বৃটেন প্রবাসী ড. মং জার্নি একমাত্র বর্মী বৌদ্ধ বিশেষজ্ঞ, যিনি রোহিঙ্গা নিধনের বিরুদ্ধে ৩২ বছর ধরে সোচ্চার। মিয়ানমারের মান্দালয় এলাকায় ১৯৬১ সালে জন্ম। মানবাধিকারের প্রবক্তা হওয়ার কারণে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ২১শে সেপ্টেম্বর’১৭ কুয়ালালামপুরের পুলম্যান হোটেলে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মীযানুর রহমান খান। সেখান থেকে কিছু অংশ নিম্নে প্রদত্ত হ’ল।-

প্রশ্ন-১ : রোহিঙ্গা ব্যতীত অন্যান্য মুসলমানের প্রতি অং সান সু চি-র কোন স্বতন্ত্র অবস্থান আছে কি?

মং জার্নি : ২০১৫ সালে তিনি নিশ্চিত করেন যে সংসদে যাতে কোন মুসলমান না আসে। তবে বার্মার গোড়ার দিকে মানবাধিকার আন্দোলনে বর্তমানের মতো মুসলমানবিদ্বেষী বর্ণবাদ চোখে পড়েনি। গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলিতে তাঁর উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকেই মুসলমান ছিলেন। এমনকি সাবেক মুসলমান নৌ কমান্ডার ক্যাপ্টেন বা থ অং সান সু চি-কে সমর্থন দিয়ে হত্যার শিকার হন। এই মুসলমান সামরিক অফিসার একজন লেখক ছিলেন। তিনি আকা মং থ কা ছদ্মনামে লিখতেন। সামরিক বাহিনী তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করেছিল।

প্রশ্ন-২ : রোহিঙ্গা বিতাড়নের তিনটি প্রধান কারণ যদি চিহ্নিত করতে বলি, তাহ’লে কি বলবেন?

মং জার্নি : দু’টি কারণ বলতে চাই। প্রথমতঃ নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি মিয়ানমার সরকারের নেতিবাচক মনোভাব। কেননা পাকিস্তান ও বর্মী আর্মির মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পাকিস্তান আর্মি অব্যাহতভাবে শয়ে শয়ে বর্মী সামরিক গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দ্বিতীয়তঃ জেনারেলগণ কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা এবং ক্ষমতা নিরঙ্কুশকরণে বিশ্বাসী। তাঁরা নীতিগত ও বাস্তবে কোন ধরনের অঞ্চলগত বিচ্ছিন্নতার বিরোধী। আর ১৯৭১ সাল থেকে বার্মা-বাংলাদেশ সম্পর্ক আসলে কখনোই সত্যিকার অর্থে ভালো ছিল না।

প্রশ্ন-৩ : বর্মী আমজনতাও রোহিঙ্গাবিদ্বেষী, ধারণাটি কতটুকু সত্য?

মং জার্নি : ১৯৮৮ সালের বার্মার মানুষ আর আজকের মানুষ এক নয়। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ যাতে চাপা পড়ে, সে কারণে সামরিক বাহিনী বর্মীদের উগ্রবাদী করেছে। বর্মী সেনাবাহিনী শান্তি চায় না। কারণ শান্তি সামরিক বাহিনীর পক্ষে যায় না। বন্দুক ও সহিংসতা তাদের পসন্দ। সংস্কার যেটুকু শুরু হয়েছিল, তা শেষ। পাঁচ বছর আগেও মানুষ সংবিধানের পরিবর্তন চেয়েছিল। সেনারা যাতে ব্যারাকে ফিরে যায়। আমরা অধিকতর সাম্য ও সমতার নীতির বাস্তবায়ন আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন তারা ‘কালা’ হত্যা করতে চায়। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা এখন দেশের প্রতিরক্ষায় নেমেছে।

জাতিসংঘ সুচিন্তিতভাবে নীতি হিসাবে নিয়েই গণহত্যাকে গণহত্যা বলছে না। এটা অসততা। তারা রাজনীতির খেলা খেলছে। তারা জানেন, ‘গণহত্যা’ শব্দ উচ্চারণ করা মাত্রই জাতিসংঘের জন্য মিয়ানমারের বিচার করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়বে। ১৯৭৮ সালে ব্যাপকভিত্তিক নির্যাতন করে গণহত্যার প্রথম বছরটি শুরু হয়। এর ১২ বছর আগে ১৯৬৬ সালে গণহত্যার নীলনকশা তৈরী করা হয়। সেই বছরে সামরিক বাহিনী উত্তর আরাকানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃত্রিমভাবে বৌদ্ধ জনসংখ্যা বাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়। আর এটাই কালক্রমে গণহত্যার পটভূমি তৈরী করে। তাই আমি ১৯৬৬-কে জেনোসাইডের জেনেসিস বলি। 

প্রশ্ন-৪ : বাংলাদেশের কি পরিভাষা ব্যবহার করা উচিত?

