চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর চালানো হচ্ছে নির্মম নির্যাতন। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে, ২০১৭ সাল থেকে ‘পুনঃশিক্ষা শিবিরে’ ১০ থেকে ৩০ লাখ মুসলমানকে বিভিন্ন মেয়াদে আটক রাখা হয়েছে। যাদের অধিকাংশই উইঘুর সম্প্রদায়ের। যদিও চীন সরকারের ভাষ্য মতে, সন্ত্রাসবাদ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য লোকজনকে সেখানে নানা ধরনের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। মূলতঃ সেখানে সংবাদমাধ্যম নিষিদ্ধ থাকায় প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে, তা রীতিমত ভয়াবহ।

এসব শিবিরে সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে নারীদের সন্তান জন্মদান থেকে বিরত রাখছে। ইচ্ছামত শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে। আবার জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার নামে গিনিপিগ বানিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নেয়া হচ্ছে। অজ্ঞাত ড্রাগ ও ইনজেকশন দিয়ে মানসিকভাবে রোগগ্রস্ত করে দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া সেখান থেকে পালিয়ে আসা উইঘুরদের মাধ্যমে নির্যাতনের কিছু চিত্র পাওয়া যায়। এমনি পালিয়ে আসা একজনের নাম ওমি। তিনি বলেন, আটকাবস্থায় তারা আমাদের ঘুমাতে দেয়নি। কয়েক ঘণ্টা ধরে আমাকে ঝুলিয়ে রেখে পেটানো হ’ত। কাঠ ও রাবারের লাঠি দিয়ে পেটাতো। তার দিয়ে বানানো হতো চাবুক। সুই দিয়ে শরীরে ফুটানো হ’ত। প্লাস দিয়ে নখ তুলে নেওয়া হ’ত। আমার সামনে টেবিলের ওপর এসব যন্ত্রপাতি রাখা হ’ত। এসময় অন্যরা যে ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতো সেটাও আমি শুনতে পেতাম।

ক্যাম্প ছাড়াও পুরো জিনজিয়াংয়েই চলছে নানা অত্যাচার-নির্যাতন। যেমন একটি মনোরম উপত্যকায় অবস্থিত লিনজিয়া শহর। এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই ধর্মপ্রাণ মুসলিম। চীন সরকার এখানকার ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত সমস্ত নিশানা ধ্বংস করে ফেলছে। শহরের সব মসজিদ, এর গম্বুজ এবং মিনারগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। বেইজিং থেকে নিংজিয়া পর্যন্ত সব এলাকায় আরবী লিপির প্রকাশ্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি বংশপরম্পরায় গোরস্থানের অন্ধকার কবরে শুয়ে রয়েছে যে স্বজনরা সেখানেও চলছে নানা অত্যাচার। কবরস্থান ভেঙে দেয়া হচ্ছে। সমাধি গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে হাড়গোড়- দেহাবশেষ। উইঘুরদের জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয় মুছে ফেলতেই বেইজিংয়ের এমন আচরণ বলে মনে করছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।

বরাবরের মতো সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট জানিয়েছেন জিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতি দেখতে পর্যবেক্ষকদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি চাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বেইজিং সরকার।

[চীনা গণতন্ত্রের এই নৃশংশতা যেকোন মানুষের হৃদয়কে জর্জরিত করবে। ভেটো ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় চীনের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা জাতিসংঘের নেই। এমতাবস্থায় হয় নীরবে আত্মদান, নইলে জিহাদী উত্থান। এর বিকল্প রয়েছে কেবলই আল্লাহর গায়েবী মদদ। আমরা তাঁর নিকটেই এই মযলূম মানবতার মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছি (স.স.)]






আরও
আরও
.