মানুষের
মুখের কথা একটি গুরুত্বপূর্ণ নে‘মত। সঠিকভাবে এ নে‘মতের ব্যবহার করা
যরূরী। অন্যথা এটা মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। কেননা মানুষের মুখে
উচ্চারিত প্রতিটি কথা মহান আল্লাহর দরবারে সংরক্ষিত হয়। আল্লাহ বলেন, مَا
يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ، ‘সে যে কথাই
উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী রয়েছে’ (ক্বাফ ৫০/১৮)।
সুতরাং জিহবা নিয়ন্ত্রণ করা ও সংযত কথাবার্তা বলা মানুষের জন্য অবশ্য
করণীয়। কেননা এ জিহবাই মানুষকে ক্ষতির মধ্যে নিপতিত করে। পক্ষান্তরে
জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পরকালে নাজাত পাওয়া ও জান্নাতে যাওয়া সম্ভব
হবে। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, সুফিয়ান ইবনু আবদুল্লাহ আছ-ছাক্বাফী (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম,يَا رَسُولَ اللهِ مَا أَخْوَفُ مَا
تَخَافُ عَلَىَّ، فَأَخَذَ بِلِسَانِ نَفْسِهِ ثُمَّ قَالَ هَذَا- ‘হে
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনার দৃষ্টিতে আমার জন্য সর্বাধিক ভীতিকর বস্ত্ত
কোনটি? তিনি স্বীয় জিহবা ধরে বললেন, এটি’।[1]
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) আরো বলেন,مَنْ يَضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ
رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দুই
চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্ত্ত ও তার দু’পায়ের মধ্যস্থিত বস্ত্তর যিম্মাদার হবে,
আমি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হব’।[2] অন্যত্র তিনি বলেন,اِضْمَنُوْا
لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ، أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ، اُصْدُقُوْا
إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا إِذَا
ائْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ،
وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ. ‘তোমরা নিজেদের পক্ষ হ’তে আমার জন্য ছয়টি বিষয়ের
যামিন হও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব। (১) যখন তোমরা কথা বলবে,
তখন সত্য বলবে। (২) যখন ওয়াদা করবে, তা পূর্ণ করবে। (৩) তোমাদের কাছে আমানত
রাখলে, তা আদায় করবে। (৪) নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে। (৫) স্বীয়
দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং (৬) স্বীয় হস্তকে (অন্যায় কাজ হ’তে) বিরত
রাখবে’।[3]
জিহবা মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আর শরীরের অন্যান্য অঙ্গ জিহবার অনুগামী হয়। যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ رَفَعَهُ قَالَ إِذَا أَصْبَحَ ابْنُ آدَمَ فَإِنَّ الأَعْضَاءَ كُلَّهَا تُكَفِّرُ اللِّسَانَ فَتَقُولُ اتَّقِ اللهَ فِينَا فَإِنَّمَا نَحْنُ
بِكَ فَإِنِ اسْتَقَمْتَ اسْتَقَمْنَا وَإِنِ اعْوَجَجْتَ اعْوَجَجْنَا.
