জ্ঞানী মানুষ সর্বদা সত্যের সন্ধানে থাকেন। যেখানেই সত্য পান, সেখানেই ছুটে যান। মানুষ প্রথমে নিজের জ্ঞান মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু পরক্ষণে তা ভুল প্রমাণিত হ’লে পুনরায় সত্যের সন্ধানে রত হয়। এভাবেই চলে মানুষের জীবন, যতক্ষণ না সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। সেকারণ আল্লাহ নিজ দয়াগুণে যুগে যুগে নবী ও রাসূল পাঠিয়ে বান্দাকে সত্যের সন্ধান দিয়েছেন। যারা তা গ্রহণ করেছে, তারা নিশ্চিন্ত হয়েছে। আর যারা তা গ্রহণ করেনি, তারা সারা জীবন যুক্তির অন্ধকারে পথ হাতড়ে ফিরেছে। এলাহী কিতাব প্রাপ্ত ইহূদী-নাছারা সহ বিগত প্রায় সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ কালক্রমে স্ব স্ব সীমিত জ্ঞানের অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। কেউবা কঠোর ধার্মিকতায় পথ হারিয়েছে, কেউবা ধর্মচ্যুত হয়েছে। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ হেদায়াতের উৎস আল-কুরআন ও সত্যধর্ম ইসলাম নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। বিগত নবীগণের ন্যায় তাঁরও ‘হাওয়ারী’ বা অন্তরঙ্গ সহচরবৃন্দ ছিলেন। যাদেরকে ‘ছাহাবী’ বলা হয়। যাদের সাহায্যে দ্বীন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বস্ত্ততঃ ছাহাবায়ে কেরাম ছিলেন কুরআন ও সুন্নাহর বাস্তব রূপকার। কিন্তু পরবর্তী যুগে বিভিন্ন কারণে মুসলমানদের মধ্যে নানা ধরনের বিচ্যুতি ঘটতে থাকে। কপটবিশ্বাসী, চরমপন্থী, শৈথিল্যবাদী এমনকি নামধারী মুসলমানদের আবির্ভাব ঘটতে থাকে। রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিবাদে তারা আপোষে রক্তপাত ঘটায় এবং হাযারো দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়। আর এসকল বিভক্তি ও ভ্রষ্টতার মূলে থাকেন সর্বদা সুশিক্ষিত ও জ্ঞানী ধর্মনেতা ও সমাজনেতারা। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের অজুহাত দিয়েই পথভ্রষ্ট হয়। অথচ সত্য চিরকাল সত্যই থাকে। শত যুক্তি দিয়েও তাকে মিথ্যা বানানোর অপচেষ্টা সফল হয় না। জ্ঞানের রাজ্যে যুক্তি-তর্কের ভীড়ে জ্ঞানীরা যখন পথ হারিয়ে ফেলেন, তখন অহি-র জ্ঞানের সার্চলাইট তাদেরকে সত্যের তীরে ভিড়তে সাহায্য করে। এখানেও শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। তখন সত্যসেবীকে দেখতে হয় অহি-র বাহক শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দিকে এবং তাঁর সাথী ছাহাবায়ে কেরামের আক্বীদা ও আমলের দিকে। তাঁদের চলার পথেই সত্যসেবীকে চলতে হবে। তাঁদের সিদ্ধান্ত সমূহের আলোকেই যুগ-জিজ্ঞাসার জবাব নিতে হবে। এর বাইরে অন্যদিকে তাকালেই পথভ্রষ্ট হ’তে হবে। প্রকৃত জ্ঞান হ’ল সেটাই, যা অসীম জ্ঞানের উৎস থেকে উৎসারিত এবং নিষ্পাপ রাসূল থেকে বর্ণিত, বাস্তবায়িত ও অনুমোদিত। আর সেটাই হ’ল প্রকৃত দলীল। যে ব্যক্তি এই দলীল থেকে বিচ্যুত হবে, সে ব্যক্তি অবশ্যই পথচ্যুত হবে। সংখ্যা, ব্যক্তি বা রেওয়াজ কোন দলীল নয়।   

