সুন্দরবন, খুলনা ২১-২৪শে মার্চ রবি-বুধবার : ২১শে মার্চ রবিবার খুলনা যেলা সম্মেলন শেষে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি ও জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ (World Heritage) পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের বিভিন্ন স্পট পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে ৫টি ৩তলা বড় লঞ্চে তিন শতাধিক সফরসঙ্গী নিয়ে রাত ২-টায় খুলনা লঞ্চঘাট থেকে রওয়ানা হন।

উক্ত সফরে মোট ৩৫টি সাংগঠনিক যেলার ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র ৩০০ জন দায়িত্বশীল ও সুধী অংশগ্রহণ করেন। যেলাগুলি হ’ল- কক্সবাজার, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, কিশোরগঞ্জ,  কুষ্টিয়া-পশ্চিম, খুলনা, গাইবান্ধা-পশ্চিম, গাযীপুর, চট্টগ্রাম, চাঁপাই-দক্ষিণ, জামালপুর-উত্তর, জামালপুর-দক্ষিণ, ঝিনাইদহ, টাঙ্গাইল, ঢাকা-উত্তর, ঢাকা-দক্ষিণ, দিনাজপুর-পূর্ব, দিনাজপুর-পশ্চিম, নাটোর, নওগাঁ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, ভোলা, মেহেরপুর, যশোর, রংপুর-পূর্ব, রংপুর-পশ্চিম, রাজশাহী-সদর, রাজশাহী-পূর্ব, রাজশাহী-পশ্চিম, লালমণিরহাট, সাতক্ষীরা ও সিরাজগঞ্জ। এছাড়াও ছিলেন মেযবান যেলা সাতক্ষীরার নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও বাবুর্চিগণ। আর ছিলেন লঞ্চের গানম্যান ও স্টাফগণ।

‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুহা্ম্মাদ আজমাল ও ‘আল-আওনে’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ জাহিদ-এর নেতৃত্বে সফরের বিভিন্ন স্পটে ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিকট ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ‘মীলাদ প্রসঙ্গ’ ‘আন্দোলন’-এর ‘পরিচিতি’ এবং ‘যাবতীয় চরমপন্থা হ’তে বিরত থাকুন!’ লিফলেট সমূহ এবং মাসিক আত-তাহরীক বিতরণ করা হয়। এছাড়াও খুলনা শহরে এবং খুলনা থেকে রাজশাহী ফেরার পথে ট্রেনে বই ও লিফলেট সমূহ বিতরণ করা হয়।

প্রত্যেক লঞ্চের সাথে ছিল একটি করে ইঞ্জিন বোট। যা লঞ্চ থেকে নেমে তীরে ওঠার জন্য এবং দুই লঞ্চের মধ্যে প্রয়োজনে যাতায়াত করার জন্য ব্যবহার করা হ’ত। সাথে নেওয়া হয় চার রাত ও তিন দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্য-সামগ্রী ও খাবার পানি এবং রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা ইত্যাদি। এছাড়া কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে প্রত্যেক লঞ্চের যাত্রীদের জন্য ১ জন করে ‘গান ম্যান’ (বন্দুকধারী) ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় একজন ‘গাইড’ (পথ নির্দেশক) দেওয়া হয়। গাইডের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন স্পটে অবতরণ ও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অবস্থান করতে হয় এবং বন্দুকধারী নিরাপত্তা রক্ষীদের সহযোগিতায় বনের ভিতরে চলাচল করতে হয়।

(১) হাড়বাড়িয়া স্পট : খুলনা থেকে নদীপথে মোংলা পোর্ট হয়ে পরদিন ২২শে মার্চ সোমবার সকাল ১০-টায় লঞ্চগুলি হাড়বাড়িয়া স্পটে পৌঁছে। এখানে আছে ফরেস্ট অফিস, একটি মিঠাপানির পুকুর এবং আরসিসি কলাম দিয়ে উঁচু করে নির্মিত একটি টিনশেড কটেজ। কোস্টগার্ড ও বনকর্মকর্তাসহ সরকারী লোকেরা এখানে বসবাস করেন। বাঘ, হরিণ ও বানরের কথা শুনলেও কেবল বানর দেখা গেল।

