ভারতের
বিমানবাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের জাববা
এলাকায় কথিত জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের নামে গত ২৬শে ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার দিবাগত
রাত সাড়ে ৩-টায় আকস্মিকভাবে বিমান হামলা চালায়। ১২টি মিরেজ ২০০০ জেট বিমান এ
হামলায় অংশ নেয় এবং ১ হাযার কেজি বোমা বর্ষণ করে। তাতে ৩০০ থেকে ৩৫০ জঙ্গী
সহ তাদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় বলে ভারতীয় বিমান বাহিনী দাবী করে। গত ১৪ই
ফেব্রুয়ারী ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পুলওমায় জঙ্গী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা
নিহত হয়। জইশ-এ-মুহাম্মাদ এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। এর প্রতিশোধ নিতে
এই হামলা চালানো হয় বলে ভারত দাবী করে। তবে ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ এতে
ভিন্নমত পোষণ করে। তারা বলেন, দু’বছর আগেই সেখান থেকে জইশ-ই মুহাম্মাদ
তাদের ঘাঁটি গুটিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। স্থানটি এখন ফাঁকা ময়দান। বলা
হয়েছে যে, এটি ছিল বিগত ৫০ বছরের মধ্যে পাকিস্তানের উপর ভারতের প্রথম বিমান
হামলা।
হামলার কথা স্বীকার করলেও এতে কেউ নিহত হননি বলে দাবী করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সরেযমীন প্রতিবেদনে (ছবিসহ) দেখা গেছে, যে গ্রামটিতে বিমান হামলা হয়েছে, সেটি বালাকোট নয়, বরং খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের জাববা এলাকা। এটি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। উক্ত পাহাড়ী গ্রামে ৪০০-৫০০ লোকের বাস। সেখানে চারটি বোমা বিস্ফোরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটি পড়েছে বনের মধ্যে এবং একটি পড়েছে কৃষিক্ষেতে। এতে ১৭টি পাইন গাছ পুড়ে গেছে। একটি কুঁড়েঘরে একজন লোক সামান্য আহত হয়েছে এবং একটি কাক মারা গেছে। এছাড়া কিছু গাছে বোমার স্পিন্টার লেগে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া হামলায় সৃষ্টি হওয়া চারটি গর্তের আশপাশে বোমার ধ্বংসাবশেষও দেখা গেছে। এতে কেউ নিহত হননি বলে জানান স্থানীয়রা।
পরদিন ২৭শে ফেব্রুয়ারী পুনরায় আক্রমণ করতে গেলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর দু’টি বিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান এবং একটি বিমানের পাইলটকে আটক করে। কিন্তু তাকে কোন শাস্তি না দিয়ে বরং উপযুক্ত নিরাপত্তা ও আতিথেয়তা দেখিয়ে শান্তি ও সৌহার্দের বার্তাস্বরূপ ভারতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এতে দেশটি বিশ্বজুড়ে উচ্চ প্রশংসা অর্জন করে।
অপরদিকে বিনা উস্কানিতে এ ধরনের হামলার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে নিন্দিত ও সমলোচিত হয়েছে ভারত। বিমান হামলায় ক্ষয়ক্ষতির ফিরিস্তি বিভিন্ন আকর্ষণীয় শিরোনামে উল্লেখ করা হ’লেও ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে’ কিছুই পাওয়া যায়নি। এমনকি তথাকথিত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। এদিকে পাকিস্তানে এই অযাচিত হামলায় খোদ ভারতেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রকৃত তথ্য দাবী করেছে। বিরোধীদল ও সিভিল সোসাইটির নেতারা বলেছেন, পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী মে মাসে আসন্ন নির্বাচনে জেতার জন্য যুদ্ধের নাটক সাজিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, ‘দেশের প্রয়োজনে যদি যুদ্ধ হয়, তাহ’লে আমরা দেশের সঙ্গে আছি। কিন্তু রাজনীতির প্রয়োজনে আমরা যুদ্ধ চাই না। নির্বাচনে জেতার জন্য আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তি চাই’।