এশার ছালাতের নিয়ত
‘আমি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে এশার চার রাক‘আত ফরয ছালাত এই ইমামের
পিছনে আদায় করবার জন্য নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার’। আমাদের সমাজের মাওলানা
ছাহেবরা আমাদেরকে প্রচলিত যে আরবী নিয়তটি মুখস্থ করিয়েছেন, তার বাংলা অর্থ
এরূপ।
সঊদী আরবের মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে জনৈক আব্দুল্লাহ বিন নূরুদ্দীন তাদের এলাকার একটি বড় মসজিদে এশার ছালাত আদায় করতে গিয়ে ছালাত শুরুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে উচ্চৈঃস্বরে বলতে লাগলেন, ‘আমি আবদুল্লাহ বিন নূরুদ্দীন আজ ২০১৩ সালের ২৫ আগষ্ট রোজ বৃহস্পতিবার বরগুনা যেলার পাথরঘাটা থানার কাকচিড়া ইউনিয়নের অতীব সুন্দর ও ঝকঝকে এই বাইতুস সালাম মসজিদের ইমাম মাওলানা আখতারুল আলমের ঠিক পিছনে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো অবস্থায় কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে এশার চার রাক‘আত ফরয ছালাত পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার’। মাদানী ছাহেব প্রচলিত নিয়তের সঙ্গে কিছু শব্দ বাড়িয়ে নিয়ত পড়েছিলেন। তার এইভাবে 'উচ্চৈঃস্বরে নিয়ত পড়া দেখে আশ-পাশের লোকজন অত্যন্ত কৌতুহলী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেন। কিন্তু ঐ মুহূর্তে কেউ কিছু বলেননি। কারণ তখন ছালাত শুরু হচ্ছে। ইমাম ছাহেবও একবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে ছালাত শুরু করলেন।
ছালাত শেষে মাদানী ছাহেবের পাশে ছালাত আদায়কারী তার এক দূর সম্পর্কের চাচা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির মাঝে কথোপকথন:
চাচা : এইটা তুমি কি নিয়ত করলা বাবা?
মাদানী : কেন চাচা?
চাচা : এই রকম নিয়ততো আমি কখনও শুনিনি।
মাদানী : একটু বিস্তারিতভাবে সুন্দর করে বললাম।
চাচা : কিন্তু কুরআন-হাদীছের নিয়মমত হয়নিতো মনে হ’ল।
মাদানী : আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, আমি কুরআন-হাদীছ মত নিয়ত বলিনি (কিছুটা মোটা স্বরে)?
চাচা : না, বাবা; আমিতো কুরআন-হাদীছ জানি না। তোমরা আলেম মানুষ। কুরআন-হাদীছ অনেক শিখেছ। এই রকমভাবে নিয়ত কি কুরআন-হাদীছে আছে?
মাদানী : আপনি কিভাবে নিয়ত করলেন চাচা?
চাচা : ‘নাওয়াইতু আন... প্রচলিত নিয়তটি বললেন?
মাদানী : চাচা! এইটা কি কুরআন-হাদীছে আছে?
চাচা : কও কি তুমি বাবা? কুরআন-হাদীছে না থাকলে আমরা শিখলাম কিভাবে? আমরা সাধারণ মানুষেরা যে সব কিছুই কুরআন-হাদীছ মনে করি। চাচা সহজ-সরলভাবেই উত্তর দিলেন।
মাদানী : আমি মদীনায় ৪/৫ বছর লেখাপড়া করলাম। কুরআন-হাদীছে আমার বা আপনার কোন নিয়তই তো পাইনি?
চাচা : (এবার ইমাম ছাহেবের দিকে মুখ করে) ইমাম ছাহেব! ভাতিজা আমার কি কয়? নাওয়াইতু আন... বলে কুরআন-হাদীছে নেই?
ইমাম ছাহেব : (একটি বড় কওমী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীছ পাস করা মানুষ) একটু চুপ করে থেকে বললেন, কুরআন হাদীছে কিভাবে নিয়ত পড়তে হবে তা নেই। কিন্তু নিয়ত করার কথা বলা আছে বিধায় আলেমেদ্বীনগণ এইভাবে নিয়তের কিছু নিয়ম সাধারণ মানুষের জন্য নির্ধারণ করেছেন।
চাচা : কিছুটা থমকে গেলেন! আশ্চর্য হয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন, কি বলেন, যে আরবী নিয়ত আমরা পড়ি সেটি কুরআন হাদীছে নেই?
ইমাম ছাহেব, একটু ঘুরিয়ে আবারও বললেন, সরাসরি এভাবে নেই। কিন্তু বড় বড় আলেমরা বলেছেন এটা। আর তারা হ’লেন নবী করীম (ছাঃ)-এর উত্তরসূরী।
মাদানী: কুরআন-হাদীছে এই ধরনের নিয়ত নেই, ইমাম ছাহেব ঠিক বলেছেন চাচা। বুঝতে পেরেছেন?
চাচা : বুঝতে তো পারলাম, কিন্তু বড় বড় আলেমরা বলেছে, এটা কি হবে না?
মাদানী : না চাচা। কারণ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ) যা আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, পৃথিবীতে কোন মানুষের সেই ক্ষমতা নেই তা থেকে কম-বেশী করতে পারে। যারা এগুলো করবে তারা বিদ‘আত করবে।
চাচা : কি বল ভাতিজা? তাহ’লে কি সারা জীবন ছালাত ভুল পড়ে আসলাম। এই ইমামেরা তো এই ব্যাপারে কিছুই বলেনি। ছালাত তাহ’লে কিভাবে শুরু করতে হয়?
মাদানী : সংক্ষেপে বললেন, ছালাতের নিয়ত হ’ল মনের সংকল্প। নিয়ত করতে হয়, পড়তে হয় না। পড়া হ’ল বিদ‘আত। বিদ‘আত করা বড় গুনাহের কাজ। মনের সংকল্পের পর ছালাত শুরু করতে হয় ‘আল্লাহু আকবার’ বলে।
এইভাবে আরো কিছু কথোপকোথনের পর চাচা বুঝতে পারলেন ছালাতে আমরা প্রচলিত যে নিয়ত পড়ি তা বিদ‘আত। মূলতঃ মাদানী ছাহেব আমাদের দেশের প্রচলিত অসংখ্য বিদ‘আত সম্পর্কে একটু ব্যতিক্রমভাবেই মানুষকে জানাবেন, এই ধরনের চিন্তা থেকেই সে এই রকম আচরণ করেছিলেন। নিজে একটি নিয়ত বানিয়ে বলেছিলেন।
[উপরোক্ত ঘটনাটি গল্প আকারে সাজানো হয়েছে ছালাতের একটি বিদ‘আত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার জন্য। বাস্তব ঘটনার সাথে যার কোন মিল নেই। এজন্য আমি নিজেকে এবং আমার এলাকাকে প্রতিকী হিসাবে বেছে নিয়েছি। ছালাতের মত সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ ইবাদতটি আমরা শুরু করি বিদ‘আত করার মাধ্যমে। এ বিষয়ে মানুষের সঠিক উপলব্ধির নিমিত্তে এই লেখা। আসুন, ছালাতের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া এই বিদ‘আতটিকে দূর করতে আমরা সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন!]
আবদুল্লাহ আল-মামূন
দাম্মাম, সঊদী আরব।