তাবলীগী ইজতেমার আখেরাতমুখী ও ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ ঈমানী পরিবেশে পরকালীন পাথেয় হাছিল এবং বিপুল নেকী অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। অথচ অনেকেই তা অবহেলায়, অলসতায় হারিয়ে ফেলে। আলোচ্য নিবন্ধে কতিপয় আমলের কথা উল্লেখ করা হ’ল, যার মাধ্যমে তাবলীগী ইজতেমার দুই দিন আখেরাতের পাথেয় হাছিল করা যেতে পারে।

(১) বিশুদ্ধ দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করা :

ইজতেমায় দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন বিষয়ের উপরে দলীলভিত্তিক আলোচনা পেশ করেন। সেসব শুনে দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করে সে মোতাবেক আমল করতে পারলে জান্নাতের পথ সুগম হবে ইনশাআল্লাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ سَلَكَ طَرِيْقًا يَلْتَمِسُ فِيْهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيْقًا إِلَى الْجَنَّةِ- وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ-  ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আর ফিরিশতাগণ ইলম অন্বেষণকারীর প্রতি প্রসন্ন হয়ে নিজেদের ডানাগুলি বিছিয়ে দেন’।[1]

(২) জামা‘আতবদ্ধ থাকার শিক্ষা :

সংগঠনের আহবানে সাড়া দিয়ে দু’দিনের জন্য দুনিয়াবী নানা ব্যস্ততা পরিত্যাগ করে একত্রিত হওয়া জামা‘আতবদ্ধ থাকার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যা দুনিয়া ও আখেরাতে রহমত লাভ এবং জান্নাতের মধ্যস্থলে থাকার সৌভাগ্য অর্জনে সহায়ক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلْجَمَاعَةُ رَحْمَةٌ، وَالْفُرْقَةُ عَذَابٌ ‘জামা‘আতবদ্ধ জীবন হ’ল রহমত এবং বিচ্ছিন্নতা হ’ল আযাব’।[2] তিনি আরো বলেন,عَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَإِيَّاكُمْ وَالْفُرْقَةَ فَمَنْ أَرَادَ بَحْبَحَةَ الْجَنَّةِ فَلْيَلْزَمِ الْجَمَاعَةَ ‘জামা‘আতবদ্ধভাবে থাকা এবং বিচ্ছিন্নতা থেকে সাবধান থাকা তোমাদের জন্য আবশ্যক। আর যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলে থাকতে চায়, সে যেন জামা‘আতকে অাঁকড়ে ধরে’।[3]

(৩) আল্লাহর ভালবাসা লাভ :

আল্লাহর জন্য ভালবেসে সারাদেশের দ্বীনী ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ ঈমানের পূর্ণতা আনে, ইসলামের সবচেয়ে মযবূত হাতল ধরতে শেখায়। যারা কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসরণে সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী, কুফরী ও শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী আমল থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকেন, তারাই তো আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসা লাভের সবচেয়ে বেশী হকদার। আর পরস্পরকে ভালবাসা যদি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, তবে তাদের জন্য আল্লাহর ভালবাসাও অবধারিত হয়ে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,قَالَ الله تَعَالٰـى : وَجَبَتْ مَحَبَّتي لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ وَالمُتَجَالِسينَ فِيَّ وَالمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ وَالمُتَبَاذِلِينَ فِيَّ  ‘মহান আল্লাহ বলেন, আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য যারা পরস্পরের মধ্যে মহববত রাখে, একে অপরের সঙ্গে বসে, একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং একে অপরের জন্য খরচ করে, তাদের জন্য আমার মহববত ওয়াজিব হয়ে যায়’।[4] তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, المُتَحَابُّوْنَ في جَلالِي لَهُمْ مَنَابِرُ مِنْ نُورٍ يَغْبِطُهُمُ النَّبِيُّونَ وَالشُّهَدَاءُ  ‘আমার মর্যাদার ওয়াস্তে যারা আপোসে ভালবাসা স্থাপন করে, তাদের (বসার) জন্য হবে নূরের মিম্বর, যা দেখে নবী ও শহীদগণ ঈর্ষা করবেন’।[5] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ইসলামের সবচেয়ে মযবূত হাতল হ’ল, وَالْـحُبُّ فِـي اللهِ وَالْبُغْضُ فِـي اللهِ ‘আল্লাহর ওয়াস্তে সম্প্রীতি স্থাপন করা এবং আল্লাহর ওয়াস্তে বিদ্বেষ পোষণ করা’।[6]