রাস্তার মাইল ফলক দেখে যেমন পথিক পথ চিনে নেয়। তেমনি সত্যসেবীকে দেখে মানুষ সত্যের সন্ধান পায়। এজন্য সত্যসেবীকে থাকতে হয় সদা অটল ও অচঞ্চল। দৃঢ় হিমাদ্রির ন্যায় তারাই হন সমাজের সত্য সন্ধানী মানুষের অনুসরণীয় ও বরণীয়। রেওয়াজের দোহাই বা অন্য কোন দোহাই তাদেরকে কুরআন ও হাদীছের প্রকাশ্য ও যুক্তিগ্রাহ্য অর্থ থেকে ফিরাতে পারে না। তারা কোন অবস্থাতেই দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাত বিক্রি করেন না। সত্য ও মিথ্যার সবচেয়ে বড় মানদন্ড হ’লেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। প্রতিটি কাজ উক্ত মানদন্ডে বিচার করতে হবে। যেটি তার অনুকূলে হবে, সেটি গৃহীত হবে। যেটি তার প্রতিকূলে হবে, সেটি পরিত্যাগ করতে হবে। হিংসা, যিদ, অহংকার, লোক দেখানো ও শুনানো, নেতৃত্বের লোভ, মাল ও মর্যাদার লোভ সর্বদা মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। ফলে তারা সত্যের ঘাটে এসেও ফিরে যায়। তখন তাদের বদলে অন্যেরা এসে ঐ স্থান পূর্ণ করে আল্লাহর বিশেষ রহমতে। কেননা পুনরুত্থান দিবসের আগ পর্যন্ত এ পৃথিবী কখনো সত্যসেবী থেকে খালি থাকবে না। আর তাদের দেখেই মানুষ সর্বদা সত্যের সন্ধান পাবে। এদিকে ইঙ্গিত করেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল সত্যের উপর দৃঢ় থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তারা এভাবেই থাকবে, যতদিন না ক্বিয়ামত সংঘটিত হয়’ (মুসলিম হা/১৯২০)

মানুষের মধ্যে সর্বদা চার ধরনের মানুষ থাকে। ১. যারা সত্যকে চিনে। অতঃপর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেমন ইহূদী-নাছারা ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়। ২. যারা সত্যকে চিনে না এবং মানেও না। যেমন নাস্তিক ও কাফেররা। ৩. যারা সত্যকে চিনে ও স্বীকার করে। অতঃপর সুবিধামত মানে ও ঝুঁকি এলে পরিত্যাগ করে। এরা হ’ল যুগে যুগে সুবিধাবাদী মুসলিম ও মুনাফিকরা। ৪. যারা সত্যকে চিনে ও মানে এবং ঝুঁকি এলেও তাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকে। এরাই হ’ল যুগে যুগে সত্যসেবী মুমিন। এদেরকেই বলা হয় সালাফী বা আহলেহাদীছ। যা কোন নাম, বর্ণ, ভাষা ও অঞ্চলের অপেক্ষা রাখে না। যার আক্বীদা ও আমল স্বর্ণযুগের আক্বীদা ও আমল থেকে দূরে, কেবলমাত্র নাম ও বংশমর্যাদা তাকে জান্নাতে নিতে পারবে না। সত্যসেবীগণ তাই সর্বদা সত্যের সন্ধানে থাকেন। সত্য পেলেই তা গ্রহণ করেন ও সত্যসেবীদের সাথে জামা‘আতবদ্ধ থাকেন। কেননা ক্বিয়ামতের দিন ব্যক্তি তার সঙ্গেই থাকবে, যাদেরকে সে দুনিয়াতে ভালোবাসত।

সালমান ফারেসী (রাঃ) সত্যের সন্ধানে ইরান থেকে বছরের পর বছর দিশেহারা পথিকের মত ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে মদীনায় পৌঁছে সত্য গ্রহণ করেছিলেন। প্রাথমিক যুগের ছাহাবায়ে কেরাম সত্যের সন্ধান পেয়ে সবকিছু ছেড়ে হাবশা ও ইয়াছরিবে হিজরত করেছিলেন। খোদ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও আবুবকর (রাঃ) রাতের অন্ধকারে ইয়াছরিবে পাড়ি দিয়েছিলেন। পথিমধ্যে ছওর গিরিগুহার মুখে ১০০ উটের লোভে হিংস্র লোকগুলির পা দেখে যখন আবুবকর (রাঃ) ভীতকম্পিত হয়ে ওঠেন, তখন দৃঢ়চিত্ত রাসূল তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, চিন্তিত হয়ো না! আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন (তওবা ৪০)। সেদিন আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করেছিলেন। আজও আল্লাহ সত্যসেবীদের রক্ষা করবেন। আধুনিক জাহেলিয়াতের ধূম্রজালে আবেষ্টিত মানুষ সত্যের সন্ধানে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মহতী আন্দোলনের সাথে যত বেশী জামা‘আতবদ্ধ হবে, সত্য তত বেশী শক্তিশালী হবে। বস্ত্ততঃ শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়, দুর্বল মুমিনের চাইতে (মুসলিম হা/২৬৬৪)। সংগঠনই শক্তি, সংগঠনের উপরে আল্লাহর হাত থাকে। আর আল্লাহই মূল শক্তিদাতা। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)।






চরিত্রবান মানুষ কাম্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নাস্তিক্যবাদ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
স্বাধীনতা দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুসলিম ও আহলেহাদীছ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আসামে মুসলিম নিধন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পুঁজিবাদের চূড়ায় ধ্বস - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সত্যদর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
এনআরসি : শতাব্দীর নিকৃষ্টতম আইন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জবাবদিহিতার অনুভূতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বিশ্বকাপ না বিশ্বনাশ? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জেরুযালেম দখলে ট্রাম্প - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.