রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠের শরী‘আত অনুমোদিত সময় :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে কোন মুসলিম ব্যক্তি দিনে বা রাতে যে কোন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতে পারে। এর ফলে সে প্রভূত কল্যাণ লাভ করবে ও অনেক অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকবে, যা আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। তবে ইসলামী শরী‘আত কিছু কিছু সময় বা স্থানে দরূদ পাঠ করাকে নির্ধারণ করে দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থান নিম্নরূপ :
এক. ছালাতের মধ্যে
রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠের অন্যতম সময় হ’ল ছালাতের মধ্যে। ছালাত অবস্থায় নিমেণাক্ত স্থানে দরূদ ও ছালাত পাঠ করতে হয়-
(১) তাশাহহুদের সময় :
প্রত্যেক মুছল্লী তাশাহহুদের মধ্যে নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রতি সালাম প্রদান করবে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, যখন আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছালাতে থাকতাম, তখন আমরা বলতাম, বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আল্লাহর প্রতি সালাম তোমরা এরূপ বল না। কারণ আললাহ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল,
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ
‘যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। তোমরা যখন তা বলবে আসমান বা আসমান যমীনের মধ্যে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার নিকট তা পেঁŠছে যাবে। (অতঃপর বলবে)-
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।[1]
(২) প্রত্যেক ছালাতের তাশাহহুদের পরে :
প্রত্যেক ছালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরূদ পড়তে হয়। নবী করীম (ছাঃ) নিজের উপর তাশাহহুদ ও তাশাহহুদের পরে দরূদ পাঠ করতেন এবং উম্মতদেরকে পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন।[2] ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর মতে তাশাহহুদের পর দরূদ পড়া ওয়াজিব। আর ইমাম আবু হানীফা ও মালেক (রহঃ)-এর মতে সুন্নাত।[3] ফুযালাহ বিন ওবায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তির ছালাত আদায় করার সময় শুনলেন যে, সে দো‘আ করল বটে কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা করল না ও নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রতি ছালাত (দরূদ) পাঠ করল না। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, লোকটি তাড়াতাড়ি করছে। তারপর তিনি তাকে ডেকে বললেন,
إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِتَمْحِيْدِ رَبِّهِ وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ يَدْعُوْ بِمَا شَاءَ-
‘যখন তোমাদের কেউ ছালাত আদায় করবে তখন সে
প্রথমে আল্লাহর হাম্দ ও গুণগান পাঠ করবে, তারপর নবী করীম (ছাঃ)-এর উপরে
সালাম (দরূদ) পাঠ করবে, তারপর স্বীয় পসন্দমত দো‘আ পাঠ করবে’।[4]
(৩) বিতর ছালাতের দো‘আ :
হাসান বিন আলী (রাঃ) বলেন, বিতরের কুনূতে বলার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে নিমেণাক্ত দো‘আ শিখিয়েছেন,
اَللّهُمَّ اهدنىْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِىْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِىْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِىْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِىْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِىْ وَلَا يُقْضى عَلَيْك وَإِنَّه لَا يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ، وصلّى الله على النبى-
‘হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও। যাদেরকে তুমি মাফ করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে মাফ করে দাও। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও। তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তুমি যে ফায়ছালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হ’তে আমাকে বাঁচাও। কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হয় না। আর তুমি যার সাথে দুশমনী কর, সে কোনদিন সম্মানিত হ’তে পারে না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ। আল্লাহ তাঁর নবীর
উপরে রহমত বর্ষণ করুন’।[5]
(৪) জানাযার ছালাতে :
জানাযার ছালাতের দ্বিতীয় তাকবীরের পরে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে। যেমন হাদীছে এসেছে,