(৪) ঈমান বৃদ্ধি পাওয়া :

ইজতেমায় আগত হাযার হাযার দ্বীনদার, পরহেযগার ও ছহীহ আক্বীদা-আমলের দ্বীনী ভাইদের এত বড় সমাবেশে বসে দ্বীনী আলোচনা শুনলে সকলের ঈমান বহুগুণ বেড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ফলে নিজের জীবনে ইসলামের নবজাগরণ সূচিত হ’তে পারে। দুনিয়ার মোহ ও ব্যস্ততা ছেড়ে দু’দিন ঈমানী পরিবেশে থাকা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়।

হানযালাহ ইবনু রুবাইয়্যি‘ আল-উসায়দী (রাঃ) বলেন, একবার আমার সাথে আবূবকর (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ হ’লে তিনি বলেন, কেমন আছো হানযালাহ্? আমি বললাম, হানযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, এটা কি বলছ হানযালাহ! আমি বললাম, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে থাকি এবং তিনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নাম স্মরণ করিয়ে দেন, তখন (মনে হয়) আমরা যেন তা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছ থেকে বের হয়ে আসি এবং স্ত্রী-সন্তানাদি, ক্ষেত-খামার নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন সেসব অনেকটাই ভুলে যাই। তখন আবূবকর (রাঃ) বললেন, আমরাও এরূপই অনুভব করি। এরপর আমি ও আবূবকর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে গেলাম। তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! হানযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, সে আবার কেমন কথা? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা আপনার কাছে থাকলে আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তখন মনে হয় তা যেন আমাদের চোখের দেখা। কিন্তু আপনার কাছ থেকে সরে গিয়ে যখন স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন জান্নাত-জাহান্নামের কথা অনেকটাই ভুলে যাই। এসব কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যাঁর হাতে আমার জীবন রয়েছে তাঁর কসম! যদি তোমরা সবসময় ঐরূপ থাকতে যেরূপ আমার কাছে থাকো। সবসময় যিকির-আযকার কর, তাহ’লে অবশ্যই ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের চলাচলের পথে তোমাদের সাথে মুছাফাহা করতেন। কিন্তু হে হানযালাহ্! কখনো কখনো এরূপ (এ অবস্থা) হবেই। এ বাক্যটি তিনি তিনবার বললেন’।[7]

(৫) আল্লাহর রাস্তায় দিন-রাত্রি অতিবাহিত করা :

ইজতেমার দু’টি দিন দ্বীনের মহববতে অতিবাহিত করতে পারলে নিঃসন্দেহে তা সৌভাগ্যময় হবে। যে ব্যক্তি ইলম চর্চার উদ্দেশ্যে এমন দ্বীনী পরিবেশে অবস্থান করে সে নিশ্চয়ই আল্লাহর রাস্তায় থাকে। যা দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَغُدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا-‏ ‘আল্লাহর পথে একটি সকাল অথবা একটি সন্ধ্যা অতিবাহিত করা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে, সেসব কিছুর চেয়েও উত্তম’।[8]

(৬) ছোট ছোট অসংখ্য নেক আমলের সুযোগ লাভ :

ইজতেমায় আগত দ্বীনী ভাইদের সাথে হাসিমুখে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সালাম-মুছাফাহা, কুশল বিনিময়, বিভিন্নভাবে সাহায্য করা, পথের সন্ধান দিয়ে, খাবার আনতে সহযোগিতা করে, পানি সরবরাহ করে ইত্যাদি কাজ ইখলাছের সাথে পালনের মাধ্যমে নেকীর পাল্লা ভারী করা যায়। নিম্নে এ জাতীয় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হ’ল।-

ক. সালাম-মুছাফাহা করা : ইজতেমায় এসে অনেক দ্বীনী ভাইয়ের সাথে সালাম-মুছাফাহার মাধ্যমে নেকী বৃদ্ধি পায়। ইজতেমা ময়দানে দ্বীনী ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হ’লে পরস্পরে সালাম বিনিময় ও মুছাফাহা করার সুযোগ লাভ হয়। এতে নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, সর্বোত্তম কাজ কী? তিনি বললেন, ‘(ক্ষুধার্তকে) খাদ্যদান করা এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে সালাম প্রদান করা’।[9]

খ. হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে নেকী লাভ :

ইজতেমা ময়দানে সমবেত কর্মী ও সুধীদের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা ও কথা বলা নেকীর কাজ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ وَإِنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ وَأَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِي إِنَاءِ أَخِيكَ، ‘প্রত্যেকটি সৎকর্মই ছাদাক্বাহ। আর তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির সাহায্যে (কুয়ো থেকে পানি তুলে) তোমার ভাইয়ের পাত্রে ভরে দেওয়াও সৎকর্মের পর্যায়ভুক্ত’।[10]