(২) কচিখালী স্পট : হাড়বাড়িয়া থেকে বেলা ১-টার দিকে রওয়ানা দিয়ে পরদিন ২৩শে মার্চ মঙ্গলবার বাদ ফজর কচিখালী স্পটে পৌঁছি। সেখানে পাশাপাশি দু’টি লঞ্চের ছাদে সফরসঙ্গীদের একত্রিত করে তাদের উদ্দেশ্যে আমীরে জামা‘আত দরসে কুরআন পেশ করেন। অতঃপর ইঞ্জিন বোটে করে সবাই স্পটে নেমে যান।

স্পটে যাওয়ার পথে অনেকগুলি হরিণকে নদীর চরে একত্রে দেখা গেল। ১৯৮৬ সালে স্পটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে আছে ফরেস্ট অফিস, একটি মসজিদ, একটি মিঠাপানির পুকুর এবং আরসিসি কলাম দিয়ে উঁচু করে নির্মিত কয়েকটি টিনশেড কটেজ। ২০১৬ সালের সফরে জুম‘আর দিন হওয়ায় মুহতারাম আমীরে জামা‘আত উক্ত মসজিদে খুৎবা দেন (দ্র. আত-তাহরীক, জানুয়ারী ২০১৭, ২০/৪ সংখ্যা)

অতঃপর একদল বনের মধ্যে ঘুরতে গেলেন। সেখানে কিছু হরিণ ও শূকর দেখা গেল। আরেক দল স্পটের দীঘির পাড়ে গাছের ছায়ায় বসে আমীরে জামা‘আতের উপদেশ বাণী শুনতে থাকেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

(৩) ডিমের চর ও পক্ষীর চর : কচিখালী থেকে রওয়ানা দিয়ে অল্প দূরে সাগরের বুকে নতুন জেগে ওঠা ‘ডিমের চর’ পরিদর্শনের জন্য লঞ্চ থামে। অনেকে ডিমের চরে নামেন। কিন্তু সেখানে ধূ ধূ বালুচর ও দূরে কিছু গাছের সারি ব্যতীত আর কিছুই দেখা গেল না। ফলে তারা লঞ্চে উঠে আসেন। অতঃপর অল্প দূরে নতুন জেগে ওঠা ‘পক্ষীর চর’ কাছ থেকে দেখে না থেমে সোজা পরবর্তী স্পট ‘জামতলা’র উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়।

(৪) জামতলা সমুদ্র সৈকত : দুপুরের মধ্যেই পৌঁছে গেল লঞ্চ। সাগর ও নদীর মিলন কেন্দ্রে নদীর মাঝখানে নোঙ্গর করা হ’ল পাঁচটি সারিবদ্ধ লঞ্চ। অতঃপর ইঞ্জিন বোটে করে জামতলা সমুদ্র সৈকতে অবতরণ করা হ’ল। অতঃপর ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ব্যাপী দীর্ঘ ট্রেইল বা পায়ে হাঁটা পথ চলা শুরু হ’ল। মাঝপথে গিয়ে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত নিজে ওয়াচ টাওয়ারে উঠেন। এ সময় তাঁর সাথে টাওয়ারে উঠেন সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নূরুল ইসলাম, আত-তাহরীক সম্পাদক ড. সাখাওয়াত, ‘আল-আওন’-এর সম্পাদক মুহাম্মাদ জাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির, বাহরাইনের দাঈ শরীফুল ইসলাম এবং আইটি সহকারীরা। অথচ ২০১৬ সালে এসে তিনি এখানে টাওয়ার উঠেননি। টাওয়ারে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর বিগত সফরে গাইডের নিকট শোনা বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, একবার জনৈক বিদেশী বৃক্ষ বিশেষজ্ঞ সুন্দরবনের এই পথে হাঁটতে গিয়ে থেমে যান এবং বলেন, এখানে পা ফেলার জায়গা নেই। কারণ এর প্রতিটি ঘাসে ও গাছপালায় রয়েছে বিপুল ঔষধি গুণ। যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। তিনি বলেন, এই বনে ২৬৪ প্রকার উদ্ভিদ রয়েছে।

আমীরে জামা‘আতের কনিষ্ঠ পুত্র আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির সহ অনেকে ট্রেইলের শেষ মাথা জামতলা সৈকত পর্যন্ত চলে যান ও গোসল করেন। যেখানে সম্ভবতঃ ২০১৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন ছাত্র জোয়ারে তলিয়ে যায়।

