চিনি কেন ক্ষতিকর?

মিষ্টিজাতীয় খাবার অল্প-বিস্তর সবারই প্রিয়। খুশির সংবাদে সবার আগে আমরা মিষ্টির দোকানেই ছুটে যাই। মিষ্টি ছাড়া আমাদের উৎসব- আয়োজন যেন অপূর্ণ থেকে যায়। আমরা সবাই কমবেশী মিষ্টি খেতে ভালোবাসি। এক্ষেত্রে যে কথা সবচেয়ে বেশী বলা হয়, তাহ’ল, একদিন খেলে কিছু হবে না। কিন্তু চিনিকে কেন শত্রু ভাবা হয়?

চিনিকে বলা হয় হোয়াইট পয়জন :

১ গ্রাম চিনি থেকে ৪ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। ৩ দশমিক ২ গ্রাম ভাত থেকেও আমরা ৪ ক্যালরি শক্তি পেয়ে যাই। ১ দশমিক ১৮ গ্রাম আটা থেকেও ৪ ক্যালরি শক্তি পেয়ে থাকি। আবার ১ গ্রাম রান্নার তেল থেকে আমরা চিনির দ্বিগুণের অধিক, প্রায় ৯ ক্যালরি শক্তি পেয়ে থাকি। কিন্তু চাল, ভাত বা রান্নায় তেল খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোন ভয় কাজ করে না। অথচ চিনি, আটা, ভাত সবই কিন্তু শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার।

চিনি কেন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর :

কোন খাবার রক্তে যত দ্রুত সুগার ছাড়ে, তাকে যে সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয়, সেটাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। সাদা চিনির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সর্বোচ্চ। চিনি খাওয়ার পরে খুব দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়ে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। রক্ত থেকে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করে। অবশিষ্ট গ্লুকোজ চর্বি হিসাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা হয়। ফলে খুব দ্রুত আমরা ক্ষুধা অনুভব করি। ফলে আবার খাবার খাই। এভাবে বারবার খাওয়ার মাধ্যমে আমরা অধিক ক্যালরি গ্রহণ করি। ফলস্বরূপ আমাদের ওযন, রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড, ফ্যাটিলিভারসহ অন্যান্য জটিলতা বাড়ে। এ কারণেই চিনির স্বাস্থ্যঝুঁকি এতটা বেশী।

ভাত, চাল ও আটার মতো কার্বোহাইড্রেটগুলো চিনির মতো দ্রুত সুগার ছাড়ে না। এগুলো বিভিন্ন রকমের এনজাইমের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্লুকোজে পরিণত হয়, যা যথেষ্ট ধীর প্রক্রিয়া। আবার এ প্রক্রিয়ায় সমস্ত চাল, ভাত বা আটা একবারে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় না। ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় এবং শরীরের কোষে ঢুকে শক্তি উৎপনণ করে। এক্ষেত্রে আমরা দ্রুত ক্ষুধার্ত বোধ করি না। তাই আমাদের ঘন ঘন খাওয়ার প্রয়োজনও হয় না। সেজন্য আমাদের ওযন বাড়ার আশঙ্কা কম থাকে। তবে শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত খেলে এগুলো থেকে শারীরিক জটিলতা বৃদ্ধি পায়।

চিনি কি একেবারেই বাদ দেব?

সরাসরি চিনি আসলেই খাওয়া উচিত নয়। তবে ডায়াবেটিস না থাকলে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ চা-চামচ চিনি দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন। সরাসরি চিনি বা চিনির শরবত না খেয়ে মাঝে মধ্যে চিনি দিয়ে তৈরি বিস্কুট, কেক, পিঠা, পায়েস খেতে পারেন। এতে চিনির ক্রেভিং মিটবে। আর নিত্য চা বা কফিতে চিনি বাদ দেওয়াই ভালো।

ডেজার্ট হিসাবে ফল, দই ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। অনেকে সাদা চিনির পরিবর্তে লাল চিনি বা গুড় খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। লাল চিনি বা গুড়ে সাদা চিনি অপেক্ষা কিছু ভিটামিন ও মিনারেল বেশী থাকে। কিন্তু লাল চিনির গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও সাদা চিনির মতোই। তাই এটিও পরিমিত পারিমাণেই খেতে হবে।

অতিরিক্ত চিনি খেলে যেসব সমস্যা হয় :

১. স্থূলতা : অতিরিক্ত চিনি খেলে ওযন বাড়বে। স্থূলতার কারণে ছোটদের টাইপ-১ ও বড়দের টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সেই সাথে অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও বাড়ে।

২. ফ্যাটিলিভার : লিভার আমাদের শরীরের ব্যাংক হিসাবে কাজ করে। অতিরিক্ত চিনি চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে লিভারে জমা হয়। এর ফলে লিভারের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। আর লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।

৩. উচ্চ রক্তচাপ : শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়লে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ে। অতিরিক্ত চর্বি ধমনির দেয়ালের পুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়, যা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সৃষ্টি করে।

৪. হার্টে ব্লক : হার্টে ব্লক ধরা পড়লেই আমরা সবার আগে দুধ, ডিম ও গরু-খাশির গোশত খাওয়া বন্ধ করে দিই। এক্ষেত্রে সবার আগে চিনির ব্যবহার কমাতে হবে। অতিরিক্ত চিনি খেলে রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইড ও এলডিএলের পরিমাণ বাড়ে, যা হার্টের ব্লক তৈরিতে সাহায্য করে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

৫. বিষণ্ণতা ও স্নায়ুরোগ : অতিরিক্ত চিনি খেলে বিষণ্ণতা, পারকিনসন ও আলঝেইমার রোগ দেখা দিতে পারে।

৬. ক্যানসার : চিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জটিলতা বাড়ায়। আর চিনি বেশী খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। কেমোথেরাপিকে কাজ করতে বাধা দেয় চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার। তাই চিনি গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখবেন, চিনি শরীরের জন্য উপকারী তো নয়ই, বরং অপকারই করে বেশী। \ সংকলিত \






আরও
আরও
.