গ. দ্বীনী ভাইকে সাহায্য করার মাধ্যমে নেকী অর্জন : মুসলিম পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এটাই ইসলামের শিক্ষা। এর ফলে সে আল্লাহর সাহায্যের হকদার হয়ে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَمَنْ كَانَ فِى حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِى حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে নিয়োজিত থাকে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের একটি কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার কষ্টগুলি থেকে একটি কষ্ট দূর করে দিবেন’।[11]

ঘ. পানি পান করানোর মাধ্যমে নেকী অর্জন :

ইজতেমা ময়দানে বিভিন্ন যেলা থেকে আগত বিপুল সংখ্যক মুছল্লীর পানি সংকট হ’তে পারে। সে সময় পানি দিয়ে সহযোগিতা করার মাধ্যমে ছাদাক্বার নেকী লাভ করা যায়। হাদীছে এসেছে,

عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَىُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟ قَالَ سَقْىُ الْمَاءِ.

সা‘দ বিন উবাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কোন দান সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো’।[12]

ঙ. জায়গা প্রশস্ত করে দেওয়া :

অনেক সময় ইজতেমার প্যান্ডেলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় খোলা আকাশের নীচে রেŠদ্রের মধ্যেও অনেককে বসতে দেখা যায়। এ সমস্ত ক্ষেত্রে জায়গা করে দেওয়ার মাধ্যমেও নেকী হাছিল করা যায়। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قِيْلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوْا فِي الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوْا يَفْسَحِ اللهُ لَكُمْ وَإِذَا قِيْلَ انْشُزُوْا فَانْشُزُوْا، ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমাদের বলা হয় মজলিস প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা সেটি করে দাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দিবেন। আর যখন বলা হয়, উঠে যাও, তখন উঠে যাও’ (মুজাদালা ৫৮/১১)

আদী বিন হাতিম তাঈ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করেন, কোন দান বেশী উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় সেবার উদ্দেশ্যে গোলাম দান করা অথবা ছায়ার ব্যবস্থা করার জন্য তাঁবু দান করা কিংবা আল্লাহর রাস্তায় জওয়ান উষ্ট্রী দান করা’।[13]

চ. নিজের পসন্দনীয় বিষয় অন্যের জন্যও পসন্দ করা :

যেকোন কাজ সকলেই আগেভাগে করতে পসন্দ করে। বিশেষভাবে যেখানে জনসমাগম থাকে সেখানে সবাই আগে সুযোগ পেতে চায়। ইজতেমার মত জনসমাবেশে টয়লেট ও গোসলখানায় যেতে ও হাজত পূরণ করতে অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া ছওয়াবের কাজ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيْهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ، ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ প্রকৃত মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পসন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পসন্দ করে’।[14]

(৭) সফরে দো‘আ কবুলের সুযোগ লাভ :

ইজতেমায় আসা, থাকাকালীন এবং যাওয়ার সময় সফররত অবস্থায় আল্লাহর নিকটে বৈধ যেকোন বিষয়ে দো‘আ করলে সে দো‘আ কবুল হওয়ার আশা করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ ‘তিন জনের দো‘আ সন্দেহাতীতভাবে কবুল হয়- (১) মাযলূম বা নির্যাতিত ব্যক্তির দো‘আ (২) মুসাফিরের দো‘আ এবং (৩) ছেলের জন্য পিতার বদদো‘আ’।[15]

(৮) আক্বীদা ও আমল সংশোধন :

বহু আলেমের তথ্যবহুল বক্তব্য শুনে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক আক্বীদা-আমল সংশোধন এবং আখলাক সুন্দর করতে সহায়ক হ’তে পারে তাবলীগী ইজতেমা। সেই সাথে দু’দিন ঈমানী পরিবেশে থাকার মাধ্যমে অন্তরে আল্লাহভীতি জাগ্রত হবে, দুনিয়াবী জাহেলিয়াত, ফিৎনার পরিবেশ থেকে দূরে থাকায় অন্তরটা কোমল হবে। আল্লাহর আনুগত্যে অন্তর্জগত প্রস্তুত হয়ে যাবে। যার নাম আত্মশুদ্ধি। এর সুফল সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا ‘সফলকাম হ’ল সেই ব্যক্তি, যে তার নফসকে পরিশুদ্ধ করল’ (শামস ৯১/৯)। তিনি আরো বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّىٰ ‘সফলকাম হ’ল সেই ব্যক্তি, যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করল’ (আলা ৮৭/১৪)