মং জার্নি : ১৯৭৮ সালে যখন প্রথম উদ্বাস্ত্ত স্রোত বয়েছিল, সেই থেকে গত ৩৯ বছরে আমরা দেখি, গড়ে প্রতি এক দশকে বাংলাদেশে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা চলে আসছে। আপনাদের দু’টি বিশেষ করণীয় আছে। প্রথমতঃ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উচিত, সর্বদা রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করা। দ্বিতীয়তঃ তারা বলবে, রোহিঙ্গা বার্মার সরকারীভাবে স্বীকৃত একটি জাতিগত সম্প্রদায়।

প্রশ্ন-৫ : আরসার শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

মং জার্নি : আমার তা জানা নেই। তবে বর্মী নির্যাতন শুরুর পরে যখন ‘মুজাহিদীন’ নামের একদল বিচ্ছিন্নতাবাদী পথে গেল, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রোহিঙ্গা যুবকেরা তা রুখে দাঁড়াল। তারা বুঝল, তাদের ভবিষ্যত রেঙগুন সরকারের সাথে জড়িত। তাই রোহিঙ্গারা বর্মী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাত মিলিয়েছিল। এমনকি পরে এই তরুণেরা মুজাহিদীন ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে অস্ত্র সমর্পণেও দূতিয়ালী করেছিল। সেজন্য বর্মী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের বীরত্বসূচক খেতাব দিয়েছিল। আমার কাছে তার নথিপত্র ও আলোকচিত্র রয়েছে।

প্রশ্ন-৬ : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একজন মন্ত্রী কয়েকদিন আগে ঘুরে গেলেন। আপনি কি আশাবাদী?

মং জার্নি : তিনি এই সংকট মোকাবিলায় সু চি-র নিয়োগ করা তিন বেসামরিক কূটনীতিকের একজন। তাদের সারা জীবন কেটেছে আন্তর্জাতিক ফোরামে সামরিক বাহিনীর পক্ষে নির্লজ্জ দালালী করে। তারা প্রত্যেকে ধূর্ত এবং মুসলিমবিদ্বেষী বর্ণবাদী। তাদের কারও হৃদয়ে এক দানা পরিমাণ নীতিবোধ কিংবা মানবিক অনুভূতি নেই। প্রত্যাবাসনের যে প্রস্তাব তারা দিয়েছে, তা কৌশলগত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নযর আড়াল করা এবং শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করা এর লক্ষ্য। মনে রাখতে হবে, তাদের চূড়ান্ত কৌশলগত লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জাতিসত্তা, তাদের ইতিহাস, পরিচিতি ও আইনগত অবস্থান ধ্বংস করা। আপনাদের মনে যদি এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকে, তাহ’লে গত ২৫ বছরের জাতিসংঘের নথিগুলি, মানবাধিকারের নথিপত্র এবং ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রেস ক্লিপগুলি পাঠ করুন। (সৌজন্যে : দৈনিক প্রথম আলো ১০.১০.২০১৭ মঙ্গলবার)







প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া - আত-তাহরীক ডেস্ক
মাওলানা ইসহাক ভাট্টি (১ম ভাগ) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মতলববাজদের দুরভিসন্ধিতে সাম্প্রদায়িক হামলা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মাওলানা ওযায়ের শামস - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
বদরুদ্দীন উমর : বাম দলগুলোতে লেনিনের সংখ্যা বেশী হয়ে গেছে - -বদরুদ্দীন উমর
সাক্ষাৎকার (শায়খ হাদিয়ুর রহমান মাদানী) - আত-তাহরীক ডেস্ক
প্রফেসর শাহ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান - আত-তাহরীক ডেস্ক
মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের হজ্জব্রত পালনঃ একটি সাক্ষাৎকার
১৯৯১ সালে ‘যুবসংঘ’ কর্তৃক আয়োজিত ‘২য় জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা’ সম্পর্কে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবে’র এই স্মৃতিচারণ
শায়খ ইরশাদুল হক আছারী - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
তাবলীগী ইজতেমা উপলক্ষে সাক্ষাৎকার : প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবে
মাওলানা আব্দুল্লাহ মাদানী ঝান্ডানগরী ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সম্পর্কে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর স্মৃতিচারণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.