[শায়খ ইরশাদুল হক আছারী (৬৯) সমকালীন পাকিস্তানের খ্যাতনামা মুহাক্কিক আলেম ও মুহাদ্দিছ। তিনি হাদীছ শাস্ত্রের বিখ্যাত কিছু গ্রন্থ যেমন ইবনুল জাওযীর আল-ইলাল আল-মুতানাহিয়াহ, মুসনাদ আবু ইয়া‘লা, মুসনাদুস সার্রাজ প্রভৃতি গ্রন্থের তাহকীক সম্পন্ন করে উপমহাদেশ ও আরব বিশ্বে একজন বিদগ্ধ মুহাদ্দিছ হিসাবে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছেন। এছাড়া সুন্নাহবিরোধীদের প্রতিরোধে উর্দূ ভাষায় তাঁর রয়েছে অসংখ্য বলিষ্ঠ রচনা। আহাদীছে হেদায়াহ কী ফান্নী ওয়া তাহকীকী হায়ছিয়াত, ই‘লাউস সুনান ফিল মীযান, তাওযীহুল কালাম ফী উজূবিল ক্বিরাআহ খালফাল ইমাম, আহাদীছে ছহীহ বুখারী ওয়া মুসলিম মে পারভেজী তাশকীক কা ইলমী মুহাসাবা প্রভৃতি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ রচনা। সাপ্তাহিক তর্জুমানুল হাদীছ ও আল-ই‘তিছামসহ বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর প্রবন্ধসমূহ নিয়মিত প্রকাশিত হয়। যা ইতিমধ্যে সংকলনাকারে ৬ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ষাটোর্ধ। গবেষণার বাইরে দাওয়াতী ময়দানেও তিনি সমানভাবে সক্রিয়। দেশের বাইরে আমেরিকা এবং ইউরোপেও তিনি দাওয়াতী সফর করেছেন। বর্তমানে তিনি ফয়ছালাবাদে ইদারায়ে উলূমে আছারিয়ার পরিচালক এবং মারকাযুত তারবিয়াহ আল-ইসলামিয়ার শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ পাকিস্তানের ফৎওয়া বোর্ডের প্রধান এবং মজলিসে ফুকাহা শারঈয়াহ আমেরিকার সদস্য। ১৯৯৮-১৯৯৯ সনে তিনি ইসলামী নযরিয়াতী কাউন্সিল পাকিস্তানের সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি (১৬.০২.২০১৭ ইং) ফয়ছালাবাদে তাঁর নিজস্ব বাসভবনে মাসিক আত-তাহরীকের পক্ষ থেকে একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব। সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের খেদমতে পত্রস্থ করা হল।- সম্পাদক]     

আত-তাহরীক : শায়খ, আপনার জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পর্কে বলুন।

শায়খ ইরশাদুল হক আছারী : আমার জন্ম ১৯৪৮ সালে পাঞ্জাবের ভাওয়ালনগর যেলার ফকীরওয়ালী তাহছীলে। শৈশবে লিয়াকতপুরে কিছুকাল স্কুলে, পরে স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করি। ১৯৬৪ সালে জনৈক মাওলানা আব্দুর রহমানের পরামর্শে আমার আববা জামে‘আ সালাফিইয়াহ ফয়ছালাবাদে ভর্তি করে দেন। সেখানে ৩ বছর অধ্যয়নের পর হাফেয মাওলানা বনীয়ামীনের একান্ত সান্নিধ্যে থেকে বুখারী, মুসলিম, আবুদাঊদ সহ বেশ কিছু কিতাব অধ্যয়ন করি। ১৯৬৮ সালে জামে‘আ ইসলামিয়া গুজরানওয়ালায় গমন করি এবং মাওলানা আব্দুল্লাহ গোন্দলভীর সান্নিধ্যে কিছুদিন অতিবাহিত করি। অতঃপর ১৯৬৯ সালে ফয়ছালাবাদে ইদারায়ে উলূমে আছারিয়ায় মাওলানা আব্দুল্লাহ লায়ালপুরী এবং মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুহু ফাল্লাহের একান্ত শিষ্যত্ব গ্রহণ করি। এই ইদারায় অবস্থানকালে তাঁদের দারসে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতাম। মাওলানা হানীফ নাদভী এবং তাঁর সহকর্মী মাওলানা ইসহাক ভাট্টীও কখনও আসতেন। মাওলানা নাদভী বিষয়ভিত্তিক দারস দিতেন এবং মাওলানা ভাট্টী লেখালেখির নিয়ম-কানূন শেখাতেন। অবশেষে এই প্রতিষ্ঠানেই আমার কর্মজীবন শুরু হয়।     