টাওয়ার থেকে নেমে রৌদ্রে কিছুদূর সামনে যাওয়ার পর এক কুল গাছের ছায়ায় আমীরে জামা‘আত দাঁড়িয়ে যান। ফলে ড. সাখাওয়াত, সেক্রেটারী জেনারেল, মাওলানা আবুবকর (নামোপাড়া), মাওলানা আহমাদ আলী (হাটগাঙ্গোপাড়া) সহ আরও অনেকে সেখানে জমা হন। একপর্যায়ে সফরসঙ্গী রাজশাহী তাহেরপুরের দীর্ঘ ৩৬ বছরের অভিজ্ঞ প্রবীণ হোমিও চিকিৎসক ডা. মানছূর আলী কুল গাছের গায়ে থাকা ফ্যাঙ্গাস হাতে নিয়ে বলেন, এটি হ’ল ফ্যাঙ্গাস রোগের মহৌষধ। অতঃপর তিনি এর গঠন ও উপকারিতা বর্ণনা করেন। ফিরে আসার পথে তিনি একটি গাছের পাতা হাতে নিয়ে বলেন, এটি হ’ল ‘থুজা’ গাছ। যা আঁচিলের মহৌষধ। এরপর এক জায়গায় মাটির গর্তে জমে থাকা হলুদ রংয়ের পানি দেখে তিনি বলেন, এগুলি পাশের মাটি থেকে চোয়ানো পানি। যা বেশী লবনাক্ত নয়। এই পানি বনের পশুরা খায়। তিনি বলেন, বন-জঙ্গলের পশু-পক্ষীরা অসুখে পড়লে নিজেরাই লতা-পাতা বাছাই করে খেয়ে বাঁচে। তাই এখানকার কোন গাছ-পালা নষ্ট করা ঠিক নয়।

অতঃপর সবাই লঞ্চে ফিরে আসেন। এসময় অনেকে জামতলা সরু খাল পেরিয়ে যাওয়া বাঘের পায়ের টাটকা ছাপ দেখার কথা বলেন। 

(৫) কটকা স্পট : অনিন্দ্য সুন্দর এই স্পটটি একেবারে সমুদ্রতীরে অবস্থিত। জামতলা ও কটকা সী বীচ খুব কাছাকাছি। নদীর পূর্বাংশে জামতলা এবং পশ্চিমাংশে কটকা। লঞ্চে দুপুরের খাবার গ্রহণ ও হালকা বিশ্রামের পর আমীরে জামা‘আত ও সফরসঙ্গীরা ইঞ্জিন বোটযোগে বিকাল ৫-টায় কটকায় অবতরণ করেন। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হ’ল চিত্রা হরিণের পাল। তাদের দল বেঁধে চলার দৃশ্য খুবই মনোরম। ইতিপূর্বে ১৯৯৭ সালের ২০শে নভেম্বর ও ২০১৬ সালের ২৫শে নভেম্বর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সংগঠনের সফরসঙ্গীদের নিয়ে দুইবার এখানে আসেন।

লঞ্চ থেকেই হরিণের বিচরণ দেখা গেল। তারপর নেমে পশ্চিম দিকে প্রায় ১ কি.মি. হেঁটে হরিণ পালের দেখা পাওয়া গেল। অনেক লোকজন দেখে ওরা দ্রুত পালিয়ে যায়। সেখানে বগুড়া যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আল-আমীন হরিণের প্রিয় খাবার কেওড়া গাছের ডাল-পাতা ভেঙ্গে বিছিয়ে দিলেন এবং সবাইকে কিছু দূরে গিয়ে চুপ থেকে অপেক্ষা করতে বললেন। আরও একজন মুরববী এরূপ করলেন। হরিণ আসতে দেরী দেখে অনেকে মাগরিবের ছালাতের জন্য চলে গেলেন। এরি মধ্যে দল বেঁধে হরিণপাল আসলো পাতা খাওয়ার জন্য। অনেকেই এই চমৎকার দৃশ্য দেখে পরিতৃপ্ত হন।

