আল্লাহ
মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। মানুষ আল্লাহর ইবাদত করবে
কিন্তু এই ইবাদত করার জন্য মানুষের বেঁচে থাকা অর্থাৎ জীবন ধারণের জন্য
প্রয়োজন হয় কিছু মৌলিক চাহিদা পূরণের। আর এই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার
জন্য প্রয়োজন হয় অর্থের। অর্থ ছাড়া মানব জীবন অচল। সেকারণ মানুষ এই অর্থ
উর্পাজনের জন্য সদা ব্যস্ত থাকে। এমনকি আল্লাহর দেয়া বৈধ পথ ছেড়ে মানুষ
অনেক সময় অন্যায় ও অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা করে। মানুষ অর্থ
উপার্জনের জন্য অনেক সময় আল্লাহকে ভুলে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘প্রাচুর্যের
প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রাখে যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও’ (তাকাছুর ১-২)।
মানুষের অর্থলিপ্সা কখনো কখনো তাকে অমানুষে পরিণত করে, তাকে পশুত্বের
পর্যায়ে নামিয়ে দেয়। ফলে সে যাচ্ছে তাই করতে প্রবৃত্ত হয়। আর এর ফলাফল যে
কত ভয়াবহ তারই একটি দৃষ্টান্ত আমরা এখানে তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।-
তামিম
গ্রামের ছেলে। স্কুল কলেজে লেখাপড়া করার পর ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে ডিভি লটারির মাধ্যমে আমেরিকা যাওয়ার
সুযোগ লাভ করে। তার পিতা-মাতা তাকে বিদেশে যেতে নিষেধ করলেও সে চলে যায়
স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। সেখানে চার বছর চাকুরী করে অনেক টাকা নিয়ে দেশে
বেড়াতে আসে কিছুদিনের জন্য। তামিম যে তার নিজ দেশে আসছে একথা সে তার
পিতা-মাতা বা অন্য কাউকে আগে বলেনি। তার পরিকল্পনা হঠাৎ একদিন দেশে ফিরে
পিতা-মাতা সহ নিজ গ্রামের মানুষকে চমকে দিবে। তাই সে আমেরিকা থেকে বিমান
যোগে ঢাকা পেঁŠছে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার আগে মিরপুরে তার খালার বাড়িতে ওঠে।
সে মনে করল, অনেক দিন পর দেশে আসমান খালার সাথে দেখা করেই যায়। খালার
বাড়িতে দেখা করতে গেলে তার খালা ও খালু দু’জনই তাকে খুব আদর-যত্ন করে এবং
তাদের বাড়িতে এক রাত থেকে যেতে বলে। তামিম তার খালার অনুরোধে সেখানে থেকে
যায়। এর পরের ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও লোমহর্ষক। তামিমের কাছে অনেক টাকা দেখে
তার খালু ভাবছে কি করে তামিমের নিকট থেকে টাকাগুলো নেওয়া যায়। চাইলে তো সে
দিবে না, তাই তামিমের খালু জঘন্যতম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হ’ল। রাতে তামিমকে যে
ঘরে ঘুমাতে দেওয়া হ’ল সে ঘরে ছিল দু’টি খাট। একটি খাটে তামিমকে ঘুমাতে
দেওয়া হ’ল এবং অপর খাটে তামিমের খালাতো ভাই। সেও তামিমের মতই বড় হয়েছে।
তারা দুই ভাই সমবয়সী। তবে তারা কেউই বিয়ে করেনি। এদিকে তামিমের খালু
তামিমকে হত্যা করার জন্য ছুরি ধার দিয়ে রাখল। কিন্তু এসব কিছু কেউ জানল না।
কিন্তু আল্লাহর কি খেলা! দুই ভাই একই খাটে শুয়ে গল্প করতে লাগল। কারণ অনেক
দিন পরে তারা মিলিত হয়েছে। আর যে খাটে তারা গল্প করছিল সেটা ছিল তামিমের
জন্য নির্ধারিত। এক পর্যায়ে তামিমের খালাতো ভাই গল্প করতে করতে তামিমের
খাটে ঘুমিয়ে পড়ল। তামিম ভাবল, ঘুম থেকে তাকে না জাগিয়ে বরং আমিই তার খাটে
গিয়ে ঘুমাই। এই ভেবে তামিম তার ভাইয়ের খাটে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এবার তামিমের
খালু ঘরে ঢুকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তামিমকে যে খাটে ঘুমাতে দেওয়া
হয়েছিল সেই খাটে শুয়ে থাকা তার ছেলের বুকের উপর চড়ে তাড়াতাড়ি ছুরি দিয়ে গলা
কেটে হত্যা করল। এরপর ভাল করে না দেখেই কাপড় দিয়ে জড়িয়ে বাড়ির পার্শ্বে
গর্ত করে পুতে ফেলল এবং গর্তের উপর কিছু ময়লা আবর্জনা ফেলে একটা স্তূপ তৈরী
করে দিল যাতে মানুষ বুঝতে না পারে। তামিমের খালু ভাবল সে তামিমকে হত্যা
করেছে, এখন তামিমের টাকাগুলো হাতিয়ে নিবে। কারণ তামিম যে দেশে ফিরেছে সেকথা
কেউ জানে না। এতে তামিমের মা-বাবা ও অন্যরা সবাই জানবে, তামিম বিদেশেই
রয়েছে। তামিমের খালা যদি বলে, কি ব্যাপার তামিম কোথায় গেল? তখন সে বলবে চুপ
কর সবাই যদি জানে তামিম আমাদের বাড়িতে এসেছিল, তারপর হারিয়ে গেছে তাহ’লে
আমাদেরও বিপদ হবে ইত্যাদি...। তামিমের খালু সকাল বেলা ঘরে গিয়ে দেখে তামিম
খাটের উপর বসে আছে! হায়! আমি কি করেছি বলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় তামিমের
খালু। তামিম তার খালুর এ কান্ড দেখে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল না। পরে তার
খালুর কথা শুনে সব বুঝতে পারল। তামিমের খালু বলছে, লোভে পড়ে আমি তোমাকে
হত্যা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হয়েছে তার উল্টা। তামিম অবাক হয়ে বলল, রাখে
আল্লাহ মারে কে? এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর, পুলিশ এসে তামিমের খালুকে
গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। বিচারে তামিমের খালুর মৃত্যুদন্ড হয়। লোভী ও পাপী
ব্যক্তিদের পরিণতি এরকমই হয়।
মন্তব্য : লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
মুহাম্মাদ আবুল হোসেন
নওদাপাড়া. সপুরা, রাজশাহী।