আত-তাহরীক : আপনার শিক্ষকমন্ডলী কারা ছিলেন?

শায়খ আছারী : শিক্ষক অনেকেই ছিলেন। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় মাওলানা হাফেয বনীয়ামীন, শায়খুল হাদীছ মুহাম্মাদ গোন্দলভী, মাওলানা মুহাম্মাদ হায়াত এবং মাওলানা হাফেয মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বাঢীমালভীকে। এছাড়া শায়খ বদীউদ্দীন শাহ রাশেদী (১৯২৬-১৯৯৬ইং), শায়খ মুহাম্মাদ হায়াত লাশারী সিন্ধী এবং শায়খ ছুবহী বিন জাসেম আস-সামার্রাঈ আল-বাগদাদী (১৯৩৬-২০১৩ইং)-এর নিকট থেকে হাদীছের ইজাযাত গ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে। শায়খ ছুবহী আল-বাগদাদী ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে আসলে তাঁর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয় এবং ইরাকে ফিরে গিয়ে তিনি আমাকে লিখিতভাবে সনদ প্রেরণ করেন।

আত-তাহরীক : তাহকীকের ময়দানে নামার প্রেরণা পেলেন কোথা থেকে?

শায়খ আছারী : আমার পরিবার ছিল হানাফী ব্রেলভী। জামে‘আ সালাফিইয়ায় ভর্তি হওয়ার পরও ২/৩ বছর আমি হানাফী হিসাবেই আমল করতাম। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যে, এ ব্যাপারে মাদরাসার ছাত্র বা শিক্ষকগণ আমাকে একটিবারের জন্যও না-সূচক কিছু বলেননি। কখনও বলেননি যে এটা ঠিক নয়, ওটা কর। যদিও শিক্ষক-ছাত্রদের সাথে ইলমী বাহাছ হত কখনও। তাঁদের এই উদার আচরণ আমাকে স্বাধীনভাবে চিন্তা ও পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছিল। ফলে আমি হানাফী ও আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরামের গ্রন্থসমূহ গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করতে লাগলাম। বিস্তৃত অধ্যয়নের ফলে দিনে দিনে বুঝতে পারলাম বহু দলীলের ক্ষেত্রে হানাফী ওলামায়ে কেরাম দূরতম ব্যাখ্যা কিংবা যুক্তির আশ্রয় নিয়েছেন মাযহাবকে রক্ষার জন্য। যেটা আমার কাছে বেইনছাফী মনে হতে লাগল। অবশেষে আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ অধ্যয়নের পর আমার আক্বীদা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেল। এরপরই মূলতঃ লেখালেখি ও তাহকীকের ময়দানে নামতে উদ্বুদ্ধ হই।

আত-তাহরীক : আল-ইলাল আল-মুতানাহিয়াহ, মুসনাদ এবং মু‘জামু আবু ইয়া‘লা, মুসনাদুস সার্রাজ সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীছগ্রন্থের তাহকীক করেছেন আপনি। কোন প্রেক্ষাপটে কিভাবে শুরু করেছিলেন?