السُّنَّةُ فِي الصَّلَاةِ عَلَى الْجِنَازَةِ أَنْ يُكَبِّرَ الْإِمَامُ ثُمَّ يَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ بَعْدَ التَّكْبِيرَةِ الْأُولَى سِرًّا فِي نَفْسِهِ ثُمَّ يُصَلِّيَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-
জনৈক ছাহাবী বলেন, ‘জানাযা ছালাতের সুন্নাতী পদ্ধতি হ’ল,
ইমাম তাকবীর দিবে অতঃপর মনে মনে প্রথম তাকবীরের পরে সূরা ফাতেহা পাঠ করবে।
অতঃপর নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর ছালাত (দরূদ) পাঠ করবে।[6]
দুই. খুৎবা বা বক্তৃতায় :
জুম‘আর
খুৎবাসহ অন্যান্য খুৎবায় আল্লাহ রাববুল আলামীনের প্রশংসার সাথে সাথে নবী
করীম (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতে হবে। জুম‘আর খুৎবা প্রসঙ্গে ইমাম শাফেঈ
(রহঃ) বলেন, খুৎবায় হাম্দ, দরূদ ও নছীহত থাকা ওয়াজিব।[7]
তিন. আযানের পরে :
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন ‘আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِذَا سَمِعْتُمِ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّه مَنْ صَلّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِي الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي اِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِي الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ-
‘যখন তোমরা আযান দিতে শুন তখন তার পুনরাবৃত্তি কর যা
মুওয়াযযিন বলে। তারপর আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর। কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর
একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার
জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হ’ল জান্নাতের
সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্য হ’তে শুধুমাত্র একজন
লাভ কর পারবে। আর আমার আশা যে আমিই হব সেই ব্যক্তি। তাই যে ব্যক্তি আমার
জন্য ‘ওয়াসীলার দো‘আ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য
ওয়াজিব হয়ে পড়বে’।[8]
চার. দো‘আর সময় :
রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করা দো‘আ কবুলের পূর্বশর্ত। ফাযালাহ ইবনে উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে ছালাতে দো‘আ করতে শুনলেন। কিন্তু সে দো‘আয় আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী (ছাঃ)-এর উপর দরূদও পাঠ করেনি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এই ব্যক্তি তাড়াহুড়া করেছে। তারপর তাকে ডাকলেন এবং বললেন বা অন্য কাউকে বললেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ছালাত আদায় করে, তার পাক-পবিত্র প্রভুর হাম্দ ও ছানা দিয়েই তার শুরু করা উচিৎ। এরপর নবীর উপর দরূদ পড়া উচিৎ, তারপর নিজের ইচ্ছা মতো দো‘আ করা’।[9] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত অন্য হাদীছে এসেছে,
كُلُّ دُعَاءٍ مَحْجُوبٌ حَتَّى يُصَلِّيَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-
‘নবী (ছাঃ) ও তার পরিবারবর্গের প্রতি দরূদ পেশ করা না হ’লে সমস্ত দো‘আ কবুল হওয়া থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে’।[10]
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ لاَ يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ صلى الله عليه وسلم
‘আসমান ও
যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে দো‘আ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, তোমার রাসূল (ছাঃ)-এর
প্রতি যতক্ষণ তুমি দরূদ পাঠ না কর ততক্ষণ তার কিছুই উপরে ওঠে না’।[11]
পাঁচ. মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় :
আবু হুমাইদ আস-সায়েদী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ لْيَقُلِ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ. وَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
‘যখন
তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ
পাঠ করে অতঃপর যেন বলে, اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِك ‘হে
আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দ্বার সমূহ খুলে দাও’। আর বের হওয়ার
সময় যেন বলে, اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ ‘হে আল্লাহ! আমি
তোমার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি’।[12]
ছয়. রাসূল (ছাঃ)-এর নাম উচ্চারিত হলে :
