পার্থিব জীবনে বান্দা কখনো কখনো বিভিন্ন প্রকার কষ্টে ভোগে। আবার কখনো কখনো অন্তরে খুব ব্যথা অনুভব করে যা তার ঘুম কেড়ে নেয়, তাকে কষ্ট দেয় এবং তার জন্য অসহ্য দুঃখ বয়ে আনে। সুতরাং অন্তরে প্রাপ্ত এ ব্যথা যদি অতীতের কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে তাকে ‘হুযন’ (حزن) বলা হয়। আর যদি ভবিষ্যতের কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হয়, তবে তাকে ‘হাম্ম’ (هم) বলা হয়। আর যদি বর্তমানের কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে তাকে ‘গাম্ম’ (غم) বলা হয়।
আর অন্তর থেকে এ দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা দূর করা এবং সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হ’ল, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং তার নিকটে পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করা, অবনত হওয়া, বিনীত হওয়া ও তঁার আদেশের অনুগত হওয়া, তঁার ফায়ছালা ও তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনা, তঁাকে চেনা, তঁার নাম ও গুণাবলী জানা, তঁার কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়ন করা, তা গুরুত্ব সহকারে পড়া, অনুধাবন করা ও তদনুযায়ী আমল করা। শুধুমাত্র উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোর মাধ্যমেই অন্তরকে প্রফুল্ল করা ও সুখ অর্জন করা সম্ভব। অন্য কোন উপায়ে সম্ভব নয়।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বেশী চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে যেন বলে,
اللَّهُمَّ إِنِّى عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِى بِيَدِكَ مَاضٍ فِىَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِىَّ قَضَاؤُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَداً مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِى كِتَابِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِى عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِى وَنُورَ صَدْرِى وَجَلاَءَ حُزْنِى وَذَهَابَ هَمِّى،
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা, তোমার বান্দার পুত্র, তোমার বান্দির পুত্র। আমি তোমার হাতের মুঠোয়, আমার অদৃষ্ট তোমার হাতে। তোমার হুকুম আমার ওপর কার্যকর, তোমার আদেশ আমার পক্ষে ন্যায়সঙ্গত। আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার সেসব নামের অসীলায় যাতে তুমি নিজেকে অভিহিত করেছ অথবা তুমি তোমার সৃষ্টির কাউকে তা শিক্ষা দিয়েছ অথবা তুমি তোমার কিতাবে নাযিল করেছ অথবা তুমি তোমার বান্দাদের ওপর ইলহাম করেছ অথবা তুমি গায়বের পর্দায় তা তোমার কাছে অদৃশ্য রেখেছ, তুমি কুরআনকে আমার অন্তরের বসন্তকাল স্বরূপ অতীতের দুশ্চিন্তা ও ভবিষ্যতের অনর্থক আশংকা দূর করার উপায় স্বরূপ বানিয়ে দাও’।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে বান্দা যখনই তা পড়বে আল্লাহ তার চিন্তা-ভাবনা দূর করে দিবেন এবং তার পরিবর্তে মনে নিশ্চিন্ততা (প্রশান্তি) দান করবেন (إِلاَّ أَذْهَبَ اللهُ هَمَّهُ وَحُزْنَهُ وَأَبْدَلَهُ مَكَانَهُ فَرَجاً) ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা কি এ বাক্যগুলো শিখব না? তিনি বলেন, অবশ্যই, যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলো শুনবে তার উচিৎ হ’ল, এ বাক্যগুলো শিখে নেওয়া।[1]