এই স্পটে কোন মসজিদ নেই। ফলে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানেই মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের ইমামতিতে মাগরিব ও এশার ছালাত জামা‘আতের সাথে জমা ও ক্বছর করা হয় এবং ব্যক্তিগতভাবে এক রাক‘আত বিতর পড়া হয়। এক পাশে সাগর আর এক পাশে গহীন জঙ্গল। মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধ-নিঝুম পরিবেশে ছালাত শেষে আমীরে জামা‘আত সাথীদের উদ্দেশ্যে হৃদয় ছোঁয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণ পেশ করেন। তিনি সকলকে মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি দেখে তাঁর শুকরিয়া আদায় এবং সর্বাধিক তাক্বওয়া অর্জনের উপদেশ দেন।

খুলনা রওয়ানা : কটকা সমুদ্র সৈকত পরিদর্শন শেষে ২৩শে মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় লঞ্চ খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। কটকা সফরের পর হিরণ পয়েন্ট ও দুবলার চর সফরের কথা ছিল। কিন্তু গাইডের দেওয়া তথ্যমতে ১৮ই মার্চ তারিখে এখানে একটি পর্যটকবাহী লঞ্চ ডুবোচরে আটকে যাওয়ায় এবং সমুদ্রের ঢেউ বেশী হওয়ায় হঠাৎ করে সেখানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে ৫ দিনের সফর ১ দিন সংক্ষিপ্ত করে ৪ দিনের মধ্যে খুলনায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সকাল ৯-টায় মংলার নিকটবর্তী সুন্দরবনের স্পট ‘করমজলে’  লঞ্চ নোঙ্গর করে। আমীরে জামা‘আতের লঞ্চ ব্যতীত অন্যান্য লঞ্চের যাত্রীরা এই স্পটে অবতরণ করেন। অতঃপর সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে ২৪শে মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুর ২-টায় খুলনা লঞ্চ ঘাটে পৌঁছে। অতঃপর সেখানে সাতক্ষীরার লঞ্চে প্রস্ত্তত করা দুপুরের খানা খেয়ে সবাই স্ব স্ব গন্তব্যে যাত্রা করেন। আমীরে জামা‘আতসহ রাজশাহীর সফরকারীগণ খুলনা থেকে রাজশাহীগামী বিকাল ৪-টার ট্রেনে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। স্টেশনে তাদের বিদায় জানান কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জনাব গোলাম মুক্তাদির। আমীরে জামা‘আত তাঁর নিকটে স্বল্প সময়ে চমৎকারভাবে যেলা সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ জনান।

পথিমধ্যে পোড়াদহ জংশনে আগের ট্রেনের দু’টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় তার পূর্বের স্টেশন আলমডাঙ্গায় আমীরে জামা‘আতের ট্রেন প্রায় দু’ঘণ্টা অবস্থান করে। একথা শুনতে পেয়ে স্টেশনের নিকটবর্তী ও দূরবর্তী এমনকি ১৫ কি. মি. দূর থেকেও কর্মীরা ছুটে এসে স্টেশনে আমীরে জামা‘আতের সাথে সাক্ষাত করেন। আমীরে জামা‘আত তাদেরকে দ্বীনের প্রতি অটল থেকে জামা‘আতবদ্ধভাবে দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার উপদেশ দেন। এ দীর্ঘ বিরতিতে স্টেশন ও সংলগ্ন বাজারে ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ প্রকাশিত বই ও লিফলেট সমূহ বিতরণ করা হয়।

রাজশাহী হ’তে আমীরে জামা‘আতের সফরসঙ্গী ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, ‘যুবসংঘে’র সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক্বীম আহমাদ, বর্তমান সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মাদ আজমাল, ‘আল-আওনে’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ জাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির, রাজশাহী সদর যেলা ‘আন্দোলন’-এর উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট জারজিস আহমাদ, মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল, মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম ও মাওলানা আবুবকর (নামো পাড়া), রাজশাহী-পূর্ব যেলা আনেদালন-এর উপদেষ্টা ডা. মানছূর আলী, মারকাযের বোর্ডিং সুপার আরীফুল ইসলাম, ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর আইটি সহকারী আবুল বাশার ও মীযানুর রহমান।

এই সফরে খুলনা যাওয়ার পথে ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম আলমডাঙ্গা স্টেশন থেকে এবং শূরা সদস্য তরীকুয্যামান, মেহেরপুর যেলা সভাপতি মাওলানা মানছূরুর রহমান ও সহ-সভাপতি হাসানুল্লাহ ভেড়ামারা স্টেশন থেকে উঠেন। 

