গত
১০ই অক্টোবর বুধবার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক
শাহেদ নূর উদ্দীন বহুল আলোচিত গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন। ২০০৪
সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা
হয়। এতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী তৎকালীন মহিলা আওয়ামী
লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন মারা যান, আহত হন কয়েক শ’। বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ভাগ্যক্রমে বেঁচে
যান। প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর ডান কান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বাকী ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। মামলাটির মোট ৫২ আসামীর মধ্যে ইতিমধ্যে অন্য মামলায় তিনজনের ফাঁসি হয়ে যাওয়ায় আসামীর সংখ্যা ছিল ৪৯ জন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীদের ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জনই কারাগারে বন্দী। আর যাবজ্জীবন প্রাপ্ত ১৯ জন আসামীর মধ্যে ১৩ জনই পলাতক। মামলাটিতে সাক্ষী ছিল মোট ৫১১ জন। সাক্ষী গ্রহণ করা হয়েছে ২২৫ জনের।
কারাগারে থাকা ১৭ জন হ’লেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই-এর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।
আর পলাতক দু’জন হ’লেন আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই ও জঙ্গিনেতা মাওলানা মো. তাজউদ্দীন, যিনি বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। আর হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ।
রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিক্রিয়ায় রায়কে ফরমায়েশী অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, তার দল মনে করে এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁর দলের পক্ষ থেকে বলেছেন, বিলম্বিত হ’লেও এই রায়ে অমরা অখুশি নই, কিন্তু পুরোপুরি সন্তুষ্টও নই। তিনি বলেন, রায়ের জন্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাই এ কারণে যে, অন্তত একটা বিচার হয়েছে। কিন্তু রায় নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হ’তে পারিনি। ২১শে আগস্টের মাস্টারমাইন্ড, প্ল্যানার ও বিকল্প পাওয়ার হাউসের (হাওয়া ভবন) তারেক রহমান সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে পারতেন। তাই আমরা তারেক রহমানের ফাঁসি দাবী করছি।