সুতরাং এগুলো হ’ল মহান কিছু বাক্য, যা প্রত্যেক মুসলিমের শিক্ষা করা উচিৎ এবং অতীতের কোন দুশ্চিন্তা বা ভবিষ্যতের কোন আশংকা কিংবা বর্তমানের কোন পেরেশানী যখনই অনুভব করবে তখনই এ বাক্যগুলো বলবে। তার আরো জানা উচিৎ যে, এ বাক্যগুলো শুধুমাত্র তখনি তার জন্য অধিক উপকারী হবে যখন সে তার অর্থ বুঝবে, তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে এবং তদনুযায়ী আমল করবে। পক্ষান্তরে অর্থ বুঝা ছাড়াই এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা ছাড়াই দো‘আ পাঠ করলে বা শারঈ যিকর আযকার করলে তা কম প্রভাব ফেলবে।
আর যখন আমরা এ দো‘আটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করব তখন দেখতে পাব যে, তা মহান চারটি মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত। এ সকল দো‘আ পাঠ করা ও তা বাস্তবায়ন করা ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে কোন ব্যক্তি সুখ অর্জন, দুঃখ-কষ্ট, দুর্দশা, আশংকা দূর করতে সক্ষম নয়।
প্রথম মূলনীতি : একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য ইবাদত করা। তার নিকটে পরিপূর্ণরূপে অবনত হওয়া, বিনীত হওয়া এবং এ কথা স্বীকার করা যে, সে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি। সে নিজে ও তার পিতা-মাতা সবাই আল্লাহ তা‘আলার গোলাম। এজন্য সে বলবে,اللَّهُمَّ إِنِّى عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ، ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা, তোমার বান্দার ছেলে, তোমার বান্দির ছেলে’।
সুতরাং সবাই হ’ল আল্লাহ তা‘আলার গোলাম, দাস। তিনি তাদের স্রষ্টা, প্রতিপালক, প্রভু এবং তাদের পরিচালক। এক মুহূর্তের জন্য যার রহমত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই এবং যিনি ব্যতীত এমন কেউ নেই যার নিকটে তারা আশ্রয় নিবে।
আর তার বাস্তবচিত্র হ’ল- সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা। যেমন তঁার অনুগত হওয়া, বিনীত হওয়া, তঁার নিকটে ফিরে আসা, তঁার আদেশ বাস্তবায়ন করা, নিষেধ থেকে দূরে থাকা, সর্বদা তঁার অভিমুখী হওয়া, তঁার কাছে সাহায্য চাওয়া, শরণাপন্ন হওয়া, তঁার উপর ভরসা করা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভয় ও ভালবাসার দিক থেকে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো সাথে অন্তরকে যুক্ত না করা।
দ্বিতীয় মূলনীতি : আল্লাহ তা‘আলার ফায়ছালা ও তাক্বদীর বা ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস করা। আরো বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ যা চান তা-ই হয়, তিনি যা চান না তা হয় না। আর আল্লাহ তা‘আলার হুকুমকে উল্টিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই এবং তঁার ফায়ছালাকে প্রত্যাখ্যান করার কেউ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,مَا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ، ‘আল্লাহ মানুষের জন্য রহমতের যে দুয়ার খুলে দেন, তা বন্ধ করার কেউ নেই। আর যা তিনি বন্ধ করেন, তা তিনি ব্যতীত খুলে দেওয়ার কেউ নেই। আর তিনিই মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (ফাতির ৩৫/২)।
এজন্য রাসূল (ছাঃ) উক্ত দো‘আর মাঝে বলেছেন, نَاصِيَتِى بِيَدِكَ مَاضٍ فِىَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِىَّ قَضَاؤُكَ، ‘আমার ভাগ্য তোমার হাতের মুঠোয়। তোমার হুকুম আমার ওপর কার্যকর। তোমার আদেশ আমার পক্ষে ন্যায়ানুগ’।
‘নাছিয়াহ’ অর্থ মাথার প্রথমাংশ। তা আল্লাহ তা‘আলার হাতে আছে। তিনি যেভাবে ইচ্ছা তা পরিচালনা করেন, যা ইচ্ছা হুকুম দেন, তঁার হুকুমকে উল্টিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই এবং ফায়ছালাকে প্রত্যাখ্যান করার কেউ নেই।
সুতরাং বান্দার জীবন-মরণ, সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য, সুস্থতা-অসুস্থতা বালা-মুছীবত সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার কর্তৃত্বাধীন। বান্দা এগুলোর মধ্যে হ’তে কোন কিছুরই মালিক নয়।
