[নেপালের খ্যাতনামা আহলেহাদীছ আলেম এবং জমঈয়তে আহলেহাদীছ নেপালের আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ মাদানী ঝান্ডানগরী গত ২২শে ডিসেম্বর ২০১৫ এবং বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আলেম ও মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান গত ২৫শে জুন ২০১৬ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁদের উভয়ের সাথেই মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর গাঢ় দ্বীনী সম্পর্ক ছিল। তাই তাঁদের সম্পর্কে জানার জন্য মাসিক আত-তাহরীকের পক্ষ থেকে তাঁর একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। নিম্নে তা বিবৃত হ’ল]-
১. মাওলানা আব্দুল্লাহ মাদানী (১৯৫৫-২০১৫) :
আমীরে জামা‘আত : আব্দুল্লাহ মাদানীর মৃত্যুসংবাদ আমার কাছে হঠাৎ অশনিপাতের মত মনে হয়েছিল। ঠিক যেমন মনে হয়েছিল আব্দুল মতীন সালাফীর মৃত্যু সংবাদ। তিনি ও আব্দুল মতীন উভয়ে এসেছিলেন দুনিয়াতে আমার অনেক পরে। কিন্তু গেলেন আমার আগে। তাঁরা উভয়ে এবং সেই সাথে আব্দুল্লাহ নাছের রহমানী (করাচী) ও আব্দুল ওয়াহহাব খালজী (দিলী) ছিলেন আমাদের মতই সংস্কারধর্মী মেযাজের মানুষ। সেজন্য আন্তরিকতা ছিল বেশী। শেষের দু’জন এখনও বেঁচে আছেন বলে শুনেছি। কিন্তু যোগাযোগ নেই ’৯৮-এর পর থেকে।
১৯৮৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারীতে যেদিন আব্দুল মতীনের সূত্রে তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় তার কর্মস্থল নেপালের তাওলহুয়া মাদরাসায়, সেদিন থেকে আন্তরিকভাবে কেউ বিচ্ছিন্ন হইনি। তার ‘নূরে তাওহীদ’ নিয়মিত আমার ঠিকানায় এসেছে। ফেরার সময় তার পিতার কাপড়ের দোকান কৃষ্ণনগরের তাজ এম্পোরিয়াম থেকে যে ছোট্ট তোয়ালেটা তিনি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন, সেটি আগেই আব্দুল মতীনের উপহার হিসাবে পাওয়া আমার রেডিওর উপর দিয়ে রাখতাম। কিন্তু এবার ই‘তিকাফ থেকে বেরিয়ে এসে দেখলাম সেটি আর নেই। অন্য একটি কভার সেখানে শোভা পাচ্ছে। যদিও বছরে একদিনও রেডিওতে খবর শুনি কি-না সন্দেহ। তবুও মনের গহীনে স্মৃতির কাঁটায় যেন বেদনা ঝরে পড়ল। কেননা দু’টিই দু’জনের স্মৃতি। তাই ফেলিনি এযাবৎ।
আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সাথে সাথে তার দীর্ঘ ২৭ বছরের স্মৃতিটুকুও আজ হারিয়ে গেল।... হ্যাঁ বস্ত্ত হারিয়েছে। কিন্তু আব্দুল্লাহ হারাননি। তিনি আছেন স্মৃতির মুকুরে জ্বলজ্বলে। থাকবেন আমৃত্যু। তবে দুঃখ থেকে গেল। ’৯৮ সালের ইজতেমায় এসে বাসায় তৈরী দই খেয়ে বলেছিলেন, আমি আবার আসব কেবল এই দই খাওয়ার জন্য...। হ্যাঁ সেই টেবিলে বসেই আজ তাঁর স্মৃতি চারণ করছি। কিন্তু তিনি আর আসেননি। আর আসবেনও না কোনদিন।...