আবূ
সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হ’তে মারফূ‘ হিসাবে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘মানুষ সকালে ঘুম হ’তে উঠার সময় তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
বিনীতভাবে জিহবাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। আমরা
তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক তাহ’লে আমরাও দৃঢ় থাকতে
পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহ’লে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য’।[4]
কথা বলার আদব :
কথা বলার অনেক আদব বা শিষ্টাচার রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লিখিত হ’ল।-
১. নম্র্ভাবে কথা বলা : নম্র্ভাবে কথা বলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُوْنَ قَالُوْا سَلَامًا ‘রহমান’ (দয়াময়)-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ লোকেরা (বাজে) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে ‘সালাম’ (ফুরক্বান ২৫/৬৩)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ ‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর। নিশ্চয়ই সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হ’ল গাধার আওয়াজ’ (লোকমান ৩১/১৯)।
২. সত্য কথা বলা : রাসূল (ছাঃ) বলেন,عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّهُ مَعَ الْبِرِّ وَهُمَا فِى الْجَنَّةِ وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّهُ مَعَ الْفُجُوْرِ وَهُمَا فِى النَّارِ ‘তোমরা সত্য গ্রহণ কর। সত্য নেকীর সাথে রয়েছে। আর উভয়টি জান্নাতে যাবে। আর মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। মিথ্যা পাপের সাথে রয়েছে। উভয়ই জাহান্নামে যাবে’।[5] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِيْ إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيْقًا وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِيْ إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِيْ إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا-
‘তোমাদের
উপরে আবশ্যিক হ’ল সত্য কথা বলা। কেননা সততা কল্যাণের পথ দেখায় এবং কল্যাণ
জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে আল্লাহর
খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। আর তোমরা মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাক।
কেননা মিথ্যা পাপের দিকে পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। যে
ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে আল্লাহর
খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়’।[6]
৩. উত্তম কথা বলা : উত্তম
কথা বলতে হবে নতুবা চুপ থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَمَنْ كَانَ
يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা
চুপ থাকে’।[7]
৪. ধীর-স্থিরভাবে স্পষ্ট করে কথা বলা : ধীরে-সুস্থে কথা বলতে হবে, যাতে সবার বোধগম্য হয়। হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُحَدِّثُ حَدِيثًا لَوْ عَدَّهُ الْعَادُّ لأَحْصَاهُ- ‘নবী করীম (ছাঃ) এমনভাবে কথা বলতেন যে, কোন গণনাকারী গুণতে চাইলে তাঁর কথাগুলি গণনা করতে পারত’।[8] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন,
أَلاَ يُعْجِبُكَ أَبُو فُلاَنٍ جَاءَ فَجَلَسَ إِلَى جَانِبِ حُجْرَتِى يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يُسْمِعُنِى ذَلِكَ وَكُنْتُ أُسَبِّحُ فَقَامَ قَبْلَ أَنْ أَقْضِىَ سُبْحَتِى، وَلَوْ أَدْرَكْتُهُ لَرَدَدْتُ عَلَيْهِ، إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَكُنْ يَسْرُدُ الْحَدِيْثَ كَسَرْدِكُمْ.
‘তুমি অমুকের অবস্থা দেখে কি অবাক হও না? তিনি এসে
আমার হুজুরার পাশে বসে আমাকে শুনিয়ে হাদীছ বর্ণনা করেন। আমি তখন ছালাতে
ছিলাম। আমার ছালাত শেষ হবার আগেই তিনি উঠে চলে যান। যদি আমি তাকে পেতাম তবে
আমি অবশ্যই তাকে সতর্ক করে দিতাম যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তোমাদের মত
দ্রুততার সঙ্গে কথা বলতেন না’।[9]
৫. কথা ও কাজে মিল থাকা যরূরী : মুমিনের কথা ও কাজে মিল থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা কর না’ (ছফ ৬১/২)।
মহিলাদের জন্য কথা বলার বিশেষ আদব :
মহিলাদের জন্য পর-পুরুষের সাথে কথা বলার ব্যাপারে ভিন্ন আদব রয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا- ‘হে নবীপত্নিগণ! তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বল না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে’ (আহযাব ৩৩/৩২)।
কোন কোন মানুষের কথায় আকর্ষণ রয়েছে :
মহান আল্লাহ কোন কোন মানুষের মধ্যে এমন শক্তি দিয়েছেন যে, তারা কথা বললে, মানুষ তা মোহমুগ্ধ হয়ে শোনে। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما أَنَّهُ قَدِمَ رَجُلاَنِ مِنَ الْمَشْرِقِ، فَخَطَبَا، فَعَجِبَ النَّاسُ لِبَيَانِهِمَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنَ الْبَيَانِ لَسِحْرًا أَوْ إِنَّ بَعْضَ الْبَيَانِ لَسِحْرٌ.
আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার পূর্ব অঞ্চল (নজদ এলাকা) থেকে দু’জন লোক এল এবং
দু’জনই ভাষণ দিল। লোকজন তাদের ভাষণে বিস্মিত হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বললেন, ‘কোন কোন ভাষণ অবশ্যই যাদুর মত’।[10]
মিথ্যা বলার পরিণতি :
মিথ্যা বলার পরিণতি সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيْمٍ قَالَ حَدَّثَنِى أَبِى عَنْ أَبِيْهِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ وَيْلٌ لِلَّذِى يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ-
বাহয
ইবনু হাকীম (রহঃ) তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে, তার দাদা বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘সেই লোক ধ্বংস হোক যে মানুষদের
হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে। সে নিপাত যাক, সে নিপাত যাক’।[11]
সত্য বলার ফযীলত :
সততা
ও সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। এর জন্য পরকালে মহা পুরস্কার রয়েছে। নবী করীম
(ছাঃ) বলেন, أَنَا زَعِيْمٌ بِبَيْتٍ فِىْ رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ
الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا وَبِبَيْتٍ فِىْ وَسَطِ الْجَنَّةِ
لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِىْ أَعْلَى
الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ. ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি
ঘর নিয়ে দেয়ার জন্য যিম্মাদার, যে তর্ক পরিহার করে সত্য হ’লেও। আর একটি ঘর
জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দেয়ার জন্য যিম্মাদার, যে মিথ্যা পরিহার করে
ঠাট্টা করে হ’লেও এবং আরও একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে দেয়ার
জন্য যিম্মাদার, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করবে’।[12]
সত্য
বললে আল্লাহ ও রাসূলের ভালবাসা লাভ করা যায়। আব্দুর রহমান ইবনু হারিছ
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমরা একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে ছিলাম।
তিনি ওযূর পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি তাতে হাত ডুবালেন এবং ওযূ করলেন। আমরা
তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাঁর নিকট হ’তে অঞ্জলী ভরে ওযূর পানি নিলাম। তিনি
বললেন, তোমরা এ কাজ করতে উৎসাহিত হ’লে কেন? আমরা বললাম, এটা হ’ল আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলের ভালবাসা। তিনি আরো বললেন,فَإِنْ أَحْبَبْتُمْ أَنْ
يُحِبَّكُمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُوْلَهُ، فَأَدُّوْا إِذَا
ائْتُمِنْتُمْ، وَاصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَحْسِنُوْا جِوَارَ
مَنْ جَاوَرَكُمْ ‘তোমরা যদি চাও যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদেরকে
ভালবাসবেন তাহ’লে তোমাদের নিকট আমানত রাখা হ’লে, তা প্রদান করবে এবং কথা
বললে, সত্য বলবে। আর তোমাদের প্রতিবেশীর সাথে ভাল আচরণ কর’।[13]
বেশী কথা বলার পরিণতি :
প্রয়োজনের
অতিরিক্ত কথা বললে বেশী ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ভুল মানুষের জন্য মন্দ
পরিণতি ডেকে আনতে পারে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الْعَبْدَ
لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ لاَ يُلْقِى لَهَا
بَالاً، يَرْفَعُ اللهُ بِهَا دَرَجَاتٍ، وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ
بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ لاَ يُلْقِى لَهَا بَالاً يَهْوِى بِهَا
فِى جَهَنَّمَ. ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনও আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কথা বলে অথচ
সে কথা সম্পর্কে তার জ্ঞান নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা
বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে যার
পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত
হবে’।[14]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,إِنَّ
الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ يَنْزِلُ بِهَا فِى النَّارِ
أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ ‘বান্দা এমন কথা বলে, যার
ফলে সে জাহান্নামের এত দূরে নিক্ষিপ্ত হয় যা পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের
মধ্যস্থিত ব্যবধানের চেয়ে অধিক’।[15]
অনর্থক কথা বলা নিষিদ্ধ :
অপ্রয়োজনে অধিক কথা বলা বা বাচালতা পরিহার করা মুমিনের জন্য যরূরী। কেননা এটা আল্লাহর অসন্তোষের কারণ।
রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الأُمَّهَاتِ،
وَوَأْدَ الْبَنَاتِ، وَمَنعَ وَهَاتٍ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ،
وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ- ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর
মাতাদের অবাধ্যতা, কন্যাদের জীবন্ত প্রোথিতকরণ, কৃপণতা ও ভিক্ষাবৃত্তি
হারাম করেছেন। আর তোমাদের জন্য বৃথা তর্ক-বিতর্ক, অধিক জিজ্ঞাসাবাদ ও সম্পদ
বিনষ্টকরণ মাকরূহ করেছেন’।[16] অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ اللهَ يَرْضَى
لَكُمْ ثَلاَثاً وَيَسْخَطُ لَكُمْ ثَلاَثاً يَرْضَى لَكُمْ أَنْ
تَعْبُدُوْهُ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئاً وَأَنْ تَعْتَصِمُوْا
بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعاً وَلاَ تَفَرَّقُوْا وَأَنْ تُنَاصِحُوْا مَنْ
وَلاَّهُ اللهُ أَمْرَكُمْ وَيَسْخَطُ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةُ
الْمَالِ وَكَثْرَةُ السُّؤَالِ. ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের তিনটি
কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। যে তিনটি কাজে তিনি
সন্তুষ্ট হন তা হল- (১) যখন তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে
বিন্দুমাত্র শরীক করো না। (২) আল্লাহর বিধানকে সম্মিলিতভাবে দৃঢ়তার সাথে
অাঁকড়ে ধর আর বিচ্ছিন্ন হও না এবং (৩) আল্লাহ যাকে তোমাদের কাজের নেতা
হিসাবে নির্বাচন করেন, তার জন্য তোমরা পরস্পরে কল্যাণ কামনা কর। আর তোমাদের
প্রতি অসন্তুষ্ট হন যে তিনটি কাজে তা হচ্ছে- (১) অপ্রয়োজনীয় কথা বললে (২)
সম্পদ নষ্ট করলে এবং (৩) অনর্থক বেশী প্রশ্ন করলে।[17]
পরিশেষে বলব, কথা মার্জিত, নম্র ও নিম্নস্বরে বলার চেষ্টা করতে হবে। সাথে সাথে অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা পরিত্যাগ করতে হবে। আর যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে এমন কথা বলতে হবে এবং যাতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে তা ত্যাগ করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. তিরমিযী হা/২৪১০; মিশকাত হা/৪৮৪৩, সনদ ছহীহ।
[2]. বুখারী, হা/৬৪৭৪; মিশকাত হা/৪৮১২।
[3]. আহমাদ, মিশকাত হা/৪৮৭০; ছহীহাহ হা/১৪৭০, সনদ হাসান।
[4]. তিরমিযী হা/২৪০৭; মিশকাত হা/৪৮৩৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫১, সনদ হাসান।
[5]. ইবনু হিববান, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮৬।
[6]. বুখারী, মুসলিম হা/২৬০৭; মিশকাত হা/৪৬২৪।
[7]. বুখারী হা/৬০১৮-১৯; মুসলিম হা/৪৭-৪৮; মিশকাত হা/৪২৪৩।
[8]. বুখারী হা/৩৫৬৭; মুসলিম হা/২৪৯৩; মিশকাত হা/৫৮১৫।
[9]. বুখারী হা/৩৫৬৮; মুসলিম হা/২৪৯৩; মিশকাত হা/৫৮১৫।
[10]. বুখারী হা/৫৭৬৭; মিশকাত হা/৪৭৮৩।
[11]. আবুদাউদ হা/৪৯৯০; তিরমিযী হা/২৩১৫; মিশকাত হা/৪৮৩৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭১৩৬, সনদ হাসান।
[12]. আবুদাঊদ হা/৪৮০০; বায়াহাক্বী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৭৯।
[13]. ত্বাবারাণী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮০।
[14]. বুখারী হা/৬৪৭৮; মুসলিম হা/২৪৯৩; মিশকাত হা/৫৮১৫।
[15]. মুসলিম হা/২৯৮৮।
[16]. বুখারী হা/১৪৭৭, ৫৯৭৫; মুসলিম হা/৫৯৩; মিশকাত হা/৪৯১৫।
[17]. আহমাদ হা/৮৭৮৫; ইবনু হিববান হা/৩৩৮৮।