[বদরুদ্দীন উমরের পিতা আবুল হাশেম (১৯০৫-১৯৭৪ খৃ.) ছিলেন দার্শনিক পন্ডিত ও পাকিস্তান আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা। ১৯৩৬ সালে তিনি বর্ধমান থেকে নির্দলীয় পার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বঙ্গীয় আইন সভায় সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালের মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালের ৭ই নভেম্বর বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬০ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান ‘ইসলামী একাডেমী’র প্রথম মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। যা বর্তমানে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ নামে পরিচিত। পারিবারিকভাবে রাজনীতি সচেতন ও অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন বদরুদ্দীন ওমর পিতার চলার পথ ছেড়ে বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পিতা ইসলামের পথেই মানুষের মুক্তি ও দেশে শান্তি কামনা করেছিলেন। পিতার স্বপ্নের প্রথম ধাপ পূরণ হয়েছিল স্বাধীন পাকিস্তান লাভ করে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপ তথা প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি মুসলিম নামধারী ধূর্ত নেতাদের কারণে। পুত্র ভেবেছিলেন তার বিপরীত। সারা জীবন বাম রাজনীতি করে ধীমান সন্তান বার্ধক্যে এসে যে স্মৃতিচারণ করেছেন, তার মধ্যে সমাজ সংস্কারে উদ্বুদ্ধ ডান-বাম সকল চিন্তাশীল ব্যক্তির জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে ভেবেই আমরা তাঁর সাক্ষাৎকারটি হুবহু আত-তাহরীকের পাঠকদের জন্য সংকলন করে দিলাম। যাতে আমাদের পাঠকদের চিন্তার দুয়ারে আঘাত হানে। সেই সাথে দৈনিক প্রথম আলো-কে ধন্যবাদ এই বর্ষিয়ান দার্শনিক ও রাজনীতিকের মূল্যবান সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও পত্রস্থ করার জন্য। নিম্নরেখাগুলি আত-তাহরীকের দেওয়া’ (স.স.)।]
বদরুদ্দীন উমর বিশিষ্ট বামপন্থী তাত্ত্বিক, গবেষক ও ইতিহাসবিদ; শতাধিক গ্রন্থের লেখক। তাঁর জন্ম ১৯৩১ সালে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও পরে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রী অর্জন করেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং পরে এ বিষয়ে পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি নামে সুবৃহৎ গ্রন্থ রচনা করেন। কিছু সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বর্তমানে তিনি ‘জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল’ এবং ‘সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী কমিটি’ নামে দু’টি সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশ্ন-১ : আপনি সারা জীবন বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাংলাদেশেও একসময় বামপন্থী রাজনীতির প্রতি মানুষের বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। গত শতকের আশির দশকে আমি আমার ছাত্রজীবনেও সেটা দেখেছি। কিন্তু এখন বামপন্থী রাজনীতি খুব ক্ষীয়মাণ। এর কারণ কী?
উত্তর : আপনি আপনার ছাত্রজীবনে, আশির দশকে যা দেখেছেন, চল্লিশের দশকে আমি আমার ছাত্রজীবনে তার চেয়ে অনেক বেশী উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছি। বিরাট একটা প্রত্যাশা জেগেছিল যে দুনিয়ায় একটা পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারকে হারিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সোভিয়েত ইউনিয়ন সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। তারপর সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন জার্মানি বা জাপানের মতো বাইরের সাহায্য না নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সব নাগরিকের জন্য খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা করছিল। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো তাদের উপনিবেশগুলো ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছিল। ফলে সারা দুনিয়ায় মানুষের মুক্তির ব্যাপারে একটা আশার সঞ্চার হয়েছিল, চারদিকে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল। ভারত উপমহাদেশেও এটা ঘটেছে।
প্রশ্ন-২ : কিন্তু এখানে বামপন্থী রাজনীতি তো প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেনি।