আর বান্দা যখন জানবে যে, সে নিজে ও সকল মানুষ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতের মুঠোয়, তিনি যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে পরিচালনা করেন তখন সে তাদেরকে ভয় পাবে না, তাদের নিকট আশা করবে না এবং তার আশা-আকাঙ্ক্ষা তাদের সাথে ঝুলিয়ে ও রাখবে না। আর তখন তার তাওহীদ, তাওয়াক্কুল, ইবাদত-বনেদগী ঠিক থাকবে। এজন্য হূদ (আঃ) তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন,إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ، ‘আমি আল্লাহর উপর ভরসা করি, যিনি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক। ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন কোন প্রাণী নেই, যার ঝুঁটি তঁার মুষ্ঠিতে আবদ্ধ নেই (অর্থাৎ সবকিছু তঁার আয়ত্ত্বাধীন)। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সরল পথে আছেন (অর্থাৎ তঁার সকল ব্যবস্থাপনা নিখঁুত)’ (হূদ ১১/৫৬)।
আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণী مَاضٍ فِىَّ حُكْمُكَ অর্থাৎ ‘তোমার হুকুম আমার ওপর কার্যকর’। এ বাক্য দু’টি হুকুমকে অন্তর্ভুক্ত করে। ১. দ্বীনের শারঈ হুকুম ২. কাওনী ক্বাদারী হুকুম। উভয় প্রকার হুকুমই বান্দার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। চাই সে তাতে ইচ্ছুক থাক বা অনিচ্ছুক। তবে ব্যক্তি কাওনী ক্বাদারী হুকুমের লঙ্ঘন করতে পারে না। যদিও দ্বীনী শারঈ হুকুম লঙ্ঘন করতে পারে। আর ব্যক্তি সে লঙ্ঘন অনুযায়ী শাস্তির সম্মুখীন হবে।
আর রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী عَدْلٌ فِىَّ قَضَاؤُكَ অর্থাৎ ‘তোমার আদেশ আমার পক্ষে ন্যায়সঙ্গত’। এ বাক্য সবদিক থেকে বান্দার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আল্লাহর সকল ফায়ছালাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। চাই তা সুস্থতা হোক বা অসুস্থতা, ধনাঢ্যতা বা দরিদ্রতা, আনন্দ বা কষ্ট, জীবন বা মৃত্যু, শাস্তি বা ক্ষমা ইত্যাদি। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা বান্দার উপর যে ফায়ছালাই দেন না কেন তা ন্যায়সঙ্গতভাবেই দেন। আল্লাহ বলেন,مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاءَ فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ ‘যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে, সে তার নিজের জন্যই সেটা করে। আর যে ব্যক্তি অসৎকর্ম করে তার প্রতিফল তার উপরেই বর্তাবে। বস্ত্ততঃ তোমার প্রতিপালক তার বান্দাদের উপর অত্যাচারী নন’ (ফুছছিলাত ৪১/৪৬)।
তৃতীয় মূলনীতি : কিতাব ও সুন্নাহতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর প্রতি ঈমান আনয়ন করা এবং তাঁর নিকটে দো‘আ করার সময় সেগুলোকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করা। যেমন আল্লাহ বলেন,وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ، ‘আর আল্লাহর জন্য সুন্দর নামসমূহ রয়েছে। সেসব নামেই তোমরা তঁাকে ডাক এবং তঁার নামসমূহে যারা বিকৃতি ঘটিয়েছে তাদেরকে তোমরা পরিত্যাগ কর। সত্বর তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফলাফল প্রদান করা হবে’ (আ‘রাফ ৭/১৮০)। তিনি আরো বলেন,قُلِ ادْعُوا اللهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى، ‘বল, তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ’ নামে ডাক বা ‘রহমান’ নামে ডাক, যে নামেই ডাক না কেন, সকল সুন্দর নাম তো কেবল তঁারই জন্য’ (ইসরা ১৭/১১০)।