শায়খ আছারী : এতদিন পর আসলে সেসব কথা তেমন একটা মনে নেই। তবে ইদারায়ে উলূমে আছারিয়ায় কর্মরত থাকার কারণে এই সকল বড় কাজে হাত দেয়ার সুযোগ এসেছিল। আল-হামদুলিল্লাহ দিন-রাত পরিশ্রমে এবং সহকর্মীদের সহযোগিতায় আমি সফল হয়েছিলাম। সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে আল্লামা শামসুল হক আযীমাবাদী সংকলিত ‘ই‘লামু আহলিল আছর বি আহকামি রাক‘আতাইল ফাজর’-এর মাধ্যমে আমার তাহকীকী জীবনের সূচনা হয়। অতঃপর ১৯৭৯ সালে ইবনুল জাওযী রচিত ‘আল-ইলাল আল-মুতনাহিয়াহ’, ১৯৮৮ সালে ‘মুসনাদে আবী ইয়া‘লা আল-মুছেলী’ এবং ২০০২ সালে মুহাম্মাদ বিন ইসহাক আস-সার্রাজের ‘মুসনাদুস সার্রাজ’ প্রকাশিত হয়। আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া যে, তিনি আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

আত-তাহরীক : ইদারায়ে উলূমে আছারিয়া কখন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সাথে আপনি কিভাবে সম্পৃক্ত হলেন?

শায়খ আছারী : ১৯৬৮ সালে শায়খ মুহাম্মাদ ইসহাক চীমা ফয়ছালাবাদে এক আলোচনা বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে মাওলানা মুহাম্মাদ হানীফ নাদভী, মাওলানা আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানী, মাওলানা আব্দুল্লাহ লায়ালপুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে যেখানে ইলমে হাদীছে উচ্চতর পাঠদানের জন্য একটি ‘তাখাচ্ছুছ’ বিভাগ এবং প্রাচীন হাদীছ গ্রন্থসমূহ তাহকীকের জন্য একটি গবেষণা বিভাগ থাকবে। যেই প্রতিষ্ঠানের নাম মুহাম্মাদ হানীফ নাদভীর প্রস্তাবানুসারে রাখা হয় ইদারাতুল উলূম আল-আছারিয়াহ। শায়খ মুহাম্মাদ ইসহাক চীমা ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। আর্থিক সমস্যা সত্ত্বেও তিনি অসাধারণ হিম্মত ও উৎসাহ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে যান। শায়খ আব্দুল্লাহ ফয়ছালাবাদী, শায়খ মুহাম্মাদ রফীক মদনপুরী এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং গবেষক হিসাবে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৯ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে ফারেগ হওয়ার পর আমি গবেষক হিসাবে যোগদান করি। সেই তরুণ বয়স থেকে আজ অবধি এই গবেষণাগারই আমার ধ্যান-জ্ঞান।

আত-তাহরীক : শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?

শায়খ আছারী : তিনি আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ ও প্রিয়ভাজন মানুষ ছিলেন। অসাধারণ মুহাক্কিক ও লেখক। সুগভীর ইলমের অধিকারী ছিলেন। মুখস্তশক্তি ছিল অসাধারণ। হাদীছ শাস্ত্রে তিনি অতুলনীয় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।

আত-তাহরীক : হাদীছ তাহকীকে তাঁর বিরুদ্ধে কিছুটা কঠোরতার অভিযোগ আনা হয়। বিশেষতঃ তিনি তাহকীকের ক্ষেত্রে বহু জায়গায় শায়খ আলবানীর খেলাফ মন্তব্য করেছেন। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?