নেপালে আহলেহাদীছ আন্দোলনে গতি সঞ্চারের জন্য আমিই তাকে ও তার সাথীদেরকে ‘জমঈয়ত’ গঠনে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। পরে ১৯৯২ সালের ১৯-২১শে জানুয়ারীতে কুয়েতের হোটেল মেরিডিয়ানে বসে আবারও তাকীদ দিয়েছিলাম। তখন আমরা আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলন উপলক্ষ্যে কুয়েতের আমীরের মেহমান হিসাবে সেখানে অবস্থান করছিলাম। অতঃপর সে বছরেই নভেম্বরে তারই উদ্যোগে ‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ নেপাল’ গঠিত হয়।
কুয়েতের এহইয়াউত তুরাছ উক্ত সম্মেলন উপলক্ষ্যে আগত বিশ্বের ৬টি দেশের ৬ জন আহলেহাদীছ নেতাকে তাদের নিজস্ব মিলনায়তনে অভ্যর্থনা ও বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানেও আমার পরের বক্তা ছিলেন আব্দুল্লাহ মাদানী। অতঃপর সম্ভবতঃ ১৯৯৫-তে সফরকালে কুয়েতের শ্রম ও যোগাযোগ সহ ৪টি মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী মন্ত্রী জাসেম আল-‘আওন কর্তৃক তাঁর নিজ বাসায় আহলেহাদীছ প্রতিনিধিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলেও আব্দুল্লাহ ছিলেন আমার সাথী।
১৯৯৭-এর তাবলীগী ইজতেমায় যখন আমরা আমার ডক্টরেট থিসিসের সুপারভাইজরকে উপহার সামগ্রী প্রদান করি, তখন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের সাথে তিনি ছিলেন নেপালের প্রতিনিধি। এটি যেন অবশেষে সার্ক জামা‘আতে আহলেহাদীছের পক্ষ থেকে সুপারভাইজর মহোদয়কে সম্মাননা দেওয়া হ’ল (আত-তাহরীক ১৫/৬ সংখ্যা, মার্চ ২০১২, পৃ. ৪৩-৪৪)। নিঃসন্দেহে এটি ছিল এক বিরল সম্মাননা ও অনন্য সম্বর্ধনা। আব্দুল্লাহ মাদানী তাই আমাদের স্মৃতির মণিকোঠায় উজ্জ্বল তারকা। যেমন তারকা হয়ে আছেন আব্দুল মতীন সালাফী। আক্বীদার ঐক্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। অন্য কিছুই নয়। যেজন্য তারা রাজশাহীর অভিজাত হোটেল ছেড়ে আমাকে লুকিয়ে ইজতেমায় আগত মুছলীদের সাথে কাজকর্মে ও খানাপিনায় যোগ দিতে পেরেছিলেন অবলীলাক্রমে আব্দুল্লাহ ও আব্দুল ওয়াহ্হাব খালজী একত্রে। ‘যুবসংঘ’ অফিসে গিয়ে ‘গঠনতন্ত্র’ ও ‘কর্মপদ্ধতি’ বই সহ সব ধরনের সাংগঠনিক কাগজপত্র ও প্রচারপত্র গুছিয়ে নিয়ে অত্যন্ত আগ্রহ ভরে খালজী সেদিন বলেছিলেন, আমি দেশে ফিরে আমাদের (ভারতের) জমঈয়তকে এভাবেই ঢেলে সাজাবো’। উলেখ্য যে, আব্দুল ওয়াহহাব খালজী ছিলেন ঐ সময় জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। দিলী-৬ উর্দূ বাজার ‘আহলেহাদীছ মনযিলে’ যার কেন্দ্রীয় অফিস।
নিঃসন্দেহে আব্দুল্লাহ ছিলেন নিরহংকার, স্পষ্টবাদী ও সংস্কারবাদী লেখক, সাহিত্যিক ও সমাজ সেবক যোগ্য আলেম। যবানে তোতলামী থাকলেও দ্ব্যর্থহীনভাবে তিনি বক্তব্য রাখতেন। সবার সাথে হাসিমুখে ও খোলা মনে কথা বলতেন। নেপালের মত একটি ঘোষিত হিন্দুরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে আহলেহাদীছ আলেম ও বাগ্মী হিসাবে মাওলানা আব্দুর রঊফ ঝান্ডানগরীর (১৯১০-১৯৯৯) পরে তিনিই ছিলেন দেশে ও বিদেশে সর্বাধিক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। আল্লাহ তাঁর সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দান করুন- আমীন!
২. মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (১৯৩৫-২০১৬) :
আমীরে জামা‘আত : তিনি ছিলেন একজন উঁচুমানের সাহিত্যিক, রাজনীতি সচেতন, সমাজ সেবক, নিখাদ দেশপ্রেমিক ও ধর্মীয় গবেষক। মাযহাবী তাক্বলীদ পুরা মাত্রায় থাকলেও ব্যবহারে ছিলেন উদার। হানাফী আলেম যাদের সঙ্গে আমরা মিশেছি, মাওলানা আব্দুর রহীম (১৯১৮-১৯৮৭) ব্যতীত আর কাউকে আমি তাঁর মত উদার পাইনি। তাঁর সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যেমন-
(১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মাদ মুহসিন হলে ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ১৯৭৭ সালে যখন বর্ধিত কলেবরে ‘বঙ্গানুবাদ খুৎবা’ বের করি, তখন সেটি বিক্রয়ের জন্য আমি প্রথম বাংলাবাজারে যাই এবং মাওলানার বইয়ের দোকানে তা বিক্রয়ের জন্য দেই। তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। আমি গেলে রসিকতা করে বলতেন, এইবার আহলেহাদীছ এসেছে।
(২) ১৯৯২ সালের ১৯-২১শে জানুয়ারীতে কুয়েত সরকারের আমন্ত্রণে যখন আমরা সেখানে আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে একই সাথে হোটেল মেরিডিয়ানে পাশাপাশি কক্ষে তিনদিন অবস্থান করি, সেখানে জমঈয়ত সভাপতি ড. আব্দুল বারীর প্রতি আমার খেদমত দেখে তিনি রসিকতা করে বলেন, দেশে দেখি বিভেদ, অথচ বিদেশে দেখছি খুবই মিল?
(৩) সম্মেলন চলাকালীন সময়ে একদিন দুপরে খাবার টেবিলে উনি, আমি, ওআইসি মহাসচিব ও লাহোরের বাদশাহী মসজিদের খতীব একত্রে বসেছি। কুয়েতের আমীর বিভিন্ন টেবিলে যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে আমাদের টেবিলে এলে আমি তাঁকে স্বাগত জানালাম ও সাথে বসতে আমন্ত্রণ জানালাম। উনি খুব খুশী হয়ে আমার পরিচয় নিতে লাগলেন। অতঃপর ধন্যবাদ দিয়ে অন্য টেবিলে গেলেন। অন্যেরা নীরবে দৃশ্যটা উপভোগ করলেন। অতঃপর রং ও বর্ণের এবং ভাষা ও অঞ্চলের ভেদাভেদহীন ইসলামী জাতীয়তার উপরে মহাকবি ইকবালের একটা কবিতা পাঠ করলাম। তা শুনে খতীব আব্দুল কাদের থ হয়ে আরও কবিতা শুনতে চাইলেন। আমি শিকওয়াহ ও জওয়াবে শিকওয়াহ থেকে ১০/১২ লাইন মুখস্ত শুনিয়ে দিলাম ও তাঁর সঙ্গে উর্দূতে ভাব জমিয়ে ফেললাম। উনি এক পর্যায়ে বললেন, এ বছর লাহোরে আল্লামা ইকবালের উপরে যে সেমিনার হবে, তাতে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। খান ছাহেব এতক্ষণ পরে এবার মুখ খুললেন এবং বললেন, আমরা থাকতে আপনি একজন আহলেহাদীছকে দাওয়াত দিচ্ছেন? বাংলাদেশে ওনাদের মাত্র হাযার দেড়েক লোক বসবাস করে বংশালে। দেখলাম, উনি কথাটি সিরিয়াসলি বললেন। তখন আমিও জবাব দিলাম। এক পর্যায়ে উনি বললেন, আমার এক বড় ভাবী আছে আহলেহাদীছের মেয়ে। তার চোট-পাটে আমাদের পরিবারে মীলাদ-কিয়াম হয় না। এখানেও দেখছি এক আহলেহাদীছের চোটে আমরা কোনঠাসা। তারপর হাসাহাসিতে খাওয়ার পর্ব শেষ হ’ল।
