এলার্জি ও এজমা রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

বর্তমানে শীত মৌসুম চলছে। আর বাড়ছে এজমা/হঁাপানি ও এলার্জির সমস্যার রোগীদের দুর্ভোগ। তাই সবাইকে এলার্জি সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে সচেতন থাকতে হবে।

কোল্ড এলার্জি বিষয়ে সতর্কতা :

১. ঠান্ডা খাবার ও আইসক্রিম পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে হবে।

২. জানালা দরজা খুলে রেখে ঠান্ডা হাওয়া রুমে আসতে দেয়া যাবে না।

৩. বাইরের খোলা মেলা অতিরিক্ত ঠান্ডা পরিবেশ পরিহার করে চলতে হবে।

৪. পানি পানের সময় গরম পানি মিশিয়ে খেতে হবে।

৫. খাওয়ার আগে খাবার গরম করে খেতে হবে।

৬. হালকা গরম পানিতে ওযূ, গোসল করতে হবে। ঠান্ডা পানিতে হাত মুখ ধোয়া, ওযূ, গোসল এসব করা যাবে না।

(নরমাল পানি রোদে রেখেও হালকা গরম করা যেতে পারে!)

৭. যানবাহনে উঠলে সরাসরি সামনের বাতাসের দিক থেকে ঘুরে বসতে হবে।

৮. শীতল বাতাসে বা পরিবেশে গেলে সতর্কতার সাথে নাক ও মুখ ভালোভাবে কাপড়ে বা মাস্ক পরে ঢেকে রাখতে হবে।

ডাস্ট এলার্জি বিষয়ে সতর্কতা :

শীত ও বসন্তকালের শুষ্ক রুক্ষ্ম আবহাওয়ায় এসব সমস্যা অনেক বেশী হয়ে যায়।

১. এলার্জিকারক বস্ত্তগুলোর মূল উৎস জেনে সেসব এড়িয়ে চলা একান্ত প্রয়োজন। যেসব ধুলোময়লার উৎস থেকে নিরাপদ দূরে থাকা যরূরী- রুমের বিছানায়, মেঝেতে, সোফায়, কুশনে জমা শুষ্ক ধুলা, আরও আছে জানালা, দরজার পর্দা, কার্পেট ও পাপোশে জমা ধুলা, ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্রে, ফুলদানিতে, পুরাতন বইখাতা ও ফাইলের ধুলা, ঘরের ঝুল, মাকড়সার জালে জমা ময়লা ইত্যাদি।

২. যাবতীয় ধুলোময়লার উৎসের কাছাকাছি গেলে অবশ্যই নাক মুখ ঢেকে ভালো করে মাস্ক পরতে হবে। তাতে এসবের প্রভাব থেকে অনেকাংশে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

৩. বসবাসের ঘর-বাড়িকে ধুলামুক্ত রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে- এজন্য ঝাড়ু দেওয়ার সাথে দৈনিক অন্তত একবার ঘরের মেঝে, জিনিসপত্র, আসবাবপত্র হালকা ভিজা কাপড় দিয়ে একটু মুছে রাখতে হবে।

৪. বিছানার চাদর, বালিশের কভার আর জানালা-দরজার পর্দা, সোফার কাভার, কুশন, কার্পেট, মেঝেতে বিছানো পাটি, পাপোশ এসব ৩-৪ দিন পরপর ঝেড়ে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে সহজে এসব পরিচ্ছন্ন করা যায়।

৫. ঘর-বাড়ি ঝাড়ু, উপরোক্ত জিনিসপত্র ঝেড়ে পরিচ্ছন্ন করার সময় এসব থেকে অন্তত ৩০ মিনিট দূরে থাকতে হবে। এসবের মাঝে থাকলে ২০-৩০ মিনিট মাস্ক পরে নাক, মুখ মাস্ক বা কাপড়ে শরীর ঢেকে রাখা যরূরী।

৬. আরও এলার্জিক বস্ত্তর মাঝে আছে- পোষাপ্রাণী : গরু, ছাগল, সকল পাখি, মুরগি, কবুতর, বিড়াল এসবের লোমে ও শরীরে জমা বস্ত্ত, বাতাসে ভাসমান তুলার অঁাশ, ফুলের পরাগ রেণু, ঘরের চুনকাম, বিভিন্ন তীব্র সুগন্ধি, বডিস্প্রে, পাউডার, কসমেটিক, কোনকিছুর ঝাঝালো গন্ধ ইত্যাদি। সরাসরি এসবের কাছে যাওয়া থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

৭. গৃহপালিত পশুপাখির কাছাকাছি থাকতে হ’লে, এদের যত্ন আর বাগানে বা টবের গাছের পরিচর্যা করার সময়েও মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। সরাসরি কোন ফুলের ঘ্রাণ নেয়া যাবে না।

৮. ধেঁায়া থেকে সাবধান- বিশেষভাবে হঁাপানি, শ্বাসকষ্টের রোগী, নাকের পলিপাস, নাকের এলার্জিক সমস্যার রোগীদের খেয়াল রেখে চলতে হবে। বিশেষ করে যানবাহনের ধেঁায়া, ধূমপানের ধেঁায়া, কয়েলের ধেঁায়া, রান্নার ধেঁায়া, মশা তাড়ানোর এরোসলের ধেঁায়া সাধ্যমত পরিহার করতে হবে।

ফুড এলার্জির বিষয়ে সতর্কতা :

অনেকগুলো খাবারে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হ’তে পারে। চোখ, নাক, স্কিনের এলার্জিক সমস্যা যাদের আছে, তাদের এসব হ’তে সচেতন থাকতে হবে। সবার সবকিছুতে সমস্যা নাও হ’তে পারে। যেটাতে সমস্যা সেটা জেনে বর্জন করতে হবে।

এলার্জি জাতীয় খাবারের মাঝে অন্যতম- ১. হাসের ডিম ও গোশত ২. বেগুন ৩. কচু/ওল ৪. শিম ৫. মসুর ও কালাইয়ের ডাল ৬. গরুর গোশত, ৭. আনারস ৮. নারিকেল, ৯. কৃত্রিম রঙ মিশ্রিত খাবার ১০. পুঁইশাক ১১. চিংড়ি মাছ, ১২. ইলিশ মাছ, ১৩. কলা ইত্যাদি। এসব ছাড়া আরও কোন কিছুতে সমস্যা হ’লে তা বুঝে পরিহার করতে হবে।

ডা. মহিদুল হাসান মা‘রূফ

আহলেহাদীছ পেশাজীবী ফোরাম হেলথকেয়ার।






আরও
আরও
.