বান্দা যখন আল্লাহ তা‘আলা, তঁার নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে পরিপূর্ণরূপে জ্ঞাত থাকবে তখন তার আল্লাহভীতি আরো বৃদ্ধি পাবে এবং পাপ ও যে কাজে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন সে কাজের সাথে তার সম্পর্ক দূরবর্তী হ’তে থাকবে। যেমন সালাফগণ বলেন, مَنْ كَانَ بِاللهِ أَعْرَفْ كَانَ مِنْهُ أَخْوَفْ ‘যে আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে অধিক জানবে সে আল্লাহকে অধিক ভয় করবে’।[2] এজন্য দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা- আশংকা দূর করার সর্বোত্তম মাধ্যম হ’ল আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে জানা। আল্লাহ তা‘আলাকে জানার মাধ্যমে অন্তরে আবাদ করা এবং তঁার নাম ও গুণাবলী দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট ওয়াসীলা করা। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَداً مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِى كِتَابِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِى عِلْمِ الْغَيْبِ، অর্থাৎ ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার সেসব নামের অসীলায় যাতে তুমি নিজেকে অভিহিত করেছ অথবা তুমি তোমার সৃষ্টির কাউকেও তা শিক্ষা দিয়েছ অথবা তুমি তোমার কিতাবে নাযিল করেছ অথবা তুমি তোমার বান্দাদের উপর ইলহাম করেছ অথবা তুমি গায়েবের পর্দায় তা তোমার কাছে অদৃশ্য রেখেছ’। এটি হ’ল আল্লাহ তা‘আলার সকল নাম দিয়ে তঁার নিকটে অসীলা। আর এ প্রকার অসীলা আল্লাহ তা‘আলার নিকটে সর্বাধিক পসন্দনীয় অসীলা।
চতুর্থ মূলনীতি : কুরআনুল কারীমের প্রতি গুরুত্বারোপ করা, যা আল্লাহ তা‘আলার বাণী। যাতে কোন বাতিলের সংমিশ্রণ ঘটেনি এবং যা পথপ্রদর্শক, আরোগ্যদাতা, উম্মতের জন্য যথেষ্ট। আর বান্দা যখন তেলাওয়াত করা, মুখস্থ করা, মুযাকারা ও অনুধাবন করা, আমল করা ও বিধিবিধান পালন করার দিক থেকে কুরআনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে তখন সে সুখ, নিশ্চিন্ততা ও অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করবে এবং তার থেকে অতীতের দুশ্চিন্তা, বর্তমানের পেরেশানী ও ভবিষ্যতের আশংকা দূর হয়ে যাবে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) এ দো‘আয় বলেছেন,
أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِى وَنُورَ صَدْرِى وَجَلاَءَ حُزْنِى وَذَهَابَ هَمِّى، অর্থাৎ ‘তুমি কুরআনকে আমার অন্তরের বসন্তকাল ও আমার বক্ষের আলো স্বরূপ বানিয়ে দাও। আর অতীতের দুশ্চিন্তা ও ভবিষ্যতের অনর্থক আশংকা দূর করার উপায় স্বরূপ বানিয়ে দাও’।
এ হ’ল চিন্তামুক্তির দো‘আ থেকে প্রাপ্ত চারটি মহান মূলনীতি। আমাদের উচিৎ সেগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা ও তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। যাতে করে আমরা প্রতিশ্রুত মহামূল্যবান জিনিসটি অর্জন করতে পারি। আর সে সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِلاَّ أَذْهَبَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ هَمَّهُ وَأَبْدَلَهُ مَكَانَ حُزْنِهِ فَرَحاً، ‘যে বান্দা যখনই তা পড়বে আল্লাহ তার অতীতের দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন এবং তার পরিবর্তে মনে নিশ্চিন্ততা (প্রশান্তি) দান করবেন। আমরা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছেই সাহায্য ও তাওফীক চাই।
মূল : শায়খ আব্দুর রায্যাক বিন আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ
অনুবাদ : মাহফূযুর রহমান
শিক্ষার্থী, দাসেরকান্দি দারুস সুন্নাহ আলিম মাদরাসা, খিলগাঁও, ঢাকা।
[1]. আহমাদ হা/৩৭১২; মিশকাত হা/২৪৫২; ছহীহাহ হা/১৯৯।
[2]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ২/২৩০।