কুইজ ও স্মৃতিকথা অনুষ্ঠান : রাজশাহী হ’তে সফরে বের হওয়ার আগেই আমীরে জামা‘আত শিক্ষা সফরের সাথীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলন বিষয়ক ২৫টি এবং সুন্দরবন ও অন্যান্য বিষয়ক ২৫টি কুইজ প্রস্ত্তত করে নেন। খুলনা থেকে যাত্রা শুরুতেই কুইজগুলি ৫টি লঞ্চের সফরসঙ্গীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এজন্য প্রত্যেক লঞ্চে দু’জন করে দায়িত্বশীল নিযুক্ত করা হয়।

২২শে মার্চ সোমবার হাড়বাড়িয়া স্পট থেকে কচিখালী স্পটে যাওয়ার পথে বাদ মাগরিব আমীরে জামা‘আতের লঞ্চে আল-‘আওন-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকিরের উপস্থাপনায় ‘স্মৃতিকথা’ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

রাজশাহী-পূর্ব যেলা ‘আন্দোলন’-এর উপদেষ্টা ডা. মনছূর আলীর (৬৫) স্মৃতিচারণের মাধ্যমে এটি শুরু হয়। তাঁর স্মৃতিচারণের মুখ্য বিষয় ছিল, আমীরে জামা‘আতকে তিনি কেন নেতা হিসাবে বেছে নিলেন? এরপর নওদাপাড়া-মহলদারপাড়ার মৎস্য ব্যবসায়ী যিয়ারত আলী (৫৫) ‘মাছ ব্যবসায়ীদের নিজস্ব পরিভাষা’ উপস্থাপন করেন। যা শুনে সবাই হাস্যমুখর হয়ে উঠেন এবং বক্তব্যটি দারুনভাবে উপভোগ করেন। মারকাযের পাশেই যে এরূপ বাংলা উপভাষা প্রচলিত আছে, ইতিপূর্বে কারু জানা ছিলনা। অতঃপর মাওলানা আমানুল্লাহ, শরীফুল ইসলাম, মাওলানা আবুবকর (নামোপাড়া) সহ নবীন-প্রবীণ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলগণ তাদের জীবনের অনেক উল্লেখযোগ্য স্মৃতি তুলে ধরেন।

‘আহলেহাদীছ’ হওয়ার অপরাধে কিভাবে তারা নির্যাতিত ও অপমানিত হয়েছেন এরূপ কিছু ঘটনাও উঠে আসে স্মৃতির পাতা থেকে। যেমন চট্টগ্রামের কর্মী তাজুল ইসলাম (নবীনগর, বি.বাড়িয়া) বলেন, আমার এলাকার সবাই ঢাকার দেওয়ানবাগী পীরের মুরীদ। তাদের ফেস্টুনের উপরে সূর্য ও চন্দ্রের মধ্যে জলছাপে  দেওয়ানবাগীর চেহারা দেখানো হয়। নীচে জান্নাতে আল্লাহকে দেখা যাবে মর্মের হাদীছটি লেখা থাকে। তাতে মুরীদরা বুঝে নেয় যে, দেওয়ানবাগী স্বয়ং আল্লাহ। বিষয়টি তাজুলের মনে খটকা সৃষ্টি করে। পরে তিনি ছহীহ আক্বীদার বিভিন্ন বই-পত্র এলাকায় বিতরণ করতে থাকেন। তাতে তিনি বিভিন্ন সময় অপদস্থ হন। শেষে তিনি সরাসরি দেওয়ানবাগীর দরবারে চলে যান। সেখানকার কড়া প্রহরা এবং সর্বাধুনিক চেকিং সিস্টেম দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান। এরপর তিনি ভাবেন যে, এভাবে একাকী বিচ্ছিন্নভাবে দাওয়াতী কাজ করে কোন ফায়েদা হবেনা। আমার একটি মযবূত শেল্টার প্রয়োজন। তখন তিনি চট্টগ্রামে আমাদের সংগঠনকে খুঁজে পান। বর্তমানে তিনি সংগঠনের একজন সক্রিয় কর্মী। আলহামদুলিল্লাহ