শায়খ আছারী : হ্যঁা, তাঁর মানহাজে কিছুটা কঠোরতা ছিল। যেমন হাসান লি গায়রিহি হাদীছকে তিনি যঈফের পর্যায়ভুক্ত মনে করতেন। তিনি মনে করতেন যঈফ+যঈফ=যঈফ। তাঁর এই অবস্থান জমহূর মুহাদ্দিছীনের বিপরীত। কেননা যঈফ হাদীছ সবই একই পর্যায়ভুক্ত নয়। রাবীর মধ্যে দুর্বলতার নানা স্তর (যঈফ ইউ‘তাবার/যঈফ লা ইউ‘তাবার, গ্রহণযোগ্য/অগ্রহণযোগ্য) রয়েছে। নতুবা যঈফের মধ্যে মুহাদ্দিছগণ এত প্রকারভেদ করতেন না। এছাড়া তাদলীসের ক্ষেত্রেও তিনি কঠোরতা দেখিয়েছেন। শায়খ আলবানীর সাথে তাঁর তাহকীকের যে বৈপরিত্য দেখা যায় তা এই মানহাজী বৈপরিত্যের কারণে। তবে যদি কোন হাদীছে তাঁদের মধ্যে বিরোধ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে দলীল মোতাবেক অধিকতর শক্তিশালী মতকে তারজীহ (অগ্রাধিকার) দিতে হবে। ব্যক্তি বিশেষকে অগ্রাধিকার দেয়া যাবে না।

আত-তাহরীক : পাকিস্তানের সমসাময়িক মুহাদ্দিছগণের মধ্যে কাদেরকে অগ্রগণ্য মনে করেন?

শায়খ আছারী : শায়খ ছানাউল্লাহ মাদানী। তিনি পাকিস্তানের বড় আলেম এবং সঊদী আরবে শায়খ আলবানী, শায়খ বিন বায, শায়খ শানক্বীত্বী, শায়খ হাম্মাদ আনছারীর মত মুহাদ্দিছদের সান্নিধ্য পেয়েছেন। এছাড়া হাদীছ শাস্ত্রে তাঁর অনেক খেদমত রয়েছে। অনুরূপভাবে ড. সুহায়েল হাসানও যোগ্যতাসম্পন্ন মুহাদ্দিছ। এভাবে আরও অনেকেই খেদমত করে যাচ্ছেন আল-হামদুলিল্লাহ।

আত-তাহরীক : হাদীছ সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন। বর্তমানে কিছু মুহাদ্দিছ মনে করেন যে, যঈফ হাদীছ কেবল মুতাবা‘আত দ্বারাই শক্তিশালী হয়, শাওয়াহেদ দ্বারা নয়। শাওয়াহেদের মাধ্যমে হাদীছ শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টি পরবর্তী মুহাদ্দিছদের আবিষ্কার। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।           

শায়খ আছারী : এটা ভুল চিন্তা। শাহেদ পরিভাষাটি পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছগণ ব্যবহার করেছেন। ইমাম তিরমিযী এর প্রয়োগ দেখিয়েছেন। যদি শাহেদ দ্বারা হাদীছ শক্তিশালী না হয়, তবে শাহেদের ভূমিকা খুব সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। শাহেদ নামটিই সাক্ষ্য দেয় যে, এটি হাদীছ সবল হওয়ার শক্তিশালী দলীল।  

আত-তাহরীক : একজন প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিছ হিসাবে হাদীছের ছাত্রদের প্রতি আপনার নছীহত কী?