কথা বলা ও লেখার সময় যখন রাসূল (ছাঃ)-এর নাম আসবে তখনই দরূদ পাঠ করতে হবে। সাথে সাথে যারা রাসূল (ছাঃ)-এর নাম শুনবেন তারাও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلْيُصَلِّ عَلَيَّ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ مَرَّةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرًا-
‘যার নিকটে আমার নাম উচ্চারিত হবে তার উচিত আমার প্রতি দরূদ পাঠ করা। কেননা যে আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত বর্ষণ করবেন’।[13] অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
الْبَخِيْلُ الَّذِي مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَه فَلَمْ يُصَلِّ عَلَـيَّ
‘সেই হচ্ছে কৃপণ, যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে অথচ সে আমার উপর দরূদ পড়েনি’।[14]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) মিম্বারে উঠলেন এবং তিনবার আমীন বললেন। আমীন বলার একটি কারণ হ’ল (ফেরেশতা বলছেন)-
مَنْ ذُكِرْت عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ فَمَاتَ فَدَخَلَ النَّارَ فَأَبْعَدَهُ اللهُ، قُلْ آمِينَ، فَقُلْتُ: آمِيْنَ-
‘যার
নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হ’ল অথচ সে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করল না;
এমতাবস্থায় সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে (স্বীয়
রহমত হ’তে) দূরে সরিয়ে দিবেন। (তারপর বলা হল) আপনি আমীন বলুন। (রাসূল
বললেন) অতঃপর আমি আমীন বললাম’।[15]
সাত. জুম‘আর দিনে :
আওস ইবন আওস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ قُبِضَ وَفِيهِ النَّفْخَةُ وَفِيهِ الصَّعْقَةُ فَأَكْثِرُوا عَلَىَّ مِنَ الصَّلاَةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَىَّ قَالَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ تُعْرَضُ صَلاَتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ يَقُولُونَ بَلِيتَ . فَقَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الأَرْضِ أَجْسَادَ الأَنْبِيَاءِ-
‘তোমাদের
দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দিনটি হচ্ছে জুম‘আর দিন। এই দিনে আদম (আঃ)-কে
সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনই তাঁর রূহ কবয করা হয়েছিল, এই দিন শিংগায় ফুৎকার
দেয়া হবে এবং এই দিনই বিকট শব্দ করা হবে। কাজেই এই দিন তোমরা আমার ওপর
বেশী করে দরূদ পড়। কারণ তোমাদের দরূদগুলো আমার কাছে পেশ করা হয়। আওস ইবন
আওস (রাঃ) বলেন, লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কিভাবে আমাদের
দরূদগুলি পেশ করা হবে যখন আপনার শরীর তো জরাজীর্ণ হয়ে মিশে যাবে। রাসূল
(ছাঃ) বললেন, মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ মাটির জন্য নবী-রাসূলগণের দেহকে
হারাম করে দিয়েছেন’।[16]
আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
أكثِروا الصَّلاةَ عليَّ يومَ الجمُعةِ وليلةَ الجمُعةِ، فمَن صلَّى عليَّ صلاةً صلَّى اللهُ عليهِ عَشرًا
‘তোমরা
জুম‘আর দিনে ও জুম‘আর রাতে আমার প্রতি বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর। কারণ যে
আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন’।[17]
আট. ছাফা ও মারওয়ায় :
হজ্জ ও ওমরাহ সম্পাদন কালে ছাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করার সময় ছাফা ও মারওয়ার উপরে উঠে দরূদ পাঠ করার প্রমাণ রয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,
إِذَا قَدِمْتُمْ فَطُوفُوا بِالْبَيْتِ سَبْعًا، وَصَلُّوا عِنْدَ الْمَقَامِ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ ائْتُوا الصَّفَا، فَقُومُوا مِنْ حَيْثُ تَرَوْنَ الْبَيْتَ، فَكَبِّرُوا سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ بَيْنَ كُلِّ تَكْبِيرَتَيْنِ حَمْدٌ لِلَّهِ، وَثَنَاءٌ عَلَيْهِ، وَصَلَاةٌ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَسْأَلَةٌ لِنَفْسِكَ، وَعَلَى الْمَرْوَةِ مِثْلُ ذَلِكَ
‘যখন তোমরা (মক্কায়) আগমন করবে তখন সাতবার কা‘বাঘর
তাওয়াফ করবে। অতঃপর মাকামে ইবরাহীমের নিকট দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে।
অতঃপর ছাফার নিকটে আসবে এবং এমন জায়গায় দাঁড়াবে যেখান থেকে কাবাঘর দেখা
যায়। অতঃপর সাতটি তাকবীর দিবে। তাকবীরের মাঝে মাঝে আল্লাহর প্রশংসা ও
গুণকীর্তন করবে এবং নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে এবং নিজের জন্য যা
ইচ্ছা চাইবে। তারপর মারওয়ায়ও এরূপ করবে।[18]