২৩শে মার্চ মঙ্গলবার বাদ মাগরিব কটকা স্পটে দু’টি লঞ্চ একত্রিত করে কুইজের প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান হয়। ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন ও সাতক্ষীরা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। অন্য লঞ্চ থেকেও কর্মীদেরকে এই দুই লঞ্চে আনা হয়।

সবশেষে সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা নূরুল ইসলাম তার জেলখানার কিছু কাহিনী বর্ণনা করেন এবং নওগাঁ জেলে বসে আমীরে জামা‘আতের ‘এক রজনীর উপহার’ ‘ইনসানে কামেল’ বইটি লেখার ঘটনা বর্ণনা করেন। অতঃপর আমীরে জামা‘আতের সমাপনী ভাষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সফরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সাতক্ষীরা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন ও সাতক্ষীরা যেলা ‘যুবসংঘে’র সাবেক সহ-সভাপতি আসাদুল্লাহ প্রমুখ। রান্না-বান্নার দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা আব্দুল মান্নানের মেজ ভাই আব্দুল গফূর (৬১) ও তার সাথীরা। আমীরে জামা‘আত সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন যেন তিনি তাদের এই নিঃস্বার্থ খেদমতের সর্বোত্তম জাযা দান করেন।

মাসিক ইজতেমা

সারাংপুর, পবা, রাজশাহী ১৭ই মার্চ বুধবার : অদ্য বাদ আছর যেলার পবা উপযেলাধীন সারাংপুর দাখিল মাদ্রাসা ময়দানে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ পবা উপযেলার উদ্যোগে মাসিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। পারিলা এলাকা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি হযরত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত ইজতেমায় কেন্দ্রীয় মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন এবং আল-ফুরক্বান ইসলামিক সেন্টার, বাহরাইন-এর দাঈ মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন হাট রামচন্দ্রপুর ডিগ্রী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মুহাম্মাদ রফীকুল ইসলাম ও পবা উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আবু বকর। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ঘোলহাড়িয়া ইসলামিক স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্য মাওলানা রুস্তম আলী।

তা‘লীমী বৈঠক

পশ্চিমভাগ বাযার, পুঠিয়া, রাজশাহী ২৬শে মার্চ শুক্রবার : অদ্য বাদ আছর যেলার পুঠিয়া উপযেলাধীন পশ্চিমভাগ বাযার আহলেহাদীছ জামে মসজিদে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ পুঠিয়া উপযেলার উদ্যোগে এক তা‘লীমী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অত্র শাখা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত তা‘লীমী বৈঠকে কেন্দ্রীয় মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন পুঠিয়া উপযেলা ‘আন্দোলন’-সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ ইলিয়াসুদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক ক্বারী মুহাম্মাদ আমানুল্লাহ, অত্র মসজিদের সভাপতি মুহাম্মাদ ইলিয়াস ও রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র মুহাম্মাদ যায়েদ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন শাখা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান।

সুধী সমাবেশ

রাজবাড়ী ২৫শে মার্চ বৃহস্পতিবার : অদ্য বাদ যোহর যেলা শহরে অবস্থিত যেলা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি গাযী মুখতারের বাসভবনে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ রাজবাড়ী যেলার উদ্যোগে এক সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা মাকবূল হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে কেন্দ্রীয় মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম এবং প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন যেলা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি গাযী মুখতার।

আলোচনা সভা

সালথা, ফরিদপুর ২৬শে মার্চ শুক্রবার : অদ্য বাদ জুম‘আ যেলার সালথা থানাধীন সালথা আহলেহাদীছ জামে মসজিদে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম এবং প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যেলা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুছ ছামাদ ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ নো‘মান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার মীযানুর রহমান, দফতর সম্পাদক মুহাম্মাদ মুছতফা এবং রাজবাড়ী যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা মাকবূল হোসাইন। আলোচনা শেষে মুহাম্মাদ ইলিয়াস হোসাইনকে সভাপতি ও মুহাম্মাদ বেলালকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ সালথা উপযেলা কমিটি গঠন করা হয়। উল্লেখ্য, আলোচনা সভার আগে ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক উক্ত মসজিদে জুম‘আর খুৎবা প্রদান করেন।






আরও
আরও
.