(৪) ১৯৯৩ সালের ২৬-২৮শে আগষ্ট কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ১ম এশীয় ইসলামী সম্মেলনে আমি, উনি ও জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা ইউসুফ একত্রে সামনের সারিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের জন্য নির্ধারিত ডেস্কে বসে আছি। শেষ দিনের শেষ অধিবেশনে উন্মুক্ত বক্তৃতার সুযোগ। মঞ্চ থেকে আহবান করা হ’ল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষে ভাষণ দেওয়ার জন্য। আমার দু’পাশে দু’জন আমাকে ঠেলছেন মঞ্চে যাওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে লোক চলে এল সিপ নিয়ে তাতে নাম লিখে দিতে হবে। আমি বললাম, আপনারা নেতা। আপনারা যান। কিন্তু কেউ রাযী হলেন না। বাধ্য হয়ে আমার নাম লিখে দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়ে নয়, ‘আমীন, জমঈয়তে শুববানে আহলিল হাদীছ বাংলাদেশ’ হিসাবে। কেননা ঐভাবেই আমার নিকটে মুদ্রিত দাওয়াতনামা গিয়েছিল। আমি গেলাম। আরবীতে বক্তৃতা করলাম। কারণ ওখানে আরবী, ইংরেজী ও ফ্রেঞ্চ ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় বক্তৃতার অনুমতি ছিল না। আমার আনন্দ এই যে, শ্রীলংকার মাটিতে ১৪টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে আমার নামের পরিচয়ে ঘোষক কর্তৃক ‘আহলেহাদীছ’ নামটি উচ্চারিত হ’ল।
এসময় মঞ্চে ছিলেন সভাপতি রিয়াদের কিং সঊদ ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর, সঊদী ধর্মমন্ত্রী ড. আব্দুল্লাহ আব্দুল মুহসিন আত-তুর্কী, শ্রীলংকার প্রেসিডেণ্ট জয়বর্ধনে, স্পীকার হনূফা মুহাম্মাদ হনূফা, মালদ্বীপের বিচারমন্ত্রী প্রমুখ।
(৫) জমঈয়তে ওলামায়ে ইসলাম কর্তৃক ঢাকায় আয়োজিত সীরাতুন্নবী সম্মেলনে দাওয়াত দিয়ে তিনি আমাকে দাওয়াতনামা পাঠিয়েছিলেন সম্ভবতঃ ১৯৯৯ সালের দিকে। কিন্তু আমি অপারগতা জানিয়ে চিঠি দিয়ে বলেছিলাম, নবী দিবস পালন করার কোন অনুষ্ঠানে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়’।
(৬) ২০০৫ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারী শনিবার সকালের ফ্লাইটে যখন আমি ঢাকায় ফেরার জন্য সিলেট এয়ারপোর্টে অপেক্ষারত ছিলাম, উনি তখন ঐ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে সিলেট অবতরণ করেন। ভিআইপি লাউঞ্জে সাক্ষাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, সিলেটের উজানে ভারতের প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ঢাকা থেকে জকিগঞ্জ অভিমুখে লংমার্চের ব্যবস্থা করার জন্য এসেছি। এ ব্যাপারে আপনার সহযোগিতা চাই। আমি সাথে সাথে সঙ্গে থাকা সিলেট যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে নির্দেশ দেই। এতে তিনি অত্যন্ত খুশী হন।