নয়. যে কোন মজলিসে :
যে কোন ইসলামী মজলিসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ যরূরী। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللهَ فِيهِ وَلَمْ يُصَلُّوا عَلَى نَبِيِّهِمْ إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةً فَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ
‘যে সমস্ত লোক কোন মজলিসে
বসেছে অথচ তারা আল্লাহ তা‘আলার যিকির করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদও পাঠ
করেনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তাদেরকে শাস্তিও
দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন।[19] আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মজলিসে আল্লাহ্কে স্মরণ করা ও নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব’।[20]
দশ. রাসূল (ছাঃ)-এর কবরের সামনে :
আবদুল্লাহ ইবনে দীনার (রহঃ) বলেন,
رَأَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ يَقِفُ عَلَى قَبْرِ النَّبِيِّ وَيُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا
‘আমি আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর উপর দরূদ পাঠ করতে দেখেছি। তারপর আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর কবরেও এরূপ করেছেন’।[21] অন্য বর্ণনায় আছে,
رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ إِذَا قَدِمَ مِنَ سَفَرٍ دَخَلَ الْمَسْجِدَ، فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، السَّلَامُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ، السَّلَامُ عَلَى أَبِي، ويُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ-
আমি ইবনে ওমরকে
দেখেছি যখন তিনি সফর থেকে ফিরে আসতেন তখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং
বলতেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি সালাম বর্ষিত হেŠক। আবু বকরের প্রতি
সালাম, আমার পিতার প্রতি সালাম। অতঃপর তিনি দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন’।[22]
[চলবে]
[1]. বুখারী হা/৮৩৫, ১২০২; মুসলিম হা/৪০২; তিরমিযী হা/২৮৯; নাসাঈ হা/১২৫২; আবূদাঊদ হা/৯৬৮; ইবনে মাজাহ হা/৮৯৯।
[2]. আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাঃ), ‘দরূদ পাঠ’ অধ্যায়।
[3]. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান বিন ছালেহ আল-বাসসাম, তায়সীরুল আল্লাম শরহে উমদাতিল আহকাম (কুয়েত : জামইয়াতু ইহইয়াইত তুরাছ আল-ইসলামী, ১৯৯৪ খৃঃ/১৪১৪ হিঃ) ১/২৬৮।
[4]. আবূদাঊদ হা/১৪১৮; তিরমিযী হা/৩৪৭৬; নাসাঈ হা/১২৮৪।
[5]. আবূদাঊদ হা/১৪২৫; তিরমিযী হা/৪৬৪; নাসাঈ হা/১৭৪৫; ইবনু মাজাহ হা/১১৭৮; মিশকাত হা/১২৭৩।
[6]. ইমাম শাফেঈ কিতাবুল উম্ম ১/২৩৯-২৪০; বায়হাকী ৪/৩৯; গৃহীত : আহকামুল জানায়েয, পৃঃ ১৫৫।
[7]. ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ১৯৬।
[8]. মুসলিম হা/৩৮৪; আবূদাঊদ হা/৫২৩; নাসাঈ হা/৬৭৮; তিরমিযী হা/৩৬১৪; মিশকাত হা/৬৫৭, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১০৩৭।
[9]. আবূদাঊদ হা/১৪৮১; তিরমিযী হা/৩৪৭৫; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৪০৪।
[10]. তাবারানী, আল-মু‘জামুল আওসাত হা/৭২১; আলবানী: ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫২৩; সিলসিলা ছহীহা হা/২০৩৫; ছহীহ তারগীব হা/১৬৭৫।
[11]. তিরমিযী হা/৪৮৬; সিলসিলা সহীহা হা/২০৫৩।
[12]. মুসলিম হা/৭১৩; নাসাঈ হা/৭২৯; আবূদাঊদ হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৭৭২, আলবানী হাদীছটি ছহীহ বলেছেন।
[13]. মুসনাদে তায়ালিসী হা/২২৩৬; ছহীহ তারগীর হা/১৬৫৭; আলবানী: ছহীহুল জামে‘ হা/৬২৪৬; তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত ৫/১৬২; ৩/১৫৩।
[14]. তিরমিযী হা/৩৫৪৬; আহমাদ হা/১৭৩৫; মিশকাত হা/৯৩৩; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৪০৩।
[15]. ছহীহ ইবনে হিববান হা/২৩৮৭; আলবানী : ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫; তাবারানী হা/২০২২; জালাউল আফহাম, পৃঃ ৫১।
[16]. আবূদাঊদ হা/১০৪৭; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৩৯৯, আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।
[17]. আল জামে‘ হা/১২০৯; বায়হাকী, সুনানে কুবরা ৩/২৪৯।
[18]. ফাযলুছ ছালাত আলান নাবী (ছাঃ), পৃঃ ৭৩, হা/৮১।
[19]. তিরমিযী হা/৩৩৮০; ছহীহা হা/৭৪।
[20]. ছহীহা হা/৭৪-এর আলোচনা দ্রঃ।
[21]. ফাযলুছ ছালাত আলান নাবী (ছাঃ), হা/৯৮।
[22]. ঐ, হা/৯৯।