. বুখারী হা/১১৪২, ৩২৬৯; মুসলিম হা/৭৭৬।

[18]. আবুদাউদ হা/২৬০৬; তিরমিযী হা/১২১২; মিশকাত হা/৩৯০৮।






পথশিশুদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব - মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ
ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের বিধান (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
হজ্জ : গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণের উপায় - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
আদর্শ পরিবার গঠনে করণীয় (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আদর্শ পরিবার গঠনে করণীয় (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
খেয়াল-খুশির অনুসরণ - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
তাহরীকে জিহাদ : আহলেহাদীছ ও আহনাফ (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
পাপ বর্জনের শিষ্টাচার সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
জুম‘আর পূর্বে সুন্নাতে রাতেবা : একটি পর্যালোচনা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.