(৭) ২০০৫ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আমার গ্রেফতারের পর সংগঠন কর্তৃক ঢাকায় আয়োজিত প্রতিবাদ সম্মেলনে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান আমার মুক্তির দাবীতে সেদিন যে জোরালো ভাষণ দিয়েছিলেন, সাথীদের ভাষ্য অনুযায়ী সেখানে তিনি কলম্বোর ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, বিদেশে যে রত্নটি দেশের সম্মান বাঁচালো, সেই রত্নটি আজ ইসলামী মূল্যবোধের সরকারের যিন্দানখানায় বন্দী? এই বৃদ্ধ বয়সে স্ট্রেচারে ভর দিয়ে হ’লেও আমি তার মুক্তির দাবীতে রাস্তায় নামব’।
(৮) ২০০৮ সালের ২৮শে আগষ্ট কারামুক্তির পর ২০০৯ সালে ঢাকার বশীরুদ্দীন মিলনায়তনে যে সমাবেশ হয়, সেখানে ‘জামায়াত’ ব্যতীত অন্যান্য ইসলামী দলের নেতাদের সাথে তিনিও এসেছিলেন অত্যন্ত অসুস্থ শরীর নিয়ে। সেদিন তিনি আমার পাশে বসে অনেক আবেগ প্রকাশ করেছিলেন। অতঃপর তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি আমাকে ‘তাঁর সমস্ত নেকীর একটি প্রধান অংশ’ বলে মন্তব্য করেন। পরে আমি একদিন ‘মদীনা ভবনে’ গিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করি। পেঁপে দিয়ে তিনি আপ্যায়ন করেন। বললেন, উম্মুল আমরায (ডায়াবেটিস) আমাকে ধরেছে। পরে সাপ্তাহিক ‘মুসলিম জাহান’ আমার নামে ৬ মাসের জন্য জারি করে দেন। আমরা তাঁর নামে ‘আত-তাহরীক’ আগে থেকেই পাঠাতাম। পরে জেলখানায় বসে লেখা বইগুলির এক সেট তাঁকে ‘হাদিয়া’ হিসাবে পাঠিয়েছিলাম।
(৯) এ দিন আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি ইসলামী মাসিক পত্রিকাগুলির একটি সংগঠনের প্রস্তাব করেন এবং এইসব পত্রিকায় সরকারের পক্ষ থেকে কাগজ ও বিজ্ঞপ্তি দাবী করেন। আমি তাতে আগ্রহভরে সম্মতি দেই। কিন্তু পরে আর যোগাযোগ হয়নি।
(১০) এ সময় এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ঢাকায় এসে আমি মাওলানা কাফী ছাহেবের অফিসে দু’বছর চাকুরী করি এবং তাঁর পত্রিকা সম্পাদনায় লেখালেখির কাজে সহযোগিতা করি।
(১১) এ সময় তিনি দেশের একজন শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতার কারাগারে আহলেহাদীছ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, আপনি তাকে মুরীদ বানিয়ে ফেলেছেন। বললাম, আমরা পীর-মুরীদীতে বিশ্বাসী নই।
(১২) অসুখে শয্যাশায়ী আছেন জানতে পেরে গত ৩০শে এপ্রিল’১৬ বিকালে ঢাকার ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালে গিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করি। ইশারায় কথা বললেন। দো‘আ চাইলাম। চোখ বেয়ে পানি ঝরল। এটাই ছিল তাঁর সাথে আমার শেষ সাক্ষাৎ। বাইরে দাঁড়ানো ছেলে মোস্তফা মুঈনুদ্দীন বললেন, ৫/৬ টা মিথ্যা মামলায় প্রায়ই ডিবি পুলিশের আনাগোনা থাকত বাড়ীতে। এতেই আববা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন ও শয্যাশায়ী হন। এক পর্যায়ে হার্ট এ্যাটাকের ফলে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে যান’। দ্বীন ও জাতির সেবায় নিবেদিতপ্রাণ আলেমদের জন্য সম্ভবতঃ এটাই হ’ল দুনিয়াবী পুরস্কার!
আল্লাহ তাঁর সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করুন এবং তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দান করুন- আমীন!