উত্তর : ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে বিপ্লবের নামে সন্ত্রাসবাদের দিকে চলে গেল, তারপরে সেই সন্ত্রাসবাদের পতন হ’লো, তারপরে আবার একটা রাজনীতি শুরু হ’লো, যেটাকে বলে সংসদীয় রাজনীতি। পঞ্চাশের দশকে যখন এসব ঘটছে, তখনো কিন্তু সারা দুনিয়ায় সমাজতন্ত্র নিয়ে আশা-উদ্দীপনা ছিল। তারপর ‘স্তালিনে’র মৃত্যুর পর ‘খ্রুশ্চভ’ ভিন্ন পথ নিলেন, তারপর আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন বিভক্ত হ’লো, দেশে দেশেও কমিউনিস্ট আন্দোলন বিভক্ত হয়ে গেল। তাছাড়া চীন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পরে আমেরিকা, পাকিস্তান ইত্যাদি দুনিয়ার যত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের সঙ্গে গেল। ফলে আগে চিন্তার ক্ষেত্রে যে শৃঙ্খলা ছিল, সেটা নষ্ট হয়ে গেল। লেনিন তো পরিত্যক্ত হ’লেনই, এমনকি চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় সব বইপত্র বাদ দিয়ে লাল বই পড়া শুরু হ’লো, তার ফলে মাও সে-তুংয়ের গুরুত্বপূর্ণ লেখা পত্রও পরিত্যাগ করা হ’লো। চীন বলত যে সশস্ত্রভাবে সংগ্রাম করতে হবে, সেই মতবাদ ছড়িয়ে পড়তে লাগল। কিন্তু সশস্ত্র সংগ্রাম বা গেরিলাযুদ্ধ করার মতো প্রকৃত পরিস্থিতি এখানে ছিল না বলে সন্ত্রাসবাদ দেখা দিল। মাও বলেছিলেন, গেরিলারা হ’লো মাছ আর জনগণ হ’লো পানি, কিন্তু আমাদের মতো দেশগুলোতে অবস্থা দাঁড়াল পানি ছাড়াই মাছের মতো। এসব করে ভারত উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন-৩ : রাশিয়া ও চীনে বিপ্লব হয়েছে, ভারতে হ’লো না কেন?
উত্তর : রাশিয়া ও চীনে শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির যে ভিত্তি ছিল, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে তা ছিল না। এখানে পার্টিতে মধ্য শ্রেণীর প্রাধান্য ছিল। শ্রমিক ও কৃষকের আন্দোলনগুলোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের কোনো লক্ষ্য, রণনীতি ও কর্মসূচি কমিউনিস্ট পার্টির ছিল না। কমিউনিস্ট পার্টি বৃটিশদের তাড়িয়ে নিজেরা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করবে এমন কথা কখনো উচ্চারণ করেনি। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে এটা ধরে নিয়েই রাজনীতি করেছিল। অর্থাৎ কৃষক-শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টি নয়, ভারতীয় বুর্জোয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যই তারা কাজ করেছিল। দ্বিতীয়তঃ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিপ্লব করার পরিবর্তে সন্ত্রাসবাদের দিকে চলে যাওয়া। তৃতীয়তঃ নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতির কাঠামোর মধ্যে প্রবেশ করা। সংসদীয় রাজনীতি ও নির্বাচন ভারতবর্ষের রাজনীতির প্রকৃতিতে একটা বড় পরিবর্তন ঘটাল। একের পর এক নির্বাচন হতে লাগল, সেসব নির্বাচনে কমিউনিস্টরা অংশ নিতে লাগলেন, ফলে কমিউনিস্ট রাজনীতি সংসদীয় রাজনীতির কাঠামোর মধ্যে ঢুকে গেল। এই কাঠামোতে কমিউনিস্টদের প্রতিদ্বন্দ্বী তো কোনো বিপ্লবী শক্তি নয়, তারা অন্যান্য সংসদীয় রাজনৈতিক দল, যাদের মূল চরিত্র বুর্জোয়া। কাজেই কমিউনিস্টরা আসলে ভারতের বুর্জোয়া শ্রেণীর বাম অংশ হিসেবে নেমে পড়লেন।
প্রশ্ন-৪ : এখন বাংলাদেশের বাম রাজনীতির কথা বলুন।
উত্তর : বাংলাদেশে বামপন্থী রাজনীতির দুরবস্থা রাতারাতি হয়নি। এর ঐতিহাসিক কারণ আছে। আমাকে শহীদুল্লা কায়সার বলেছিলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে এখানে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যসংখ্যা ছিল ১২ হাজার। তারপর যখন রণদীভের থিসিসের পরে সন্ত্রাস, নির্যাতন ইত্যাদি হ’লো, কমিউনিস্টদের অনেকে দেশত্যাগ করে চলে গেলেন। এসবের ফলে ১৯৫০-এর পরে এখানে কমিউনিস্টদের সংখ্যা ১২ হাজার থেকে কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ২০০। তার মধ্যেও যাঁরা নেতৃস্থানীয় লোক ছিলেন, তাঁরা এখান থেকে চলে গেলেন। ফলে বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যের অভাবও এখানে দেখা দিল। আমি ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় এসে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিই, আমি তো আমার পার্টির নেতৃত্বে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে খুব সামর্থ্যবান কোনো নেতা পাইনি।
প্রশ্ন-৫ : তাহ’লে কেন যোগ দিয়েছিলেন?
উত্তর : কারণ, সেই সময় ওটার চেয়ে ভালো আর কিছু ছিল না। যাই হোক, তত দিনে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন বিভক্ত হয়ে গেছে। তবু পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট আন্দোলন অনেকটা দাঁড়িয়ে ছিল; কিন্তু বাংলাদেশ হওয়ার পরে তা-ও আর থাকল না। একাত্তর সালে কমিউনিস্টদের বিরাট নির্বুদ্ধিতার কারণে ভীষণ ক্ষতি হ’লো। মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি তো আওয়ামী লীগের ভেতরে ঢুকে গেল; আর পিকিংপন্থী বলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কান্ডজ্ঞান কিছু ছিল বলে তো মনে হয় না। আমি তো পিকিংপন্থীদের সঙ্গে ছিলাম, একাত্তর সালে আমি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখেছি, দেশের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণাই নেই। তাঁরা মাও সে-তুংয়ের যুক্তফ্রন্টের কথা বলতেন, কিন্তু আমাদের এখানে এ রকম একটা যুদ্ধের সময় যেখানে যাঁরা আছেন, সবাইকে নিয়ে যে একটা যুক্তফ্রন্ট গঠন করা দরকার, এই বিষয়টা গুরুত্ব পেল না। অবশ্য প্রথমে এ রকম একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে সবার সঙ্গে মিলে কাজ করা হবে, এমনকি আওয়ামী লীগের সঙ্গেও; মাওলানা ভাসানীও একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর ১৪ই এপ্রিল চৌ এন লাইয়ের যে বার্তাটা এল, তাতে তিনি বললেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে যে লড়াই চলছে, সেটা কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদীর কাজ, পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ একসঙ্গে থাকতে চায় এবং পাকিস্তান অখন্ড থাকলেই পাকিস্তানের জনগণের সমৃদ্ধি ঘটবে। তাদের তো এই কথা বলার এখতিয়ার ছিল না। আমি তখন যশোরের একটা গ্রামে ছিলাম, শোনার পরে তাড়াতাড়ি ঢাকায় ছুটে এলাম, এসে দেখি সর্বনাশ হয়ে গেছে। প্রথম দিকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটা দেখলাম একদম উল্টে গেছে। বলা হ’লো এখন আওয়ামী লীগকে শত্রু মনে করতে হবে; দুই কুকুরের লড়াই আরম্ভ হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে সেই সময় পার্টির দ্বন্দ্ব আরম্ভ হয়। ডিসেম্বরে আমি পার্টি থেকে ইস্তফা দিলাম।
প্রশ্ন-৬ : কিন্তু আশির দশকে যে বামপন্থী আন্দোলন বেগবান হয়েছিল, সেটা আর অগ্রসর হ’লো না কেন?
উত্তর : শুনুন, সত্তরের দশকটা হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে অন্ধকার যুগ। তারপর আশির দশকে যে আন্দোলনটা হ’লো, সেটা ছিল একধরনের গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলন। সেই আন্দোলনটাও সংসদীয় রাজনীতির কাঠামোর মধ্যেই ছিল; সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, নির্যাতন থাকবে না, মানুষকে কথায় কথায় ধরে নিয়ে যাওয়া হবে না, অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না। সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে নির্বাচিত সরকারের জন্য আন্দোলন। এর বেশী কিন্তু এটা ছিল না। আপনি যদি বলেন যে, আশির দশকে এসে কমিউনিস্ট আন্দোলন চাঙা হয়েছিল, সেটা কিন্তু হয়নি।
প্রশ্ন-৭ : তাহ’লে বামপন্থী দলগুলোকে চরিত্রগত দিক থেকে আপনি কী ধরনের রাজনৈতিক দল বলবেন?
উত্তর : এখনকার সিপিবি হ’ল বাকশালের গর্ভে জন্ম নেওয়া একটা পার্টি; এটার তো আগের কোনো চরিত্রই থাকল না। কাজেই এর দ্বারা কোনো বিপ্লবী চিন্তা বা বিপ্লবী কাজ সম্ভব নয়।
প্রশ্ন-৮ : সিপিবি ছাড়াও তো অনেক বামপন্থী দল আছে, তাদের অবস্থা কী?
উত্তর : ছোট ছোট বাম দলের ব্যাপারে মুশকিল হচ্ছে, এখানে লেনিনের সংখ্যা খুব বেশী হয়ে গেছে। এমনকি ছাত্র-ছাত্রীদের যে ছোট ছোট স্টাডি সার্কল আছে, তাদের প্রত্যেকেই মনে করে, এ দেশে কোনো কমিউনিস্ট আন্দোলন নেই; কিছু লোক বলে, এ দেশে কোনো দিন কোনো কমিউনিস্ট আন্দোলন ছিল না ইত্যাদি; এবং প্রত্যেকেই মনে করে যে, সে লেনিন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কেউ হয়তো একটা ছোট দল করে, কেউ হয়তো দুই-দশজন নিয়ে আন্দোলন করে; কিন্তু তারা সবাই যে একসঙ্গে কাজ করবে বা এ ধরনের কোনো চিন্তা করবে এটা নেই। কাজেই তারা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মার্ক্সবাদী সাহিত্যচর্চা করে, পত্রিকা বের করে ইত্যাদি করে। কিন্তু আসলে কোনো বিপ্লবের চিন্তা এখানে দেখাই যায় না।
প্রশ্ন-৯ : কিন্তু যেটাকে আপনি বিপ্লব বলছেন, যেমন অক্টোবর বিপ্লবের মতো বিপ্লব আমাদের দেশে হওয়া আদৌ সম্ভব কি না?
উত্তর : কোনো দেশের বিপ্লবই অন্য দেশে পুনরাবৃত্ত হয় না। অক্টোবর বিপ্লবের মতো বিপ্লব কি চীনে হয়েছিল? ভিয়েতনামে কি তাই হয়েছিল? প্রতিটি বিপ্লবেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে।
প্রশ্ন-১০ : বাংলাদেশে কী ধরনের বিপ্লব হওয়া সম্ভব?
উত্তর : বাংলাদেশের বিপ্লব বাংলাদেশের মতো করেই হবে। সেটা করতে হ’লে যারা বিপ্লব করবে, তাদেরকে প্রথমেই চিন্তা-ভাবনায় সাবালক হতে হবে। নাবালকের মতো বাইরে থেকে যা বলছে, সেইভাবে বললে হবে না। আমার দেশের অবস্থা লেনিন-মাও সে-তুংয়ের চেয়ে আমার বেশী বোঝা দরকার। সেটা যদি আমি না বুঝি, তাহ’লে আমি বিপ্লব করতে পারব না।
প্রশ্ন-১১ : আমাদের দেশে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত লোকজন সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা প্রচলিত আছে যে তাঁরা ধর্ম মানেন না। এটা কি এ দেশের বাম রাজনীতির জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে?
উত্তর : না, আমি মনে করি না যে এটা বড় ধরনের কোনো সমস্যা। আপনি যদি আসল কাজ করেন, তাহ’লে আপনি ধর্ম মানেন কি না, সেটা সাধারণ মানুষ দেখে না। এটা আমি আমার রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। আন্ডারগ্রাউন্ডে আমি যেসব মানুষের বাড়িতে থেকেছি, তারা খুব ধর্ম পালন করত, তারা ভালোভাবেই জানত যে আমি ধর্ম-কর্ম করি না, তবু তো তারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে, খাইয়েছে, ঘুমানোর জায়গা দিয়েছে। আপনি যখন তাদের জন্য কাজ করবেন, তখন তারা ধর্মের প্রসঙ্গই তুলবে না। লেনিন এক জায়গায় লিখেছেন, এক জায়গায় ধর্মঘট হচ্ছে, তখন পাদরিরা প্রচার করতে শুরু করেছে যে এরা ধর্ম মানে না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা কখনোই ধর্মের কথা নিয়ে আসব না, আমরা আমাদের কাজ করব। মানুষ যখন দেখবে যে আমরা তাদের জন্য কাজ করছি, তখন পাদরি কী বলছে, সেই কথা তারা শুনবে না।
প্রশ্ন-১২ : আপনি একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন, সারা জীবন ধরে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করছেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। আপনার কাছে জানতে চাইব, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পঠন-পাঠন, জ্ঞানচর্চা, নৈতিকতাসহ সামগ্রিক যে অবক্ষয় ঘটেছে, তা কেন এবং কী করে হ’লো?
উত্তর : শুনুন, সমাজ একটা অখন্ড জিনিস। সমাজের একটা জায়গা কলুষিত থাকবে আর একটা জায়গা পবিত্র থাকবে, এ রকম হয় না। সমাজের প্রতিটা অংশ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের সামগ্রিক অবক্ষয়ের বাইরে থাকতে পারে না।
প্রশ্ন-১৩ : এই অবক্ষয় থেকে বেরোনোর উপায় কী?
উত্তর : বেরোনোর উপায় এই পুরো সমাজটার নতুন রূপান্তর ঘটানো। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যেসব কান্ডকারখানা ঘটছে, তা বাইরেই থাকবে আর বিশ্ববিদ্যালয় একটা দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে, এটা তো হতে পারে না।
প্রশ্ন-১৪ : কিন্তু সে রকম বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন বা বিপ্লব কীভাবে হতে পারে?
উত্তর : কীভাবে হবে সেটা আলাদা কথা। একটা কথা শুধু বলা যেতে পারে যে, পরিবর্তন না হ’লে বর্তমান অবস্থা থেকে বেরোনো যাবে না। একটা সামাজিক বিপ্লব ছাড়া এর থেকে বেরোনো যাবে না। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে, কারা করবে, সেটা আমি এই সাক্ষাৎকারের স্বল্প পরিসরে বলতে পারি না। আমি শুধু এটাই বলতে পারি যে সেই বিপ্লব হতেই হবে; এই আশাবাদ তো আমাদের রাখতেই হবে।
প্রথম আলো : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। বদরুদ্দীন উমর : আপনাকেও ধন্যবাদ।
(দৈনিক প্রথম আলো, ২৩শে জুলাই’১৭, মতামত কলাম, পৃ. ১০)।
প্রতিক্রিয়া : জাহিদ হায়দার (কবি ও লেখক)
...বদরুদ্দীন উমরের কথা থেকে মনে হয়, তিনি ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একটা দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁর পার্টিতে ছিলেন। ডিসেম্বরে তিনি পার্টি থেকে ইস্তফা দিলেন। তাহ’লে কি বিষয়টি এই দাঁড়াল না যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়, এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আট মাস দুই কুকুরের লড়াইকে দ্বন্দ্বের বোধ নিয়ে সমর্থন করে গেছেন? তা যদি না হবে, তাহ’লে তিনি যশোর থেকে ফিরে যখন বুঝলেন যে সর্বনাশ হয়ে গেছে, তখনই কেন পার্টি থেকে ইস্তফা দিলেন না?
বদরুদ্দীন উমর জানেন কি না জানি না, তবে আমার জানা আছে: মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ করতে যাওয়ার পথে কিংবা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসার পর অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে পিকিংপন্থীরা কুকুরের মতো গুলি করে মেরেছে (দৈনিক প্রথম আলো, ২৫শে জুলাই’১৭, মতামত কলাম, পৃ. ১০)।
সাক্ষাৎকারটির সার-সংক্ষেপ :
(১) ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে বিপ্লবের নামে সন্ত্রাসবাদের দিকে চলে গেল, তারপরে সেই সন্ত্রাসবাদের পতন হ’লো, তারপরে আবার একটা রাজনীতি শুরু হ’লো, যেটাকে বলে সংসদীয় রাজনীতি।
(২) ‘স্তালিনে’র মৃত্যুর পর ‘খ্রুশ্চভ’ ভিন্ন পথ নিলেন, তারপর আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন বিভক্ত হ’লো, দেশে দেশেও কমিউনিস্ট আন্দোলন বিভক্ত হয়ে গেল। তাছাড়া চীন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পরে আমেরিকা, পাকিস্তান ইত্যাদি দুনিয়ার যত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের সঙ্গে গেল। ফলে আগে চিন্তার ক্ষেত্রে যে শৃঙ্খলা ছিল, সেটা নষ্ট হয়ে গেল।... চীন বলত যে সশস্ত্রভাবে সংগ্রাম করতে হবে, সেই মতবাদ ছড়িয়ে পড়তে লাগল। কিন্তু সশস্ত্র সংগ্রাম বা গেরিলাযুদ্ধ করার মতো প্রকৃত পরিস্থিতি এখানে ছিল না বলে সন্ত্রাসবাদ দেখা দিল। মাও বলেছিলেন, গেরিলারা হ’লো মাছ আর জনগণ হ’লো পানি, কিন্তু আমাদের মতো দেশগুলোতে অবস্থা দাঁড়াল পানি ছাড়াই মাছের মতো। এসব করে ভারত উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
(৩) ভারতবর্ষে কমিউনিস্ট আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন : (ক) রাশিয়া ও চীনে শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির যে ভিত্তি ছিল, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে তা ছিল না। এখানে পার্টিতে মধ্য শ্রেণীর প্রাধান্য ছিল। (খ) শ্রমিক ও কৃষকের আন্দোলনগুলোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের কোনো লক্ষ্য, রণনীতি ও কর্মসূচি কমিউনিস্ট পার্টির ছিল না। (গ) জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিপ্লব করার পরিবর্তে সন্ত্রাসবাদের দিকে চলে যাওয়া। (ঘ) নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতির কাঠামোর মধ্যে প্রবেশ করা। ফলে কমিউনিস্টরা ভারতের বুর্জোয়া শ্রেণীর বাম অংশ হয়ে পড়লেন।
(৪) বাংলাদেশে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে এখানে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যসংখ্যা ছিল ১২ হাজার। নির্যাতনের কারণে নেতৃস্থানীয় অনেকে দেশ ত্যাগ করেন। ফলে ১৯৫০-এর পরে এখানে কমিউনিস্টদের সংখ্যা ১২ হাজার থেকে কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ২০০। তার মধ্যেও যাঁরা নেতৃস্থানীয় ছিলেন, তাঁরা এখান থেকে চলে গেলেন। ফলে বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যের অভাব দেখা দিল। আমি ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় এসে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিই, আমি তো আমার পার্টির নেতৃত্বে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে খুব সামর্থ্যবান কোনো নেতা পাইনি। (খ) পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট আন্দোলন অনেকটা দাঁড়িয়ে ছিল; কিন্তু বাংলাদেশ হওয়ার পরে তা-ও আর থাকল না। একাত্তর সালে কমিউনিস্টদের বিরাট নির্বুদ্ধিতার কারণে ভীষণ ক্ষতি হ’লো। মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি তো আওয়ামী লীগের ভেতরে ঢুকে গেল; আর পিকিংপন্থী বলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কান্ডজ্ঞান কিছু ছিল বলে তো মনে হয় না।... (গ) ১৪ই এপ্রিল (চীনের প্রধানমন্ত্রী) চৌ এন লাইয়ের যে বার্তাটা এল, তাতে তিনি বললেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে যে লড়াই চলছে, সেটা কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদীর কাজ, পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ একসঙ্গে থাকতে চায় এবং পাকিস্তান অখন্ড থাকলেই পাকিস্তানের জনগণের সমৃদ্ধি ঘটবে।... বলা হ’লো এখন আওয়ামী লীগকে শত্রু মনে করতে হবে; দুই কুকুরের লড়াই আরম্ভ হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে সেই সময় পার্টির দ্বন্দ্ব আরম্ভ হয়। ডিসেম্বরে আমি পার্টি থেকে ইস্তফা দিলাম।
(৫) এখনকার সিপিবি হ’লো বাকশালের গর্ভে জন্ম নেওয়া একটা পার্টি; এটার তো আগের কোনো চরিত্রই থাকল না। কাজেই এর দ্বারা কোনো বিপ্লবী চিন্তা বা বিপ্লবী কাজ সম্ভব নয়। (খ) ছোট ছোট বাম দলের ব্যাপারে মুশকিল হচ্ছে, এখানে লেনিনের সংখ্যা খুব বেশী হয়ে গেছে।... তারা সবাই যে একসঙ্গে কাজ করবে বা এ ধরনের কোনো চিন্তা করবে এটা নেই। কাজেই তারা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মার্ক্সবাদী সাহিত্যচর্চা করে, পত্রিকা বের করে ইত্যাদি করে। কিন্তু আসলে কোনো বিপ্লবের চিন্তা এখানে দেখাই যায় না।
(৬) বাংলাদেশের বিপ্লব বাংলাদেশের মতো করেই হবে। সেটা করতে হ’লে যারা বিপ্লব করবে, তাদেরকে প্রথমেই চিন্তা-ভাবনায় সাবালক হতে হবে। নাবালকের মতো বাইরে থেকে যা বলছে, সেইভাবে বললে হবে না। আমার দেশের অবস্থা লেনিন-মাও সে-তুংয়ের চেয়ে আমার বেশী বোঝা দরকার। সেটা যদি আমি না বুঝি, তাহ’লে আমি বিপ্লব করতে পারব না।
(৭) আমি মনে করি না যে এটা (ধর্ম) বড় ধরনের কোনো সমস্যা। আপনি যদি আসল কাজ করেন, তাহ’লে আপনি ধর্ম মানেন কি না, সেটা সাধারণ মানুষ দেখে না।... মানুষ যখন দেখবে যে আমরা তাদের জন্য কাজ করছি, তখন পাদরি কী বলছে, সেই কথা তারা শুনবে না।
(৮) সমাজ একটা অখন্ড জিনিস। সমাজের একটা জায়গা কলুষিত থাকবে আর একটা জায়গা পবিত্র থাকবে, এ রকম হয় না। সমাজের প্রতিটা অংশ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের সামগ্রিক অবক্ষয়ের বাইরে থাকতে পারে না।
(৯) এই অবক্ষয় থেকে বেরোনোর উপায় হ’ল পুরো সমাজটার নতুন রূপান্তর ঘটানো।
(১০) একটা সামাজিক বিপ্লব ছাড়া এ থেকে বেরোনো যাবে না। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে, কারা করবে, সেটা আমি এই সাক্ষাৎকারের স্বল্প পরিসরে বলতে পারি না। আমি শুধু এটাই বলতে পারি যে সেই বিপ্লব হতেই হবে; এই আশাবাদ তো আমাদের রাখতেই হবে।
সারকথা :
(১) তারা মানুষকে মানুষ হিসাবে ভালবাসেননি। বরং সর্বহারা ও বুর্জোয়া এবং কৃষক-শ্রমিক ও মধ্যশ্রেণী প্রতিক্রিয়াশীল হিসাবে বিভক্ত করে দেখেছেন (অথচ ধনী-গরীব দু’টিই আল্লাহর সৃষ্টি। যা সমান করার ক্ষমতা কারু নেই। উভয় শ্রেণীতেই ভাল ও মন্দ দু’ধরনের লোক রয়েছে)। (২) প্রধানতঃ রাশিয়া ও চীনের পৃষ্ঠপোষকতায় এই আন্দোলন পরিচালিত হয়। (৩) সন্ত্রাসের পথে যাওয়া এবং সংসদীয় নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করাই এই আন্দোলনের পতনের প্রধান কারণ। (৪) সামাজিক বিপ্লব ছাড়া বর্তমান পতন দশা থেকে উত্তরণের কোন পথ নেই (অথচ সামাজিক বিপ্লব করার জন্য কোন স্থায়ী আদর্শ তাদের নেই)।
আমাদের মূল্যায়ন :
সমস্যাগুলি চিরন্তন। আর তা হ’ল স্রেফ ‘দুনিয়া অর্জন’। এর সমাধানও চিরন্তন। আর তা হ’ল ‘আখেরাতের লক্ষ্যে আল্লাহর অহি ভিত্তিক জীবন গঠন’। অর্থাৎ তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাস এবং আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন ঘটানো। যেখানে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হবেন আল্লাহ এবং যার দুই অভ্রান্ত সত্যের আলোকস্তম্ভ হবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। যেটি হ’ল ইসলাম এবং যার বিশুদ্ধ রূপ হ’ল ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’। আর এর মাধ্যমেই আসবে সত্যিকারের সামাজিক বিপ্লব। আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত মহান আন্দোলনের কর্মী হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন! (স.স.)।