[গত ৫ই অক্টোবর’২২ বুধবার অনুষ্ঠিত শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকা থেকে জার্মান বেতার ‘ডয়চে ভেলে’র প্রতিনিধি সমীর কুমার দে মোবাইলে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার রাত্রি ৯.২৭ মিনিটে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। যা নিম্নে প্রদত্ত হ’ল]

(১) ডয়চে ভেলে : আর কয়েকদিন পরই শুরু হচ্ছে দূর্গাপূজা (১-৫ই অক্টোবর)। গত বছর পূজার সময় একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকটা যেলায় মন্দির ও হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে ব্যাপক তান্ডব চালানো হয়। এসব সাম্প্রদায়িক হামলা কেন হয়? কারা থাকে এসবের পিছনে? গত বছর পূজার সময় সাম্প্রদায়িক হামলা হ’ল, এবারের পূজা কতটা নির্বিঘ্ন হবে?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : ইসলাম অন্য ধর্মের লোকদের উপর কোন ধরনের যুলুম স্বীকার করেনা। এটা যারা করে, তারা নিজেদের মতলব হাছিল করার জন্য করে। এতে ইসলামের কোন অনুমোদন নেই। এতে সাধারণ মুসলমানদেরও কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে আমরা মনে করি।

(২) ডয়চে ভেলে : সাম্প্রদায়িক হামলা কেন হয়?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : কোন ধার্মিক লোক কখনোই অন্য ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করেনা। এই উপমহাদেশে আমরা হাযার বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান মিলেমিশে বসবাস করছি। আমরা তো শুধু পত্র-পত্রিকায় দেখি আর ভাবি, কী করে এগুলো হয়, কারা করে? এটা নিশ্চিত যে এতে কিছু লোকের কারসাজি আছে।

(৩) ডয়চে ভেলে : সাম্প্রদায়িক হামলার কারণে হিন্দুদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। এই ভয় আদৌ কি কাটে?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : প্রশাসন যদি সুশাসন রাখে, তাহ’লে কেটে যাবে। একইভাবে ইন্ডিয়ায় মুসলমান ভাইদের উপর হচ্ছে। সেটাও মনে করি মতলববাজদের কাজ। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে নানা ধর্মের লোক বসবাস করে। এটাই নিয়ম। সবাই এক ধর্মের লোক হবে, এটা আদৌ আশা করা যায় না। অতএব এক কথায় উত্তর হ’ল, মতলববাজরা দুরভিসন্ধি নিয়ে কাজ করছে। এখানে ধর্মের কোন বিষয় নেই। প্রশাসন যদি শক্তভাবে এটা দেখে, তাহ’লে আশা করি তাদের ভয় কেটে যাবে।

(৪) ডয়চে ভেলে : সাম্প্রদায়িক হামলা বা হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা করে কার লাভ?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : যারা হামলা করে, তাদের কোন লাভ হয়ত আছে। তবে এতে তাদের কোন লাভ তো হচ্ছেই না, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছে।

(৫) ডয়চে ভেলে : হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলার ব্যাপারে আপনার ধর্মে কোন অনুমতি বা বিধিনিষেধ আছে কি?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : ইসলামে অন্য ধর্মের লোকদের উপর অন্যায়ভাবে হামলা করার অনুমোদন নেই। রাসূলের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত একজন ইহূদী ছেলে কর্মচারী ছিল। এমন অসংখ্য প্রমাণ আমাদের ধর্মে আছে। এই হামলাগুলো আসলে যাদের দুরভিসন্ধি আছে, তারাই করছে। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া উচিৎ।

(৬) ডয়চে ভেলে : হিন্দুরাও তো এ দেশের নাগরিক তাহ’লে তাদের নিয়ে কেন বিদ্রুপ করা হয়?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : যারা করছে, তারাই এটা বলতে পারবে। এ দেশ সবার। ভারতে মুসলমানরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা নেই। শুধুমাত্র ইসলামের কারণেই আমাদের এখানে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত কায়েম হয়েছে।

(৭) ডয়চে ভেলে : পূজা মন্ডপে এবার সিসিটিভি বসানো হচ্ছে সিসিটিভি দিয়ে কি হামলা প্রতিরোধ সম্ভব?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : এর মাধ্যমে কারা করেছে সেটা দেখা যেতে পারে, কিন্তু যারা তাদের পাঠায় তারা তো পিছনে থাকে, তাদের ধরাই তো আসল কাজ। সরকারের বহু বিভাগ আছে। ইচ্ছা করলে তারা ধরতেও পারে। কেন ধরেনা, সেটা আমরা জানিনা। আমরা শুধু জানি, এদেশে অমুসলিমদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

(৮) ডয়চে ভেলে : এই ধরনের হামলা প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপগুলো কি যথেষ্ট?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : আমার তো মনে হয় পরস্পরে আস্থার সম্পর্ক সৃষ্টি করাই আসল কাজ। যেটা ইসলামে আছে, সেটা প্রচার করলে আর কিছুই লাগেনা।

(৯) ডয়চে ভেলে : পুলিশ পাহারায় পূজা উদযাপন কতটা স্বস্তির?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : পূজা উদযাপন পুলিশ পাহারায় হবে কেন? স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক প্রত্যেকে তার ধর্ম পালন করবে, সেখানে পুলিশ কেন?

(১০) ডয়চে ভেলে : হামলার বিচারের ব্যাপারে সরকার বা আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কতটা আন্তরিক ছিল?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : আমি মনে করি, পলিটিক্যাল লোকদের সব কাজই পলিটিক্যাল। তাদের সবই লোক দেখানো। ক্ষমতা লাভের জন্য তারা কত কী করে সেটা তো আপনারা আমাদের চেয়ে বেশী জানেন।

(১১) ডয়চে ভেলে : সরকার আর কি পদক্ষেপ নিলে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা সম্ভব?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : সরকারের কোন যবরদস্তী পদক্ষেপে ধর্মীয় সম্প্রীতি আসবে না। ধর্মীয় বিষয়টা হৃদয়ের বিষয়। হিন্দুদের বাড়িতে মুসলমানরা কামলা খাটছে না? আবার মুসলমানদের বাড়িতে হিন্দুরা কামলা খাটছে না? শিল্প ও কল-কারখানায় কাজের সময় হিন্দু-মুসলমানদের কোন ভেদাভেদ আছে কি? সবাই তো স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। এগুলোর মধ্যে গোলমাল লাগিয়ে দেয় কিছু মতলবী লোক।

(১২) ডয়চে ভেলে : ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে আপনারা কী করতে পারেন?

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব : আমি সপ্তাহে একদিন জুম‘আর খুৎবা দেই। আপনি যদি কখনো এ প্রসঙ্গে  আমার খুৎবা বা অন্যান্য বক্তৃতা শোনেন, তাহ’লে বুঝতে পারবেন। তাছাড়া আমাদের যে মাসিক ‘আত-তাহরীক’ পত্রিকা আছে, সেখানেও আমাদের লেখা যায়। ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আমি ও আমাদের সংগঠন কথা বলে থাকে। আমাদের কাছ থেকে অন্যেরা কোনদিন ভিন্নরূপ আচরণ পায়না। হিন্দু ভাইদের উদ্দেশ্যে বলব, তারা যেন আদৌ কোন ভয় না পান। এটা তাদেরও দেশ, আমাদেরও দেশ। যারা এগুলো করে, তারা দুষ্টু লোক।






বিষয়সমূহ: সাক্ষাৎকার
তাবলীগী ইজতেমা উপলক্ষে সাক্ষাৎকার : প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবে
প্রফেসর শাহ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান - আত-তাহরীক ডেস্ক
প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া - আত-তাহরীক ডেস্ক
মাওলানা আব্দুল্লাহ মাদানী ঝান্ডানগরী ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সম্পর্কে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর স্মৃতিচারণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সাক্ষাৎকার - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
শায়খ ইরশাদুল হক আছারী - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মাওলানা ইসহাক ভাট্টি (১ম ভাগ) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
শায়খ তালেবুর রহমান শাহ - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মাওলানা ওযায়ের শামস - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
১৯৯১ সালে ‘যুবসংঘ’ কর্তৃক আয়োজিত ‘২য় জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা’ সম্পর্কে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবে’র এই স্মৃতিচারণ
বদরুদ্দীন উমর : বাম দলগুলোতে লেনিনের সংখ্যা বেশী হয়ে গেছে - -বদরুদ্দীন উমর
ড. মং জার্নি : সুচি-কে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.