(৯) দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে নেকী অর্জনের অনুপ্রেরণা লাভ :

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ, হক ও ছবরের উপদেশ দান করার অনুপ্রেরণা লাভে ইজতেমার ভূমিকা অনন্য। যা সারা বছর ধরে দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে নেকীর পাল্লা ভারী করার মাধ্যম হ’তে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

مَنْ دَعَا إِلَى هُدَىً كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أجُوْرِهِمْ شَيئاً وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيهِ مِنَ الإثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيئاً-

‘যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহবান করে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। তবে তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপানো হবে। তবে তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করা হবে না’।[16]

(১০) আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত লাভ :

কুরআন ও হাদীছের আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে অন্তরে ‘সাকীনাহ’ বা বিশেষ প্রশান্তি লাভ হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ يَقْعُدُ قَومٌ يَذْكُرُوْنَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ حَفَّتْهُمُ المَلائِكَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ؛ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ- ‘যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহর যিকিরে রত হয়, তখনই তাদেরকে ফিরিশতাগণ ঢেকে নেন, তাদেরকে রহমত আচ্ছন্ন করে নেয় এবং তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। আর আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফিরিশতাগণের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন’।[17]

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন সম্প্রদায় কোন যিকিরের বৈঠকে (কুরআন-হাদীছের আলোচনা) একত্রিত হয়ে বৈঠক শেষে পৃথক হয়ে যায়, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়- তোমরা চলে যাও, তোমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছ’।[18]

পরিশেষে বলব, তাবলীগী ইজতেমায় নেকী লাভের রয়েছে এক সুবর্ণ সুযোগ। এখানে অংশগ্রহণ করে পরকালীন মুক্তির জন্য সচেষ্ট হওয়া যরূরী। আল্লাহ আমাদের এসব আমলের মাধ্যমে নেকীর পাল্লা ভারী করার তওফীক দান করুন- আমীন!


[1]. আবূদাঊদ হা/৩৬৪৩; তিরমিযী হা/২৬৪৬; ইবনে মাজাহ হা/২২৩।

[2]. আহমাদ হা/১৮৪৭২; ছহীহুল জামে’ হা/৩১০৯; ছহীহাহ হা/৬৬৭

[3]. আহমাদ হা/১১৪; যিলালুল জান্নাহ হা/৮৯৭, সনদ ছহীহ।

[4]. আহমাদ হা/২২০৩০; মুওয়াত্ত্বা হা/১৭৭৯; মিশকাত হা/৫০১১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৩৩১।

[5]. আহমাদ হা/২২০৮০; তিরমিযী হা/২৩৯০; মিশকাত হা/৫০১১, সনদ ছহীহ।

[6]. আহমাদ, বাইহাক্বী, শুআবুল ঈমান, মিশকাত হা/৫০১৪; ছহীহাহ হা/৯৯৮, ১৭২৮; ছহীহুল জামে‘ হা/২০০৯

[7]. মুসলিম হা/২৭৫০; তিরমিযী হা/২৫১৪; ছহীহাহ হা/১৯৪৮।

[8]. বুখারী হা/২৭৯২; মুসলিম হা/১৮৮০; মিশকাত হা/৩৭৯২।

[9]. বুখারী হা/৬২৩৬; মুসলিম হা/৩৯।

[10]. আহমাদ হা/১৪৮৭৭; তিরমিযী হা/১৯৭০; ছহীহ তারগীব হা/২৬৮৪

[11]. বুখারী হা/২৪৪২; মুসলিম হা/২৫৮০; মিশকাত হা/৪৯৫৮।

[12]. নাসাঈ হা/৩৬৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৮৪, সনদ ছহীহ।

[13]তিরমিযী হা/১৬২৬; মিশকাত হা/৩৮২৭, সনদ হাসান।

[14]. বুখারী হা/১৩; মুসলিম হা/৪৫; মিশকাত হা/৪৯৬১।

[15]. আবূদাউদ হা/১৫৩৮; তিরমিযী হা/১৯০৫, হাসান।

[16]. মুসলিম হা/২৬৭৪; মিশকাত হা/১৭৮।

[17]. মুসলিম হা/২৭০০; মিশকাত হা/২২৬১।

[18]. ছহীহুল জামে হা/৫৫০৭; ছহীহাহ হা/২২১০।





আরও
আরও
.