শায়খ আছারী : হাদীছশাস্ত্র অধ্যয়নে দীর্ঘ সময় দেয়া অপরিহার্য। আমার শায়খ মুহাম্মাদ হানীফ নাদভী বলতেন, ইক্বরাউ, ইক্বরা, ইক্বরা হাত্তা তাক্বি। অর্থাৎ পড়, পড়, পড়, যতক্ষণ না (পড়তে পড়তে) বমি চলে আসে’। বিশেষ করে হাদীছের উছূল সংশ্লিষ্ট কিতাবসমূহ মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করতে হবে। ইলমুর রিজাল এবং ইলমুল জারাহ ওয়াত-তা‘দীল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। অতঃপর রেওয়ায়াতের ওপর সে সকল উছূল প্রয়োগ করা শিখতে হবে। ইলমী গভীরতার জন্য ইবনু দাক্বীকুল ঈদের ‘আল-আহকাম’, ইবনুল ক্বাত্ত্বানের ‘বায়ানুল ওয়াহমে ওয়াল ঈহাম’, ইমাম যায়লাঈর ‘নাছবুর রা’য়াহ’, ইবনু হাজার আসক্বালানীর ‘আত-তালখীছুল হাবীর’ এবং শায়খ আলবানীর কিতাবসমূহ অধ্যয়ন করতে হবে। জারাহ-তা‘দীল বিষয়ক যে কোন কওলের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছদের বক্তব্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ শায়খ আলবানী অনেক সময় হাদীছের কোন ইল্লাত সম্পর্কে ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী বা ইমাম দারাকুৎনীর বক্তব্য উপেক্ষা করেছেন। এটা আমাদের কাছে সঠিক মানহাজ নয়। বরং সর্বদা পূর্ববর্তীদের বক্তব্যই অগ্রগণ্য। কেননা হাদীছের ক্রটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে তাঁরাই অধিক অবগত ছিলেন। সর্বোপরি তাক্বওয়া অবলম্বন করতে হবে সবক্ষেত্রে।

আত-তাহরীক : এবার আহলেহাদীছ জামা‘আত সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন। নেতৃত্বের বিভক্তির হওয়ার কারণে অনেকে বর্তমানে জামা‘আত বা সংগঠনকেই বিদ‘আত হিসাবে ধারণা দিতে চাচ্ছেন। এ বিষয়ে আপনার মত কি?

শায়খ আছারী : যদি কোন দেশে ইসলামী শাসন থাকে, আল্লাহর হুকুমসমূহ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়িত হয়, যেমন সঊদী আরব, তবে সেখানে পৃথক কোন জামা‘আত তৈরির প্রয়োজন নেই। কিন্তু পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে পৃথক জামা‘আতের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা ইসলামী রাষ্ট্র এবং মুসলমানদের রাষ্ট্র এক নয়; বরং বিপরীত। এসব মুসলিম রাষ্ট্রে মুসলমানরা শাসন করলেও সেখানে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম নেই।

আত-তাহরীক : সালাফী বা আহলেহাদীছ নামকরণকে অনেকে বিতর্কিত ও ফির্কাবন্দী মনে করছেন এবং এর পরিবর্তে কেবল ‘মুসলিম’ হিসাবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।           

শায়খ আছারী : এটা তো স্পষ্ট যে, আল্লাহর বান্দা হিসাবে মুসলিমই আমাদের পরিচয়। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর মধ্যে প্রথম হাদীছ অস্বীকারকারী ফেরকা রাফেযীরা যখন বিশিষ্ট ছাহাবীদের কাফের আখ্যা দিয়ে তাদের বর্ণিত হাদীছ বর্জন শুরু করল এবং খারেজী, মু‘তাযিলারাও অনুরূপ পথ ধরল, তখন এর বিপরীতে কুরআন ও হাদীছকে হুজ্জত বা শরী‘আতের মূল দলীল হিসাবে গ্রহণকারী দল হিসাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের জন্ম হয়েছিল। তৎকালে গৃহীত আহলে সুন্নাতের মানহাজই আহলেহাদীছদের মানহাজ বা সালাফী মানহাজ। এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং এতে আপত্তির কিছু নেই। বরং এটি সালাফদের দেখানো পথের বিরুদ্ধাচরণকারী ও বিদ‘আতীদের থেকে পার্থক্যকারী মানহাজের নাম।

