বীজজাতীয় যেকোন খাবারই পুষ্টিকর। এসবের মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। মিন্ট প্রজাতির পুষ্টিকর এই উদ্ভিদের বীজ শরীরে শক্তি জোগায়। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের খাবারের তালিকায় এখন বেশ জনপ্রিয় নাম চিয়া সিড। এক আউন্স অর্থাৎ ২ টেবিল চামচ চিয়া বীজ থেকে পাওয়া যায় ১৩৮ ক্যালোরি। প্রোটিন রয়েছে প্রায় ৫ গ্রাম। মোট ফ্যাটের পরিমাণও তাই। কার্বোহাইড্রেট ১২ গ্রাম। ফাইবার ১০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ২ মিলিগ্রাম এবং জিঙ্কের পরিমাণ ১.৩ মিলিগ্রাম। মাত্র এক সপ্তাহ চিয়া সিড খেলে আপনার শরীরে যে আশ্চর্য পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করবেন, তা নিম্নরূপ-
(১) বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেবে :
‘অ্যান্টি-এজিং ফুড হিসাবে চিয়া সিডের বেশ নামডাক রয়েছে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর চিয়া সিড ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল শরীরের ডিএনএ ও জীবিত কোষ ধ্বংস করে। ফলে আপনি দ্রুত বুড়িয়ে যান। দূষিত পরিবেশ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, ভাজাপোড়া খাবার, অনিদ্রা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, দুশ্চিন্তা এসবের মাধ্যমে ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি হয়। এ কারণে আমাদের শরীরে ক্যানসার, হৃদরোগ, প্রদাহ জনিত রোগ, চোখে ছানি পড়া এসব রোগ বাসা বাঁধে। মাত্র সাত দিন চিয়া সিড খেলেই আপনার ত্বকে এর প্রভাব বুঝতে পারবেন।
(২) ওযন কমবে :
চিয়া সিড খাওয়া শুরু করার আগে ওযন মাপুন। এক সপ্তাহ পর আবার মাপুন। আপনি যদি ঠিকমতো স্বাস্থ্যকর উপায়ে খাবার খান, ওযন কমবেই। কেননা মাত্র ২ চামচ চিয়া সিডে যে পরিমাণ ফাইবার থাকে, তা দিনের প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক। সকালের নাশতায় ২ চা-চামচ চিয়া সিড খেলে তা পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আপনার পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেবে। তাছাড়া ১ চা-চামচ চিয়া সিড এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তা ১ গ্লাস পানিতে ১ চা-চামচ লেবুর রস ও ১ চা-চামচ মধুর সঙ্গে সকালে খালি পেটে খেলে মেদ পোড়াতেও সাহায্য করবে।
(৩) হার্ট ভালো থাকবে :
চিয়া সিডে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ। কোয়েরসেটিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হার্ট ভালো রাখতে সহায়ক। ফাইবার আর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
(৪) হাড় শক্তিশালী করবে :
চিয়া সিড ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। মাত্র ১ আউন্স চিয়া সিডে ১৮০ মাইক্রোগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। চিয়া সিডের ম্যাগনেশিয়াম আর ফসফরাসও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকরী। হাড় ছাড়াও অপটিমাল মাসল ও স্নায়ু ভালো রাখে চিয়া সিড।
(৫) রক্তে ‘সুগার স্পাইক’ কমাবে :
সকালে কার্বোহাইড্রেট বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার পর তা দ্রুত রক্তের সঙ্গে গ্লুকোজ আকারে মিশে যাবে। ফলে আপনার ‘সুগার স্পাইক’ (হুট করে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া) হবে। চিয়া সিড হুট করে কার্বোহাইড্রেটকে রক্তের সঙ্গে মিশতে দেয় না। এই প্রক্রিয়াটা ধীর করে দেয়। ফলে যাঁদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের জন্য চিয়া সিড উপকারী।
কখন, কিভাবে, কি মাত্রায় খাবেন : (১) প্রতিদিন সকালে, সন্ধ্যায় বা দু’বার খাওয়ার মাঝখানে খেতে পারেন। (২) বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পর্যন্ত চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে। তবে দিনে অন্তত ২ চামচ (১০ গ্রাম) খেলেই মিলবে ওপরের সব আশ্চর্য উপকার। (৩) সকালে খালি পেটে পানিতে গুলিয়ে তৎক্ষণাৎ, সারা রাত ভিজিয়ে অথবা এক ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন চিয়া সিড। ফলের রস, ওটস, সিরিয়াল বা সালাদের সঙ্গেও চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারেন।