চাঁদপুর ২৫শে জানুয়ারী শুক্রবার : অদ্য বাদ আছর হ’তে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ বৃহত্তর কুমিল্লা যেলার অন্তর্গত চাঁদপুর সদর উপযেলার উদ্যোগে যেলার সদর থানাধীন দক্ষিণ বাখরপুর বাংলাবাজারে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি বলেন, ইসলাম কখনো পরাজিত দ্বীন নয়, এটি চির বিজয়ী শাশ্বত একটি দ্বীন। আর এর মূল রূহ হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ তথা আল্লাহর অহী। সেকারণ আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর দ্ব্যর্থহীন শ্লোগান হ’ল- ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর’। তিনি বলেন, এ দ্বীন কায়েম হবে মানুষের মাধ্যমে, মানুষকে গুলী করে হত্যা করার মাধ্যমে নয়। কেননা ইসলাম রোগীর সঠিক চিকিৎসায় বিশ্বাসী, রোগীকে মেরে ফেলায় বিশ্বাসী নয়। তিনি যাবতীয় চরমপন্থা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, সমাজে তিন ধরনের লোকের বাস। এক ধরনের লোক আহলুল ইমামাহ বা নেতৃত্বের যোগ্যতা সম্পন্ন, আরেক ধরনের লোক আহলুল ইখতিয়ার বা নেতৃত্ব বাছাই করার যোগ্যতা সম্পন্ন, আরেক ধরনের লোক আহলুত তাক্বলীদ বা অন্ধ অনুসারী। যারা স্রেফ অনুসরণটাই বুঝেন, কেন অনুসরণ করেন তা বুঝেন না। অধিকাংশ লোকই যা চলছে তাই চলবে এই নীতিতে বিশ্বাসী। এরা নতুন কিছু শুনতে নারায। এই অন্ধ অনুসারী একদল মানুষ, একদল বিচারক আর নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন একদল মানুষ নিয়েই সমাজ চলে। তিনি বলেন, নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন লোকগুলি যখন ইসলামপন্থী হয়, তখন সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আর সমাজ যখন নষ্ট নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, তখন তা বিনষ্ট হয়। ইবলীস সব সময় নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন লোকগুলিকে তার দলভুক্ত করার চেষ্টা করে। নবী-রাসূলগণকে কষ্ট দিয়েছে এই নষ্ট নেতৃত্বের লোকেরাই। ইসলাম সবসময়ই ইসলামপন্থী যোগ্য ও তাক্বওয়াশীল নেতৃত্ব কামনা করে। আহলেহাদীছ আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে।

কুমিল্লা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা ছফিউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন, খুলনা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, নারায়ণগঞ্জ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ ছফিউল্লাহ, পার্শ্ববর্তী মিছবাহুল উলূম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল ইসলাম ও ঢাকা যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক দায়িত্বশীল নেছার বিন আহমাদ প্রমুখ। সম্মেলনে ইসলামী জাগরণী পেশ করেন ঢাকা-উত্তর সাংগঠনিক যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি হাফেয আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ হেমায়েত হোসাইন। সম্মেলনে ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুস্তাফীযুর রহমান সোহেল, ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর অর্থ সম্পাদক কাযী হারূণুর রশীদ, নারায়ণগঞ্জ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ.ন.ম.সাইফুল ইসলাম নাঈম সহ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর যেলা থেকে কর্মী-দায়িত্বশীল ও বিপুল সংখ্যক সুধী যোগদান করেন। সম্মেলনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আতাউল্লাহ শরীফ, প্রচার সম্পাদক ও বাখরপুর কবিরাজপাড়া কেন্দ্রীয় আহলেহাদীছ জামে মসজিদের ইমাম মুহাম্মাদ আব্দুস সোবহান, সাবেক মেম্বার হাজী আলী আহমাদ কবিরাজ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব আবুল খায়ের প্রমুখ।

উল্লেখ্য যে, ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ৭-টার ‘সোনার তরী’ লঞ্চ যোগে রওয়ানা হয়ে আমীরে জামা‘আত বেলা সাড়ে ১১-টায় চাঁদপুর শহরে পৌঁছেন। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান চাঁদপুর সদর উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর উপদেষ্টা ও চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ফিরোয আহমাদ সুমন, উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ হেমায়েত হোসাইন, সহ-সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মুহাম্মাদ রাসেল প্রমুখ। অতঃপর মাইক্রো যোগে শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরবর্তী বাখরপুরে পৌঁছে বাখরপুর কবিরাজপাড়া আহলেহাদীছ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তিনি জুম‘আর খুৎবা প্রদান করেন। একই সময়ে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ বাখরপুর নতুন আহলেহাদীছ জামে মসজিদে খুৎবা দেন ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন।

বাদ আছর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত পার্শ্ববর্তী হাইমচর থানা সদরে নব প্রতিষ্ঠিত মিছবাহুল উলূম মাদ্রাসার সভাপতি ফরহাদ আহমাদ ও সেক্রেটারী মুহাম্মাদ আলী (বকুল)-এর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উক্ত মাদ্রাসা পরিদর্শনে যান। তিনি মাদ্রাসার নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন শেষে হাইমচর থানা সংলগ্ন আলগী বাজারে চলমান মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। এ সময়ে তিনি ছাত্রদের পড়াশুনার খোঁজ-খবর নেন এবং শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক বক্তব্য পেশ করেন। এ সময়ে তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, কুমিল্লা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা ছফিউল্লাহ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা শরাফত আলী, খুলনা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম ও কুমিল্লা যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি আহমাদুল্লাহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলন শেষে আমীরে জামা‘আত জনাব ফিরোয আহমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সফরসঙ্গীসহ রাতেই বাখরপুর থেকে শহরে গিয়ে তার বাসায় রাত্রি যাপন করেন। অতঃপর সেখান থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৭-টার লঞ্চ যোগে পুনরায় ঢাকা ফিরে আসেন এবং পরদিন ২৭শে জানুয়ারী রাজশাহী প্রত্যাবর্তন করেন।






আরও
আরও
.