সালাফীদের মধ্যে শাখাগত বিভক্তি দেখা যায় কখনও। তবে কুরআন ও হাদীছকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দান এবং সালাফদের গৃহীত পথকে অাঁকড়ে ধরার মানহাজে তারা সকলেই একমত। তারা কেউই মুরজিয়াদের মত বিশ্বাস করেন না যে, আমল যাই হোক, ঈমান থাকলেই যথেষ্ট। এটাই প্রমাণ করে যে, আক্বীদাগতভাবে তারা একই পথের অনুসারী। সুতরাং কিছু শাখাগত বিভক্তির যুক্তিতে আহলেহাদীছ ও সালাফী নামকরণকে ফির্কাবন্দী বা দলাদলি মনে করার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ বর্তমানে সালাফী আক্বীদার দাবীদার হয়েও যে গোষ্ঠীটি তাকফীরী আক্বীদায় বিশ্বাস করে, তাদেরকে সালাফী বলা যাবে না।

আত-তাহরীক : বর্তমানে কি লিখছেন?

শায়খ আছারী : বর্তমানে শায়খ আলবানী (রহঃ) ছহীহ বুখারীর কিছু হাদীছের ওপর যেসব আপত্তি তুলেছেন, তার জবাব লিখছি। লাহোর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘আল-ই‘তিছাম’-এ প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। এছাড়া অনেকদিন থেকে কুরআনের তাফসীর নিয়ে কাজ করছি। সেটিও চলমান রয়েছে। শারীরিক অসুস্থতা এবং মারকাযুত তারবিয়াহ আল-ইসলামিয়াতে ক্লাস নেয়ার ফাঁকে ফাঁকে যতদূর সম্ভব লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি আল্লাহর রহমতে।

আত-তাহরীক : পরিশেষে বাংলাদেশীদের প্রতি আপনার কোন বার্তা?

শায়খ আছারী : এটাই বলব যে, আমাদেরকে সর্বদা সালাফদের বক্তব্যকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ। তাদের অনুসরণেই কল্যাণ রয়েছে। সর্বোপরি কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক জীবনই হল পরকালীন নাজাতের পথ। সুতরাং এই পথের উপর অটল থাকতে হবে।

আত-তাহরীক : আমাদেরকে এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান।

শায়খ আছারী : আমিও অনেক খুশী হয়েছি। আমাদের এই সাক্ষাৎ যেন ক্বিয়ামতের দিন মুক্তির অসীলা হয়। কেননা এমন সাক্ষাৎ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হয়। আল্লাহর জন্য পারস্পরিক ভালবাসাই আমাদেরকে এখানে একত্রিত করেছে। ড. আসাদুল্লাহ আল-গালিব ছাহেবের সাথে ২০০০ সালে মক্কায় হজ্জের সফরে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেসময় অনেক কথাবার্তা হয়েছিল। তাঁর প্রতি আমার সালাম রইল। বাংলাদেশের সকল দ্বীনী ভাইয়ের প্রতি আমার সালাম ও দো‘আ রইল।







মাওলানা ওযায়ের শামস - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
তাবলীগী ইজতেমা উপলক্ষে সাক্ষাৎকার : প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবে
বদরুদ্দীন উমর : বাম দলগুলোতে লেনিনের সংখ্যা বেশী হয়ে গেছে - -বদরুদ্দীন উমর
মতলববাজদের দুরভিসন্ধিতে সাম্প্রদায়িক হামলা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শায়খ তালেবুর রহমান শাহ - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
সাক্ষাৎকার (শায়খ হাদিয়ুর রহমান মাদানী) - আত-তাহরীক ডেস্ক
মাওলানা ইসহাক ভাট্টি (২য় ভাগ) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মাওলানা আব্দুল্লাহ মাদানী ঝান্ডানগরী ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সম্পর্কে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর স্মৃতিচারণ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের হজ্জব্রত পালনঃ একটি সাক্ষাৎকার
শায়খ ইরশাদুল হক আছারী - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
১৯৯১ সালে ‘যুবসংঘ’ কর্তৃক আয়োজিত ‘২য় জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা’ সম্পর্কে প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবে’র এই স্মৃতিচারণ
সাক্ষাৎকার - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
আরও
আরও
.